আজকের শিরোনাম :

ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে

  আলাউদ্দিন মল্লিক

০৩ জুলাই ২০২২, ১২:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

আলাউদ্দিন মল্লিক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল প্ল্যান 
মার্শাল পরিকল্পনা (প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় পুণর্গঠন প্রকল্প বা ইআরপি নামে পরিচিত) ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে সহায়তা প্রদান করার একটি মার্কিন পরিকল্পনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রণয়ন করা শুরু হয় এবং চার বছর যাবৎ পরিচালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলসমূহ পুনর্গঠন, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করা, শিল্পে আধুনিকায়ন এবং পুনরায় একটি সমৃদ্ধ ইউরোপ সৃষ্টি করা। অর্থনীতিতে "মার্শাল পরিকল্পনার সমতূল্য" বলতে সাধারণত বড় ধরনের আপদকালীন আর্থিক সহায়তা বোঝানো হয়।

এ পরিকল্পনাটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শালের নামানুসারে রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক ভাষণে ইউরোপ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাটি সমর্থন লাভ করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেন। এদের মধ্যে উইলিয়াম ক্লেটন ও জর্জ কেনান অন্যতম। সিনেটরদের মধ্যে আর্থার এইচ ভ্যান্ডারবার্গ এ প্রকল্প প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এ পুনর্গঠন পরিকল্পনাটি সর্বপ্রথম ৫ জুন ১৯৪৭ সালে ইউরোপীয় দেশসমূহের একটি সভায় উত্থাপিত হয়। এ পরিকল্পনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর তার সহযোগী দেশগুলোকে কিছু সহায়তা করার প্রস্তাব রাখা হলেও তারা সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের একটা আশঙ্কা ছিল। পরিকল্পনাটির চার বছর মেয়াদকালে সর্বমোট ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউরোপীয় দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়। ১৯৫১ সালের শেষে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্শাল পরিকল্পনা প্রতিস্থাপিত হয়।

বিশ্ব ব্যাংক ও  আই এম এফ  গঠন
১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস নামক স্থানে জাতিসংঘ মুদ্রা ও অর্থ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই সম্মেলনে দুটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়: আইএমএফ এবং পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক বা বিশ্বব্যাংক। এ সম্মেলনে আরও অনেক দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও দরকষাকষিতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে আইএমএফের প্রধান নির্বাচিত হন ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আর  বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

আই এম এফ : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ (International Monetary Fund, IMF) জাতিসংঘ কর্তৃক অনুমোদিত স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা এর প্রধান কাজ। এই সংস্থার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৪৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ২৯টি দেশ চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডি.সি. শহরে অবস্থিত। বিভিন্ন দেশের মুদ্রানীতি এবং মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা এই আন্তজার্তিক সংস্থাটির অন্যতম প্রধান কাজ। এপ্রিল ১২, ২০১৬ইং পর্যন্ত ১৮৯টি রাষ্ট্র এই সংস্থার কার্যক্রমের আওতাভুক্ত। 

বিশ্বব্যাংক: বিশ্বব্যাংক (World Bank) একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ ও অনুদান প্রদান করে। বিশ্বব্যাংকের আনুষ্ঠানিক লক্ষ্য হল বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন। সারা বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে অবস্থিত।

ন্যাটো গঠন 
মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন গঠিত হয়। এটি ওয়াশিংটন ট্রিটি নামেও পরিচিত। এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত। সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের হাত থেকে পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের স্বাধীন অখন্ডতা বজায় রাখা ছিল ন্যাটোর মূল উদ্দেশ্য। চুক্তিটির ৫ম আর্টিকেলের মূলনীতিতে বলা হয়েছে, “ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় সংগঠনটির সদস্য দেশ বা দেশসমূহের উপর অন্য কোন দেশ সামরিক হামলা করলে তা সংগঠনের সকল সদস্যের উপর হামলা বলে বিবেচিত হবে। আর যদি এধরণের হামলা হয় জাতিসংঘ চার্টারের ৫১ নং আর্টিকেল অনুযায়ী একক অথবা সংঘবদ্ধভাবে শত্রুর মোকাবেলা করা হবে। প্রয়োজনে সামরিক হামলাও চালানো হবে এবং উত্তর আটলান্টিকের দেশসমূহের নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে।”

কোরিয়ান যুদ্ধ 
কোরীয় যুদ্ধ (২৫ জুন ১৯৫০ – ২৭ জুলাই ১৯৫৩) জাতিসংঘ সমর্থিত কোরিয়া প্রজাতন্ত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সমর্থিত গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া মধ্যকার ১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে শুরু হওয়া তিন বছরের অধিক সময় ব্যাপী সংঘটিত হওয়া একটি আঞ্চলিক সামরিক যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে সংঘটিত হওয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধ নিয়ে বিজয়ী মিত্রশক্তির মধ্যকার একটি চুক্তিকে কেন্দ্র করে কোরীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এই যুদ্ধের প্রাথমিক কারণ ধরা হয়। ১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জাপান সাম্রাজ্য কোরীয় উপদ্বীপ শাসন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সাম্রাজ্যের আত্মসমর্পণের পর মার্কিন প্রশাসন উপদ্বীপটিকে ৩৮তম সমান্তরাল রেখায় ভাগ করে, এর মধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনী দক্ষিণ অর্ধেক নিজেদের দখলে আনে এবং সোভিয়েত সশস্ত্র বাহিনী উত্তর অর্ধেক অধিকারে আনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ অংশ দক্ষিণ কোরিয়া এবং সোভিয়েত-চীন নিয়ন্ত্রিত উত্তর অংশ উত্তর কোরিয়া নামে দুটি দেশে পরিণত হয়।

ভিয়েতনাম আগ্রাসন 
ভিয়েতনাম যুদ্ধ  দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত এবং ভিয়েতনামে আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ বা সহজভাবে আমেরিকান যুদ্ধ, হল ১৯৫৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিলে সাইগনের পতন পর্যন্ত ভিয়েতনাম, লাওস এবং কম্বোডিয়ায় চলাকালীন সংঘাত। এটি ছিল দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ এবং সরকারিভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যেকার লড়াই। সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট মিত্রদেশ উত্তর ভিয়েতনামকে সমর্থন করেছিল; অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য কমিউনিস্ট-বিরোধী মিত্রদেশ দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করেছিল। কারও কারও কাছে এই যুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ-যুগের প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত, যা ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার মধ্য দিয়ে ১৯ বছর ধরে চলেছিল, এবং এতে লওটিয়ার গৃহযুদ্ধ ও কম্বোডিয় গৃহযুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা এই তিনটি দেশের কমিউনিস্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটেছিল।

শীতল যুদ্ধ 
স্নায়ুযুদ্ধ  ( Cold War) হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রসমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রসমূহের মধ্যকার টানাপোড়েনের নাম। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০'র দশকের শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালে এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের পক্ষে; আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রপন্থী। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র, যেমন বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের কিছুকাল যাবৎ কিউবা এবং চীন সোভিয়েতদের সমর্থন দেয়। যেসমস্ত দেশ দুই পক্ষের কাউকেই সরকারিভাবে সমর্থন করত না, তাদেরকে নিরপেক্ষ দেশ বলা হত। তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ দেশগুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ ছিল। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাটকীয় পরিবর্তন ও পতনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।

রমরমা  অস্ত্র  ব্যবসা  
২০১৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম ২৫টি কোম্পানি ৩৬১ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সেবা বিক্রি করেছে, যা বাংলাদেশের ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সমান। ২০১৯ সালের অস্ত্র বিক্রি ২০১৮ সালের চেয়ে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বৈশ্বিক অস্ত্রের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। ২০১৯ সালে শীর্ষ পাঁচ অস্ত্র কোম্পানিই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। কোম্পানিগুলো হচ্ছে লকহিড মার্টিন, বোয়িং, নর্থরোপ গ্রুম্ম্যান, রেথিওন ও জেনারেল ডায়নামিকস। এই পাঁচ কোম্পানি গত বছর অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে ১৬৬ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৬০০ ডলার। এই অর্থ শীর্ষ ২৫ কোম্পানির মোট অস্ত্র বিক্রির প্রায় ৪৬ শতাংশ। শীর্ষ ২৫ কোম্পানির মধ্যে ১২টিই যুক্তরাষ্ট্রের। শীর্ষ পঁচিশের মোট অস্ত্র বিক্রির ৬১ শতাংশই হলো যুক্তরাষ্ট্রের এই ১২ কোম্পানির।

অর্থনৈতিক লাভ 
২০২০ সালে অন্যান্য বড় অর্থনীতির মতো মার্কিন অর্থনীতিও সংকুচিত হয়েছে। তবে  ২০২১ হতে  তারা বেশ ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কর্মসংস্থানও বাড়ছে দ্রুতগতিতে, যদিও আগস্ট মাসে কর্মসংস্থানের হার আশানুরূপ ছিল না। তবে এই মুহূর্তে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে, ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি মূল্য ও সরবরাহব্যবস্থায় ঘাটতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। তবে সামগ্রিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি শক্তি সঞ্চয় করছে বলেই মনে করে দেশটির ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (এফওএমসি)। যেসব খাত মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু ডেলটা প্রজাতির বাড়বাড়ন্তের কারণে পুনরুদ্ধারের গতি কিছুটা কম।

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার 
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন এসব দেশ নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে মরিয়া। প্রথম শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন দেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলে। সেই সাথে প্রযুক্তির বিকাশ সাধনের ফলে নতুন নতুন মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে তারা। সেই সময়ে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে ছিল। প্রথম দিকে এসব খুব বেশি প্রভাব বিস্তার না করলেও ধীরে ধীরে শক্তিমত্তার বিস্তার ঘটতে থাকে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিত্য নতুন অস্ত্র আবিষ্কারের শুরু সেই তখন থেকেই।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় যুক্তরাষ্ট্র, পরবর্তী অর্ধশতাব্দী জুড়ে চলা স্নায়ুযুদ্ধে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় যুক্তুরাষ্ট্র। পরাশক্তি হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হাত ধরেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা হিসেবে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ পেয়েছে রাজনৈতিক অধিকার আর নাগরিক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা।

বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতায় সবচেয়ে উত্তপ্ত ভূরাজনৈতিক অঞ্চলটি হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। গত দুই দশক জুড়ে বৈশ্বিক আর আঞ্চলিক শক্তিশালী দেশগুলোর লড়াই যেভাবে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, এই দশকে একই ধরনের সংঘাতের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ইন্দো-প্যাসিফিকি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে অবধারিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে গেছে এই সংকটে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে নামতে হচ্ছে সর্বশক্তি নিয়েই।  ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, ৩৮টি দেশের সমন্বয়ে গড়ে উঠা এই অঞ্চলে রয়েছে পৃথিবীর মোট আয়তনের ৪৪ শতাংশ। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বসবাস করে, পৃথীবির মোট বাণিজ্যের অর্ধেকই হয় এই অঞ্চলে। ফলে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তি হিসেবে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক জটিলতাগুলোর বাইরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ইতিবাচক হবে না, ইতিবাচক হবে না কেবল স্থানীয় মিত্রদের উপর নির্ভর করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার স্বপ্ন দেখাও। বাণিজ্য আর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ আছে, স্বার্থে আছে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিকে কেন্দ্র করেও।

নতুন মার্শাল প্ল্যান 
মধ্যপ্রাচ্যে, পারস্য উপসাগরে, দক্ষিণ চীন সাগরে এবং সর্বশেষে আফগানিস্তানে আমেরিকা বিরাট ধাক্কা খাওয়ায় বিশ্বপরিমণ্ডলে পরিবর্তনের পূর্বাভাস স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ। আফগানিস্তান ইস্যুতে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান রয়েছে আমেরিকার বিপরীত অবস্থানে। আমেরিকার সঙ্গে ভারত, জার্মানি, কানাডা ও কিছু ইউরোপীয়ান দেশ রয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যেই আফগান ইস্যুতে নীতি ও কৌশলগত বিভেদ পরিস্কার।  ফলে এক্ষেত্রে বিশ্বশক্তির বিভাজন সামনে চলে আসছে। দক্ষিণ চীন সাগরেও চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও তার মিত্ররা একাট্টা হচ্ছে। সেখানকার চাপা-উত্তেজনা এশিয়া-প্যাসিফিকের সুবিশাল এলাকায় অবস্থিত দেশগুলোকেও উতপ্ত করে তুলতে পারে। ইরান, উত্তর কোরিয়া ও সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অবস্থান সবাই মেনে নিচ্ছে না। আমেরিকার অবরোধ ও অবস্থানকে এড়িয়ে চীন ও রাশিয়া বহুক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, সামরিক, আর্থিক সহায়তামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেসব গোপন ও বেসরকারি চ্যানেলের উদ্যোগগুলো আড়ালে থাকলেও সর্বশেষে আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে বিভাজন ও বিরোধিতা অতি প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে মূলত চীনের অগ্রগতিকে টার্গেট করে নিজস্ব মহাপরিকল্পনা সাজিয়ে তার ব্যস্তবায়ন করে চলেছে।  এর প্রথম ধাপ হচ্ছে ইসলামী উগ্রবাদের প্রসারে ভূমিকা পালন। বিজ্ঞ মহলের ধারণা মোতে ৯/১১ এর ঘটনা নিউ ইয়র্ক শহরের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা কোনো মুসলিম সন্ত্রাসীর ক্ষমতার বাইরে।  এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ পরিচালনা করার একটি ক্ষেত্র তৈরির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রয়াস। দ্বিতীয় ধাপ মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা।  তৃতীয় ধাপ হল ক্ষতিকর আফগান যুদ্ধ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়া।

টুইন টাওয়ার ধ্বংস 
১১ই সেপ্টেম্বর ২০০১ আমেরিকায় চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয় নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে, যে ঘটনায় নিহত হয় কয়েক হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র নাইন-ইলেভেনের পরিকল্পনাকারী হিসাবে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করলেও মার্কিন প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছু অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আগে সংঘটিত কয়েকটি দেশের মার্কিন দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার কথা আল-কায়েদা স্বীকার করলেও নাইন-ইলেভেনের ঘটনার দায়িত্ব তারা কখনো স্বীকার করেনি। বরং ঘটনার পরপর ওসামা বিন লাদেন তাতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ
জর্জ বুশ ২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে আক্রমণকারীদের উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই শত্রুকে জয় করতে সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করবে। আমরা বিশ্বকে একত্র করব। আমরা ধৈর্য ধরে থাকব। আমরা মনোনিবেশ করব এবং আমাদের সংকল্পে অবিচল থাকব। এই যুদ্ধে সময় লাগবে এবং সমাধান হবে, কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ভুল করবেন না, আমরা জিতব।’ গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের চারজন প্রেসিডেন্ট—জর্জ বুশ, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন—দায়িত্ব পালনকালে এই ‘যুদ্ধে’ অবিচল থেকেছেন।  যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কমপক্ষে দুই ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও চার ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। একসময় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সহানুভূতি ও সমর্থনও পেয়েছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ জয়ী হয়েছে—এমন দাবি করা যাবে না। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় তালেবানের প্রত্যাবর্তন তার সহজে দৃশ্যমান উদাহরণ। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার, এই যুদ্ধের প্রকৃতি ও পরিসর কখনোই নির্ধারিত ছিল না। ‘শত্রু’ বলে কাকে, কখন, কীভাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তার পদ্ধতি কারও জানা ছিল না। যে কারণে বিখ্যাত সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্স–এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায় যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ—এ প্রশ্নের উত্তর কখনো পাওয়া যায়নি এই যুদ্ধে ‘বিজয়’ মানে কী?

সন্ত্রাসের নতুন আখ্যান 
১৯ শতকের শেষ দিকে পুঁজিবাদ যখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, তখন পুঁজিবাদী উপনিবেশিক রাষ্ট্রীয় শক্তি সন্ত্রাসবাদ ধারণার সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে ওই কথিত সন্ত্রাসবাদের দ্বিতীয় ঢেউ আসে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর উপনিবেশগুলোতে স্বাধীনতাকামীরা সংগঠিত হতে শুরু করে। বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দিয়ে নির্মম দমন-পীড়ন শুরু করে ঔপনিবেশিক শক্তি।   দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্নায়ুযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট আর বামপন্থী তকমা লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন জনপদে স্বাধীনতাকামিদের দমন করা হয়েছে।  আর ৯/১১ এর পরিকল্পিত বয়ান তৈরী করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক অনন্ত যুদ্ধ শুরু করে হয়েছে।

দেশে দেশে আগ্রাসন 
আফগানিস্তান: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন আর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের’ সূচনা করেছিল আফগানিস্তানে আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়। ২০ বছর পর ঘটনার পরিক্রমায় সেই তালেবান আবারও আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে। 

ইরাক: ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায় মার্কিনের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। ব্যাপক আকারের সেনা অভিযান চালায় এই জোট। সেখানে চলতে থাকে বছরের পর বছর দখলদারি এবং রক্তাক্ত বিদ্রোহী তৎপরতা। 

লিবিয়া: ২০১১ সাল থেকে শুরু হয় লিবিয়ার আগ্রাসন। লিবিয়াতে যাকে বলে ‘বুটস অন দ্য গ্রাউন্ড’- অর্থাৎ সেখানকার মাটিতে তেমন কোনো বড় সংখ্যায় পশ্চিমা সৈন্য নামেনি। তবে সেখানে ন্যাটোর উদ্যোগে একটি সংক্ষিপ্ত নো-ফ্লাই-জোন কার্যকর করা হয়েছিল।  এর পর দেশটিতে একটি গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু হয়। লিবিয়ানদের শুরুর দিকের কৃতজ্ঞতা এরপর পরিণত হয় ক্ষোভে। কারণ পশ্চিমারা তাদের ফেলে চলে গেছে।

সিরিয়া: ২০১১ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে মার্কিন বাহিনী বিদ্রোহীদের মদদ দেওয়ার অভিযান শুরু করে সিরিয়ায়। এই গৃহযুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়ে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক। সেখানে ১০ বছর ধরে সহিংসতা চলছে।

উত্তর সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল: ২০১১ সালে সিরিয়ার উপর মার্কিন আগ্রাসন এর কেন্দ্রীয় শক্তিকে দুর্বল করে দেয়।  তখন এর উপর প্রথমে নানা গোত্র ভিত্তিক সংঘর্ষ শুরু হয়।  এরপর আসে আই.এস. এর দখলদারিত্ব।  শেষে  তুরস্ক কুর্দি দমনের নামে এখানকার যুদ্ধে যোগ দেয়।  স্থানীয় জনগণ একত্রিত হয়ে ওয়াই পি  জে গঠন করে নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রন রক্ষা করে আসছে। 

মালি:২০১৩ সালে মালিতে প্রথম আগ্রাসন চালায় ফ্রান্স। প্রাথমিকভাবে ফরাসি সামরিক বাহিনীর অভিযান রাজধানী বামাকোকে রক্ষা করতে পেরেছিল। কারণ তা না হলে শহরটি প্রায় নিশ্চিতভোবেই আল-কায়দা সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যেত; কিন্তু সে ঘটনার পর এখন আট বছর পার হয়ে গেছে। দেশটিতে হাজার হাজার বহুজাতিক বাহিনীর সৈন্য থাকলেও বিদ্রোহ এখনো চলছে। মালির জনগণ এখন ফরাসিদের ওপর আস্থা হারিয়েছে।

আরব বসন্ত 
২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাওয়া গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। গণবিক্ষোভের শুরু তিউনিসিয়ায় এরপর তা মিশরে, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যায়। প্রথমে মিশরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের পতন হয়। পরে লিবিয়ায় মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফি জমানার অবসান হয়। আরব বিশ্বের এই গণ অভ্যুত্থান সংঘটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত সহচর রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটায়। এক হিসাবে বলা হয় আরব বসন্তের ফলে মাত্র পৌনে দুই বছরে লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনের গণ-আন্দোলনের ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৫৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বর ২০১০ থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় যে গণ বিদ্রোহ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন হচ্ছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ পর্যন্ত আলজেরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, মিশর, ইরান, জর্ডান, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় বড় ধরনের বিদ্রোহ হয়েছে এবং ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়াতে ছোট আকারের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিদ্রোহে প্রতিবাদের ভাষারূপে গণবিদ্রোহের অংশ হিসেবে হরতাল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, জনসভা, র্যালি প্রভৃতি কর্মসূচি নেয়া হয়। দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাজ, যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার থেকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ফেসবুক, টুইটারের মত সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। এরই মধ্যে তিউনিসিয়া, মিশরে বিদ্রোহের ফলে শাসকের পতন হয়েছে বলে এখানে তা বিপ্লব বলে অভিহিত । এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং খরার প্রকোপও বড় কারণ।

আই এস - এর উত্থান 
জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট (আইএস) বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ জঙ্গি সংগঠন। শুরুতে এর নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)। এর প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে। পরে এর নাম পরিবর্তন করে আইএস রাখা হয়। আইএসের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। বাগদাদের উত্তরে সামারা এলাকায় ১৯৭১ সালে তাঁর জন্ম। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলা শুরু হলে এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দেন বাগদাদি। ২০১০ সালে আল-কায়েদার ‘ইরাক শাখার’ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এই সংগঠন পরে আইএসআইএলে পরিণত হয়। ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযান ও পরবর্তী দখলদারত্বের পর যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তারই প্রেক্ষাপটে জন্ম এ সংগঠনের। এদের দমনে ৮০টি দেশের এক বিরল নীতিগত জোট গড়ে উঠেছিল। এক পৈশাচিক ও ধর্ষকামী খেলাফতকে পরাজিত এবং ধ্বংস করতে এগিয়ে আসে বিভিন্ন জাতির মানুষ। তাদের ধ্বংস করা যায়নি। তবে নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লেগেছিল পাঁচ বছর। সম্প্রতি আইএস আবার আফ্রিকাতে তাদের কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে।

আফগানিস্তান হতে পশ্চাদপসারণ 
এক বিধ্বংসী সামরিক অভিযানে ২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের সামরিক নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা। ২০২১ সালের মধ্যে আগস্ট হতে দেশটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তালেবানদের হতে চলে যায়।  ২০ বৎসর ব্যাপী  এই আগ্রাসনের যুদ্ধে  নিহত হয়েছে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সৈন্য। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক হিসেবে বলা হচ্ছে, ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান ও সিরিয়াতে যুদ্ধ-বাবদ যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয়েছে প্রায় ছয় ট্রিলিয়ান ডলার।  শেষ পর্যন্ত লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায় বিশ্ব মোড়ল।

মধ্যেপ্রাচ্যের তালগোল
আরব বসন্তের সিরিয়ায় মিশন ব্যর্থ, ইরাকে অসম্পূর্ন, লিবিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্গসুত্রিতা, মিসরে সামরিক শাসন দিয়ে আপাত মুখ-রক্ষা, তিউনিসিয়ায় কিছুটা স্বস্তি - এই হলো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বর্তমান অবস্থান। আর চিরায়ত ফিলিস্তিন, ইসরাইল, লেবানন আর জর্দান নিয়ে মার্কিন পরিকল্পনা যেন ব্যর্থতায় পর্যবসিত। ইসরাইলকে নির্লজ্জ সমর্থন আর তাবেদার সৌদি আরব নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একঘরে হয়ে পড়েছে তারা।  এর মধ্যে ইসরাইলের কূটনৈতিক সাফল্যের জন্য সৌদি আরবের সাথে কাতার যুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এর সবকিছুই ম্লান করে দিচ্ছে।

চীনের মহা উল্লম্ফোন 
চীনে তৃতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বের শুরুর তিন দশকের ব্যবধানে  চীন নতুন পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।  চীনের শক্তিশালী হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় কারণ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর হিসেব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে চীনের জিডিপি ছিল ১৭ শতাংশ আর যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ শতাংশ। ২০২০ সালে ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।  করোনার জন্য তা কিছুটা পিছিয়ে গেলেও ২০২৪ নাগাদ সত্যিকার অর্থে যুক্তৰাষ্ট্ৰজে ছাড়িয়ে যাবে চীন । ধারণা করা হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ২০২৫-৩০ সালের মধ্যে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মার্কিন মুদ্রা ডলারকে ছাড়িয়ে যাবে। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে চীন। সে সময় উভয় দেশের জিডিপি হবে ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার। তৃতীয় কোনো দেশ এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারেকাছে নেই। অর্থনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তির মতো প্রায় সব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রকে তীব্র চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে চীন।

ইউক্রেন যুদ্ধ 
২০২২ এর ২৪ ফেব্রুয়ারী রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণ ইউরোপে যে যুদ্ধের শুরু করেছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র সহ সব ইউরোপিয়ান দেশ সক্রিয় অংশ নিচ্ছে।  এর মধ্যে রাশিয়াকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।  চীন এরই মধ্যে রাশিয়ার সমস্ত বৈদেশিক বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে।  জ্বালানি বাজারে চীন হয়ে উঠতে পারে রাশিয়ার আর সারা বিশ্বের মধ্যে মধ্যবর্তী দেশ।  অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হলে সারা বিশ্ব চীনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে পারে।  এতে চীন প্রচণ্ড লাভবান হয়ে উঠবে। ব্যাপক বিনিয়োগ আর বিভিন্ন মুদ্রার বিশেষত মার্কিন ডলারের রিজার্ভ সক্ষমতার কারণে চীন এই সময়ে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাছে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।  

ইউরোপীয়দের শঙ্কা
প্রায় ৭৭ বৎসর পর পশ্চিম ইউরোপ একটি পরাশক্তির যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া দেখছে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই দীর্ঘ সময় পশ্চিম ইউরোপ শান্ত একটা সময় কাটিয়ে নিজের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগী ছিল।  মাঝে সার্বিয়ার কারণে প্রাক্তন যুগোশ্লাভ দেশটিতে একটি দশক ব্যাপী যুদ্ধ হলেও পশ্চিম ইউরোপ ছিল নিরাপদ।  কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ এমনটা নয়।  এই যুদ্ধ ইউরোপের প্রায় সবকটি দেশকে জ্বালানি আর খাদ্য সরবরাহ সংকটে ফেলে দিয়েছে।  ইউক্রেন হল খাদ্য সরবরাহকারী আর রাশিয়া জ্বালানীর উৎস।  তাই এই বিপদে তারা বিকল্প জ্বালানি আর খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা খুঁজে চলেছে। এটি হবে একটি দুরূহ কাজ।  আর রাশিয়ার কারণে সরাসরি যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

গেম প্ল্যান 
মার্কিন  থিঙ্ক ট্যাঙ্ক গুলো  তাদের দীর্ঘ পরিকিল্পনায় প্রায় দুই দশকের চেষ্টায় রাশিয়াকে একটি শক্তিক্ষয়কারী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা গেছে।  এতে ভীত ইউরোপীয় শক্তি তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে মার্কিন অস্ত্র কিনতে এখনই মরিয়া। মার্কিন অর্থনীতি যুদ্ধ আর সামরিক সরঞ্জাম যেমন অস্ত্র, গোলা আর প্রতিরক্ষা সামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ।  তাই তাদের এই নতুন বিক্রির সুযোগ তাদের আরেকবার একক বিশ্ব শক্তিতে পরিণত করবে।  


শেষ রক্ষা হবে কি?
বিশ্ব অর্থনীতির গতি বিশ্লেষণকারী বিজ্ঞজনেরা মনে করে চীন ২০৩০ এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকরীভাবে অর্থনৈতিক শক্তিতে ছাড়িয়ে যাবে।  কিন্তু বিশ্বব্যাপী সামরিক উপস্থিতির কারণে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ নিতে আরো দুই দশক সময় লাগবে বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অভিমত। একটি মাত্র ঘটনা যুক্তৰাষ্ট্ৰকে তার অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে - তাহল চীনের শাসন ক্ষমতা হতে বর্তমান শাসক শ্রেণী তথা কমুনিস্ট পার্টির অপসারণ।  চীনে  যদি ১৯৯০ দশকের প্রথম দিককার রাশিয়ার মতো  কিছু ঘটে।


পথ দেখাচ্ছে রোজাভা 
হাল জামানার প্রায় সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মীরা মনে করেন জগতে বর্তমানে দুই ধরণের শোষণ মোটা দাগে চলে। একদিকে ধনী মানুষ কর্তৃক ধনহীন মানুষের উপর অর্থনৈতিক শোষণ, আরেকদিকে পুরুষতন্ত্রের দ্বারা নারীর উপর লিঙ্গভিত্তিক শোষণ। এই পুরুষতন্ত্র সমাজের মধ্যে এমন একটা ভাব মানস তৈরি করেছে যার কবলে পড়ে নারীরাই নারীদেরকে শোষিত হতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখে। বর্তমান সিরিয়া রাষ্ট্রের উত্তর পূর্ব অংশ যার = পোষাকি নাম হচ্ছে,  The Autonomous Administration of North and East Syria (NES)  তবে বর্তমান পৃথিবী এই অংশকে রোজাভা নামেই চিনে।  এই ভৌগলিক এলাকাটি ইরাক, ইরান এবং তুরষ্ক দ্বারা পরিবেষ্টিত।  জাতিতে কুর্দি এই মানুষগুলো এখানে গড়ে তুলেছে একটি স্বায়ত্তশাসিত এলাকা, যেখানে আসাদ সরকার কিংবা অন্য কোন শক্তি বিশেষ কোন ভূমিকা পালন করতে পারে না। 

এক নতুন ধরণের রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থা এই রোজাভা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।  পুরো অঞ্চলকে খন্ড খন্ড করে বিভক্ত করে সর্ব কনিষ্ঠ খন্ডের অধিবাসীদের নিয়ে এক একটা পিপলস কমিউন গঠন করে।  সেই ভুখন্ডের সকল অধিবাসীকে ঐ কমিউনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর কমিউনের সদস্যরা একত্রে বসে নির্ধারণ করে তাদের এলাকার স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, শিল্প কারখানা, রাস্তা ঘাট, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকান্ড, জন নিরাপত্তা বজায় ইত্যাদি কিভাবে পরিচালিত হবে।  এই সব কাজের জন্য তারা আলাদা আলাদা কমিটিও করে দেয়, কমিটিগুলি জনগনের সিদ্ধান্তসমুহ বাস্তবায়ন করে।  নতুন কোন আইন প্রণয়ন করতে হলে কিংবা পুরনো আইন সংশোধন করতে হলে  এইসব তৃণমূলের কমিউনগুলি থেকে প্রতিটা আইন কিংবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে পাশ হয়ে উপরের স্তরে পৌঁছাবে এবং শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ কমিউন থেকে প্রস্তাব জিতে এলে তা কার্যকর হবে।  

সমাধান গণতন্ত্রের পথে 
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে মূলত মসৃণ সংসদীয় অথবা রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা, সুশাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বোঝানো হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের যেসব সংস্থা ও পদ্ধতির মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর দেখভাল করা হয়, তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সমাজের সব অংশের চেতনা ও চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে পারে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে অভিধানে যেসব সংজ্ঞা দেখা যায়, বাস্তবে তার প্রয়োগ খুব কমই। 

এর জন্য দরকার জনগণের গণতন্ত্র - যেমনটি রোজাভা অঞ্চলে যেমনটি চলছে। এখানে কমিউন বা পৌরসভা ক্ষুদ্রতম একক। একটি কমিউন একটি নির্বাচিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়ে।  এই কমিটি পৌরসভার আভ্যন্তরীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে জনগণের অংশগ্রহণে গঠন করা পুলিশ বাহিনী।  এই পুলিশ বাহিনীতে পৌর এলাকার সকল নাগরিককে রোটেশন অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে হবে।  এরপরে সেই এলাকার রাস্তাঘাটের মেরামত ও উন্নয়ন কাজের জন্য প্রয়োজনে সকল নাগরিককে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে হতে পারে।  রাস্তা কমিউন, মহল্লা কমিউন, ওয়ার্ড কমিউন তাদের আকার আকৃতি অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে।  যেমন সবচেয়ে ছোট যে রাস্তা কমিউন সে তার এলাকার স্ট্রিট ল্যাম্প, পয়ো নিষ্কাশন, প্রতিবেশীর সুখ দুঃখের খবর নেয়া, বাচ্চাদের দেখভাল ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করে থাকে।  এভাবে তারা সকল রাষ্ট্রিয় কাজে জনগণকে যুক্ত করে এক অদ্ভুত রকমের সচেতন, সক্রিয় ও সংঘবদ্ধ নাগরিক সমাজ গঠন করেছে।

 দরকার ৯৯% মানুষের গণতন্ত্র বাস্তবায়ন  
ইউরোপ কর্তৃক উদ্ভাবিত রোমান পদ্ধতির উপর হতে  নিচ শাসন ব্যবস্থার আজকের গণতান্ত্রিক রূপ জনগণের কল্যাণ সাধনে অসমর্থ হওয়ায় দিন দিন জন-সম্পৃক্ততা হারিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও বিগত নির্বাচনে ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটাল হিলে (মার্কিন কংগ্রেস) দাঙ্গা বাধায়।  তাই আজ দরকার গণমানুষের গণতন্ত্র - দরকার বটম আপ বা নিচ থেকে উপর পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা  যা রোজাভা বিপ্লব আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

এর অন্যথা হলে সাধারণ মানুষের কোনো মুক্তি নেই।  যুদ্ধ উম্মাদ আর যুদ্ধ ব্যবসায়ীরা একত্রে তাদের প্রয়োযনীয়তা এমন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে যে সারা বিশ্বে  ন্যাটো বা তার মতো আরো অনেক যুদ্ধজোটের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে।  তার অংশ হিসেবে কোয়াড গঠিত হয়েছে।  একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় ন্যাটোর সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।  মূল ন্যাটোতে ফিনল্যাণ্ড এবং সুইডেন যোগ দিচ্ছে।  ফ্রান্স আর সুইডেন এরই মধ্যে নতুন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে আধুনিক  কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন লক্ষের বিশেষায়িত সেনাবাহিনী গঠনে মনোযোগ দিচ্ছে। এভাবেই ন্যাটো নতুন করে তার প্রয়জোনীয়তার জানান দিচ্ছে।  


লেখক : প্রধান সমন্বয়ক, আমরা ৯৯ শতাংশ (আপহোল্ড ৯৯) ।
ইমেইল: [email protected] 

এই বিভাগের আরো সংবাদ