আজকের শিরোনাম :

‘বিশ্ব গণমাধ্যম সূচকে আমরা এগিয়ে যেতে চাই’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:২৭

সরকারের নবনিযুক্ত তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। সম্প্রতি তিনি দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গুজব ও বিভ্রান্তি, কাজের নতুন অভিজ্ঞতা, দেশের রাজনীতি ও ভূরাজনীতি নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেখ তৌফিকুর রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল-

কয়েক মাস হলো আপনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ সময়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই।

এটা বিশাল এক মন্ত্রণালয়। এখানে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট রয়েছে, তারা কাজ করছে। যেভাবে কাজ করছে সবাই সেভাবেই চলবে। তবে সবার কাজের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, আমারও আছে। এখানে আমি আমার মতো করে কাজ করব, আমার কাজের ছাপ এখানেও থাকবে। আমি স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্টের ছাত্র, শিক্ষকতাও করেছি অনেক দিন। আমি মনে করি, এখানে অনেক কাজ আছে, যেগুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে পারলে কাজ অটোমেটিক হয়ে যাবে। এসব জায়গায় সময় বাঁচাতে পারলে অনেক কৌশলগত জায়গায় দৃষ্টি দেয়া সম্ভব হবে। আমি ওভাবেই কিছুটা গোছানোর চেষ্টা করব। কিন্তু মূল জায়গাটা যেমন আছে ও রকমই থাকবে, ওখানে পরিবর্তনের তেমন প্রয়োজন আছে বলে এখন মনে করছি না। 

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। সরকার সমালোচনার বিষয়গুলোকে কীভাবে বিবেচনা করে?

সব সমালোচনা সত্য তথ্যের ভিত্তিতে করা হয় না। কিছু মনগড়াও রয়েছে আবার কিছু সঠিক। আমরা মনে করি, চলার পথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যেগুলো গঠনমূলক নয় বা নিন্দা করার জন্য অথবা অপতথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা হয়, সেগুলোর আমরা জবাব দেই। বিষয়গুলোকে আমরা এভাবেই দেখি। 

সম্প্রতি কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে র‍্যাংকিং করেছে সেই তথ্যে বিশাল ভুল রয়েছে। আমরা চিঠি দেয়ার পর তারা সেগুলো সরিয়েছে। কেউ অপতথ্যের ওপর ভিত্তি করে র‍্যাংকিং করলে আমরা ধরিয়ে দেব। তার পরও তারা কিছু নাম আরো ঢুকিয়েছে তথ্য হিসেবে, সেখানেও কিছু ভুল আছে। ওটা নিয়েও আমরা কাজ করছি। আবার চিঠি দেব। সুতরাং আমরা এখন এ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকব। আর যদি কেউ কোনো সঠিক জিনিস তুলে ধরে যেখানে আমাদের ঘাটতি আছে বা উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে, সেখানে আমরা উন্নতির দিকেই দৃষ্টি দেব। মোট কথা, এসব র‍্যাংকিংয়ে আমরা অনেক ধাপ এগিয়ে যেতে চাই। এটা হবে নিজেদের সমৃদ্ধ করে এবং ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যেসব করা হয়েছে সেগুলো ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। 

দায়িত্ব গ্রহণের পর গুজব, ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তির তথ্য প্রতিরোধের কথা বলেছেন। এগুলো প্রতিরোধে কৌশলটা কী হতে পারে?

গণমাধ্যমের কল্যাণ, মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অঙ্গীকার। একই সঙ্গে অপতথ্যকেও আমরা মোকাবেলা করতে চাই এবং সুরক্ষার জন্য সেটা পেশাদার সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে। 

একটা বিষয় দুভাবে দেখা যেতে পারে, কিন্তু দুটি বিষয়ই অসত্য নয়। সেক্ষেত্রে দুটি গণমাধ্যমের দুই রকম উপস্থাপনা থাকতে পারে। আমি এটার বিপক্ষে নই। বহু গণমাধ্যম থাকলে সব দৃষ্টিভঙ্গি বা পয়েন্ট অব ভিউগুলো মানুষের কাছে চলে আসবে, মানুষ নিজেরাই পছন্দ করবে কাকে গ্রহণ করবে আর কাকে গ্রহণ করবে না। আমি যেটার তীব্র বিরোধিতা করি সেটা হচ্ছে একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা বলা। অসত্য তথ্য দিয়ে মিথ্যাচার করা, গুজব ছড়ানো। সেটি এমন একটা ক্ষতিকারক বিষয় যেটা পেশাদার সাংবাদিকতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, মানুষকে ধোঁকা দেয়। সাধারণ মানুষ তথ্যের গ্রাহক। তাদের জন্যই খবর তৈরি করা হয়। যে সাধারণ মানুষ তথ্যের জন্য অপেক্ষা করছে, তাকে মিথ্য তথ্য দেয়া হলে তিনি ধোঁকার মধ্যে পড়েন। মানুষকে যেন ধোঁকা দেয়া না যায়, সে বিষয় নিশ্চিত করতে চাই।

পিআইডির অধীন ফ্যাক্ট চেকিং বডি রয়েছে। সেটা নিয়ে কাজ করা হবে। এটাকে কীভাবে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক করা যায়, সে বিষয়ে আমি চিন্তাভাবনা করছি। বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত নেয়া এবং তাদের এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমরা এমন একটি সিস্টেমে যেতে চাই যেন ওই বডিটার ব্যাপারে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে, আত্মবিশ্বাস থাকে। আমরা সত্যের পক্ষে, অসত্যের বিপক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি স্বাভাবিকভাবেই সুবিধা পাবে। কাজেই আমরা সবাইকে যুক্ত করে এমন একটি কাঠামোতে যাব যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুজব, অপতথ্য মিথ্যাচার হলে সেখানে আমরা সবাই মিলে মোকাবেলা করতে পারি। 

নির্বাচনের পর মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে কি?

মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়তার বিষয়টা ও রকম না। মাত্র নির্বাচন হলো। নির্বাচনের সময় বিশাল খাটাখাটনি গেছে। তার আগে বিএনপি-জামায়াত বা বিরোধীদের অগ্নিসন্ত্রাসের অপতৎপরতাকেও মোকাবেলার বিষয় ছিল। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের পর কিছুদিন স্থিতিশীল অবস্থা থাকে। কিন্তু আমরা সব সময় অ্যালার্ট আছি। দেশ গঠনও করতে হবে, দেশবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলাও করতে হবে। কিন্তু আমরা হাটে-মাঠে-ঘাটে-রাস্তায়—সব জায়গায় আছি, সতর্ক আছি। 

উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূলে সংঘাত বাড়ছে। এ সংকট মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের পদক্ষেপ কী হবে?

উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মার্কা দিচ্ছে না, প্রার্থী দেবে। আগেও এ রকম ছিল, প্রার্থী দিত কিন্তু মার্কা দিত না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটা উন্মুক্ত থাকত, প্রতিযোগিতা থাকত; প্রোপার নির্বাচনবিরোধী দল থাকুক বা না থাকুক, যেকোনো স্তরের নির্বাচনই প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতে হবে। 

আমাদের দল সার্বক্ষণিকভাবে বার্তা দিচ্ছে। এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থানের বিষয়টি বলছে। আমরা বহুবার বসেছি। গত নির্বাচনের পরও বিভিন্ন এলাকা নিয়ে টেনশন কিছুটা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, এগুলোকে আমরা টলারেট করব না। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় হতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, দলের অভ্যন্তরের প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা এটা কোনো ভালো বিষয় নয়। এ জায়গাগুলোয় আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। 

ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার নিরিখে এ অঞ্চলে বড় শক্তিগুলোর আগ্রহ বেড়েছে। বিষয়টি কি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করেছে?

আগ্রহ বাড়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ তো তৈরি হচ্ছে। আমরা ভূরাজনীতির বড় মোড়লদের ইকুয়েশনের মধ্যে ঢুকতে চাই না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। এটা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন। ওই জায়গাতেই তিনি ফোকাস করতে চান। মোড়লদের ইকুয়েশনে কারো পক্ষে কারো বিপক্ষে তিনি ঢুকতে চান না। তার কথা হলো, যেখান থেকে তিনি যা কিছু পাবেন সেটা বাংলাদেশে এনে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজে লাগাবেন। এটি যদি কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই করতে পারতাম তাহলে আরো এগিয়ে যেতাম আমরা। প্রথমে কভিড এল, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ থেকে স্যাংশন, পাল্টা-স্যাংশন। এতে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেল।

কভিডের পর যখন বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দিকে হাঁটছিল তখনই যুদ্ধের শুরুতে জ্বালানির দাম বাড়ল। ২০২১, ’‌২২ ও ’‌২৩ সালে শুধু জ্বালানি কিনতে বাংলাদেশের অতিরিক্ত ১৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছে। যদি কভিডটা না হতো, যুদ্ধ যদি না বাঁধত বা স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের ইকুয়েশনে যদি না পড়তাম তাহলে ১৫ বিলিয়ন ডলার আমাদের রিজার্ভে থাকত। রিজার্ভে থাকলে ডলারের মূল্য এত বাড়ত না। আর মূল্য না বাড়লে আমদানীকৃত পণ্যের মূল্যও এত বাড়ত না। মূল্যস্ফীতিও বাড়ত না। ফলে এগুলো একটা চাপের মধ্যে ফেলেছে। এটি একটা দিক বললাম। আরো অনেক ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো হয়েছে। এ যুদ্ধ হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ নেই, কিন্তু আমরা ভুক্তভোগী। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে তাদের পক্ষে থাকতে। আবার রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, ভূরাজনীতিক ইকুয়েশনে আমাদের পড়ার ইচ্ছা নেই। আমরা এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরে কাজ করতে চাই। কেউ যেন গৃহহীন না থাকে—এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংকল্প। প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিক্ষার সুব্যবস্থা আমরা করতে চাই। এ জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রীর মূল দৃষ্টি। এটা (বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব) আমাদের জন্য অহেতুক ঝামেলা তৈরি করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা কীভাবে এসব সমস্যা পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায় সে কূটনীতি জানেন। এসব কাজে যদি সময় ব্যয় না করতে হতো তাহলে তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারতেন। আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। 

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে বেশকিছু দিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার কোনো প্রভাব আমাদের দেশে পড়ছে কি?

এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। মিয়ানমারের বিষয়টা তাদের অভ্যন্তরীণ। মিয়ানমার এমন একটি দেশ যারা কোনো কনভেনশন মানে না। তারা এসব বিষয়ে অনুগত নয়। সেটি নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়া মুশকিল। তবে পাশের বাসায় আগুন লাগলে সেটির উত্তাপ নিজের গায়েও লাগে। সেভাবেই পার্শ্ববর্তী দেশে আগুন লাগলে ওই উত্তাপ আমাদের দিকেও আসবে। ও রকম কিছু প্রভাব থাকবেই। তবে আমরা সতর্ক আছি।

 

সৌজন্যে : দৈনিক বণিক বার্তা।

এবিএন/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ