আজকের শিরোনাম :

টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ধারক বঙ্গবন্ধু

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২০, ২১:২১

শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকীতে দাঁড়িয়ে স্মরণ করছি শ্রদ্ধাভরে। তিনি ছিলেন টেকসই ও অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনীতির ধারক ও বাহক। তার সমস্ত জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালির হিত সাধনের জন্যে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে মোস্তাক জিয়া চাষীগণদের প্ররোচণায় এই মহান নেতা ও তার পরিবারের সদস্যবর্গ ও কিছু আত্মীয়-স্বজনকে অনাকাঙিক্ষতভাবে ধরাধাম থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নসাধ ছিল এদেশের মানুষের হিতসাধনকে ঘিরে। তিনি টেকসই উন্নয়নের জন্য ছয় দফা আন্দোলনে যে দাবিগুলো উত্থাপন করেছিলেন তার মূল সারমর্ম ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা এবং কল্যাণ রাষ্ট্র সৃষ্টি করা। স্বায়ত্ত্বশাসনের মাধ্যমে শোষণ বঞ্চনামুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি সমাজ থেকে সকল অসঙ্গতি শ্রেণিবৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। এ বিবেচনায় প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষ যাতে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির সুবিধা পায় সে উপলক্ষে তার বক্তব্যে এবং দাবিগুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে প্রতিভাত হয়ে উঠে। তিনি মানবীয় মর্যাদার কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। যেকোনো উন্নয়নের শর্ত হচ্ছে পরনির্ভরতা থেকে মুক্তি, ক্ষুধা থেকে মুক্তি এবং কুসংস্কার থেকে মুক্তি। কেবল প্রবৃদ্ধিই কোনো উন্নয়নের সূচক নয়। এ কারণে তিনি প্রবৃদ্ধির সাথে পাঁচটি মৌলিক উপাদানপূর্ণ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এটি যেমন ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রতিভাত হয়েছে; জালেম পাকিস্তানিদের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে রেসকোর্স ময়দানের বক্তৃতায় এমনকি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক যখন বাকশাল গঠনের আহ্বান জানাচ্ছিলেন তখনও প্রতিভাত হয়ে উঠেছে। তিনি জাতিকে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন তাতে মোট চারটি ভিত্তিভূমি ছিলো সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ। সমাজতন্ত্র বলতে তার ধারণাকে ব্যাখ্যা করলে প্রতিভাত হয়ে উঠে সমাজের প্রত্যেক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূর্ণ করার প্রয়াস। তিনি বাঙালির জন্য আত্মত্যাগ করেছেন আর বাঙালিও তাকে দুই হাত ভরে শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় সিক্ত করেছে।

তার রাজনীতির মূল উৎসভূম ছিল বাঙালির ভালোবাসা শ্রদ্ধা এবং শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি। তার রাজনীতির ধারা ছিল টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। কল্যাণ রাষ্ট্র বলতে আমরা বুঝি একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা যা তার নাগরিকদের বিশেষভাবে আর্থিক ও সামাজিক প্রণোদনা দিয়ে থাকে এবং মৌলিক চাহিদাগুলো পূর্ণ করার উদ্যোগ নেয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ছিলেন। ব্রগুটেলেগু রিপোর্ট অনুসারে টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটি উন্নত ব্যবস্থা যা ভবিষ্যতের প্রজন্মের চাহিদা বিবেচনায় রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করা যায়।

তিনি সমসাময়িক উন্নয়ন কার্যক্রমকে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের সীমাহীন ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে কেমন করে বর্তমানের সঙ্গে যুগপৎভাবে ভালো রাখা যায় সেজন্য প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাসহ সঞ্চয় বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য আনয়নের প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। যাতে আর্থিক পরিসেবাগুলো সাধারণ মানুষের গোচরিভূত হয় এবং সুযোগের উপলব্ধি এবং সাম্য মানুষের উন্নয়নে কাজে লাগে।

জাস্ট ফ্যালাগু এবং জ্যাক আর পার্কিনসন তাঁর গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ: দি টেস্ট কেইস ফর ডেভেলপমেন্ট’ এ লিখেছেন যে পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যহিত পর থেকে বাংলাদেশ অঞ্চল থেকে প্রায় ৩১১২ কোটি টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে ১৯৬৯-৭০ অর্থবছর পর্যন্ত পাচার হয়ে গেছে। তৎকালীন হিসাবকে বর্তমান ২০২০ সালের হিসাবে রূপান্তর করলাম না। পশ্চিম পাকিস্তানিরা এদেশকে উপনিবেশ হিসেবে বিবেচনা করত এবং অর্থনীতি সমাজ ও রাজনীতি তিনটি ভিত্তিকে সর্বদা অসাম্য হিসেবে চিন্তা করত। এই যে বৃত্তাবদ্ধ শিকল, পুঁজি পাচারের মহা উৎসব তা বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পশ্চিমাদের কর্তৃক মিথ্য হয়রানি এবং স্বাধীনতা সংগ্রাম সর্বত্র দেখতে পাচ্ছিলেন। তার অন্তরে বিশ্বাস ছিল বাঙালির মুক্তি ভিন্ন দেশের সমাজের জন মানুষের মঙ্গল হতে পারে না। সারা জীবন তিনি গণতন্ত্রের চর্চা করেছেন। এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কিভাবে গণমানুষের কল্যাণ করতে হবে তা যেন তাকে এক অসীম ও বীর মানব হিসাবে নির্দেশনা দিত।

তবে দুঃখ লাগে ১৫ আগস্টের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার আগে যারা তার সাথে ছিল, চারজন বীর নেতা ছাড়া অন্যরা মোশতাকের নেতৃত্বে সংযুক্ত হয়। আগে থেকেই যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের সাথে অতি বামরা ছিল। অনেকেই আজ মুক্তিযুদ্ধের পরও বাজিতপুরের ঘটনা ভুলে গেছে। অথচ খুনি জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিদের চারজনকে ফাঁসি দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু একটি ধ্বংসস্তূপ বিধ্বস্ত রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধতর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশে প্রতিস্থাপনে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন। তার আমলে প্রণীত প্রথম জাতীয় বাজেট তার চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটেছিল। এমনকি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে অন্ন পৌঁছে দেয়ার প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন। পাকিস্তানের যে বাইশ পরিবার ছিল সেটি ভাঙতে তিনি চেয়েছিলেন। তিনি দীর্ঘপথ পরিক্রমায় কঠোর সাধনার মাধ্যমে জাতির জনকে পরিণত হয়েছিলেন।

মোবাশ্বের আলীর ভাষায় বঙ্গবন্ধু না থাকলে বাংলা ভাষাকেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতো না এবং দেশের সাধারণ মানুষ পাকিস্তানি শোষকদের হাত থেকে মুক্ত হতো না। আসলে বঙ্গবন্ধু সহস্র বছরের সেরা বাঙালি। এ জন্যই তাকে কষ্ট করতে হয়েছে। পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও সেদিন একদল সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তার নির্দেশ অমান্য করেছিল এদের সংখ্যা মুষ্টিমেয় ছিল। এরা সুযোগসন্ধানী সহযাত্রী ছিল। এই লুটেরা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু তারা সাধারণ জনমানুষের বিরক্তির কারণ হয়ছিল। মজুতদার, কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। দুর্ভাগ্য ওই মজুতদার, কালোবাজারিরা তৎকালে সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। তার উন্নতমানের কার্যক্রমে বিরোধিতার করে একদল দুর্বৃত্তশ্রেণি শত্রু খতমের নামে সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন করছিল।

আসলে অন্যায়কারীদের অত্যাচার বিরুদ্ধে জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বঙ্গবন্ধু যে মহান উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের তথা বাকশালের ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কুচক্রীরা নানা ধরনের গুজবের ডালপালা লাগিয়েছিল। জিয়াউর রহমান-মোস্তাক মাহবুব আলম চাষী ছিল মহাধাড়িবাজ। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন প্রয়াসকে ভেতরে থেকে নষ্ট করতে চেয়েছিল। মনে পড়ে বাকি ভাইয়ের কথা যিনি কুমিল্লা-৬ এর সম্মানিত সদস্য সদস্য জনাব এ কে এম বাহাউদ্দিনের আপন ভাইকে জিয়াউর রহমানের তথাকথিত ক্যাঙ্গারু ট্রায়ালে হত্যার শিকার হন। বাকি ভাইয়ের মত মানুষকে মেরে জিয়া অন্যায় করেছেন।

বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে বলেছিলেন যে, ‘আজ সোনার বাংলার কোটি কোটি মানুষ গৃহহারা, আশ্রয়হারা। তারা নিঃসম্বল।...আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে পূর্ণ হবে না।’ তার এই মন্ত্রমুগ্ধ উচ্চারণে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির পথ নির্দেশ করেছে।

তিনি ওই দিন আবারও ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা, বাংলাদেশের মানুষ যেন তাদের খাদ্য পায়, আশ্রয় পায় এবং উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। তার এ উক্তিতেও বিধৃত হয়েছে মানুষের কল্যাণ যাঞ্চনা করা। শেখ মুজিবুর রহমান ১০ এপ্রি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে বলেন, আমরা একটা গণমুখী সংবিধান তৈরি করতে চাই। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘জাতিসংঘ প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ৮০ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সার্ভে করেছেন। তারা রিপোর্ট দিয়েছেন, গত মহাযুদ্ধে যখন গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা ও রাশিয়া জার্মানি আক্রমণ করে এবং জামার্নিকে পদনিত করে, তখন জার্মানি যে রকম ধ্বংস করেছিল, সেই রকম সমপরিমাণ ধ্বংস হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি সেদিন আরও উল্লেখ করেন তার ভাষণে ‘এবং সমাজতন্ত্র না হলে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ৫৪,০০০ বর্গমাইলের মধ্যে বাঁচতে পারবে না। সেই জন্য অর্থনীতি হবে সমাজতান্ত্রিক। তিনি তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সকল মানুষকে নিয়ে দেশের পুনর্গঠনের কথা ভেবেছেন। এতে পরিস্ফুট হয়ে উঠে, তিনি অন্তর্ভুক্তিমূরক উন্নয়ন দেখেছেন দেশের প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে দেশ গঠনের মহামন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে বলেন যে, ‘কয় পাউন্ড বৈদেশিক মুদ্রা ছিল, সকলেরই জানা আছে। রাস্তাঘাটের কি অবস্থা ছিল, সবই আপনারা জানেন। চাউলের গুদামে কত চাউল ছিল, এ সবই আপনাদের জানা আছে। তিনি একই ভাষণে উল্লেখ করেন, ‘আমরা চাই শোষিতের গণতন্ত্র এবং সেই শোষিতের গণতন্ত্রের অর্থ হলো, আমাদের দেশে যে গণতন্ত্রের বিধিলিপি আছে, তাতে যেসব প্রভিশন করা হয়েছে, যাতে এ দেশের দুঃখী মানুষ প্রটেকশন পায়, তার জন্য বন্দোবস্ত আছে ওই শোষকরা যাতে প্রটেকশান পায়, তার ব্যবস্থা নাই। তার বক্তব্যে টেকসই উন্নয়ন ও গণতন্ত্র এবং অন্তর্ভুক্তির কথা বিবেচিত হয়। বঙ্গবন্ধুর উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করতে গিয়ে যখন দেখি কেউ কেউ শোষক রূপে আবির্ভূত হয়ে তার আদর্শের বিচ্যুতি ঘটায় তখন মন খারাপ হয় যায়।

তিনি তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে, তারা শাসক নন তারা সেবক। তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যত বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তালে আমার জীবন সার্থক হবে, শহিদের রক্তদান সার্থক হবে।’ তার এ বক্তব্যে ধ্বনিত প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির ধারক-বাহক ছিলেন। বৈশ্বিক এ নেতা মজলুম মানুষের পাশে ছিলেন।

৭ এপ্রিল ১৯৭৩ সালে সংসদে জাতির পিতা বলেন, রাতের অন্ধকারে যেভাবে আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং হচ্ছে, এটা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মীই সমর্থন করেন না। ‘ সে সময়ে যারা দেশে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের হত্যা ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। অতি বামপন্থীদের সাথে ধর্মীয় ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিল। এদের হাত থেকে বাঁচানোর প্রয়াস নিলে ও ষড়যন্ত্রকারীরা ধীরে ধীরে তাদের জাল বিস্তৃত করতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে বলেছিলেন ‘পঁচিশ বছর পর্যন্ত এই বাংলাদেশ পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যারা কারা নির্যাতন, অত্যাচার-অবিচার সহ্য করেছে, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।’

চক্রান্তকারীরা বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটাতে কোন কসুর করেনি। তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘সশস্ত্র বিপ্লব কর ক্ষমতা দখল করবেন এমনকি আমাদের উৎখাত করে দেওয়া হবে। ... করাপশন বাংলার কৃষক করে না, করাপশন বাংলা মজদুর করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ- যারা আজকে এদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করেছি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি গভীর আশায় উচ্চারণ করেছিলেন, ‘আমাদের ইনকাম করতে হবে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। তার এ উক্তি বাস্তবায়নে সাড়ে তিন বছর শাসনকাল নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ওই দিনে তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘আজ দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর কালোবাজারি, নতুন পয়সাওয়ালা এদের কাছে আমার আত্মবিক্রয় করতে হবে?... যারা আমার মাল বাংলার মাটি থেকে বিদেশে চালান দেয়, চোরাকারবারির মাধ্যমে দুর্নীতি করে, যারা মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেয়, তাদেরকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’ তার এ উক্তির মধ্য দিয়ে যারা দেশের শত্রু, সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিতে চায়, চোরাকারবারি, মানুষ হত্যাকারী, জুলুমবাজ এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেন। তিনি আবার বলেন, প্রোডাকশান করতে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে, মানুষ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘দিস ইজ আওয়ার সেকেন্ড রেভুলেশন।... এই রেভুলেশন হবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। এর অর্থ অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।’ মানুষকে নিয়ে তার কর্ম তাদের মঙ্গল সাধন করাই ছিল তার ব্রত। বঙ্গবন্ধু তার বক্তৃতায় যারা দেশ, জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন, তাদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। বরং এটি গভীরভাবে প্রোথিত হয়। নির্মম নৃশংসতায় আকাশচুম্বী ভালোবাসায় সিক্ত এ মহামানবকে হত্যার জঘন্যতম পাপকর্ম করেছিল। আজ তার জন্মবার্ষিকীতে তার রুহের মাগফেরাতের জন্যে প্রার্থনা জানাই।

লেখক: ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনোমিস্ট, উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদ ও প্রফেসর।

ই- মেইল: [email protected]

এই বিভাগের আরো সংবাদ