আজকের শিরোনাম :

মার্কিন ডলারের বিশ্ব বিনিময় হিসেবে টিকে থাকার কাহিনী

  আলাউদ্দিন মল্লিক

১০ আগস্ট ২০২২, ১৫:৫৪ | আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১৫:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
ডলারের ইতিহাস 
মার্কিন ডলার (মুদ্রা প্রতীক: $; ব্যাংক কোড: USD) হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী মুদ্রার নাম। এর কাগুজে নোটের নকশা অনুযায়ী একে চলতি ভাষায় 'গ্রীন বাক' হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এর সাংকেতিক চিহ্ন $, তবে অন্যান্য দেশের ডলার নামক মুদ্রা থেকে আলাদা করার জন্য একে আন্তর্জাতিক দলিলাদিতে US$ লেখা হয়। এর এক শতাংশের নাম সেন্ট। ১ ডলার ১০০ সেন্ট এর সমতূল্য। মার্কিন কংগ্রেস ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রবর্তন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশ্ব মুদ্রা বাজারে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ‘হার্ড কারেন্সি’ হিসেবে পরিগণিত।  এটি বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত মুদ্রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আরও কিছু দেশ ডলারকে সরকারী মুদ্রা হিসাবে ব্যবহার করে। মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক ব্যবহার দ্বিবিধ। প্রথমতঃ এটি আন্তর্জাতিক দেনা-পাওনা মেটানোর মুদ্রা। দ্বিতীয়ত এটি বহুল প্রচলিত একটি রিজার্ভ কারেন্সী।

বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ক্রমাগত নিজের স্থান করে নিতে থাকে।  এর পিছনে যুক্তরাজ্যের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিল।  দুইটি বিশ্বযুদ্ধের ধকল যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সামাল দিতে পারেনি।  নিজের অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য তার প্রচুর বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন হয়।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের বিশ্ব মাতবরী প্রাপ্তির বিনিময়ে যুক্তরাজ্যের এই প্রয়োজন মিটায়।  আর নিজের বিশ্ব মাতবরিটা দিয়ে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।  এর সাথে সাথে মার্কিন ডলার হয়ে উঠে বিশ্ব কারেন্সী। 

রিজার্ভ কারেন্সী হিসেবে মার্কিন ডলার 
মার্কিন ডলারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার মুকুট দেওয়া হয়েছিল এবং ব্রেটন উডস চুক্তির কারণে বিশ্বের বৃহত্তম সোনার মজুদ দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। স্বর্ণের রিজার্ভের পরিবর্তে, অন্যান্য দেশগুলি মার্কিন ডলারের রিজার্ভ জমা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলি মার্কিন ট্রেজারি সিকিউরিটিজ কিনতে শুরু করে, যা তারা অর্থের একটি নিরাপদ স্টোর হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। ট্রেজারি সিকিউরিটিজের চাহিদা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং গ্রেট সোসাইটির অভ্যন্তরীণ কর্মসূচিতে অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ঘাটতি ব্যয়ের সাথে যুক্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কাগজের অর্থ দিয়ে বাজারে প্লাবিত করে। ডলারের স্থিতিশীলতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে, দেশগুলি ডলারের রিজার্ভকে সোনায় রূপান্তর করতে শুরু করে। সোনার চাহিদা এমন ছিল যে রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন এবং সোনা থেকে ডলারকে ডি-লিঙ্ক করতে বাধ্য হন, যার ফলে আজ বিদ্যমান ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট তৈরি হয়।  যদিও স্থবিরতার সময়কাল সমাপ্ত  হয়েছে কিন্তু ক্রমান্নয়ে  মার্কিন ডলার বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত হয়েছে।

পেট্রোডলার 
পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ (তেল, গ্যাস এবং এর উপজাত দ্রব্যাদি) একমাত্র মার্কিন ডলার দিয়ে কেনাবেচা হয়। গত শতকের ষাটের দশকে ওপেক (প্রেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা)এর সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর  সালে মার্কিন ডলারকে পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থের একমাত্র   বাণিজ্য মুদ্রা হিসেবে নির্ধারিত হয়।  মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদহনকারী দেশগুলো এর মাধ্যমে তেলের মূল্য নির্ধারণের ক্ষমতা অর্জন করে। এর পর হতে মার্কিন ডলারকে প্রেট্রোডলার হিসেবে বলা হয়। 

ফিয়াট মানি
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারকে ফিয়াট কারেন্সী হিসেবে ঘোষণা করেন। ফিয়াট মানি হল সরকার কর্তৃক ইস্যু করা একটি মুদ্রা যা স্বর্ণ বা রৌপ্যের মতো কোনো ভৌত পণ্য দ্বারা সমর্থিত নয়, বরং এটি ইস্যু করা সরকার দ্বারা। ফিয়াট অর্থের মূল্য সরবরাহ এবং চাহিদা এবং ইস্যুকারী সরকারের স্থিতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক থেকে উদ্ভূত হয়। তখনকার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫ (১৭৭৬ হতে) বৎসর যাবৎ পৃথিবীতে নিজের প্রভাবকে ক্রমাগত বৃদ্ধি করে যাচ্ছিল।  এর মুদ্রা হিসেবে ডলার (১৭৮৫ হতে) নিজেও ১৮৬ বৎসর যাবৎ প্রতাপ নিয়ে বিনিময় এবং ব্যবসা করে চলছিল। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য এবং তার  এক  সময়ের উপননিবেশগুলো , মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদহনকারী দেশগুলোর সাথে দুই আমেরিকা মহাদেশের সহযোগিতায় ডলারকে ফিয়াট মানি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করে।  তার মানে এই মুদ্রার বিপরীতে কোন স্বর্ণ-রৌপ্য বা কোনধরনের ধাতব জমা রাখার বাধ্যবাধ্যকতা থাকল না।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনমত ডলার ছাপিয়ে নিতে পারবে।

ডলারের আধিপত্য বনাম ইউরো-ইউয়ান
এক দেশ কোনো কিছু আমদানি করবে অন্য দেশ থেকে, মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রধানত ডলারের মাধ্যমে। কিছু রফতানি করবে দেশটি, মূল্য বুঝে নিতে হয় ডলারের মাধ্যমে। এভাবে পৃথিবীতে যত লেনদেন হয় তার ৮০ ভাগেরও বেশি হয় আমেরিকান ডলারের মাধ্যমে। বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আমেরিকান ডলারের মাধ্যমে।  বিশ্ব বিনিময় বা ব্যবসা-বাণিজ্যে মার্কিন ডলার একটি মনোপলি তৈরী করেছে। এ মনোপলি অন্যান্য দেশ ও জাতির অর্থনীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে উন্মোচিত অবস্থায় রেখে দিয়েছে, যা থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক সুবিধাও নিচ্ছে। এটি রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থকে ডলারের একচ্ছত্রতার শিকারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।  

বহু দিন ধরে ইউরোপ, রাশিয়া, চীন, ইরানসহ কয়েকটি দেশ একটি বিকল্প মুদ্রা দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে ডলারের অবস্থান দুর্বল হয়েছে বটে! মোট বৈশ্বিক উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা বিগত দুই দশকে কমেছে বটে, ২০২১ সালের শেষ তিন মাসে বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভে মার্কিন ডলারের শেয়ার কমে ৫৯ শতাংশে নেমে আসে। তবুও ডলারের প্রভাব-কর্তৃত্ব রয়েই গেছে। তবে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরো কিছু মুদ্রা নিজেদের উপস্থিতি জোরালো করতে সচেষ্ট। বৈশ্বিক বাণিজ্যে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও লেনদেনে মুদ্রাগুলো নিজেদের ভ‚মিকা বিস্তৃত করছে। এর মধ্যে আছে ইউরোপের মুদ্রা ইউরো, জাপানের ইয়েন ও ব্রিটিশ পাউন্ড স্টার্লিং। চীনের ইউয়ান এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আসছে। আর আছে রাশিয়ার রুবল। এর পাশাপাশি আরেকটি বিকল্প হলো স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস বা এসডিআর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক ঝুড়ি মুদ্রা বোঝাতে এই এসডিআর ইউনিট ব্যবহার করে থাকে।

বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মধ্যে ডলারের সত্যিকার প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে সম্ভাবনাময় মুদ্রা হলো ইউরো ও ইউয়ান। বৈশ্বিক লেনদেনের মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশে এখন ইউয়ান ব্যবহৃত হচ্ছে। মার্কিন ডলার আর ইউরো ব্যবহার হচ্ছে যথাক্রমে ৪০ শতাংশ আর ৩৬ শতাংশ। ইউরোর ওপর রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। জটিল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুহূর্তে ইউরোকে সমর্থন দেবে কে? তার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে কোন সরকার? অপর দিকে চীনের ইউয়ান সরকারের ইচ্ছাধীন। সরকার যেভাবে ইচ্ছা, তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ফলে আস্থার সঙ্কট থাকছে উভয় মুদ্রায়। যদিও চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রফতানিকারক দেশ। ঋণ ও অন্যান্য সুবিধার মাধ্যমে বেইজিং এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভালোই প্রভাব বিস্তার করেছে। কিন্তু চীনের আইনি ব্যবস্থা ও আদালতের ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা খুবই কম। 

ইউরো নিজেকে ডলারের বিকল্পে দাঁড় করাতে না পারার পেছনে যুক্তরাজ্যের দায় কম নয়। ইইউর সব দেশ ইউরো ব্যবহারে একমত হলেও পাউন্ড ছাড়তে রাজি হয়নি লন্ডন। ব্রিটেন এখানে বাগড়া না দিলে ডলারের বিকল্প হওয়ার পথে ইউরো এগিয়ে যেত বহুদূর। এরপর ইউরোকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর সব চেষ্টাই কোনো-না-কোনোভাবে নষ্ট করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ডলারের পাল্টা কিছু খুঁজছে বিশ্ব।  রুশ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মত হচ্ছে একটি ইউরেশিয়া ইউনিয়ন গঠন। রাশিয়া, চীন তো আছেই, সাথে তুরস্কও থাকবে, এমন জল্পনা ব্যাপক। ইউরেশিয়া ইউনিয়নের মূল লক্ষ্য হবে ডলারের পতন ঘটিয়ে পৃথিবী থেকে আমেরিকার ভয়কে অতীত করে দেয়া।ইউয়ানকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চীনকে দু’টি কাজ করতেই হবে। প্রথমত, ডলারের প্রতি দুনিয়াজুড়ে যে আস্থা তা নষ্ট করতে হবে। এটি তখনই সম্ভব, যখন ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবে। কিংবা যখন এ বিষয়ক পূর্বাভাসগুলো ভুল প্রমাণিত হবে। চীনকে দ্বিতীয় যে কাজটি করতে হবে, তা হলো ইউয়ানের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রমাণ করা। না হয় অন্যান্য দেশের আস্থা অর্জন অসম্ভব।

সেফ হ্যাভেন ইফেক্ট    
অর্থনীতিতে সেফ হ্যাভেন এমন এক ধরনের বিনিয়োগ যা বাজারের অস্থিরতার সময়ে মূল্য ধরে রাখতে বা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়। বিনিয়োগকারীরা বাজারের মন্দার ঘটনাতে তাদের ক্ষতির এক্সপোজার সীমিত করার জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করে। যাইহোক, কোন সম্পদ আসলে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে মনে করা হয় তা ডাউন মার্কেটের নির্দিষ্ট প্রকৃতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। এর অর্থ হল একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে কাজ করার জন্য বিনিয়োগের জন্য, বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই যথেষ্ট যথাযথ পরিশ্রম করতে হবে।

"সেফ হেভেন কারেন্সি" হচ্ছে ফরেক্স (বৈদেশিক লেনদেন) ট্রেডারদের বিপদের আশ্রয়স্থল। এটি এমন একটি মুদ্রা যেটাকে ফরেক্স ট্রেডাররা আর যেকোনো মুদ্রা থেকে বেশী বিশ্বাস করে। আর তাই যখনই, ফরেক্স মার্কেটে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় বা বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থির হয়ে পড়ে, তখনই ট্রেডাররা সেফ হেভেন কারেন্সি এর দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং কিনতে শুরু করে।

ডলার, ইয়েন এবং সুইস ফ্রাঙ্ক, মুলত এই তিনটি মুদ্রাকেই সেফ হাভেন কারেন্সি হিসেবে ধরা হয়। এর বাইরে স্বর্ণও "সেফ হেভেন" হিসাবে বহুল ব্যবহৃত হয়। অনেকের কাছে পাউন্ড ও অস্ট্রেলিয়ান ডলার ও সেফ হেভেন। কিন্তু, তা সর্বজনগ্রাহ্য নয়।

প্রথমত, ডলার, ইয়েন এবং সুইস ফ্রাঙ্ক, এগুলো   যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং সুইজারল্যান্ড এর মুদ্র। তিনটি দেশেরই অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী, তার থেকেও বড় কথা দেশগুলোর অর্থনীতি দীর্ঘসময় ধরে স্থিতিশীল। ইউরোপের দিকে তাকান, ঋণ ভারে জর্জরিত এর বিভিন্ন সদস্য দেশ। তাই সঙ্গত কারনেই, বিনিয়োগকারীরা সংকটের সময় তাদের মূলধনের পূরোটা এসব দেশে রাখতে সাহস পান না। বরং, সেক্ষেত্রে তারা একটি নিরাপদ মুদ্রাকেই আশ্রয়স্থল হিসাবে খোঁজেন। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, সুইজারল্যান্ড, এই দেশগুলোর অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী বলে, বৈশ্বিক সংকতের সময় তা খুব বেশী আক্রান্ত হয় না। যেমন, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি চীনের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল যেহেতু, চীনের অর্থনীতি এর রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হয়ে এলে, চীনের অর্থনীতিতে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়ে যেটা যুক্তরাষ্ট্র অথবা জাপানের ক্ষেত্রে ঘটে না যেহেতু এসব দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। সংকট সময়ে, সেফ হেভেন কারেন্সিগুলোর দিকে ট্রেডারদের ঝুঁকে পড়ার এটা অন্যতম কারন। 
আর্থিক অস্থিরতার সময়ে প্রায়ই ‘সেফ হ্যাভেন’প্রবাহ থেকে উপকৃত হয় মার্কিন মুদ্রা।  

সহজ কাজ নয় 
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন ডলারের একাধিপত্যকে অপসারণ করা এত সহজে সম্ভব হবে না। কারণ একে তো মার্কিন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব এখনো অত্যন্ত ব্যাপক, তদুপরি মার্কিন ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর যে আস্থা আছে, অন্য কোনো রাষ্ট্রের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর তাদের এতটা আস্থা নেই। বিশেষত চীনের অর্থব্যবস্থার সচ্ছতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান এবং চীনা রেনমিনবিকে রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত করে বিশ্বব্যাপী চীনা অর্থনৈতিক আধিপত্য স্বীকার করে নেয়ার ইচ্ছেও অনেক রাষ্ট্রের নেই। ইউরো বা জাপানি ইয়েনকে দিয়ে মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপন করার ক্ষেত্রেও নানাবিধ সমস্যা বিদ্যমান। তাছাড়া, আকস্মিকভাবে মার্কিন ডলারকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, সুতরাং সেটিও এই প্রস্তাবনার একটি বড় প্রতিবন্ধক। 

মার্কিন ডলার ফিয়াট মানি হওয়ার পর থেকে কোন কোন সূত্র অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে চলমান ৮০% হতে ৯০% ডলারের বিপরীতে কোন সোনা মজুত নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব ঋণ  আকাশচুম্বী হয়েছে। চীনারা এর প্রাকদর্শন করেছিল ৫০ বৎসর পূর্বেই।  এখন চীনের কাছে কম করে হলেও  ২০,০০০ টন স্বর্ণ জমেছে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাত্র  ৮,০০০ টন।  চীনের এই পরিমান ক্রমাগত বাড়ছে।  তাই মনে হয়  অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব সম্ভবত সর্বোচ্চ সোনার মালিক আর নতুন বিশ্ব অর্থিনৈতিক  শক্তির মালিক হিসেবে চীনকেই বিশ্ব মাতবর হিসেবে মেনে নিবে।  

 
লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯) ।
ইমেইল: [email protected] 

এই বিভাগের আরো সংবাদ