‘পিএইচডির সংখ্যা বাড়লেও প্রায় সবই নিম্নমানের’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ড. অরুণ কুমার বসাক।
বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ড. অরুণ কুমার বসাক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। ১৯৭৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থানপ্রাপ্ত ড. বসাক ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান পেয়ে একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর ১৮২টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৪১ সালে, পাবনায়। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হল-

প্রশ্ন : সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির অনুমতির সময় এসেছে। আপনি কী মনে করেন? 

অরুণ কুমার বসাক: বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা পায় গবেষণার মাধ্যমে। শিক্ষামন্ত্রী এই প্রেক্ষাপটে সম্ভবত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল/পিএইচডি করানোর প্রস্তাব রেখেছেন। আমার মতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রথমে আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে সবল বুনিয়াদি জ্ঞান আহরণের প্রয়োজনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর বুনিয়াদি জ্ঞান দুর্বল বিধায় এমফিল/পিএইচডি প্রোগ্রাম ফলপ্রসূ করা দুরূহ। তবে দক্ষ, নিবেদিতপ্রাণ, পরিশ্রমী শিক্ষক ও কোয়ালিটি শিক্ষার্থীর সমন্বয় থাকলে কোনো কোনো বিষয়ে দু-একটি উচ্চমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে ভাবনাচিন্তা করা যেতে পারে। তবে নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম সহযোগে প্রত্যহ ‘দ্বিমুখী আলোচনা’ দিয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা দিতে পারবেন, তাহলে শিক্ষামন্ত্রীর পরিকল্পনা সফল হতে পারে।

প্রশ্ন : আপনি পাঁচ দশক আগে ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে পিএইচডি করেছেন। আপনার পিএইচডির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

অরুণ কুমার বসাক: এটা ছিল আমার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জিং। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬১ সালে বিএসসি সম্মান ও ১৯৬৩ সালে এমএসসি পরীক্ষায় সমগ্র বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম হওয়ার কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত ‘মেরিট স্কলারশিপ’ পেয়েছিলাম। ১৯৬৫ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম। কিন্তু প্লেনে ওঠার আগে আমার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে পাকিস্তান সরকার। এর পর প্রতিবছর ‘কমনওয়েলথ স্কলারশিপ’ পেলেও পাকিস্তান আমলে আমি আর পাসপোর্ট ফেরত পাইনি। ১৯৭২ সালে যখন ‘কমনওয়েলথ স্কলারশিপ’ পেয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামে যাই, ইতোমধ্যে আমার ছাত্রছাত্রীরা পিএইচডি নিয়ে দেশে ফিরেছে। উচ্চমানের পিএইচডি করা আমার জন্য সম্মানের ব্যাপার ছিল। পিএইচডি থিসিস জমা দেওয়ার আগেই বিজ্ঞাপিত পদে দরখাস্ত করতে আমার বিভাগ আমাকে আমন্ত্রণ জানায়। এর পর ১৫ দিনের মধ্যেই আমি পিএইচডি ডিগ্রি পাই; সিলেকশন কমিটি আমাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশও করে। তবে স্বদেশ ভাবনা আমাকে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ফেলে ১৯৭৬ সালে দেশে ফিরতে সাহস জুগিয়েছিল। 

প্রশ্ন : দেশের পিএইচডি গবেষণার মান কেমন দেখছেন?

অরুণ কুমার বসাক: আমি পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওহাইও স্টেট  ইউনিভার্সিটিতে (১৯৮০-৮২) ছিলাম। পরে ভিজিটিং স্কলার/ভিজিটিং রিসার্চ প্রফেসর/ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছয়বার দেড় থেকে দুই মাস মেয়াদি গবেষণা কাজ করেছি যুক্তরাষ্ট্রে। পিএইচডি কাজের সঙ্গে নতুন কিছু আবিষ্কার সম্পৃক্ত থাকে। ডিগ্রির মান নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট আবিষ্কারের ওপর। ‘সমৃদ্ধির জন্য দেশে উন্নতমানের বিজ্ঞান গবেষণা অপরিহার্য। সবচেয়ে বড় মানের গবেষণা প্রবন্ধে (পিএইচডি থিসিস) ‘যুগান্তকারী আবিষ্কার’ থাকে। শুধু ‘যুগান্তকারী আবিষ্কার’ নোবেল পুরস্কারজয়ী হতে পারে। 
বর্তমানে আমাদের দেশে সামগ্রিক শিক্ষা ও গবেষণার মান নিম্নমুখী। শিক্ষায়তনে প্রশিক্ষণ দুর্বল, গবেষকদের গবেষণা থেকে আনন্দ আহরণের ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে। আমরা এক অনিশ্চিত পথে ধাবিত হচ্ছি। আমাদের গবেষক অনেকেই ‘প্লেগারিজম’ করে অথবা প্রভূত অর্থের বিনিময়ে ‘প্রেডেটরি (অর্থ লুণ্ঠক)’, মিথ্যা ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টরসহ ভুয়া ই-জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধের মাধ্যমে চাকরিতে প্রমোশন নিয়েছেন। প্রতিবছর পিএইচডি ডিগ্রির সংখ্যা বাড়লেও যুগান্তকারী আবিষ্কার দূরে থাক, দু-একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছাড়া– আমাকে মাফ করবেন, সবই নিম্নমানের।

প্রশ্ন : সরকারের গত মেয়াদে একজন মন্ত্রী দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির পিএইচডির মান খারাপ। আপনার কী মনে হয়?

অরুণ কুমার বসাক: মন্ত্রী মহোদয় তাঁর নিজস্ব মত দিয়েছেন। আমি তো একজন পিএইচডি দেখেছি, যার মান স্কুলের একজন ভালো শিক্ষার্থীর চেয়েও খারাপ। তবে ঢালাও মন্তব্য সমীচীন নয়।   

প্রশ্ন : ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মানবতা’ বইয়ে আপনি লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর সেই মানের গবেষণা হয় না, যে মানের গবেষণা ব্রিটিশ আমলে হতো। কারণ হিসেবে বলেছেন, গবেষণা কাজে সেই উৎসাহ নেই। এর ব্যাখ্যা কী?

অরুণ কুমার বসাক: ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু, ড. কে.এস. কৃষ্ণান, প্রফেসর জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ড. এস.আর. খাস্তগীর এবং হিউম্যানিটিজ ফ্যাকাল্টির ড. এফ.এইচ. টারনার, স্যার এ.এফ. রহমান, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ প্রমুখ শিক্ষকের বড় বড় অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাত হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অহংকার আজ অনেকটাই ফ্যাকাসে, লুণ্ঠিত! তখন ‘স্বপদে প্রমোশন’ পদ্ধতি চালু ছিল না। ‘ওপেন কম্পিটিশন’-এর মাধ্যমে উচ্চতর পদে আসীন হতে হতো। ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ ছিল শিক্ষক-ভোটনিরপেক্ষ এবং ভাইস চ্যান্সেলররা দেবতুল্য ছিলেন। বর্তমানে যেসব শিক্ষক ভাইস চ্যান্সেলর সাহেবকে সর্বক্ষণ সময় দিতে পারবেন, তাঁরাই নীতিনির্ধারক। এসব শিক্ষক-গবেষকের উচ্চমানের পিএইচডি তত্ত্বাবধানের সময় নেই। ব্রিটিশ আমলে সিলেকশন কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্য আসতেন ইউরোপ/যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যাদের ‘প্রভাবিত করা’ কঠিন ছিল। সত্তর দশকের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতি দেখিয়ে শিক্ষকের স্বপদে প্রমোশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রমোশন ব্যবস্থায় প্রচলিত প্রথম শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রমোশনে শিক্ষকের যোগ্যতা বিচার করা হয় না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আমাদের দেশে অর্থ সম্মানের মাপকাঠি। তাই আমরা অর্থের পেছনে ছুটছি।  

প্রশ্ন : পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘তদবির’-এর বিষয়টি আপনি সরাসরিই উল্লেখ করেছেন। এর সঙ্গে নিশ্চয় গবেষণা কিংবা পিএইচডির মানের সম্পর্ক রয়েছে?

অরুণ কুমার বসাক: নিশ্চয়ই আছে। যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি বা গবেষণা করার সময় আমার কোনো তদবিরের প্রয়োজন হয়নি। আপন আনন্দে প্রতিবার ল্যাবে গিয়ে ২০ থেকে ৫৬ ঘণ্টা কাজ করেছি। ১৯৬৩ সালে পরীক্ষার আগেই রাবিতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যক্ষ আমাকে প্রভাষক সমমানের ‘রিসার্চ ফেলো’ পদে আবেদনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এমএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরদিন রাবিতে শিক্ষকতায় যোগদান করেছিলাম। আমি তদবির করতে শিখিনি, তাই এখন আমি সামাজিকভাবে আনন্দ পাওয়ার জন্য অযোগ্য। ভালো গবেষক তাঁকেই বলব, যিনি বিদেশ থেকে ফিরে এসে নতুন এক গবেষণা শুরু করে বিদেশিদেরই তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। এ জন্য লোভ ত্যাগ করতে হয়। 

প্রশ্ন : পিএইচডি থাকলে পদোন্নতিসহ অনেক সুবিধা মেলে। আমরা দেখছি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা অনেকেই পিএইচডি করছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

অরুণ কুমার বসাক: আমার মতে, উচ্চমানের পিএইডিধারীকে সুবিধা দান অযৌক্তিক নয়।  পিএইডি কেন, ভালো মানের উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা/রাজনৈতিক নেতা/সামরিক বাহিনীর সদস্যকে উৎসাহিত করা বাঞ্ছনীয়। কারণ কোয়ালিটি উচ্চশিক্ষা সবার কর্তব্যকর্মে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে; দৃষ্টিভঙ্গি উদার ও প্রসারিত করে। এতে দেশপ্রেম ও দক্ষতা বাড়ে। তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পদোন্নতি তাদের কর্মকুশলতার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষক-গবেষকদের উন্নত দেশে উচ্চতর শিক্ষা/গবেষণায় সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। 

প্রশ্ন : গবেষণায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বরাদ্দ অপ্রতুল। এর প্রভাব নিশ্চয় পিএইচডির ওপর পড়ে?

অরুণ কুমার বসাক: ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সায়েন্স কনফারেন্সে বিজ্ঞানীরা অভিযোগ করেছিলেন, শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ অত্যন্ত কম; অথচ সরকার চায় বিজ্ঞানীরা বিশ্বমানের গবেষণা করুন। একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্পষ্ট করে বললেন, গরুর গাড়ির অর্থ বরাদ্দ দিয়ে প্লেন তৈরি করা যায় না। সবাই এ বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন। কনফারেন্সে সরকারপক্ষ থেকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করলেন, এখানে ‘এমন কেউ আছেন, যাঁর পরিচ্ছদে কোনো বিদেশি অংশ নেই?’ সবাইকে নিশ্চুপ দেখে মাননীয় সচিব জানালেন, ‘আমদানি খাতে বিরাট অংশ কোষাগার থেকে খরচ হয়ে যায়।’

প্রশ্ন : আপনার মতে, তাহলে গবেষণায় প্রধান প্রণোদনা কী হতে পারে?

অরুণ কুমার বসাক: ১৯৮১ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আমার প্রফেসর ও আমি নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানে ‘প্যারিটি লঙ্ঘনকারী পরীক্ষণ’-এর ওপর কাজ করছিলাম। আমার প্রফেসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গবেষণার স্বার্থে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানীকে (নাম মনে আসছে না) আনার প্রস্তাব রাখলেন। আমার প্রফেসরের বেতন ছিল বছরে ৪০ হাজার ডলার আর প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীকে প্রথমে ৬০ হাজার ডলার, পরে ৮০ হাজার ডলার অফার করা হলো। যদিও প্রিন্সটনে তিনি পেতেন ৩০ হাজার ডলার। কিন্তু প্রিন্সটনের সামগ্রিক গবেষণা পরিবেশ ছেড়ে তিনি ওহাইও স্টেটে আসেননি। পরে জেনেছিলাম, ১ লাখ ডলার পর্যন্ত অফার করা হয়েছিল। নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে তিনি গবেষণা পরিবেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন।  গবেষণায় আনন্দ পাওয়া কাজটির জন্য বড় রকমের প্রণোদনা বা চালিকাশক্তি। গবেষণার মাধ্যমে ‘অজানাকে জয়’ করা যায়। এ চরম আনন্দ যিনি একবার পেয়েছেন, তিনি সব ফেলে এখানেই থাকবেন। সে রকম কয়েকজনকে আমাদের মাঝে এখনও দেখতে পাই। সত্বর ব্যবস্থা না নিলে তারাও হারিয়ে যাবেন!

প্রশ্ন : পিএইচডি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য আপনার পরামর্শ কী? 

অরুণ কুমার বসাক: ১৯৭৬ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করাকালে আমার শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর উইলিয়াম বারচাম আমাকে বলেছিলেন, ‘বৈদেশিক সাহায্য রিসিপিয়েন্ট (গ্রহণকারী) দেশকে পঙ্গু করে। অর্থনৈতিক সাহায্য না থাকলে একটা দেশ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে এবং ক্রমে উন্নত হয় যদি দেশের শিক্ষার মান ভালো থাকে।’ নানা কারণে আমাদের দেশে শিক্ষার মান হ্রাস পেয়েছে। তবুও প্রফেসর বারচামের মূল্যবান বক্তব্যের যথার্থতা পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে প্রতিফলিত।  
উন্নতমানের গবেষক হতে বা পিএইচডি করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার বিষয়বস্তু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। এ দায়িত্ব শিক্ষার্থীর নিজের (সারাবিশ্বে একই নিয়ম)। শিক্ষার্থীর দুর্বলতায় বিভিন্নতা থাকে। তা দূর করতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পারস্পরিক আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিজ্ঞানচর্চার এই ‘উভয়মুখী’ পদ্ধতির দ্বারা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শিক্ষকও জ্ঞান আহরণে উপকৃত হতে পারেন, যা উন্নত দেশগুলোতে অনুসরণ করা হয়। তা ছাড়া চ্যালেঞ্জ ও বাধা অতিক্রম করার জন্য পরিশ্রম, বিচার-বুদ্ধি, নিষ্ঠা ও সাহস প্রয়োগ শিক্ষার্থীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞানচর্চাতে বিষয়ের গভীরে যাওয়া অতি প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন : এর সঙ্গে আর কিছু যোগ করবেন?

অরুণ কুমার বসাক: দেশের সম্মান শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে না; গবেষণার মান ও টেকনোলজির প্রবৃদ্ধি দেশের গৌরবের উচ্চতা নির্ধারণ করে। দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে মিনতি, ক্ষুদ্র স্বার্থে দলীয় সংঘাত করে আমরা যেন ভবিষ্যৎ বংশধরদের সর্বনাশ না করি। সবাই যদি একযোগে আমাদের ভবিষ্যৎ পতাকাবাহক প্রজন্মকে সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা ও একাগ্রতা জাগ্রত করার সাহস দিই, তাহলে তারা সব দুর্বলতা কাটিয়ে নিজেদের চেষ্টায় বিশ্বে সম্মানজনক আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হবে। তখন আমরা সবাই বৈশ্বিকভাবে সম্মানিত হবো। রাষ্ট্রীয়ভাবে আদর্শবাদী ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক/গবেষকের মর্যাদা রক্ষা এবং তাদের পুরস্কৃত করা এখন জরুরি। 

প্রশ্ন : আপনাকে ধন্যবাদ।

অরুণ কুমার বসাক: আপনাকেও ধন্যবাদ। 

 

সৌজন্যে : দৈনিক সমকাল।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ