আজকের শিরোনাম :

বুয়েটে আসলে কী ঘটছে?

  মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দেশে-বিদেশে যথেষ্ট পরিচিত একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে পাস করা বহু শিক্ষার্থী দেশের অভ্যন্তরে যেমন দেশের উন্নয়নে শুরু থেকে অবদান রেখে আসছে আবার অনেকে বিদেশেও শিক্ষকতা, গবেষণা এবং নানা ধরনের চাকুরিতে সুনাম কুড়িয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরে যেসব শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে তাদের প্রথম টার্গেটই থাকে বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। অনেকেই সফল হন কিন্তু আসন সীমাবদ্ধতায় অনেকের পক্ষেই বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যায়। অবশ্য কয়েক বছর আগে থেকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কুয়েট, ফুয়েট, রুয়েট, চুয়েট এবং ডুয়েট সেই শূন্যস্থান অনেকটাই পূরণ করছে। তবে বুয়েটের প্রতি আকর্ষণ বরাবরই প্রকৌশল বিষয়ে যাদের পড়াশোনা করার স্বপ্ন ছিল তারা বুয়েটকেই মনে মনে স্মরণ করে থাকেন।

বুয়েটের লেখাপড়ার একটি মান সব সময় ধরে রাখার চেষ্টা ছিল এবং এখনো আছে। একসময় বুয়েট লেখাপড়াকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত ছিল। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই তখন বেশ সুনাম অর্জনও করেছিলেন। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে যেমন নানা বিভাজন ও মানের অধঃপতন ঘটেছে, ছাত্র রাজনীতিতেও এর প্রভাব কমবেশি পড়েছে। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগের মতো শিক্ষার্থীগণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজেদেরকে সচেতন রাখার উদ্যোগ হিসেবে যেসব সেমিনার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একসময় ছাত্র সংগঠনগুলো আয়োজন করতো কিংবা হল, ছাত্রাবাস, আন্ত-ছাত্রাবাস এবং আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা নিয়মিত চলতো সেগুলো ধীরে ধীরে লুপ্ত হতে থাকে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বৈরী হতে থাকে। প্রায় সবকটি বিশ্ববিদ্যালয় ‘৮০-এর দশক থেকেই সম্পর্কের অবনমন ঘটতে থাকে, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রভাব শিক্ষাঙ্গনে তখন থেকেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। এ নিয়ে সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে উগ্র সাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনের বিরোধ তুঙ্গে উঠতে থাকে। ছাত্রাবাসগুলোতে এক ধরনের বৈরী প্রশাসন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠনগুলোর উত্থানের এই পর্বে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড অনেকটাই নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে বুয়েটের অভ্যন্তরে ছাত্রাবাসগুলোতে নানা ধরনের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদেরসহ শিক্ষাক্রম, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। এক সময় বুয়েটের ছাত্রাবাসগুলোতে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত কার্যক্রম একচেটিয়া হয়ে ওঠে। সাধারণ শিক্ষার্থীগণ ছাত্রাবাসে নিরাপদে থাকার জন্য এসবের সঙ্গে অনেকটাই আপসরফা করে চলতে থাকে। ফলে বুয়েটের যে অতীত ঐতিহ্য তার অনেকটাই নতুনদের কাছে অজানা থেকে যেতে থাকে। বুয়েট প্রায় গণমাধ্যমে যেটুকু আলোচনায় স্থান করে নিতো তাতে ছাত্রাবাসে হিজবুত তাহরির, ছাত্রশিবির এবং আরো কিছু ধর্মীয় সংগঠনের কার্যক্রমের খবর প্রকাশিত হতো। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে হতাশা ব্যক্ত করা হতো কিন্তু দেশের রাজনীতিতে যেহেতু পরস্পর বিরোধী দুটি ধারার অবস্থান বেশ পোক্ত হয়ে উঠেছে তাই বুয়েটের ছাত্রাবাসের রাজনীতির সমীকরণটি কারোই বিশেষ বিবেচনায় আসেনি। বুয়েট প্রশাসনও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ১৯৬১ সালের আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে অনেক ব্যাপারেই স্বাধীন কোনো অবস্থান নিতে পারে না, নেয়ও না। তাই বুয়েটের শিক্ষার বিষয়টি একভাবে পরিচালিত হয়, ছাত্রাবাস এবং ছাত্র রাজনীতির বিষয়গুলো ভিন্নভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বুয়েট স্বায়ত্তশাসিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করেনি। এর ফলে বুয়েটের অভ্যন্তরের সঙ্গে প্রতিবেশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেককিছুর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবনটি কোনোভাবে সময়মতো সমাপ্ত করে বের হতে পারলে বেঁচে যায় বলে মনে করে। বুয়েটের ছাত্রাবাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতি সেভাবে এখন আর কার্যকর নেই কিন্তু ছাত্রশিবির, হিজবুত তাহরির ও তাবলীগ জামায়াতের মতো সংগঠনগুলোর কার্যক্রম থেমে নেই। তারা আছে গোপনে তাদের কৌশল মতো।

একসময় বুয়েটের অভ্যন্তরে ছাত্রদলের ক্রসফায়ারে বুয়েট ছাত্রী ‘সনি হত্যা’ নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই হত্যার বিচারকর্ম সম্পর্কে তেমন কোনো সংবাদ আলোচনায় আসেনি। ২০১৯ সালে শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আবরারকে ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে ২৬ জনকে স্থায়ীভবে বহিষ্কার করা হয় এবং আবরারের বাবার দায়েরকৃত মামলায় আদালত ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদান করে এবং মামলাটি বর্তমানে সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছে। আবরার হত্যার বিষয়টি অমানবিক এবং বুয়েট শিক্ষার্থী হিসেবে যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের জন্য কলঙ্কজনক। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই এর সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান এবং আবরারের পিতা-মাতাকে ন্যায়বিচারের আশ্বস্ত করেছিলেন। আবরার হত্যার বিষয়টি তখন দেশব্যাপী একটি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন বুয়েট ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। সেই থেকে বুয়েটের অভ্যন্তরে সত্যিকার অর্থেই ছাত্রাবাসগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল কি ছিল না তা নিয়ে কোনো খবরাখবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গোপন সভা করার অভিযোগে বুয়েটের ২৪ জনসহ মোট ৩৪ জনকে গ্রেফতার করার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে গণমাধ্যমে ছাত্রশিবির এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। এখন তারা হলে অবস্থান করছে।

গত শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সম্মুখে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এই নিয়ে পরদিন সাধারণ শিক্ষার্থী নামে বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী অভিযোগ করে দাবি করেন যে, রাত দেড়টায় বুয়েটের মূল ফটক দিয়ে মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন ছাত্রলীগের অন্তত ৭০-৮০ জন নেতাকর্মী। তারা ক্যাফেটেরিয়ার সেমিনার কক্ষে বৈঠক করেন, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। মোটরসাইকেল, গাড়ি নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পাসে 'শোডাউন' করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীরা শনিবার বুয়েটের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে, গেটে পাহারা বসিয়ে বহিরাগতদের শনাক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি পেশ করেছে। তাদের দাবিগুলো হলো:

১. মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি ‘বুয়েটে সব রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এই নীতিমালা ভঙ্গ করার কারণে আমরা আজ সকাল ৯টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের সিট বাতিলের দাবি। ২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তাদের বুয়েট থেকে স্থায়ী অ্যাকাডেমিক এবং হল থেকে বহিষ্কারের দাবি। ৩. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলো, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না সেই বিষয়ে জবাবদিহিতা। ৪. দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এমন ডিএসডাব্লিও-এর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ। ৫. ক্যাম্পাসের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন। ৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন। সাদ্দাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ কোথায় অবস্থান করেছিলেন এবং কোথায় গিয়েছিলেন এ নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। আন্দোলনকারীরা দাবি করেছে যে, ক্যাফেটেরিয়ায় তারা খাওয়া দাওয়া ও সভা করেছেন। অন্যদিকে সাদ্দাম হোসেন এসব অস্বীকার করে বলেছেন, ‘গভীর রাতে সেমিনার কক্ষে বসে রাজনৈতিক কর্মসূচির কোনো প্রশ্নই ওঠে না’। বুয়েটে আসলে দৃশ্যমান যা চলছে অন্তরালে ভিন্ন কিছু ঘটছে বলেই মনে হচ্ছে। যে ২৪ জন শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওড়ে গ্রেফতার হয়েছিল তারা এখন ফেসবুকে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে এবং শিবিরকর্মীদের পরিচালিত বাঁশের কেল্লা ফেসবুক পেজ থেকে আন্দোলনের বিভিন্ন ছবি এবং সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে হিজবুত তাহরির বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মেইলে লিফলেট বিতরণ করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের লিফলেট সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি। কেন দেয়নি তা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে বুয়েটের বর্তমান আন্দোলনের পেছনে কী কারণ এবং কারা গোপনে জড়িত রয়েছে তা সার্বিক চিত্র তদন্তের মাধ্যমে তুলে আনা সম্ভব। বুয়েটের অভ্যন্তরে সিসি টিভি ক্যামেরা রয়েছে। আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল তা সিসি টিভির মাধ্যমেই উৎঘাটন করা গেছে। এখন আন্দোলনকারীরা যেসব অভিযোগ করছে তার প্রতিটিই সিসি টিভির মাধ্যমে প্রমাণ করা যেতে পারে। সাদ্দাম হোসেন আদৌ ক্যাফেটেরিয়ায় গেছেন কি না, গিয়ে থাকলেও কোনো রাজনৈতিক বৈঠক করেছেন কি না সেটি সিসি টিভির মাধ্যমে প্রমাণ করা যেতে পারে। বুয়েটের আন্দোলনকারীরা সত্যিকার অর্থেই দল নিরপেক্ষ কি না, নাকি অন্যের দূরের সুতায় নড়াচড়া করছেন সেটিও বোঝা যেতে পারে। হিজবুত তাহরির, ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল যে সেখানে সক্রিয় সেটি তাদের প্রকাশিত খবরাখবর, স্ট্যাটাস, লিফলেট, কমিটি গঠন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আবরার হত্যার জুজুর ভয় দেখিয়ে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে, এ সংগঠনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে এমন দাবি যেসব শিক্ষার্থী করেন তারা আসলে কী চাচ্ছেন? তারা কি অন্য কারো উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে? সেটি দেখার বিষয়। মেধাবী ছাত্ররা শুধু বিষয়ে মেধাবী থাকেন না তাদের দেশ, জাতি এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও মেধার স্বাক্ষর রাখলেই তখন দেশ ও জাতি উপকৃত হতে পারে।


মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: ইতিহাসবিদ, কলাম লেখক ও সাবেক অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিভাগের আরো সংবাদ