আজকের শিরোনাম :

দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বড় পরীক্ষা

  রবি আগরাওয়াল

২১ মার্চ ২০২০, ১১:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

দক্ষিণ এশিয়ার সংক্ষিপ্ত সংবাদে স্বাগত। এ সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ খবরের মধ্যে রয়েছে: করোনাভাইরাসে গোটা উপমহাদেশ বিপর্যস্ত, নির্বাচন পেছানোর কথা ভাবছে শ্রীলঙ্কা ও শীর্ষ কাশ্মিরি নেতার মুক্তি।

দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। ইরান ও চীনের সীমান্তবর্তী পাকিস্তান হলো বিশ্বের সবেচেয়ে ভয়াবহ আক্রান্ত তিনটি দেশের একটি। একদিনেই আক্রান্ত সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে সেখানে। তবে এই অঞ্চলে যত সংখ্যক রোগী শনাক্ত করা হয়েছে তা শৈলশিখরে বফরখণ্ড মাত্র। বিশ্বের ছয় ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যার অধিকারী হয়েও ভারতে দক্ষিণ কোরিয়া’র (জনসংখ্যা মাত্র ৫১ মিলিয়ন) চেয়েও কম সংখ্যক রোগীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি মিলিয়নে যেখানে ৪,৬০০ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে সেখানে ভারতে প্রতি মিলিয়নে পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৫ জন।

প্রথমদিকে তেমন গ্রাহ্য না করলেও (ভারতে হোলি উৎসবে বড় আকারের সমাবেশ হয়েছে) এখন দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণে দেরি হয়ে গেলো কিনা সেটা একটি প্রশ্ন। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এটি। তাই বেশ কিছু বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে:

ভারতে মাত্র ৫২টি পরীক্ষা কেন্দ্র। তাই পরীক্ষাকেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানো হলে আক্রান্ত সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। তারপরও অজ্ঞাত থেকে যাবে অনেক। ভারতে প্রকৃত মৃত্যুর মাত্র ৭৭% সরকারি নথিতে ওঠে। মাত্র ২২% ক্ষেত্রে মুত্যু সনদ দেয়া হয়। এতে মনে হয় কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেকের নাম হয়তো হিসাবের খাতায় উঠবে না। 

ভাইরাসটি যদি ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে এই অঞ্চলের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি হবে। ভারতে প্রতি ১০০০ রোগীর জন্য হাসপাতালে সিট আছে ০.৫টি, যুক্তরাজ্যে ২.৫টি, ইটালিতে ৩.২টি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১২.৩টি। ভারতে জ্যামিতিক হারে করোনা রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলো তা সামাল দিতে পারবে না।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর অবস্থাও খুব ভালো নয়। গত সপ্তাহে এক সাক্ষাতকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার আশঙ্কার কথা বলেছেন: ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যসুবিধা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। আমাদের এটা সামাল দেয়ার সামর্থ বা সম্পদ কোনটাই নেই।

শ্রীলঙ্কার নির্বাচন: করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে নির্বাচন স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দল। ২৫ মার্চ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসা। দেশটিতে এরই মধ্যে ৪৩ রোগী শনাক্ত হওয়ায় নির্বাচন পেছানোর দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। 

পাকিস্তান ও চীনের বন্ধুত্ব: কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চীনের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানাতে সোমবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি দুই দিনের সফরে বেইজিং গিয়েছেন। এই সময়ে তার সফরটি বেশ অদ্ভুত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান টুইট করেন ‘চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক।’ একটা নাজুক সময়ে চীন সফরের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আলভিকে ধন্যবাদ জানান এবং চীনকে সহায়তা ও সংহতি জানানোর জন্য পাকিস্তানের আচরণের প্রতি ব্যাপক কৃতজ্ঞতা জানান। চীন ও পাকিস্তান জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ মানবতার জন্য একটা অভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং এই চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে মোকাবেলার জন্য সব দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

কাশ্মিরি নেতা মুক্ত: আটক হওয়ার সাত মাস পর অবশেষে মুক্তি পেলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ তাকে মুক্তি দেয়। গত বছরের ৫ অগাস্ট আটক করা হয় ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিসহ কাশ্মীরের বহু নেতাকে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা রদ করে সেখানকার বিশেষ মর্যাদা শেষের কথা যখন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার তখনই নিরাপত্তা জনিত কারণ দেখিয়ে আটক করা হয় তাদের।

দক্ষিণ এশিয়া ইনকর্পোরেশান

টেলিকম ট্যাক্স: ভোডাফোনের ভারতীয় যৌথ উদ্যোগের কর্মকর্তারা বলছেন যে তাদেরকে যদি সরকারের দাবি মতো ৭.৪ বিলিয়ন ডলার কর ও স্পেকট্রাম ফি দিতে হয়ে তাহলে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে এই দাবির ব্যাপারে দিল্লি খুব সিরিয়াস। গত সোমবার সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করে যেন টেলিকম কোম্পানিটিকে তাদের ২০ বছরের পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।

নয়া দিল্লির দাবি আদালত মানবে কিনা সেটো অস্পষ্ট। 

অস্বাভাবিক ও পরিসমাপ্তি
যোগ রাজনীতি: আগামী এপ্রিল থেকে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে নেপালে প্রথম প্রাথমিক ও জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক পাঠ্য হিসেবে ‘যোগ’ যুক্ত হচ্ছে। একে স্বাস্থ্যগত বিষয় মনে করা হলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিষয়টি আসলে অনেক জটিল। যোগকে ক্রমেই হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে যুক্ত একটি বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে, যা হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন এর সঙ্গে নয়া দিল্লিকে খুশি করার বিষয়টি জড়িত। এতে বেইজিং নাখোশ হতে পারে। 

এ সপ্তাহের মতো এতটুকুই।

এই বিভাগের আরো সংবাদ