আত্মীয়লীগের বিরুদ্ধে কথা এত দিন পরে কেন?

  মোশাররফ হোসেন মুসা

২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২০ | আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২১ | অনলাইন সংস্করণ

মনীষীরা বলে গেছেন, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’। আওয়ামী লীগের কাছে বিষয়টি ঠিক উল্টা। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ মনীষীর বাণীটি আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে অভ্যন্তরীন কোন্দল বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বহু মন্ত্রী-এমপি তাঁদের স্বজনদের উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যন বানাতে চান। সে জন্য দলের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছে। এটি মনে হয়, ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় কৌতুক। লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকেরা বহুদিন আগে থেকে বলে আসছেন একজন এমপি মানে নিজ নিজ এলাকায় আলাদা আলাদা সরকার। 

একজন এমপি তিন বার  চারবার, এমনকি ছয়বার পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁরা নিজ নিজ এলাকায় কায়েম করেছেন এমপিতন্ত্র। তাঁরা নিজ পুত্রকে পৌর মেয়র, ভ্রাতাকে উপজেলা চেয়ারম্যাান, ভাগিনাকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েই ক্ষান্ত হননি; নিজের পছন্দে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ সব লীগের কমিটি গঠন করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এভাবেই চলমান রয়েছে। বলা যায় ইতোমধ্যে এ স্বৈরাচারী নিয়মটি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়ে গেছে। এতে তরুণ কর্মীরা হতাশ হয়ে গ্রুপিং রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে না। জামায়াত অংশ নেওয়ার আলামত দেখা গেলেও তারাও নাকি সরে দাড়াচ্ছে। ফলে একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক প্রত্যাহার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের বাড়াবাড়ি দেখে কেন্দ্র শঙ্কিত হয়ে উপরিউক্ত নির্দেশনা দিয়েছে।

সম্প্রতি নাটোরে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক লুৎফল হাবিব তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধর করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং তাঁর শ্যালককে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ একরামুল হক চৌধুরী বলেছেন, যে এলাকা থেকে ভোট কম দিবেন, সে এলাকায় আমি কোনো উন্নয়ন হতে দেবো না।’ উল্লেখ্য তাঁর নির্বাচনী এলাকার সুবর্ণচর উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন- তাঁর পুত্র শাবাব চৌধুরী। মজার বিষয় হলো- উপজেলা পরিষদ কি, উপজেলা প্রশাসন কি, উপজেলা পরিষদের কাজ কি ইত্যাদি না জেনেই তারা পদ দখলের লড়াই করছেন। তারা স্থানীয় সরকার নিয়ে ভাবছেন না। চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান হতে পারলে দলে নিজের অবস্থান মজবুত হবে এবং ভবিষ্যতে বড় পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে- একমাত্র এটাই তাদের লক্ষ্য। 

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় একপেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দীর্ঘকালের অদলীয় ঐতিহ্য ক্ষুন্ন হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একটি মাত্র সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় সকল ক্ষমতার মালিক কেন্দ্রীয় সরকার। আবার কেন্দ্রীয় সরকার গণতান্ত্রিক নিয়মে পরিচালিত না হওয়ায় সকল ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে প্রায় ৩৭ জন এমপি রয়েছেন। দূও সম্পর্কীয় আত্মীয়রাও ক্ষমতার দাপট দেখান। এখন সত্যিকার অর্থে যদি আত্মীয়লীগ দূর করতে হয়, তাহলে একাধিক সরকার ব্যবস্থা তথা কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

স্থানীয় সরকার ইউনিটগুলোকে স্তরবিন্যাস করে প্রজাতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে (যেমন জেলা সরকার, নগর সরকার, উপজেলা সরকার, ইউনিয়ন সরকার ইত্যাদি)। দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকারের ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল পরিচালনার নীতির কারণে সকল জায়গায় ব্যক্তিচর্চা বিদ্যমান। প্রতিটি উপজেলায় ৫-৬টি গ্রুপ। আওয়ামী লীগের অফিসে কিংবা দলীয় আড্ডায় তারা আওয়ামী লীগের আদর্শ নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলে না। দলের অধিকাংশ কর্মীরা দুটি স্লোগান শিখেছে, ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’। 

লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারবিষয়ক গবেষক

এই বিভাগের আরো সংবাদ