মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের ধূর্ত চাল

  আলাউদ্দিন মল্লিক

২২ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৩১ | অনলাইন সংস্করণ

মার্কিনিদের  হাতছাড়া মধ্যপ্রাচ্য 
মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে মার্কিন  পররাষ্ট্রনীতি  অগ্রাধিকের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রযোজনেও  বিশ্বের বিভিন্ন  দেশের সাথে  নানাবিধ সম্পর্ক তৈরী করছে; বিশেষতঃ  চীন, রাশিয়া, তুরস্ক আর ইরানের সাথে। মার্কিনিরা বর্তমানে ইন্দো-প্যাসিফিক আর মধ্য এশিয়ার  আর পূর্ব ইউরোপ ও   ইউক্রেনকে নতুন ফোকাস হিসেবে নির্ধারণ করেছে।  ইউক্রেন সংকট মূলত পশ্চিমা বিশেষ করে মার্কিনিদের সৃষ্ট বিশ্ব অস্ত্র ব্যবসার প্রসার আর নিয়ন্ত্রণের অংশ।  
আমেরিকার এই আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার ফলস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্য আর বৃহত্তর আরব বিশ্বের অনেক আঞ্চলিক শক্তির উত্থান এবং এর সাথে এই অঞ্চলের বিভিন্ন আঞ্চলিক সমীকরণের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।  এরইরান  মধ্যেই দুটি পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে;  ইরান আর সিরিয়ার সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকরণ।  সিরীয়রা নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য ইরান, রাশিয়ার আর তুরস্কের সাথে বহুমাত্রিক  সম্পর্ক তৈরী করেছে।  এরই মধ্যে ইরান , চীন আর রাশিয়ার  এই অঞ্চলে একটি শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে।  
আরব দেশগুলোর উপর মার্কিন চাপ কমে গেছে।  চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব আর ইরানের সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে।  তারা নিজেদের মধ্যে দূতাবাস চালু করেছে আর বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখছে।  চীন এই অঞ্চলে একটি অন্যতম উপাদান; চীন তার তেল আমদানিতে মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকান মুসলিম দেশগুলোর উপর ক্রমাগত ঝুকে পড়ছে।  ফলে এই অঞ্চলে চীনা বিনোয়োগও ;অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে;  ২০২১ সালে সাড়ে তিন গুন  (৩৬০%) যেখানে ভৌত অবকাঠামোতে  প্রায় দ্বিগুনের বেশি ( ১১৬%) ।  জর্দান, ওমান, মিশর এবং অবশ্যই সৌদি আরব যারা ইতি পূর্বে মার্কিন প্রভাব বলয়ে ছিল - তাদের সাথে চীনা বিনিয়োগ ক্রমাগত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।  মার্কিনিদের মধ্যপ্রাচ্য হতে মনোযোগ সরানোর সুযোগে চীন নিজের শক্ত অবস্থান করতে পেরেছে।

মনোযোগ সরানো 
গাজায় প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয় ১৫ নভেম্বর ১৯৮৮, ইয়াসির আরাফাত যার প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।  এটি ছিল "ভূমির বিনিময়ে শান্তি" চুক্তির বাস্তবায়ন যার প্রধান দুটি পক্ষ ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন আর পিএলও প্রধান ইয়াসির আরাফাত। আর মধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় তিনযুগ; প্রতিস্রুতি অনুযায়ী প্যালেষ্টাইনীরা সশস্র যুদ্ধ বন্ধ করলেও প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সবকিছুই ভঙ্গ করে চলেছে। একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোন অগ্রগতি তারা করতে দেয়নি ; ক্রমাগত নানা ফন্দি-ফিকির আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইয়াসির আরাফাতকে হত্যা করাসহ নানা গ্রুপ আর উপগ্রুপের সৃষ্টি করে প্যালেস্টাইনীদের ঐক্য দুর্বল করা, নানা জঙ্গি তৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বে নিজেদের অনৈতিক কর্মকান্ড আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে।  এর সাথে যুক্ত হয়েছে নিজেদের ইহুদি রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন নতুন এলাকায় ইহুদি বসতি স্থাপন করার মাধ্যমে। নিকট অতীতে আল আকসা মসজিদের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তাদের থার্ড টেম্পল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ দ্রুত করতে থাকে।  এরই ফলে হামাস তাদের দীর্ঘ নেয়া প্রতিরোধ আক্রমনটি ৭ ই অক্টোবর ২০২৩ ইহুদি পবিত্র সাবাথের দিন পরিচালনা করে।  আর সারা পৃথিবীর মনোযোগ চলে গেল এই  ঘটনাতে।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ 
হামাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিন সশস্র গোষ্ঠীগুলো পরিচালিত ৭ অক্টোবরের এই বড় আক্রমণটির প্রতি আক্রমণ যা ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নাম দিয়েছে অপারেশন আয়রন - এই অঞ্চলে একটি দীর্ঘস্থায়ী মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে।  ২০২৩ সালে ফিলিস্তিন এলাকায় ইসরাইলী বসতি স্থাপন বৃদ্ধি ও বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস্রতা, জেনিনে সংঘর্ষ, ২০২১ এ সংঘাতের ফলে আল আকসা মসজিদ আর গাজায় ২৫০ জন প্যালেস্টাইনী আর ৩২ জন ইসরাইলী নিহত হওয়া - যেগুলো হামাস তাদের আক্রমণের ন্যায্যতা হিসেবে  উপস্থাপন করে।  আর এর উপর নির্ভব করে হামাস সমস্ত ফিলিস্তিনিদেও ‘দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ যোগ দেয়ার আহবান জানায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলী  প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জরুরি অবস্থা ও যুদ্ধ ঘোষণা করেন।  

হামাসের আক্রমণটি ইহুদিদের পবিত্র শিমচাত  তোরাহের দিনে হয়েছিল যা ইসরাইলিদের কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করে।  আক্রমণটি ঠেকাতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-কে সক্রিয় করেছিল ইসরাইল।  ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট তেল আবিবে ইসরাইলি  প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদর দফতরে নিরাপত্তা মূল্যায়ন পরিচালনা করেন।  ইয়োভ গ্যালান্ট পরবর্তীতে হাজার হাজার সংরক্ষিত সৈনিকদের একত্রিত করার অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং গাজা সীমান্তের ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল ) মধ্যবর্তী এলাকায় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, ‘হামাস একটি গুরুতর ভুল করেছে, আর ইসরাইল অবশ্যই জয়ী হবে।’ ইসরাইলি  প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইসরাইল রাষ্ট্র’ ঘোষণা করে সংরক্ষিত সৈনিকদের শুধু গাজাতেই নয়, এর সাথে পশ্চিম তীর, লেবানন আর সিরিয়ার সীমান্তে মোতায়েনের ব্যবস্থা  করা হয়।  গাজা উপত্যকার আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির ভিতর থাকার নির্দেশ দিয়ে, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরাইলের  বেসামরিক নাগরিকদের ‘আশ্রয়কেন্দ্রের নিকট থাকার’ পরামর্শ দেয়া হয়।  গাজা উপত্যকার আশেপাশের সড়কগুলি আইডিএফ বন্ধ করে দেয়। আর রাজধানী তেলআবিবের রাস্তাগুলোকে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল।
এর মধ্যে ৬ মাস পেরিয়ে গেছে; পারি ৪০ হাজার মৃত্যু আর বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ মানুষের উপর মারাত্মক বিপর্যয় নিয়মিত ঘটনা। এই মানবিক বিপর্যয়ের কারণে গোটা বিশ্বে বিশেষত উন্নত বিশ্বে  (ইউরোপ, আমেরিকায় আর অস্ট্রেলিয়ায়  বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।  ইসরাইল পাশ্চাত্যের পরামর্শে আর  সমর্থনে শুরু করে আরেকটি নিশ্চিত খেলা- আরেকটি মূর্খ দেশ ইরানকে যুদ্বে সম্পৃক্ত করা, যা তাদের দুস্কর্ম আর দুষ্ট বুদ্ধির কর্মকান্ডগুলোকে বৈধতা দিবে। আর ইরানও নিশ্চিন্তে এই ফাঁদে পা দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

অগ্নিগর্ভ মুসলিম বিশ্ব 
পবিত্র আল আকসা মসজিদে ইসরাইলি দখলদারদের তান্ডবের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব।  মসজিদের ভিতর নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, তুরস্ক, বাংলাদেশ সহ  বেশির ভাগ মুসলিম দেশ।  তবে এই ইস্যুতে অনেকটাই নরম পশ্চিমাদের।  মসজিদে আর ফিলিস্তিনিদের উপর হামলার ইসরাইলি তান্ডব নিয়ে তেমন কিছু না বললেও তারা সরব হয়েছে ইসরাইলের উপর হামাসের হামলা নিয়ে।  এ বিষয়ে প্রায় একই ধরণের যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের মত উন্নত দেশগুলো। জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকে  কেন্দ্র করে বিগত সময়ে ব্যাপক জোর-জবরদস্তি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।  এক পর্যায়ে ইসরাইল আল আকসা মসজিদের ভিতরে তান্ডব চালায়।  এরপর গাজায় বিমান হামলা চালায় যাতে  ২২ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি মারা যায়।  এই সমস্ত ইসরাইলি বর্বর কর্মকান্ড বিশ্বে এগুলো থামানোর চেষ্টা চলতে থাকে।  জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এর বিরুদ্ধে উঠানো প্রস্তাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে পাস  হতে পারেনি।  
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির পরিবর্তন এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব কমতে থাকে; আর চীন, রাশিয়া আর ইরানের প্রভাব বাড়তে থাকে। ফলে ইসরাইলে যে হুমকি সারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জন্য একটি সুতীব্র মাথার ব্যথা ছিল  তাও যেন  কমে যেতে থাকে।  ফলে, হামাসও নিজেদের শক্ত অবস্থান করতে একটি শক্ত হামলা পরিকল্পনা করেছিল বৎসরাধিকাল সময় ধরে।

ইসরাইলের খোঁচা 
১ এপ্রিল ২০২৪-এ একটি ইসরাইলি বিমান হামলা সিরিয়া দামেস্কে ইরানি কন্সুলেট এনেক্স  ভবন ধ্বংস করে, ইসলামিক রেভুলুশনারী গার্ড কর্পস (ওজএঈ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি, কুদস ফোর্সের একজন সিনিয়র কমান্ডার সহ  ১৬ জন নিহত হয়।  এর সাথে আরো ৭ জন আইআরজিসি অফিসার।ও দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার  সময় এবং ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষের ইসরাইল বিমান আক্রমণ করেছিল। 
অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই হামলার নিন্দা করেছে।  কিন্তু ইরানকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর মূল  লক্ষ্য সম্পূর্ণ সফল।  ১৩ এপ্রিল ২০২৪ -এ ইরান ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয়; ইরান দাবি করে যে, এটি প্রাথমিকভাবে সেই ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে যেগুলি থেকে সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কন্সুলেটে হামলা চালিয়েছিল।

 ইরান-ইসরাইল ছায়াযুদ্ধ 
১৩ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার মধ্যরাতে, ইরানি হামলার মুখে সক্রিয় হয়ে উঠে ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।  ইসরাইল তার মিত্রদের নিয়ে সীমানায় প্রবেশের আগেই অনেক ড্রোন এবং মিসাইল ভূপাতিত করে।  অন্তত নয়টি দেশ সমপৃক্ত ছিল শনিবারের রাতের সামরিক তৎপরতায়।  ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে হতে ছোঁড়া  হয় এই ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন। সেগুলোকেভূপাতিত বা প্রতিহত করে ইসররাইল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এন্ড জর্ডান। 
রোববার (১৪.০৪.২০২৪) ইসরাইল সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগরির টেলিভিশনে জানান, আক্রমণে ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ত্রুজ মিসাইল অন্তর্ভুক্ত ছিল।  এগুলোর কোনোটাই ইসরাইলে আঘাত হানতে  পারেনি।  একই সাথে ১০০ টি ব্যালাস্টিক মিসাইল হামলা চালানো হয়; এর মধ্যে অল্প কিছু ইসরাইল পর্যন্ত আঘাত হানে।  লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ জানায়, গোলান হাইট-এ অবস্থিত ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে দুই দফা রকেট হামলা চালিয়েছে তারা।   
 
ইরান-ইসরাইল ছায়াযুদ্ধ 
১৩ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার মধ্যরাতে, ইরানি হামলার মুখে সক্রিয় হয়ে উঠে ইসরাইলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।  ইসরাইল তার মিত্রদের নিয়ে সীমানায় প্রবেশের আগেই অনেক ড্রোন এবং মিসাইল ভূপাতিত করে।  অন্তত নয়টি দেশ সমপৃক্ত ছিল শনিবারের রাতের সামরিক তৎপরতায়।  ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে হতে ছোঁড়া  হয় এই ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন। সেগুলোকেভূপাতিত বা প্রতিহত করে ইসররাইল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এন্ড জর্ডান। 
রোববার (১৪.০৪.২০২৪) ইসরাইল সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল হাগরির টেলিভিশনে জানান, আক্রমণে ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ত্রুজ মিসাইল অন্তর্ভুক্ত ছিল।  এগুলোর কোনোটাই ইসরাইলে আঘাত হানতে  পারেনি।  একই সাথে ১০০ টি ব্যালাস্টিক মিসাইল হামলা চালানো হয়; এর মধ্যে অল্প কিছু ইসরাইল পর্যন্ত আঘাত হানে।  লেবাননের ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ জানায়, গোলান হাইট-এ অবস্থিত ইসরাইলি সামরিক ঘাঁটিতে দুই দফা রকেট হামলা চালিয়েছে তারা।

ইরানি আত্মাভিমান 
১৯৭৯ সালে, ইমাম খোমেনীর অধীনে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর, এই দেশটি একটি নতুন মৌলবাদী শিয়া ইসলামী পরিচয় তৈরী করে।  শিয়া মতাদর্শ এই দেশকে মধ্যপ্রাচ্য হতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।  ইরাক ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর হতে উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু করে যা ১৯৮৮ সালের অগাস্টে শেষ হয়।  যদিও উপসাগরীয় যুদ্ধ ফলহীন ছিল, ইরান তার নিজস্ব গর্ব নিয়ে বিদ্যমান।  একটি মৌলিক ধর্মীয় পরিচয়সহ, ইরান প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে যার একটি যুদ্ধ শিল্প।  এখন ইরানের প্রয়োজন বিশ্ব স্বীকৃতি- বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে।

দুই দেশের শক্তি 
বিবিসি রিপোর্ট অনুযায়ী, সক্ষমতার দিক দিয়ে তুলনা করলে দেখা যায়, দুটি দেশই সামরিক দিক থেকে বেশ শক্তিশালী।  ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরান ইসরাইলের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে; রাংকিংয়ে ইরান ১৪ তম  আর ইসরাইল ১৭তম।  ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাজেট হল ২৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার, ইরানের ৯৯৫ কোটি।   প্রতিরক্ষা বাজেটের তুলনায় ১৪৫ দেশের ভিতর ইরান ৩৩তম, ইসরাইল ১৯তম। 
নিয়মিত সৈন্য: ইরানের ১১ লাখ ৮০ হাজার, ইসরাইলের ৬ লাখ ৭০ হাজার; রিজার্ভ- ইরানের ৩ লক্ষ আর ইসরাইলের ৪ লাখ। 
যুদ্ধ বিমান: ইরানের মোট সামরিক বিমান ৫৫১, ইসরাইলের ৬১২; এর মধ্যে ইরানের যুদ্ধ বিমান ১৮৬, ইসরাইলের ২৪১। ইরানের এট্যাকিং  বিমান ২ টি আর ইসরাইলের ৩৯টি। পরিবহন বিমান ইরানের ৮৬, আর ইসরাইলের ১২টি। প্রশিক্ষণ বিমান ইরানের ১০২টি আর ইসরাইলের ১৫৫টি। 
হেলিকপ্টার: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ইরানের  হেলিকপ্টার  আছে ১২৯ আর ইসরাইলের ১৪৬টি।  ৪৮টি অ্যাটাকিং হেলিকপ্টার নিয়ে ইসরাইল এগিয়ে। 
ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুসারে, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানের দিক দিয়ে ইরান ইসরাইলের চাইতে এগিয়ে: ইরানের ট্যাংক  ১৯৯৬ আর ইসরাইলের ১৩৭০টি।  সাঁজোয়া যান ইরানের ৬৫ হাজার ৭৬৫টি, আর ইসরাইলের ৪৩ হাজার ৪৯৩টি।  এছাড়া আর্টিলারি সক্ষমতায় ও ইরান এগিয়ে: রকেট আর্টিলারি এমএলআরএসের সংখ্যা ৭৭৫টি আর সেলফ প্রোপেল্ড আর্টিলারি সংখ্যা ৫৮০ আর ইসরাইলের যথাক্রমে ৬৫০ ও ১৫০টি।  
নৌ শক্তি: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার' জানাচ্ছে, ইরান নৌ শক্তিতে এগিয়ে;  ৭টি ফ্রিগেট আর ২১ টি টহল জাহাজ সহ  ১৯১ টি যুদ্ধজাহাজ। যেখানে ইসরাইলের যুদ্ধজাহাজ ৬৭ টি।  সাবমেরিনের দিক দিয়ে ইরানের ১৯টি আর ইসরাইলের ৫টি। 
পারমাণবিক শক্তি: সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)-র  সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গত বৎসর বিশ্বের ৯টি দেশের কাছে ১২ হাজার ৫১২ টি পারমানবিক অস্ত্র আছে।  দেশগুলোর হল: যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া আর ইসরাইল। ইরানের কাছে পারমানবিক অস্ত্র থাকার আলোচনা  থাকলেও এই তালিকা অনুযায়ী ইরানের কাছে এই ধরণের অস্ত্র নেই।

বিশ্বে প্রভাব
১ এপ্রিল ২০২৪, ইসরাইলের দামেস্কের ইরানের কনসুলেট এনেক্স  ভবনে আক্রমণ চালায় ইসরাইল। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।  বরং, ১৩ই এপ্রিল ২০২৪ এর ইরানি আক্রমণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো  বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি শুনাক, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফরাসি আর জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা হামলার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানান।  এমনটি এরা সহ অনেক দেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইসরাইলের প্রতি আক্রমণের আশংকায়। যেন, দামেস্কের ইরানের কনসুলেট এনেক্স  ভবনে আক্রমণ ইসরাইলের অধিকার; আর ইরানের জবাব 
একটি গর্হিত কাজ...
বিশ্বে কৈশলগত আর স্ট্রাটেজিক অবস্থান বিবেচনায় ইসরাইল খুবই প্রভাবশালী; এটি প্রধানত, বিশ্ব আর্থিক এবং মিডিয়া যা ইহুদি সম্প্রদায় নিয়ন্ত্রণ করে।  আরেকটি, মার্কিন রাজনীতি যা প্রায়শ, ইহুদি লবিস্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এর মাধ্যমে তারা বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।  এর  মধ্যে, গত ৫০ বৎসরে, বিশেষ করে গত দুই দশকে ইসরাইল প্রযুক্তিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্ভাবনের সাথে ইসরাইল নামটি জড়িয়ে গেছে। স্পাইওয়ার, নিরাপত্তা ডিভাইস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), সফটওয়্যার - আধুনিক প্রয়োযনীয় উপাদানগুলি প্রধানত ইহুদি সম্প্রদায় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। 
পশ্চিমা বিশ্বে ইসরাইলের খুবই প্রভাবশালী বন্ধু রয়েছে - যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল এবং এমনকি ভারত, রাশিয়া।  অন্যদিকে, ইরান তার প্রভাবশালীদের প্রতি বন্ধত্বপূর্ণ ও নয়।  এখন কিছু কৌশলগত বন্ধু যেমন চীন, পর্যটন এবং নির্দিষ্ট স্তরে রাশিয়া।  তাই, এটা  ইরানের জন্য  মোটেও ভালো নয়।  যদি ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে কোন ধরণের যুদ্ধ শুরু হয়, সম্ভবত, - মার্কিন আর্ম শক্তি ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।  তাই, ইরানের পরাজয় শুধু সময়ের ব্যাপার -  যেমনটা ইরাকের সাদ্দাম হোসেন বা লিবিয়ার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে হয়েছিল।

পশ্চিমা চালাকি 
পশ্চিমা সভ্যতার নিয়ন্ত্রকরা বিশ্বকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করে - কখনো অর্থ, কখনো রাজনীতি কখনো বা  এবং মানুষের অধিকারের নামে - এমনকি যুদ্ধ বাঁধিয়ে।  এরই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ ইরানকে যুদ্ধে নামানো।  যেমনটি রাশিয়াকে উস্কানি দিয়ে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে নামিয়ে দিয়ে।  এতে মার্কিনিদের দুইটি লাভ; প্রথমত, নিজেদের অস্ত্র বিক্রি আর দ্বিতীয়, ইরানকে পরাজিত করে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য পুনরায় উদ্ধার। পশ্চিমারা  এই চালাকি বার বার করতে পারে, কারণ, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ খুবই কম চিন্তা করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং বিভিন্ন কাজে অংশ নেয়।  এই সব দেশগুলোর ভাল কোন পরিকল্পনা তো নেই - এমনকি শক্তি সমাবেশ সব সময় অপর্যাপ্ত দূরবর্তী কোন পরিকল্পনা কোর্ট সামর্থও নেই।  

সতর্কবাণী 
সারা দুনিয়া সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ আর কল্প গল্পে বিশ্বাসী এই সম্প্রদায়টি শেষ বিচারে একটি আত্ম-ধ্বংসকারী ঘটনা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করা ছাড়া আর  কোন উপায় নেই।  তাই এই লেখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এই সতর্কবাণী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে জানানো - যদিও কোন দেশি ইটা আমলে নিবে না, এটাই সবচেয়ে বড় আফসোসের বিষয়। 

লেখক : প্রধান সমন্বয়ক 
আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯)

এই বিভাগের আরো সংবাদ