আজকের শিরোনাম :

মঈনুল আলমকে আপনারা ভুলে গিয়েছিলেন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৮, ১৮:০৭

ফজলুল হক, ২৫ জুন, এবিনিউজ : রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে জানতে পারি– আমার প্রিয় সাংবাদিক মঈনুল আলম টরেন্টোর একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। উনার ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছিল। উনার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে– শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে উনার একটি লেখা আজাদীতে পড়েছিলাম। এম এ হান্নানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেও আমার মনে পড়েছিল মঈনুল আলমের কথা। সেদিন কানাডায় আমার এক আত্মীয়কে ফোন করেছিলাম। মঈনুল আলমের সাথে আমাকে কথা বলিয়ে দিতে বলেছিলাম।একাত্তরের মার্চে চাটগাঁইয়া বীর তরুণরা অবাক কান্ড করে–মাথা মোটা জেনারেল– ইয়াহিয়া, টিক্কা খানদের তাক্‌ লাগিয়ে দিয়েছিল। ২৩ মার্চ ৭১ সাল, করাচী থেকে সোয়াত জাহাজে আনা মারনাস্ত্র খালাস চাটগাঁইয়ারা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২৫ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে চাটগাঁইয়ারা “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র” চালু করেছিল। আগ্রাবাদ থেকে রেডিও ট্রান্সমিটার অন এয়ার প্রক্রিয়া কালুর ঘাটে স্থানান্তর করেছিল। হান্নান ভাই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ডাক দিয়েছিল– আমরা এখন স্বাধীন। একজন মেজরের কণ্ঠ রেডিওতে শোনা গিয়েছিল। কে এই মেজর? আমাদের হালিশহরে ইপিআর ক্যাম্প– পাক জেনারেলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। নেতৃত্বে ছিলেন মেজর রফিক। একজন মেজরকে তখন আমরা চিনি– মেজর জিয়া। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের কথাও আমরা শুনতেছিলাম। জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল। এই ঘোষণা নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। এই ব্যাপারে দুতিন মাস আগে আমি মঈনুল আলমের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। সত্তর সালে আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা প্রায় শেষ। তখন আমি রাজনীতিতে সক্রিয়। চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটিতে ছিলাম। ৬৭ সাল থেকে প্রথমে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি ছিলাম। উনি তখন সাংবাদিক। সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভাল সম্পর্ক। সাবের ভাই পরে সাংবাদিক হয়েছিলেন। বিনোদা ভবন থেকে লাভ লেইন। মাহফুজ ভাই “গনরাজ” নামে একটি পত্রিকা বের করার জন্য ছোটাছুটি করছেন। হাশেম ভাই ও আরো কয়েকজন নেতা বায়াত্তরে “দেশ বাংলা” নামে দৈনিক বের করেছিলেন। হারুন ভাই বের করেছিলেন দৈনিক স্বাধীনতা। মঈনুল আলম আমাদের বড় ভাই। আজাদীতেও উনি লিখতেন। আজাদীর অনেক পুরানো কথা জানি। সত্তর সালে ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় ও বন্যা হয়েছিল। চাটগাঁর দূর্গতরা অবহেলিত ছিল। ইত্তেফাক পত্রিকার আবাসিক সাংবাদিক ও ব্যুরো চীফ মঈনুল আলম– দূর্গত এলাকার উপর রিপোর্টিংকরে মানুষের উপকার করেছিল।উনি ভাল ক্যামেরা চালাতে জানতেন। ভাল ফটোগ্রাফার। তিনি অসাধারন কলাম লিখতেন। গাফ্‌ফার চৌধুরীর চাইতে কম জনপ্রিয় না। উনি কলমের সৈনিক। উনার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। উনার একটা ফিয়াট গাড়ী ছিল। দেওয়ানজী পুকুরের আশে পাশে থাকতেন। ইত্তেফাক অফিস ও বাসা এক যায়গাতে ছিল। এম এ আজীজের বাসা ও ক্যাপ্টেন কাসেমের বাসা আশে পাশে ছিল। উনার লেখার স্টাইল আমাকে টানত। আমাদের বিপদের কারন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের অর্বাচীন সামরিক জেনারেলরা। তারা ভাবত, তারা ৪৭ সালে “বাংলাকে” মুফতে পেয়েছে। এটা গনিমতের মাল। আমাদের বিপদের কারন ছিল, পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত প্রভু, পাঠান পাঞ্জাবী খানদানের আওলাদ, লারকানার, সিন্ধুর রাজনীতিকরা। আরো বিপদের কারণ ছিল, মোহাজের বিহারীরা। এই কুত্তারা বয়ান দিত, “বাঙাল যোদ্ধা জাতি নয়।” পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার সব স্থাপনা ছিল করাচী পিন্ডি লাহোরে। আমার এক নন–বাঙালী ক্লাসমেট আমাকে বলেছিল, “বাঙাল মর্দ নেহি, আওরাতভি নেহি-,” সে ভেতো বাঙালি। আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। শালে, ছাতুকি আওলাদ, বাঙাল তেরা বহেন ক্যা জঙরু হ্যায় কেয়া? খবিস ক্যা আওলাদ? সে পিস্তল বের করেছিল। সেই আমলে মঈনুল আলম ছিলেন আমাদের উৎসাহ। উনার মধ্যে স্বাধীন চেতা ভাব ছিল। বড় পরিবার উনার। মোহীত উল আলম উনার ভাই। মাহবুবউল আলম উনার পিতা। ওহীদুল আলম স্যার উনার শ্বশুর। সবিহ উল আলম, সায়ফুল আলম, আবুল ফজল স্যার উনার পরিবারের সদস্য। যতদূর মনে আছে উনার স্ত্রীর নাম নার্গিস ম্যাডাম। সময় তো বসে নেই। জানিনা, সবাই কেমন আছেন। আমারো ইচ্ছা হয়– কানাডায় চলে যাওয়ার। এখানে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। খান–রা চলে গেছে। খানেওয়ালারা আছে। উনার স্ত্রী– আমার স্যারের মেয়ে। সাংবাদিক সৈয়দ উমর ফারুক স্যারের নাতি।

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন গাফ্‌ফার চৌধুরী। আমরা সাহসী লেখক খুঁজতাম।আমরা তখন কাঁদতে, বিলাপ করতে রাজনীতিতে আসিনি। আমরা লুট করতে ও আসিনি। আমরা আর দাবি দাওয়া পেশ করতেও চাইতামনা। আমরা এসেছিলাম মারতে। আমরা লেখক খুঁজতাম– কান্নার কোরাস গাওয়া লেখক নন। আমরা প্রেমের কবিতা সমূহ ভাঁজ করে বাক্সে রেখে দিয়েছিলাম। বারুদের সংস্পর্শে এসে আমাদের প্রেমের কবিতা হয়ে উঠেছিল– হ্যান্ড গ্রেনেডের ডেটনেটর। এক্সপ্লেসিভের করটেক্স। সাব মেশিন গানের নাইন এম এম বুলেট। রিভলবারের ফায়ারিং পিন। এই কাজ করতে করতে মঈনুল আলমের সাথে আমার পরিচয়। প্রফেসর খালেদ আমাকে গাফ্‌ফার চৌধুরীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। একবার (বিলুপ্ত) সারিনা রেস্তরায় আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর সাথে দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম। ইষ্টার্ন এ্যকজামিনারপত্রিকায় মঈনুল আলম সাংবাদিকতা শুরু করেন। ইউনিটি ও ইনসাফ নামে পত্রিকা ছিল। তিনি ইউনিটিতে ও কাজ করেছেন। ২৪/২৫ বছর যাবৎ চট্টগ্রামে দৈনিক ইত্তেফাকের ব্যুরো চীফ ছিলেন। মানিক মিয়া “মোসাফির” ছদ্মনামে “রাজনৈতিক মঞ্চ” শিরোনামে কলাম লিখতেন। ইত্তেফাক তখন জনপ্রিয় পত্রিকা। মানিক মিয়া ও বঙ্গবন্ধু– হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছিলেন। মাওলানা ভাসানীর ও স্নেহ ধন্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে লাহোরে ৬দফা দাবী উত্থাপন করেন। দিনটি ছিল ৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৬। লাহোরে বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ফেডারেল পদ্ধতির হতে হবে। দেশরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয় ছাড়া– সব কিছু প্রদেশের হাতে থাকবে। কোন কিছু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকবেনা। আমাদের অর্থনীতি আমরা দেখব। সহজ বিনিময় যোগ্য দুটি পৃথক মুদ্রা থাকবে। চাইলে আপনারা একক মুদ্রা চালু করতে পারেন, তবে পুর্ব পাকিস্তান থেকে মুদ্রা পাচার হতে পারবেনা। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা রিজার্ভ ও আলাদা মুদ্রানীতি থাকতে হবে। ফেডারেল পদ্ধতির পাকিস্তানের কেন্দ্রের সরকারের হাতে কোন ট্যাক্সেশন ক্ষমতা থাকবেনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী লাহোরে বিরোধী দলের এই সম্মেলনে– জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী, কাউন্সিল মুসলিম লীগ যোগ দিয়েছিল। ন্যাপ ও এনডিএফ যোগ দেয়নি। আওয়ামী লীগ যোগ দিতে চায়নি, শেষ মুহূর্তে যোগ দিয়েছিলেন। ওই প্রতিনিধি দলে চট্টগ্রাম থেকে জহুর আহমদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সাথে লাহোরে গেলেও, এমএ আজীজ যাননি। (আজীজের ধারনা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা বাঙ্গালীকে মুদ্রা ব্যবস্থা, ট্যাক্সেশন, রিজার্ভ, প্রতিরক্ষা ও চাকুরীর অধিকার ছেড়ে দেবেনা।) লাহোরে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে ওই বিরোধী দলীয় সম্মেলন বসেছিল। সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন। শেখ সাহেব বলেছিলেন, আমরা স্বীয় কর্তৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা বাহিনী রাখতে চাই। ১৭ দিন ধরে পাক ভারত যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা অরক্ষিত ছিলাম। কিন্তু পাকিস্তান চলে আমাদের সম্পদ দিয়া। যে বৈদেশিক মুদ্রা আমরা কামাব তা পূর্ব পাকিস্তানের হাতে থাকবে। লাহোরে এই ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কোন রকমে ঢাকায় ফিরে আসেন। পাকিস্তানের মাইর, আজকের বাঙালির পোলারা জানেই না। ঢাকা এলেন বঙ্গবন্ধু। আওয়ামী লীগ নেতারা গোস্বা। মানিক মিয়া ইত্তেফাকের কর্ণধার– উনি গোস্বা। কেন মুজিব আমাদের না বলে এই সব ঘোষণা দিল? এখন কি হবে? আয়ূব খান ও পশ্চিম পাক– নেতারা কি ভাববে? মঈনুল আলম তখন ইত্তেফাকের চাটগাঁ ব্যুরো প্রধান। ইত্তেফাকে তখন সিরাজ উদ্দিন হোসেন সাহেব নিউজের দায়িত্বে ছিলেন। ছোট্ট সিঙ্গেল কলাম নিউজ বের হয় ইত্তেফাকে– লাহোরে কি ঘোষণা দিলেন শেখ মুজিব সেটা লিখা হলো। তাও সিরাজ সাহেবের চেষ্টায়। মানিক মিয়া ইত্তেফাকের কর্নধার। তিনি তো নাখোশ। মুজিব তো মানিক ভাইকে কিছু বলেনি। ১৩ ফেব্রুয়ারি এমএ আজীজ সেই লাহোরে মুজিব প্রদত্ত প্রস্তাব ৬ দফার পক্ষে বিবৃতি দিলেন। হান্নান ভাই হারুন ভাই এগিয়ে এলেন। সিরাজ উদ্দিন হোসেনের চেষ্টায় বঙ্গবন্ধু ও মানিক মিয়া আলোচনা করলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারির পর মঈনুল আলম ইত্তেফাকে শেখ মুজিবের এই বিপ্লবী প্রস্তাবের পক্ষে বিবৃতি ও নিউজ পাঠাতে থাকেন। চাটগাঁইয়ারা ৬ দফার পক্ষে দাঁড়াল। এমএ আজীজ, হান্নান ভাই, হারুন ভাই মাঠে নামলেন। জহুর আহমদ চৌধুরী ও উনার কর্মীরা মাঠে নামলেন। ঢাকায় আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, সালাম খান, আতাউর রহমান খান– হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা না হলে সেদিন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটিতে ৬ দফা অনুমোদন হতোনা। চট্টগ্রামের মঈনুল আলম নিউজ পাঠান ৬ দফার পক্ষে । ৬ দফার প্রথম পুস্তিকা বের করেন এম এ আজীজ ও জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আর সিদ্দিকী অর্থ দেন। আপনারা জানেন, লালদিঘিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি ৬ দফা প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। ১৮/১৯ মার্চ ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। আমরা কালের সাক্ষী। আমরা জানতাম ৬ দফা বাস্তবায়ন হবেনা। কিন্তু ৬ দফা না হলে আমরা একাত্তরের নয় মাসের যুদ্ধের পক্ষে কোন যুক্তি দাঁড় করাতে পারতাম না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের যে যৌক্তিক পটভূমি তা আমরা তৈরী করেছি– চট্টগ্রাম থেকে। আজ আমাদের কোন স্বীকৃতি নাই। স্বীকৃতি কে দেবে? লোকে তো ইতিহাস পড়েনা? ৬ দফাকে ব্লক হওয়া থেকে বাঁচাতে ছাত্রলীগের ও সাংবাদিকদের এবং তরুণদের, যেমন সাংবাদিক মঈনুল আলমের যে এক বিন্দু প্রচেষ্টা– তা থেকেই স্বাধীনতার মহা সমুদ্রের মহা সিন্ধুর দিকে আমাদের অগ্রযাত্রার প্রেরণা এসেছিল। একাত্তরের মার্চে জিয়ার প্রথম রেডিও বক্তৃতা সংশোধন করার তাগিদ অনুধাবন করে একে খানকে ফোন করেছিলেন এই সাংবাদিক। এ কে খান জিয়ার প্রথম ঘোষণা সংশোধন করে দেন। পরে জিয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তখন উনার (মঈনুল আলম) সাথে আমার মৃদু দ্বিমত হয়েছিল। মঈনুল আলম তখন মনে করতেন আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নই। আমি উনাকে বলেছিলাম, যদি তাই হয়, তাহলে আপনি আবদুর রহিম আর্মস এ খবর নিন। বন্দুকের দোকান কারা লুট করছে? কারা সোয়াত জাহাজ ঠেকাচ্ছে? কারা আগ্রাবাদ থেকে রেডিও ট্রান্সমিটার তুলে নিয়ে কালুর ঘাটে ঘোষণা টোষণা দিচ্ছে? কারা রাতে নেভাল বেইসের দিকে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ছে? কারা ইপিআর ক্যাম্পে– বিদ্রোহে সাহায্য দিচ্ছে? আপনি কেন বুঝতে পারছেন না, ছাত্রলীগের স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস একটিভ আছে? বঙ্গবন্ধু যে একজন বিপ্লবী সেনানায়ক, তা কেন বুঝতে পারছেন না? পাকিস্তান বুঝেছিল বঙ্গবন্ধুকে হারানো যাবে না। মাহবুব উল আলমের ছেলে আমাকে বলেছিলেন, “আমরা যুদ্ধ করব।” কলমের সৈনিক ছিলেন মঈনুল। আজীবন কলম উঁচিয়ে যুদ্ধ করে গেছেন। আমরা যখন বন্দুকের দোকান লুট করছি, তখন উনি কলমে শান দিচ্ছিলেন। কলমের সৈনিক চলে গেছেন। তার লেখা পড়েছি, তিনি নিশ্চিত হয়েছিলেন আমরা যুদ্ধে জিতব। চাটগাঁর আকাশ এখন ধূসর, সাহসী সাংবাদিক চলে গেছেন। তিনি কনজ্যুমার ইকনমিস্ট ও জমানা পত্রিকা সম্পদনা করতেন। তিনি বাংলাদেশের একমাত্র সাংবাদিক যিনি রিগান ও গর্বাচেভের শীর্ষ বৈঠক কাভার করেছিলেন। উনার সাথে আমার আর কথা বলার সুযোগ হয়নি। ফোনে উনাকে আমি পাইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ একাত্তরে আচম্বিতে শুরু হয়নি। এর প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। মঈনুল আলমের মতো সাহসী, বীর সাংবাদিকরা আজীবন যুদ্ধ করেছিলেন– একটি স্বাচ্ছন্দ, সাবলীল সমাজ নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু উনি উনার প্রাপ্য সম্মান পাননি। উনার মতো অনেকেই তাদের অবদানের স্বীকৃতি পাবে না। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, স্বাধীনতা যুদ্ধে, স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামে যাদের কোন অবদাান নাই, বরং যারা বিরোধীতা করেছিলেন, তারা তার পরে ভোল পাল্টে জাতে উঠে গেছে। অনেকে পদ পদবী ও পদক বাগিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন একদম আশাবাদী নই।

রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা আপনাদের দলের সুবিধা মতো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্মাণ করবেন না। কেউ ক্ষমতায় চিরদিন থাকে না। ইতিহাস দুই রকম ঃ (১) পলিটিক্যাল ইতিহাস (২) রিয়েল ইতিহাস। ক্ষমতার পালা বদলের সাথে সাথে রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে যায়। একশত বছর পর হলেও সত্যিকার ইতিহাস নিজের জায়গা করে নিবে। সে নিজের জায়গা করে নিবে, যত নিষ্ঠুরতার দরকার হয়– সে করবে। ইতিহাসে নিজের স্থান করে নেয়ার সর্বোত্তম উপায় হলো– সত্যিকার ইতিহাসকে বাধাগ্রস্ত না করা। ইতিহাসে সুলতান সুলেমানের চেহারা দেখে– বাচ্চারা হাসে। আফসোস কোন কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। স্বাধীনতা সংগ্রামে যদি আমার কোন ভূমিকা থেকে থাকে, তার স্বীকৃতি আমি কারো কাছে ভিক্ষা চাই না।

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। অধ্যক্ষ , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
(সংগৃহীত)

এই বিভাগের আরো সংবাদ