‘স্বাস্থ্যখাতের সমস্যা সমাধানে কাজ করব’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩১

সরকারের নতুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন প্রখ্যাত প্লাস্টিক সার্জন অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন।  রোববার (১৪ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর এই সমন্বয়কারী। দায়িত্ব গ্রহণের আগে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রখ্যাত এই চিকিৎসক। নিজের পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও করণীয় নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। আলোচনার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আপনার পরিকল্পনা জানতে চাই।

সামন্ত লাল সেন: আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে প্রস্তুত ছিলাম না। ফলে হঠাৎ করে আমার পক্ষে বলাটা মুশকিল। আমি যখন প্রথম মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা জানলাম, এরপর থেকেই আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমি আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করব। যোগদানের পর আমি দেখব, স্বাস্থ্যখাতে কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, স্বাস্থ্যখাতকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে আমাদের চিকিৎসকের ভালোভাবে রাখতে হবে। আমি ভালো না থাকলে, ভালো সেবা দিতে পারব না। চিকিৎসক সমাজের মধ্যে অনেক কষ্ট ও অপ্রাপ্তির কথা আমি শুনি। তরুণ চিকিৎসকরা প্রায়ই বলেন, স্যার আমার প্রমোশন হয় না। আমি ওমুক জায়গায় কাজ করতে পারছি না। যারা সেবা দেবে তাদের যদি শান্তিতে রাখতে না পারি, তাহলে কাজ আদায় করব কী করে? আমি এই বিষয়টি দেখব।

আমি সারাদেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ঘুরেছি। আমার রোগীরা ফ্লোরে শুয়ে থাকে। এমনটা কেন হবে? আমাদের দেশের চিকিৎসকদের অনেক গুণ আছে। তারা অনেক ভালো ভালো কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা জোড়া মাথার বাচ্চা আলাদা করেছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি দেশের চিকিৎসকদের ভালো সুযোগ দেওয়া যায়, তারা বিশ্বমানের যেকোনো কাজ করতে পারবে।

প্রশ্ন: সেবা খাতে কী ধরনের পরিবর্তন চান?

সামন্ত লাল সেন: আমার একটা নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা আছে। আমি একদম গ্রাস রুট লেভেলের মানুষের জন্য কাজ করেছি। আমি এখনো চেষ্টা করব যেন মানুষের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। যা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। আমি এই স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নে কাজ করব। যেন গ্রাস রুট লেভেলের রোগীরা ভালো চিকিৎসা পায়। আমি শুধু ঢাকা শহর নিয়ে ব্যস্ত থাকব তা নয়। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আমি ঘুরেছি। আমি জানি মানুষে কোথায় কষ্ট আছে। আমি যদি টেকনাফ বা পাটগ্রামে একটা ভালো হাসপাতাল করতে পারি, সেখানে সকল সুযোগ-সুবিধা থাকে, তাহলে অবশ্যই আমার চিকিৎসকরা কাজ করবে। তাকে যদি আমি সাপোর্ট নিতে পারি তাহলে সে কাজ করবে না কেন?

প্রশ্ন: আপনার মূল ফোকাসটা কোন কাজে থাকবে?

সামন্ত লাল সেন: আমার মূল ফোকাস থাকবে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া। কোনো মানুষ যেন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কীভাবে সেবা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেটাই আমার কাজ হবে।

প্রশ্ন: স্বাস্থ্যখাতে অনেক দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন কী?

সামন্ত লাল সেন: দুর্নীতি হয়, এটা আমরা শুনি। কোথায় ও কীভাবে হয় তা আমাকে দেখতে হবে। অবশ্যই আমি চাই না, এ খাতে দুর্নীতি হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা বিরাট আস্থা রেখে আমাকে এখানে দায়িত্ব দিয়েছেন। এত লোকের মধ্যে আমাকে তিনি বেছে নিয়েছেন। অবশ্যই আমাকে নিয়ে তার একটি প্রত্যাশা আছে। চেষ্টা করব যেকোনো মূল্যে তা পূরণ করার জন্য।

প্রশ্ন: মূল চ্যালেঞ্জ কী মনে করছেন?

সামন্ত লাল সেন: মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করা মূল চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন: রেফারেল সিস্টেম নিয়ে কোনো পদক্ষেপ থাকবে কী?

সামন্ত লাল সেন: এই মুহূর্তে আমার পক্ষে এটি বলা কঠিন। আমি সব দেখে নেই, এরপর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিইনি। আমি সবার সহযোগিতা চাই।

প্রশ্ন: জনবল সংকটের কারণে যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। ফলে রোগী বেসরকারি হাসপাতাল ও বিদেশমুখী। এটি নিরসনে কী ধরনের উদ্যোগ নেবেন?

সামন্ত লাল সেন: এ বিষয়টি আরও ভালোভাবে দেখতে হবে। কিছুদিন আগে ১৪ সদস্যের একটি টিম নিয়ে ভূটান গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা ১৮টি অস্ত্রোপচার করেছি। বর্তমানে ভুটান থেকে একজন রোগী বাংলাদেশে এসেছে। আমরা সপ্তাহখানেক আগে তার অপারেশন করেছি। এটি সরকারিভাবে করা হয়েছে। বিদেশি রোগী বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা গ্রহণ এটিই প্রথম। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন। আমি কখনোই যন্ত্রপাতির অপচয় হতে দেব না। আমার দ্বারা কোনো জিনিস ফেলে রাখা সহ্য করা হবে না। আমাকে বিষয়গুলো দেখতে হবে।

প্রশ্ন: আপানাকে মন্ত্রিসভায় সবথেকে বড় চমক হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। কোনো চাপ অনুভব করছেন কি?

সামন্ত লাল সেন: আপনাদের এ কথা বার্তায় আমাকে বাড়তি চাপ অনুভব করাচ্ছে। আমাকে নিয়ে আপনাদের এত এত প্রত্যাশা। আমার একার পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব না। আমার যে চিকিৎসক ভাই, মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন তাদের সহযোগিতাও একান্তভাবে প্রয়োজনীয়। পিয়ন থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সবাই যদি একসাথে কাজ করি, তাহলেই সফলতা সম্ভব।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ