আজকের শিরোনাম :

শিয়াল-কুমির-সজারু ও বাদঁরের তিন গল্প এবং আগামী নির্বাচন?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৬

আলমগীর স্বপন, মাঠের হাওয়া না বুঝে,২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ভোটের মাঠে ছিলো না বিএনপি।ভেবেছিলো আগুন সন্ত্রাস, জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে ঠেকিয়ে দিবে নির্বাচন।এর সাথে প্রভাবশালী একটি পশ্চিমা দেশের এমন আশ্বাসও নাকি সে সময় ছিলো-‘নির্বাচন হলেও সরকার টিকবে না।’সেই আশ্বাসে নির্বাচন থেকে পিছুটান দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া,অবস্থান নিয়েছিলেন গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

রাজনীতির সেই চালে ভুল পথে গিয়েছিলো বিএনপি।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও সে সময় পাত্তা দেননি দলটির প্রধান।এর খেসারত গত পাচঁ বছর ধরে দিচ্ছে দলটি-যা স্বীকার করেন বিএনপির তৃণমুল থেকে শীর্ষ নেতা ও শুভাকাঙ্খীরা।নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির যে যুক্তিতে বিএনপি ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে যায়নি দলটি,সেই দাবি এখনও পূরন হয়নি।

পরিস্থিতি আগের মতোই আছে বলা যায়।তাহলে কেন এবার নাকেখত দিয়ে নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি।যখন পরিস্থিতি আরো খারাপ।দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয় কারাগারে।অনেক নেতাকর্মী জেলে,মামলার আসামী।দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমানও দন্ডিত,লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে।

গতবার ক্ষমতাসীন সরকারের তরফ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো মন্ত্রিত্বের।এবার নিজেরা চিঠি দিয়ে সংলাপ করেও আদায় করতে পারেনি সাত দফার এক দফাও।তবে এবার তাদের ঢাল গণফোরামের সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবিদ আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন।এতে আশা দেখছে বিএনপি।তাই এতো কিছুর পরও দলটি নির্বাচনে যাচ্ছে।যদিও দলের ভেতরের একটি অংশ এখনও নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে।তবে বিএনপির অংশগ্রহনের ঘোষণাকে অশগ্রহনমুলক নির্বাচনের জন্য অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।আবার অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন শিয়াল-কুমিরের পুরোনো সেই গল্প।

নিশ্চয়ই ছোটবেলায় অনেকেই গল্পটি পড়েছেন।''এক নদীর ধারে একটা গ্রাম ছিল। গ্রামের জঙ্গলে বসবাস করত এক শিয়াল। পাশের নদীতে থাকতো এক কুমির।সেই সুত্রে বন্ধুত্ব হয় জলের কুমির ও ডাঙ্গার শিয়ালের মাঝে। শিয়াল ও কুমির মিলে নদীর পাশে একটা উর্বর জমির সন্ধান পেল।শলা-পরামর্শ করে ঠিক করল, তারা সেটা চাষাবাদ করবে। যে কথা সেই কাজ। জমিটি চাষাবাদের যোগ্য করে প্রথমে ধান রোপণ করল। কিছু দিন পর ভাগাভাগির প্রশ্নে শিয়াল কুমিরকে বলল, বন্ধু এক কাজ করা যায়, তাহলো আমি ধান গাছের উপরের অংশ নেই আর তুমি গোড়ার অংশ নাও।সে আরও বলল যে, উপরের অংশে তো তেমন কিছুই নেই তার চেয়ে গোড়ার অংশই ভালো।

কুমির ভাগাভাগির অংক জটিল না করে ধূর্ত শিয়ালের কথায় রাজি হলো। আর নিজে ধানগাছের নিচের অংশ মানে খড়কুটার অংশীদার হলো। অতি চালাক শিয়াল ধানের উপরের অংশ আসল ধানের মালিক হলো। ফসল ভাগাভাগির পর কুমির বিষয়টি বুঝতে পারলেও তখন কিছুই করার ছিল না।

এর পর ধানের আবাদ শেষে তারা দুজন মিলে যথারীতি আগের ন্যায় পরিশ্রম করে আলুর আবাদ করল।আবারও ভাগাভাগির প্রশ্ন।এবার কুমির ভাবলো গতবার ঠকেছি,নীচের অংশ নিয়ে।এবার আর তা হবে না।শিয়ালকে কুমির বললো,এবার বাবা আমি উপরের অংশ নিবো।ধুর্ত শিয়াল কুমিরের এমন,'মেঘ না চাইতেই জল' প্রস্তাবে মনে মনে হাসলো।একটু গাই গুই করলো।এরপর মুখ কালো ভাব নিয়ে কুমিরকে বললো,আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধু। গতবার তোমাকে নিচের অংশ দিয়ে আমি উপরের অংশ নেওয়াতে তুমি মন খারাপ করেছ, এবার তুমি উপরের অংশ নাও আমি নিচের অংশ নেই।এভাবে বোকা কুমির আবারও শিয়ালের কাছে ধরা খেলো।মাটির নীচের আলুর বদলে কুমিরের কপালে জুটলো শুধু উপরের লতাপাতা।মাটিখুঁড়ে ফসলের মূল অংশ আলু নিয়ে নিল শিয়াল।’’

এই গল্পের সারাংশ উল্লেখ্য করে কেউ কেউ বলছেন গতবার বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছে, এবার ভুল করছে নির্বাচনে গিয়ে।তাদের মতে,গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের সময়ের চেয়ে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে,প্রশাসনে,রাজনৈতিক কৌশলে আরো শক্তিশালী।তাই এবারও ফাদেঁ পড়েছে বিএনপি।আসলে কী তাই ?এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে দোলাচল আছে।তাই নীচের গল্পটা তাদের জন্য কেউ কেউ হাজির করছেন :-

"এক বনে ভবিষ্যতবানীতে পারদর্শী হিসেবে সজারুর খুব নাম ডাক। একবার মহাসংকটে বনের সব প্রাণী মিলে সজারুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, 'বস, এইবার কী হইতাছে?'

সবাই তাকে (সজারুকে) গুরুত্ব দিচ্ছে দেখে সজারু খুব খুশী। সজারু গম্ভীর হয়ে বললো- 'আগের মতোই হইবে।'
সজারুর কথা শুনে অন্য প্রাণীরা নিকট অতীতের সব ঘটনা একে একে মনে করার চেষ্টা করলো। চতুর শৃগাল বললো, 'আগে তো কয়েক রকম হইছে। ঠিক কোন রকমের কথা আপনি ইন্ডিকেট করতেছেন?'

গুরুগম্ভীর সজারু বললো, 'যে রকমের সাথে সবচেয়ে বেশি মিল পাইতেছেন সেই রকমেরই যে হইবে তা নিশ্চিত। '’
সবশেষ পাচঁ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ধরন,মাঠ প্রশাসনের আচরণ বিবেচনায় নিয়ে অনেকেই হয়তো বিজ্ঞ সজারুর কথায় সায় দিবেন।কিন্তু কেউ কেউ নীচের বানরের টুপি কাহিনীর ওপরও বিশ্বাস রাখতে চায়।এজন্যই নাকি এবার ঐক্যফ্রন্টের মোড়কে নির্বাচনে গেছে বিএনপি।


'টুপি কাহিনী' গল্পের দুটি অংশ।সেকাল আর একাল।প্রথমে সেকালের গল্পেই আসা যাক।

"এক টুপি বিক্রেতা।সকাল থেকে রোদে পুড়ে টুপি ফেরি করে খুবই ক্লান্ত।পথে এক বড় গাছের দেখা পেয়ে এর নীচে বিশ্রামের জন্য বসলো।কিন্তু ক্লান্তিতে ঘুমে এসে গেলো তার।সব টুপি পাশের পোটলায় পড়ে রইলো।একটি তার মাথায়।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।
কিন্তু সর্ববনাশ?ঘুম থেকে উঠে দেখে তার মাথার টুপিটাই শুধু আছে।পোটলার সব টুপি উধাও।দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ সে গাছের উপরের দিকে তাকায়।দেখে গাছের ওপর বাঁদরেরা সব টুপি পরে বসে আছে।

অনেক কাকুতি-মিনতি করেও টুপি ফেরত পেতে ব্যর্থ টুপিওয়ালা।কী করবে ঠিক করতে পারে না। হতাশায় মাথার টুপিটা মাটিতে ছূঁড়ে ফেলে।অনুকরণে অভ্যস্ত বাঁদরগুলোও নিজ নিজ টুপি ছুঁড়ে মারে।আর সেই সুযোগে টুপিগুলো কুড়িয়ে নিয়ে মহানন্দে টুপিওয়ালা বাড়ি চলে যায়।


এবার একালের গল্প :
ঘটনার বহু বছর কেটে গেছে। সেই টুপিওয়ালা বৃদ্ধ হয়েছেন। নাতিকে সেই বাঁদর কাহিনী শুনিয়েছেন। বড় হয়ে নাতিও টুপির ব্যবসা করে। ফেরি করতে করতে একদিন ঘটনাচক্রে সেই গাছের নীচে এসে পৌঁছায়। দাদুর মত মাথায় একটা টুপি আর বাকিগুলো পাশে রেখে সেও ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জাগতেই সেই একই দৃশ্য।

বাঁদরেরা সব টুপি পরে বসে আছে। তা দেখে, স্মরণে এল দাদুর  কৌশলের কথা। তাই আর কাকুতি-মিনতি না করে নিজের টুপিটা টুপ করে মাটিতে ফেলল।দাদুর কৌশল অনুযায়ী সে ভেবে রেখেছে,ওকে দেখে বাঁদরগুলোও তাই করবে।কিন্তু, তাকে অবাক করে, একটা বাঁদরও টুপি মাটিতে ফেলল না। সে হা করে বাঁদরগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।

এমন সময় একটি বাঁদর আস্তে আস্তে নেমে এলো, আর কষে এক চড় মেরে টুপিওয়ালাকে বলল — 'তুই কি মনে করিস দাদু শুধু তোরই আছে আর আমাদের নেই?'’

এই গল্পের সারাংশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকেই আবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সতর্ক্ করছেন।কারন,রাজনীতিতে নাকি শেষ বলে কিছু নেই।তবে যাই হোক আমরা অপেক্ষায় থাকি, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল বা জোটের ‘দাদু’ জিতে বা ‘দাদু’র কৌশল জিতে ?

লেখক :  আলমগীর স্বপন, সাংবাদিক।

এই বিভাগের আরো সংবাদ