আজকের শিরোনাম :

স্যার, আমরা কী করে বুঝব যে আপনি একজন বুদ্ধিজীবী?

  ফজলুল হক

২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

১৪ ডিসেম্বর ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করা এবং তাদের শ্রদ্ধা জানানো আমাদের নৈতিক ও আদর্শিক কর্তব্য বলে আমি মনে করি। যদিও এই লেখা আমি আজ ১৪ ডিসেম্বর লিখছি, এই লেখা ছাপা হবে এক সপ্তাহ পরে। প্রবীণরা বয়সের কারণে বেশী চলাফেরা করতে পারেন না। এই দিনে তারা মর্মবেদনা অনুভব করেন। তারা একাত্তর দেখেছেন। অনেকে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা, তাদের দোসর রাজাকার আলবদররা- যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, তা তারা নিজ চোখে দেখেছেন। এই দানবেরা- শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী-কার্টুনিস্ট, কবি-সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, কলামিস্ট, প্রযুক্তিবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদের বাসায় হানা দিয়ে, তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তারা আর ফিরে আসেনি। রাজাকার আলবদর, ইসলামী ছাত্রসংঘ, জামায়াতের টার্গেট ছিল স্বাধীনতাকামী মানুষ। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তি সনদ ছয় দফা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা পাকিস্তানকে বলেছিলাম, ছয় দফা মেনে নাও, অন্যথায় আমরা এক দফা দাবিতে “যুদ্ধ” শুরু করব। প্রবীণরা একাত্তরের হত্যাযজ্ঞ নিজ চোখে দেখেছেন। তাদের কাছে এই দিন ছিল বেদনার। পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের জাতীয়তাবোধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা আমাদের নিজেদের চেতনার ধারা নির্মাণ করেছি। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা দিয়েছিলেন। একাত্তরের ১ মার্চ আমরা বুঝেছিলাম “পাকসার জমিনকে—” বিদায় জানাতে হবে। আমরা নিজেদের জাতীয় সংগীত বেছে নিই, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।” আমরা নিজেদের পতাকা বানিয়েছি। চাঁনতারা পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছি। আমরা আমাদের নিজেদের অন্তর্নিহিত শক্তি, সাহস উপলব্দি করেছি। “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” কে চিরতরে ত্যাগ করেছি। আমাদের স্লোগান- জয় বাংলা। আমরা নিজেদের এগিয়ে চলার পথ তৈরি করেছিলাম। ছাত্রনেতারা ছিল রাজপথে। আমরা পিছু হটি নাই। আমরা ছাত্রনেতারা ছিলাম অনমনীয়। পাকিস্তানের সাথে কোনো আপোষ নাই। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন অকুতোভয়। সে এক লড়াই ছিল। আমাদের বুদ্ধিজীবীগণ পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের রক্ত চক্ষুকে ভয় পেতেন না। আমরা সকলে পাক হানাদারের টার্গেট ছিলাম। স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে। আমরা বেঁচে আছি। আমাদের উপলব্দির “মুক্তিযুদ্ধ” শুরু হয়েছিল ষাটের দশক থেকে। আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করেছি, আমাদের “যুদ্ধ” শুরু হয়েছিল, ষাটের দশকে। আমরা মুক্তির ধারা নির্মাণের লড়াই শুরু করি। ষাটের দশকে, আমাদের কৈশোরে, সে লড়াইয়ে আমরা সৈনিক ছিলাম। ডিসেম্বর মাস এলে আমাদের মন খারাপ হয়। স্মৃতি মনে জাগে। ১৪ ডিসেম্বর দিনটি কষ্টের। বুদ্ধিজীবী সত্যের পক্ষে থাকেন। সত্য প্রকাশ করেন। তিনি নির্ভীক। তিনি নতি স্বীকার করেননা। এ বছর আমার জন্য দিনটি ছিল বেদনা ভারাক্রান্ত। একাত্তর সালে আমার অনার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমার ক্লাসমেট ও হোস্টেলমেট ছিল আবদুল হামিদ। কলেজে আমার কয়েক বছরের জুনিয়র ছিল সৈয়দ মোহাম্মদ রফিক। ছাত্রনেতা স্বপন চৌধুরী আমাদের বন্ধু- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ছিল। এই কৃতি ছাত্রদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এরা বেঁচে থাকলে এই দেশে সেরা বুদ্ধিজীবী হতে পারত। এ রকম কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার হিসাব নাই। আমরা একটা পরিসংখ্যানগত ধারণা তৈরি করেছি যে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে। গণহত্যার পর নিহতের সংখ্যা এক্যুরেট গুনে বের করা কঠিন কাজ। এর জন্য কিছু জরীপ পদ্ধতি রয়েছে। ধরুন, একাত্তরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে গিয়েছিল। দক্ষিণের কিছু মানুষ বার্মাতে গিয়েছিল। তাদের সকলে কি নয় মাস পর ফিরে আসতে পেরেছে? কত মানুষ ফিরেছে? কত মানুষ শরণার্থী শিবিরে মরেছে? গণহত্যায় মৃত মানুষের সংখ্যা বের করার গবেষনার নজির আছে। যারা সরাসরি বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন তারা ছাড়াও যুদ্ধের প্রভাবে অনেক লোক অনাহারে, রোগে, বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। আমার ব্যাক্তিগত ধারণা, মুক্তিযুদ্ধে আমরা ৭০ লক্ষ মানুষ হারিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম গবেষনা করে এটা নিশ্চিত করবে। শুধু ২৫ মার্চের কালো রাতে ঢাকা চট্টগ্রামে হানাদাররা কত মানুষ মেরেছে তা আন্দাজ করার চেষ্টা করুন। এপ্রিল মাসে পাক বাহিনী আমাদের হালিশহরে ইপিআর ক্যাম্প দখলের অভিযানে কাট্টলি থেকে আনন্দবাজার পর্যন্ত এলাকায় কত মানুষ মেরেছে তা হিসাব করে দেখতে বলুন। পাকিস্তান আমাদের যে ক্ষতি করেছে, তা আমরা ১০০ বছরেও পুষিয়ে উঠতে পারবোনা। ১৪ ডিসেম্বর এলে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। স্মৃতির কষ্ট বলব একে?
আমার এবারের ১৪ ডিসেম্বর দিনটি কেমন কেটেছে, আপনাদেরকে বলি। যেহেতু আপনারা পাঠক পাঠিকা, আমি ভাল লিখতে না পারলেও আপনারা কষ্ট করে আমার লেখা পাঠ করেন, তাই আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতি জানার অধিকার আপনাদের আছে। সকাল সোয়া সাতটার দিকে একজন শিক্ষক ফোন করে আমাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে এসে গেছেন। প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী খুবই আন্তরিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, সংগঠন, শাখা অফিস- শ্রদ্ধা জানায়। বঙ্গবন্ধু চত্বরে শহীদদের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া মোনাজাত এবং আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। এবারে তা হয়েছে। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সকাল ৮ টায় বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দিই। তারপর আলোচনা শুনতে আলোচনা সভায় যাই। বিকেলে ঘর থেকে বের হইনি। সারা বিকাল ঘরে বসে এই নিবন্ধ লিখি। যদিও আমি জানি ১৭ তারিখ সোমবার পত্রিকা বন্ধ থাকবে। পরের সোমবারে এই লেখা আপনাদের হাতে পৌঁছাবে। এই লেখা- লেখার আগে আমি আনিসুল হকের একটি লেখাসহ বিদেশী জার্নাল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর তিন চারটি প্রবন্ধ পড়ি। নোট নিই।
আমার পুরো ছাত্রজীবন কেটেছে রাজনীতি করে। সে জীবনে জনগণের কাছাকাছি ছিলাম। জনগণের এবং সমাজের ভেতরে ঢুকে গিয়েছি। পাকিস্তানের শাসন আমল ছিল- নিষ্ঠুর, অমানবিক। জনগণ মনে করত, তারা দুর্বল। মার খেলেও তাদের চুপ করে থাকতে হয়। তারা কখনো বাঁধন ছিঁড়ে বেরুতে পারবেনা। জনগণের বিশাল শক্তি ও সম্ভাবনা আছে, এটা তারা জানেনা। এ সত্য তারা অনুধাবন করতে পারেনা। জনগণ রুখে দাঁড়ালে পুলিশ কি করতে পারবে? আমাদের বুদ্ধিজীবীরা জনগণকে বলেছে, তোমরা শক্তিহীন নও। বুদ্ধিজীবী সত্য বলে। মিথ্যাকে উম্মোচন করে। অর্গানিক বুদ্ধিজীবী এবং লেবাসধারী বুদ্ধিজীবী এক নয়। ইতিহাসে অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীর নাম লিখা আছে, যাদেরকে মৌলবাদীরা এবং রাজতন্ত্র হত্যা করেছে। ক্ষমতাসীনের প্রোপাগান্ডা মেশিন আছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও শাসকদের প্রচারণার উপকরণ মিলে মিশে আছে। প্রোপাগান্ডা কি? প্রোপাগান্ডা হলো, জনগণকে বোঝানো হবে যে, জনগন সর্বদা অসহায়। অসহায় বলে তাকে ঘুষ দিতে হয়। অসহায় বলে, তাকে সরকারি কর্মকর্তার কাছে হুজুর হুজুর করতে হয়। জনগনের কাজ হলো, সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া, সিদ্ধান্তমত কাজ করা। জনগণ দাস- আর পাকিস্তানের আমলারা প্রভু। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, সাংবাদিকরা, ডাক্তাররা পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বলেছে- না, আমরা দাস নই। বুদ্ধিজীবী থাকলে রাজাদের মৌলবাদীদের অসুবিধা হয়। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বিদ্রোহ করেছেন।
একটা হাতিকে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোহার শেকল দিয়ে নয়। বাঁধা হয়েছে চিকন একটি রশি দিয়ে। এক পথিক হাতির পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিস্মিত। এতবড় এক আজরাইল, অমিত যার শক্তি, সুড়, দিয়া যে বিশাল গাছ উপড়ে ফেলতে পারে, কি ভাবে তাকে একটি সুতলি দিয়ে বেঁধে রাখা সম্ভব হলো? পথিক গেলেন প্রশিক্ষকের কাছে। বল্লেন, প্রশিক্ষক সাহেব, এতবড় হাতি, তাকে কি করে চিকন রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন? প্রশিক্ষক বল্লেন, হাতিটা যখন ছোট ছিল তখন তাকে এই দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হোত। তখন তার এত শক্তি ছিল না। তার ধারণা হয়েছে, এই দড়ি কখনো ছিড়বে না। সে কখনো ছেড়ার চেষ্টা করে না। কবি আমাদের বলেছেন, রশি ছিঁড়ে ফেল। “কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল—।” কবি শুনিয়েছেন, শেকল ভাঙার গান। বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, চির উন্নত মম শির। মৃত্যুকে ভয় পেয়োনা। হাসি হাসি পড়ব ফাঁসি, দেখবে ভারতবাসী–। এক দফা এক দাবী, হানাদার তুই কবে যাবি? পাকিস্তানী হানাদার আমাদের বুদ্ধিজীবীকে এজন্য ভয় পেত। (ইন্টারনেটে এরকম অনেক কৌতুক পাবেন, সিইউ ফ্রেন্ড্স পেজেও আছে, আনিসুল হকের লেখায়ও এরকম কৌতুক আছে।) আমরা ক্ষমতাসীনকে ভয় করি, এটা আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। এটা বদলাবে না। জনগন এক হলে কোন শক্তি সামনে দাঁড়াতে পারবে না।
এমরান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র। আমাদের দু’তিন বছর জুনিয়র হতে পারে। সে আমাকে ম্যাসেঞ্জারে লিখেছে, আমার কথা মনে আছে? আহ্, এমরান মনে থাকবে না কেন? একাত্তরকে ভোলা যায়? ৬৮/৬৯ সালকে ভোলা যায়? তুমি ছিলে আমাদের রাজনৈতিক সহকর্মী। চান্দগাঁ বাড়ি। বিএলএফ- এর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা। তোমাকে মীর কাসেম আলীর লোকেরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল ডালিম হোটেলে। কমার্স কলেজের ছাত্র। তোমাকে ডালিম হোটেলের আলবদর আল শামস এর লোকেরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কদমতলীর জাহাংগীর (সি ইনসি) আমার আত্মীয়। একসাথে বাংলাদেশ স্কাউট্স এর জন্য কাজ করেছি। বিগ হার্ট তার। তাকেও একাত্তরে ডালিম হোটেলে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। রাজাকার আলবদররা তোমাদেরকে মারতে মারতে মৃত প্রায় করে ফেলেছে। পানি চাইলে গালে পেশাব করে দিয়েছে। এই অপমানের কথা ভোলা যায়? এমরান, লিখেছে, বদ্দা, আপনার সব মনে আছে। আপনার ভুল হতে পারে না। দুদিন পর ১৪ ডিসেম্বর ফেসবুকে এমরানের একটা পোস্ট চোখে পড়ে। “আজ আমার মৃত্যু দিবস”। মাথা ধরে যায়। এমরান আর এই জগতে নাই? মহান মুক্তিযোদ্ধা? মাথায় এলো, সে নিজের মৃত্যুর কথা নিজে লিখল কিভাবে? পরের লাইনে আছে, ৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর এমরানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে বদর বাহিনী, ডালিম হোটেলে। ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়। ১৪ ডিসেম্বর এলে তার মনের অবস্থা কেমন হয়? কেমন হয় জাহাংগীর (সিইনসি)দের মনের অবস্থা?
আমাদের মধ্যে এখনো নির্ভেজাল বুদ্ধিজীবী আছেন। তারা সাহসী। তারা সত্য উম্মোচন করেন। তারা সত্য কথা বলেন। অনেকে অতীত ভুলে গেছেন। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। টাকা এবং ক্ষমতার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। কোন কোন বুদ্ধিজীবী নিজের নামে “ব্রান্ড” তৈরী করতে চান। কোন কোন মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে ব্রান্ডেড করেন। আমাদের “ব্রান্ড” একটাই, সেটা হচ্ছে, “বাংলাদেশ”। বিশ্বে বাংলাদেশকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরাই আমাদের কাজ। এই বাংলাদেশের জন্যই বুদ্ধিজীবীরা প্রাণ দিয়েছেন। এই দিনে শহীদের সন্তানেরা তাদের বাবার জন্য তাদের মার জন্য চোখের জল ফেলে। আমরা কি তাদের মা বাবাকে ফিরিয়ে আনতে পারব? তরুণরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে জব মার্কেটে আসে। তারা তাদের প্রফেশন বেছে নিতে চায়। তারা উদ্যোক্তা হতে চায়। তারা লিডারশীপ কোয়ালিটি অর্জন করতে চায়। তারা উদ্ভাবন করতে চায়। আপনি তাদের সাথে নলেজ শেয়ার করুন। তাদের উদ্দীপনা দিন। শহীদের রক্ত দান আমরা বৃথা যেতে দিতে পারিনা। কোন বিষয়টা আজকের দিনে আমার কাছে পেইনফুল লাগে, জানেন? চিড়িয়াখানায় মা উটকে বাচ্চা বল্ল, মা, আমাদের পিঠে কুঁজ থাকে কেন? মা বল্ল, এই কুঁজে আমরা পানি সংরক্ষন করি। মরুভুমির শুষ্ক প্রান্তরে যেন আমরা পানি ছাড়া চলতে পারি, তাই এই ব্যবস্থা। আমরা মরুভূমির প্রাণিরে বাবা। আমরা হলাম উট। মরুভুমির জাহাজ। বাচ্চা বল্ল, মা, আমাদের পা এত লম্বা কেন? কেন এত শক্ত? উট বল্ল, যাতে মরুভূমির তপ্ত বালুময় পথে আমরা চলতে পারি। বাচ্চা বল্ল, মা, আমাদের চোখের পাপড়ি এত বড় বড় কেন? উট বলে, মরুভূমির ধুলিকণা যাতে আমাদের চোখে না ঢোকে। রোদ যেন আমাদের দুচোখ বাঁধিয়ে না দেয়। সেজন্য চোখের পাপড়ি বড়। বাচ্চা বলে, মা, সব কিছুই যদি মরুভূমিতে চলার জন্য দেওয়া হয়, তাহলে আমরা চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী কেন? (এই কৌতুক আনিসুল হকের লেখায় পড়েছি। ইন্টারনেটেও আছে।) আজকের দিনে আমার কাছে পেইনফুল হলো, আমরা কি তরুণদের মুক্ত আকাশের নীচে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিতে পারব? না, অজ্ঞানতা, কূপমণ্ডুকতা, পশ্চাৎপদতা, হিংস্রতা, ধর্মান্ধতার কারাগারে তাদের বন্দী করে রাখব? এটাই বেদনা। কষ্ট স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছি। আমি একজন বুদ্ধিজীবীকে বলি, স্যার, আমরা কী করে বুঝব যে, আপনি একজন নির্ভেজাল বুদ্ধিজীবী? উনি আমাকে বললেন, আমি সেই লোক, যে চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী থাকতে চাই না। গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী হতে চাই না। পশ্চাৎপদ সমাজে ষড়যন্ত্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে- বুদ্ধিজীবীরা বেশী মার খান। (দৈনিক আজাদী থেকে নেয়া)

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

এই বিভাগের আরো সংবাদ