আজকের শিরোনাম :

খুলনা টিউটরিয়াল ছিল ফাইনাল সামনে : আবদুল মান্নান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৮, ১৩:৪২

ঢাকা, ২৭ মে, এবিনিউজ : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের কয়েক দিন আগে পেশাগত কাজে খুলনা যেতে হয়েছিল। এক অনুষ্ঠানে খুলনা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে দেখা হলে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম কে পাচ্ছেন মনোনয়ন? তিনি জানালেন খুলনায় যে পরিমাণ দলীয় কোন্দল আছে সেখানে একমাত্র তালুকদার আবদুল খালেকই আসন্ন নির্বাচনে উতরে আসতে পারেন। অন্য কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে জিতে আসা কঠিন হবে। তিনি আরো বলেন, গতবার তালুকদার আবদুল খালেক কিন্তু বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হননি, তিনি পরাজিত হয়েছেন দলীয় কোন্দলের কাছে। যত দিন পর্যন্ত তালুকদার নির্বাচন করছেন সেটি ছিল তাঁর প্রথম পরাজয়। তিনি আরো জানালেন, তালুকদার আবদুল খালেক সেই দুঃখজনক স্মৃতির আলোকে এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি এই নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান না। জবাবে বলি, দলীয় প্রধান যদি বলেন, তিনি না করতে পারবেন বলে মনে হয় না। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে এবং তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন, যা তিনি আগেরবারও হতে পারতেন। ঈদের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এবারের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, বয়সে তরুণ ও উদ্যমী বলে মনে হয়। বিএনপি তাদের গতবারের নির্বাচিত মেয়র এম এ মান্নানকে পরিবর্তন করে নতুন প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মান্নান প্রকাশ্যে বলেছেন, লন্ডনে টাকা পাঠাতে পারেননি বলে তিনি মনোনয়ন পাননি। এটি এখন পরিষ্কার, বাংলাদেশে দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত আগামী সব নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন আসবে লন্ডন থেকে এবং তাতে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হবে। সে কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা রিজভী আহমেদ যতই বলুন, তাঁরা খালেদা জিয়া ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবেন না, বাস্তবে বিএনপি নির্বাচনে যাবে আর মনোনয়ন আসবে লন্ডন থেকে, যার জন্য  মনোনয়নপ্রার্থীরা এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিয়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে বিএনপির শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। সার্বিক বিচারে এমনটি মনে হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের অনেকেই ধরেই নিয়েছেন তাঁরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনেও জিতবেন এবং ধরে নেওয়াটা স্বাভাবিক। তবে এই দুটি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া আসল কথা নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব নির্বাচন হচ্ছে টিউটরিয়াল পরীক্ষা বা ড্রেস রিহার্সালের মতো। আসল পরীক্ষা হবে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর সেই নির্বাচনে বিএনপিকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে জামায়াত, বেশ কিছু ‘সুশীল’ ব্যক্তি, তত্ত্বকথাসর্বস্ব কিছু বাম দল আর বড় ঘরানার কিছু মিডিয়া। সঙ্গে অবশ্য থাকবে একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর পাকিস্তানের আইএসআই।

আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন, সামনের নির্বাচনে বিজয় লাভ করার জন্য তাঁদের মূলধন হবে ২০০৯ সাল থেকে এযাবৎ দেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের ফিরিস্তি। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, শেখ হাসিনার পর পর দুই দফার সরকারের আমলে দেশের যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে তা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জন। যে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ইমেজ সংকটে ভুগত, সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। জি-৭-এর মতো ধনী দেশের ক্লাবও বাংলাদেশকে সমীহ করে আর তাদের সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশের তাক লাগানো আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের রহস্য আর গল্প শুনতে চায়। তবে উন্নয়নের কথা বলে আগামী নির্বাচনে পার পাওয়া যাবে বলে যাঁরা মনে করেন তাঁরা ভুল ভাবেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার উন্নয়ন কম করেনি, তবে সেই নির্বাচনে বিএনপির কাছে আওয়ামী লীগকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল, যার অন্যতম কারণ ছিল দলের ভেতর আত্মসন্তুষ্টি। সেই নির্বাচনের আগে আমিসহ আরো দুজন বিশ্লেষক লিখেছিলাম, ২০০১ সালের নির্বাচনে যত সহজে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করবে বলে মনে করে তা না-ও হতে পারে। যে পত্রিকায় লেখাটি পাঠিয়েছিলাম সেটি তারা ছাপেনি। পরে সম্পাদক বলেছিলেন, নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এমন একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হতাশ হতে পারেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় লাভ করতে না পারা ছিল দেশের জন্য একটা বড় ধরনের ক্ষতি। আর উন্নয়ন যদি নির্বাচনে জেতার নিয়ামক হয়, তাহলে সিলেট, বরিশাল আর রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা আগের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণ ছিল না। 

বিএনপির ২০০১-২০০৬ মেয়াদের শাসনামল ছিল বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ দুঃসময়। দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল সিভিল ও মিলিটারি—দুটি প্রশাসন। সিভিল প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করা হতো খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের ‘হাওয়া ভবন’ থেকে আর সেনা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে ছিল খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ এস্কান্দার। সেই সময় তারেক রহমান দেশের সম্পদ লুটপাট সূক্ষ্ম শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ক্ষমতার অহমিকা তাঁকে এমন একপর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল যে সাইফুর রহমানের মতো দলের বর্ষীয়ান নেতাকে তারেকের পেছন পেছন দৌড়াতে দেখা গেছে। তবে তারেক রহমানের চরম হঠকারী আর নাশকতামূলক কাজ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, যা বিশ্বে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সেই সময় দেশে ভয়াবহ জঙ্গিবাদের চাষ হয়েছিল। অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক লিখেছিলেন বাংলাদেশ পরবর্তী আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার বদৌলতে তাঁর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়েছিল একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের। বাঙালির স্মৃতিশক্তি অ্যাকুয়ারিয়ামের গোল্ডফিশের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাদের সব কিছু দ্রুত ভুলে যাওয়ার প্রবণতার কারণে।

এক-এগারোর পর তারেক রহমান আর কোনো দিন রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন চলে গেছেন প্রায় ১০ বছর হলো। এদিকে তাঁর মায়ের সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধেও দেশে একাধিক মামলা চলমান। মামলা আদালতে উঠলে তাঁর আইনজীবীরা বলেন, তাঁদের মক্কেল তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন। এরই মধ্যে তারেক রহমান একাধিক মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে তারেক রহমান এখন পলাতক। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেল, যখন এটি প্রমাণিত হলো তারেক সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনের সময় জামায়াত-বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী যত দল বা গোষ্ঠী আছে এসবের কোনো কিছু তারা মনে রাখবে না। তাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে তখন যেমনটি মাহমুদুর রহমান মান্না ঘোষণা দিয়েছেন ‘আওয়ামী লীগকে ফেলে দিতে হবে।’ এই ‘ফেলে দেওয়া’র জন্য আগামী কয়েক মাসে দেশে অনেক ষড়যন্ত্র হবে, যার একটি ছোট আলামত তথাকথিত কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে। কোটা সংস্কার একটি যৌক্তিক দাবি, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে আন্দোলনকারীদের সমঝোতার পর দেশে ও দেশের বাইরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা করা হয়েছে আর যাঁরা এই কথিত আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়ও এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এবং এ বিষয় নিয়ে পলাতক তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের যেসব কথাবার্তা হয়েছে, তাতে এটা পরিষ্কার এ সবকিছুই ‘যেকোনো মূল্যে আওয়ামী লীগকে ফেলে দিতে হবে’ কর্মসূচিরই অংশ বৈ আর কিছু নয়। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে ততই ‘আওয়ামী লীগকে ফেলে দেওয়ার’ নতুন নতুন কর্মসূচি আরো আসবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। এই ‘ফেলে দেওয়া’ ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হলে প্রথমেই যে বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপলব্ধি করতে হবে তা হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ এখনো দুর্ভেদ্য। আর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড হচ্ছে দলের সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নন, একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্টেটসম্যান হিসেবে বিশ্বসমাজের কাছে স্বীকৃত ও সমাদৃত। তবে যাঁরা নব্য আওয়ামী লীগার বা হাইব্রিড—এসব বিষয়ে তাঁরা থোড়াই তোয়াক্কা করেন। তাঁদের প্রধান লক্ষ্য কিভাবে ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানো যায়। এমন আওয়ামী লীগার বঙ্গবন্ধুর সময়ও ছিল, তাঁর কন্যার আমলে তাঁদের সংখ্যা অনেক গুণ বেড়েছে। দলের প্রতি এই হাইব্রিডদের কোনো অঙ্গীকার তো দূরের কথা, আজ যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে কাল তাঁরা হয় দল ত্যাগ করবেন, নয়তো দল বেঁধে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেবেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর খন্দকার মোশতাক যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন, তাতে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ বা বাকশাল অথবা বঙ্গবন্ধুর কৃপাধন্য ছিলেন। কেউ কেউ হয়তো জীবন বাঁচাতে গিয়েছিলেন কিন্তু বাকিরা ক্ষমতার নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছিলেন। তাঁরা জীবন আর ক্ষমতার মোহের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার বর্তমান দুই মেয়াদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি কোনো একটা চাকরির জন্য যখন কোনো একজন নেতা কোথাও তদবির করেন বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যার জন্য তিনি তদবির করছেন সে এবং তার চৌদ্দগুষ্টি জামায়াত-বিএনপি ঘরানার। ছাত্রলীগের যোগ্য প্রার্থী থাকলেও তার জন্য তেমন কোনো তদিবর করতে তাঁদের কদাচিৎ দেখা যায়। 

জামায়াত খুব সূক্ষ্মভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যা নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা তেমন একটা মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পাবলিক সার্ভিস কমিশনে যেসব পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেন তাঁদের বেশির ভাগই জামায়াত ঘরানার। এরই মধ্যে তাঁরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত হয়ে কোনো একটি অঘটন ঘটার অপেক্ষায় আছেন। অনেক সময় দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাঁরা গড়িমসি করছেন। সরকারি চাকরির প্রায় সব ক্ষেত্রে একই অবস্থা। বিরোধী দলের কোনো কোনো নেতা হয়তো তাঁদের মাথায় রেখেই মাঝেমধ্যে তৃতীয় শক্তির উত্থানের স্বপ্ন দেখেন।

এটি এখন পরিষ্কার যে আগামী সংসদ নির্বাচন যত সহজ মনে করা হচ্ছে, ততটা সহজ না-ও হতে পারে। ধরে নিতে হবে এটি হবে আওয়ামী লীগ বনাম রেস্ট। এই নির্বাচনে বিজয় লাভ করা আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে না, যদি  আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীরা নিজেদের সক্ষমতার ওপর আস্থা রাখেন। যে দলের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হতে পারে, বঙ্গবন্ধু যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন, যে দলের বর্তমান কাণ্ডারি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা, সেই দল কেন নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারবে না? এটির জন্য চাই দলের চেইন অব কমান্ড রক্ষা করা, সময় থাকতে দলে অনুপ্রবেশকারী আর হাইব্রিডদের চিহ্নিত করা আর এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে যাওয়া। সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে আনুমানিক ১০ কোটি ৪১ লাখ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৩৩ লাখ ৩২ হাজার নতুন ভোটার। তাঁরা সবাই এবার প্রথমবার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বাংলাদেশে ভোটারদের প্রায় অর্ধেকই নারী। আবার অনেক অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। এই নতুন ভোটাররাই সামনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তাঁদের সমর্থন আদায় করার জন্য প্রয়োজন পুরো নির্বাচনব্যবস্থা দক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে পরিচলনা করা এবং তা এখন থেকে শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে তাঁদের অনেকেই খালেদা জিয়ার সিফন শাড়ি আর তারেক রহমানের কালো চশমা পছন্দ করেন। তাঁদের সঙ্গে আছে ধর্মব্যবসায়ীদের একটি বড় দল। তাঁদের শুধু উন্নয়নের কথা বললেই হবে না, তাঁদের বলতে হবে তাঁরা কী আবার জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে ফিরে যেতে চান নাকি একটি সমৃদ্ধ নিরাপদ বাংলাদেশে বসবাস করতে চান। দেশে যেসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তা দেশের সব মানুষের কাছে সহজে দৃশ্যমান হয় না বা অনেক ক্ষেত্রে তার গুরুত্বও  বোঝেন না। যে উন্নয়ন মানুষ রাস্তায় নামলে দেখতে আর অনুভব করতে পারে তেমন উন্নয়ন নির্বাচনে ভালো করার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভয়াবহ যানজট সাধারণ মানুষকে চরম বিক্ষুব্ধ করেছে। ঢাকা আর চট্টগ্রামে একটু বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা মানুষকে ক্ষুব্ধ করে। রমজানে বাজারের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী মুনাফাখোর তারা কোনো সরকারের বন্ধু হয় না। তারা বা সড়ক পরিবহনের মালিকরা সরকারের মন্ত্রীদের অনেক রকমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেনে চলবে তা চিন্তা করাও বোকামি। এসব দৃশ্যমান বিষয় সাধারণ মানুষকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো আত্মঘাতী কাজ আর কিছুই হতে পারে না। একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটা পজিটিভ ইমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছে। কিন্তু সব দায়িত্ব তাঁর একার ওপর ছেড়ে দেওয়াটা হবে চরম বোকামি। এখন সময় হয়েছে সব মান-অভিমান ভুলে দলের নেতাকর্মীদের একত্র হয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা এবং এটা উপলব্ধি করা দু-একটি সিটি করপোরেশনে ভালো করা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভালো করার নিশ্চয়তা দেয় না। মনে রাখতে হবে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি হবে দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন, যেমনটি ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচন। জনগণকে বোঝাতে হবে তারা আগামী দিনে কেমন বাংলাদেশ চান। সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, নাকি জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির রাজতন্ত্রের বাংলাদেশ। (কালের কণ্ঠ)

লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক

এই বিভাগের আরো সংবাদ