আজকের শিরোনাম :

এএমএ মুহিত : একজন দেশপ্রেমিকের প্রতিকৃতি

  ড. মো. মতিউর রহমান

২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৯ | অনলাইন সংস্করণ

ড. মো. মতিউর রহমান
সাম্প্রতিককালে করোনা অতিমারি শুধুমাত্র বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি, অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি অনেক কৃতী সন্তানের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে গেছে। আমরা এই করোনাকালে যেসব দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি, তাঁদের অন্যতম ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত- যিনি এএমএ মুহিত নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। যদিও দীর্ঘদিন নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। পরিশেষে ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল  ৮৮ বছর।

সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত ছিলেন এমন এক বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী যা তাঁর সমসাময়িককালের অনেকেই ঈর্ষাণ্বিত করেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দুই দফায় ১২ বছরের বেশি সময় ধরে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর অর্থমন্ত্রী থাকার রেকর্ড গড়েন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট ঘোষণা করে দেশের অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখেন। দেশের এই কৃতী সন্তানের বড় বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। পেশাগত জীবনে একজন ব্যুরোক্রেট হলেও তিনি আর পাঁচজন সাধারণ উচ্চপদস্থ আমলার মতো ছিলেন না। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী, আচার-আচরণ- এমন কি পোশাক-পরিচ্ছদও ছিল ব্যতিক্রমী। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত অমায়িক মুহিত সাহেবের সঙ্গে যারা আলাপ করার সুযোগ পেয়েছেন, তারাই আঁচ করতে পেরেছেন তাঁর পা-িত্য ও দেশপ্রেম। তিনি জন্মেছিলেন সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে, ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি। তাঁর বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত আসাম মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা। মাতা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী ছিলেন শিক্ষিত একজন নারী। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সিলেট শহরে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৫১ সালে এএমএ মুহিত সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন, ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণি পেয়ে কৃতকার্য এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি বিদেশে চাকরিরত অবস্থায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৩-৬৪ সালের শিক্ষাবর্ষে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে বরাবরই মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিগণিত হলেও এএমএ মুহিত কখনোই দেশের- বিশেষত শোষিত এবং অবহেলিত জনগণের কথা ভুলেননি। আজীবন তাদের প্রতি নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। যে কারণে কৈশোরেই তিনি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় মহান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সোচ্চার থাকায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। উল্লেখ্য যে পরবর্তীকালে এএমএ মুহিত ‘স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট ইন ইস্ট বেঙ্গল ১৯৪৭-১৯৫৬’ শিরোনামে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি তথ্যবহুল বই প্রণয়ন করেন- যা ২০০৮ সালে ঢাকার দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রকাশ করে।

শিক্ষা জীবনের মতোই কর্মজীবনেও মুহিত সাহেব অত্যন্ত সফল ছিলেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। একজন সিএসপি অফিসার হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৩ বছর চাকরি করার পর ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানেই কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে পরবর্তীকালে ঢাকার এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এএমএ মুহিত বলেন, “এটা আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি আমেরিকায় ছিলাম। দূতাবাসে কাজ করি। ১৯৬৯ সালের আগস্টে দূতাবাসে যাই। যাওয়ার কথা ছিল ৬৯-এর শুরুতে। গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়েছিল বিধায় তখন আর দূতাবাসে যাইনি। আমলা হিসেবে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের একটি সুযোগ হয়েছিল। আমার ধারণা ছিল শেষ পর্যন্ত একটা সমঝোতা হবে। বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর খুব উদগ্রীব হয়ে এসব ব্যাপার অবলোকন করছিলাম। যেদিন সামরিক হামলা হলো, সেদিনই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম পাকিস্তান খতম হয়ে গেছে। পরে আনুগত্য পরিবর্তন করি। আমেরিকান সমাজে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করি।” (দৈনিক অর্থনীতি, ৭ ডিসেম্বর ২০০১) বলা বাহুল্য, মুহিত সাহেব ছিলেন প্রথম বাঙালি কূটনীতিক- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়া মাত্রই যিনি পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের যুদ্ধের পুরো সময় তিনি আমেরিকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠিত এবং মার্কিন জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালিয়েছেন। সেই সুবাদে তিনি প্রত্যক্ষ এবং পর্যবেক্ষণ করেছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মার্কিন জনগণ এবং তৎকালীন নিক্সন প্রশাসনের ভূমিকাকে। পরবর্তীকালে ওই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি লিখেছেন ‘আমেরিকান রেসপন্স টু বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’ শীর্ষক এক বিশাল গ্রন্থ। বিদগ্ধ মহলের মতে ইংরেজি ভাষায় লিখিত এই বইটি হলো মুহিত সাহেবের অসাধারণ কাজগুলোর একটি। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত অন্যতম আকর গ্রন্থ।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর, ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে এএমএ মুহিত আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ততদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মুহিত দেখা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। তাজউদ্দিন তাঁকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনাকে ডেকে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম যুক্তরাষ্ট্রে আপনি ভালো কাজ করছেন তখন আপনাকে সেখানেই রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে এএমএ মুহিত পরিকল্পনা কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার আগে তিনি পাকিস্তান কর্মপরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ও উপ-সচিব ছিলেন। ওই সময় তিনি তৎকালীন পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরে পাকিস্তান কংগ্রেসে পেশ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব হন এএমএ মুহিত। তবে ২৫ বছর সরকারি চাকরি করার পর তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড ফাউন্ডেশনে অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন। পরে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুবাদে একজন অর্থ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হন। এর মাঝে ১৯৮৩-৮৪ সালে এরশাদ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এসকাপের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাঁর কর্মজীবনে বড় সফলতা ছিল ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা দশ বছর বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী পদে থাকা। এ সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে তার পিছনে মুহিত সাহেবের বিশেষ অবদান রয়েছে। একজন পেশাদার অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মেধা ও প্রজ্ঞাকে ষোলআনা কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে অর্থনীতির সব সূচকেই বিস্ময়কর অগ্রগতি এবং বিশ্বব্যাংকসহ পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠীর সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে সক্ষম হয়।

আমাদের সমাজে এএমএ মুহিত শুধু একজন কৃতী অর্থনীতিবিদ কিংবা সফল অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্বও ছিলেন। আশি উর্ধ্ব বয়সেও তিনি ছিলেন একজন যুবকের মতোই প্রাণশক্তিতে ভরপুর। পোশাক-আশাক, ব্যক্তিগত আচার-আচরণ ও কর্ম তৎপরতায় তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও বিরল ব্যক্তিত্বকেই প্রকাশ করে গেছেন। অর্থমন্ত্রী মুহিতের আরেকটি বিষয় হলো তিনি একজন সফল লেখক। দুই ডজনের মতো বই লিখে গেছেন। দুটি বইয়ের কথা ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে। বাংলা এবং ইংরেজি- দুই ভাষাতেই লিখতে তিনি ছিলেন পারদর্শী। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ইতিহাস, অর্থনেতিক উন্নয়ন, জনপ্রশাসন ও দেশের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে একের পর এক বই উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর আরেকটি অসাধারণ কাজ হলো, ‘বাংলাদেশ : ইমার্জেন্স অব এ নেশন’ বইটি। এই বইতে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছেন। ইংরেজি ভাষাভাষী পাঠকের জন্য প্রকাশিত হওয়ার পর বইটির গুরুত্ব অনুধাবন করে ঢাকার একটি প্রকাশনা সংস্থা পক্ষ থেকে এর বাংলা ভাষান্তরের জন্য লেখককে অনুরোধ করা হয়। ফলশ্রুতিতে এদেশের পাঠকদের হাতে আসে ‘বাংলাদেশ : জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব’ নামক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এক পুর্ণাঙ্গ গ্রন্থ- যার অভাব দীর্ঘদিন যাবৎ অনুভূত হচ্ছিল। এই বইতে এএমএ মুহিত বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বস্তুত পক্ষে রেসকোর্স ময়দানের ৭ মার্চের জনসভাই স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। একে একটি শর্তসাপেক্ষ স্বাধীনতার ঘোষণা বলে বিবেচনা করা যায়। তিনি এই ভাষণের উপসংহারে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলে ঘোষণা দেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই বইতে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে মহল বিশেষের বিতর্ক সৃষ্টি করা বিষয়ের প্রতি মুহিত সাহেব আলোকপাত করেছেন। তিনি লিখেছেন, “২৫ মার্চ পাকিস্তান সমঝোতার পথ পরিহার করে শঠতার আশ্রয় নিয়ে বাঙালিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এক পৈশাচিক সামরিক অভিযান শুরু করে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকারীদের সরে পড়তে বলে নিজে অপেক্ষা করে রইলেন তাঁর আক্রমণকারীর জন্য। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অভ্যস্ত জননেতার এই ছিল স্বাভাবিক আচরণ। পাকিস্তানি আক্রমণে কিন্তু কোনো সদিচ্ছার স্থান ছিলনা, তারা বন্দুকের জোরে বাঙালিকে সম্পূর্ণ পদানত করতে ব্রতী হয়। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর মার্চের দিক-নির্দেশনাই হয় সারাদেশের আশ্রয়। যাঁর যা কিছু আছে, তাই নিয়ে তাঁরা শত্রুর মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। মার্কিন সরকারি সূত্রে তখনই জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ধরা পড়ার আগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণার তারবার্তা প্রেরণ করেন। কিন্তু সে বার্তা প্রেরণ করা ছিল শুধুমাত্র লৌকিকতা। বাংলাদেশের সর্বত্র, শুধু চট্টগ্রামে নয়, পঁচিশে মার্চ রাতেই প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।”

মোট কথায়, মরহুম এএমএ মুহিত তাঁর ৮৮ বছরের দীর্ঘ জীবনে নানা অবস্থান থেকে দেশ ও জাতির জন্য গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অবদান কখনো বিস্মৃত হওয়ার নয়। উত্তর প্রজন্ম জাতির এই কৃতী সন্তানকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করবে।

 

ড. মো. মতিউর রহমান​​​​​​​ : সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
                             প্রেসিডেন্ট, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাব্যুনাল
                             সদস্য, পরিচালনা পর্ষদ, সোনালী ব্যাংক পিএলসি।

এই বিভাগের আরো সংবাদ