আজকের শিরোনাম :

ফেসবুক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর নতুন বাহন?

  বিভুরঞ্জন সরকার

২৬ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

ফেসবুক কি ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানো কিংবা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার একটি বাহন হতে চলেছে? গত কয়েক বছরে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা আমরা ঘটতে দেখলাম। ২০১২ সালে রামুতে শুরু। গত ২০ অক্টোবর ভোলার বোরহানউদ্দিনে আপাতত শেষ তা-ব আমরা দেখলাম। এর মধ্যে নাসিরনগর, রংপুরসহ আরো কয়েক জায়গায় ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ‘তৌহিদি জনতা’র ব্যানারে একদল মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করেছেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এখন এক ধরনের আতঙ্ক ও অস্বস্তির মধ্যে থাকেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের জীবন বিপন্ন করার এক অদ্ভুত খেলা শুরু হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত কারো আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম কিংবা নবীজি সম্পর্কে কটূক্তি ছড়ানোর গুজব প্রচার করে মানুষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। উত্তেজনা ছড়ানোর কাজে অনেক ক্ষেত্রে মসজিদের মাইক ব্যবহার করা হয়। যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে রাস্তায় নামেন, তারা সব সময়ই কা-জ্ঞানহীন আচরণ করেন। সব ক্ষেত্রেই এটা প্রমাণ হয় যে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কাজটি করেন না। তাদের ফাঁসানো হয়। অথচ আক্রান্ত হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনই। যার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়, আক্রমণ তার ওপর সীমাবদ্ধ থাকে না। একের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অনেককে শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও একবারও প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয় না, উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হয় না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার কাজে যারা পরিকল্পিতভাবে নিয়োজিত আছেন, তাদের একপ্রকার অঘোষিত দায়মুক্তি দেয়ার অঘটন অব্যাহতভাবে ঘটে চলেছে।

গত কয় বছর ধরে টানা ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘু স্বার্থানুকূল দল বলে মনে করা হয়। তবে বর্তমান আওয়ামী লীগ যে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে আগের দৃঢ় অবস্থানে নেই বা তারা যে ভোটের রাজনীতি মাথায় রেখে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপসরফা করে চলতে চায়, সেটা নানা ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। গত বছর ২৮ মে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেছিলেন। তার বক্তব্য সংখ্যালঘুদের মনে খুব আশাবাদ তৈরি করতে পেরেছিল বলে মনে হয় না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সাম্প্রতিক সময়ে যে মানসিক চাপ ও অস্থিরতার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন, তাদের মধ্যে যে উদ্বেগ ও ভীতি কাজ করছে তা নিরসনের জন্য যে ধরনের আশাজাগানিয়া বক্তব্য শাসক দলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির কাছে প্রত্যাশিত ছিল, তিনি তা দিতে পেরেছিলেন বলে মনে হয় না। তার বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, কিন্তু সেটা উপস্থিত কতজনের মন ছুঁয়েছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশের সুযোগ আছে।

ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ছোটখাটো ভুলত্রুটি নিয়ে বসে থাকলে বড় ভুলত্রুটি হবে। ২০০১-এর নির্বাচনের পরের কথা মনে নেই? ২০০১, ২০০৩-এর নির্যাতনের কথা ভুলে গেছেন? আপনাদের জন্য আমাদের চেয়ে বেটার কেউ না। আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। পাকিস্তানের বন্ধুরা আপনাদের বন্ধু হতে পারে না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এসব বক্তব্যে সংখ্যালঘুরা খুব উৎফুল্ল বা উৎসাহিত হয়েছে বলে মনে হয় না। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা এক সময় আওয়ামী লীগকেই তাদের বড় বন্ধু এবং নির্ভরতার জায়গা বলে মনে করত। নির্বাচন এলে দলবেঁধে কোনো অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে নৌকায় ভোট দিত। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে পরের সব নির্বাচন আমি নিজে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছি। দেখেছি সংখ্যালঘুদের সংঘবদ্ধভাবে নৌকায় ভোট দিতে। আমি নিজে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত বাম-প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম। ছাত্র ইউনিয়ন-সিপিবির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে পেরে গৌরব বোধ করতাম। আমরা মনে করতাম, বামপন্থিরাই সংখ্যালঘুদের প্রকৃত বন্ধু। কমিউনিস্টদেরই তখন সাচ্চা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পাহারাদার বা হেফাজতকারী মনে করা হতো। অথচ ভোট এলে দেখতাম আমাদের পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য কেমন ব্যাকুল হয়ে উঠতেন।

কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। গত কয়েকটি নির্বাচন থেকে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘুরা আর পাগলের মতো নৌকায় ভোট দেয় না। আবার নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন-জুলুম একপ্রকার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতির অসহায় শিকার এখন সংখ্যালঘুরা। তাদের কাছে সবাই ভোট চায় কিন্তু তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়। সংখ্যালঘুরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখন শুধুই ‘ভোটার’, মানুষ নয়।

যে সিপিবি বা বামপন্থিদের একসময় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিশ্বস্ত মিত্র বলে মনে করা হতো তারাও রাজনীতির জটিল সমীকরণে সংখ্যালঘুদের বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানোর গরজ বোধ করে না। তারা যাদের ভোট দেয়, তারাই তাদের রক্ষা করুকÑ এই হলো মনোভাব। তা ছাড়া তাদের শক্তি-সক্ষমতাও এখন একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখন সংখ্যালঘুদের ঘরে আগুন লাগলে আগুন নেভানোর লোক পাওয়া না গেলও আলু পোড়া দেয়ার লোক ঠিকই পাওয়া য়ায়।

ধর্মরাজনীতির একটি বড় ফ্যাক্টর হওয়ায় আওয়ামী লীগও আর সংখ্যালঘুদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। সংখ্যালঘুরা দিন দিনই সংখ্যায় কমছে। ভোটের রাজনীতিতে সংখ্যা একটি বড় বিষয়। সংখ্যালঘু ভোট দেশে এখন সম্ভবত শতকরা দশ ভাগও নয়। তাই সবার মনোযোগ এখন শতকরা ৯০ ভাগ ভোটের দিকে। সংখ্যালঘু ভোট বিভক্ত হওয়ায় তাদের দরকষাকষির ক্ষমতাও এখন কমেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি শুরু হওয়া, সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদের ইসলামপ্রীতি, সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন ইত্যাদি মিলিয়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুরাও বিভিন্ন রাজনৈতিক ধারায় বিভক্ত হয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে বলে আমার মনে হয়।

সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য গড়ে উঠেছে একাধিক সংগঠন, একাধিক রাজনৈতিক ধারায়। এই সংগঠনগুলোর যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে কিছু লাভবান হলেও হতে পারেন, কিন্তু সম্প্রদায়ের কল্যাণে তারা কতটুকু কী করতে পারছেন, আমার কাছে অন্তত তা পরিষ্কার নয়। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বঙ্গভবন এবং গণভবনে এখন কয়েক হাজার হিন্দু নিমন্ত্রিত হয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন, এতে আমন্ত্রিতরা এক ধরনের পুলক অনুভব করলেও দিন শেষে ঘরে ফিরে তাদের মনের হতাশা দূর হয় বলে মনে হয় না।

ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য শতভাগ সত্য বলে মেনে নিতে পারলে খুশির কারণ ঘটত। কিন্তু সারাদেশে সংখালঘু নিগ্রহের যেসব তথ্য নিয়মিত পাওয়া যায় তাতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যকে খোলা মনে স্বাগত জানাতে চাইবেন না অনেকেই। সংখ্যালঘু নির্যাতনকে তিনি বিএনপির ‘পলিসি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তার এই কথাটা ঠিক। বিএনপি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে না। মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে বিএনপির রাজনীতির মিল বা সাদৃশ্য আছে। মুসলিম লীগ সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত, বিএনপিও তাই করে। সংখ্যালঘুরা দেশে থাকবে, তবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে। তারা সমান অধিকার পাবে না, সমান মর্যাদা পাবে না।

মুসলিম লীগ নেতা চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যালঘুদের ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছিলেন এই কথা বলে যে, ‘আপনারা তো আমাকেই ভোট দেবেন, তাই কষ্ট করে আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই।’ বিএনপিও এই নীতিতে বিশ্বাসী। সংখ্যালঘুরা ভোট কেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে- এই ভীতির কারণে তাদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকেই বিরত রাখতে চায়। ভয়ভীতি দেখায়। সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতেই তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন।

এখন সংখ্যালঘুরা দলবেঁধে এক মার্কায় ভোট না দেয়ায় তাদের বিপদও বেড়েছে। ভোটের রাজনীতির সব পক্ষের ‘সফট টার্গেট’ এখন সংখ্যালঘুরা। আগে আওয়ামী লীগ যেভাবে সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াত এখন তেমন দাঁড়ায় না। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তাদের সময় ‘দুয়েকটি বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে’ তবে এটা ‘আওয়ামী লীগের পলিসি নয়’, ওটা ‘দুর্বৃত্ত’রা করেছে এবং দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে সরকারের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’। তার এসব কথায় যথেষ্ট ফাঁকিজুকি আছে। প্রথমত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দু-চারটি নয়, অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যাতে সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পদ বিপন্ন হয়েছে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধও সংঘটিত হয়েছে। আর যে দুর্বৃত্তরা এসব করেছে তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বৃত্তদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারীদেরও দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের খবর জানা যায়নি। মানুষ চোখে দেখা সত্যকে অস্বীকার করবে কীভাবে?

আওয়ামী লীগকে সংখ্যালঘুরা তাদের ‘রক্ষক’ বলে মনে করে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ভক্ষকের ভূমিকায় দেখে তাদের অসহায়ত্ত এখন চরমে। নিরাপত্তাহীনতা অথবা আত্মরক্ষার তাগিদ থেকে সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিতে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের মূল বা বড় অংশই এখনো আওয়ামী লীগের ওপরই ভরসা রাখছেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কতটুকু দলের অসাম্প্রদায়িক নীতি ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সে বিষয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে। আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো বিকল্প নেই- এটা ঠিক। কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট না দিয়ে ভোটদানে বিরত থাকার চিন্তাভাবনাও কারো কারো মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা যাতে নিজেদের সংখ্যালঘু না ভাবেন, সে পরামর্শ সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল অনেকেই দিয়ে থাকেন। সংখ্যালঘুরা কেন নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ মনে করেন সেটা জানা-বোঝার চেষ্টা করতে হবে। কেউ স্বেচ্ছায় নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবেন না। এটা তাদের ভাবতে বাধ্য করা হয়। এটা ঠিক যে, বিএনপি আমলে চাকরি, পদোন্নতি, পদায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা যেভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, আওয়ামী লীগের আমলে তা হয়নি। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই সরকারি চাকরিতে স্থান পেয়েছেন, পাচ্ছেন। দেশের প্রধান বিচারপতি পদে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যকে নিয়োগদানও নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসাযোগ্য একটি অবদান। কিন্তু তার বিদায় প্রক্রিয়াটা যেভাবে হয়েছে সেটা শোভন হয়েছে কিনা সে প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি তিনি কোনো খারাপ কিছু করে থাকলে সেজন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্যদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও সমীচীন নয়। পদ দেয়া কিংবা পদ কেড়ে নেয়া যতটা সহজ, মানুষের মন থেকে অনিরাপদ বোধ দূর করা তত সহজ নয়। দেশে নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন, ভীত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ত। নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন অনেকটা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ভীতি ফেসবুকে গুজব ছড়ানো। সরকার তথা আওয়ামী লীগের কাছে সংখ্যালঘুরা যে ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান তা পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। সংখ্যালঘুদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে কী করতে হবে সেটা তাদের কাছ থেকে জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল ‘এমন বন্ধু আর কে আছে’ গান শুনিয়ে কাজ হওয়ার দিন মনে হয় আর নেই।

লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

এই বিভাগের আরো সংবাদ