আজকের শিরোনাম :

রাণীশংকৈলে এসআইসহ ৬ পুলিশ প্রত্যাহার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:০৬

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল থানার এক উপ-পরির্দশক (এসআই) চারজন সহকারী উপ-পরির্দশক (এএসআই) ও এক ডিএসবি পুলিশ কনস্টেবলকে হঠাৎ করেই রাণীশংকৈল থানা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ একসঙ্গে ৬ জন পুলিশ সদস্য প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয় আলোচনা সমালোচনা। তবে এর নেপথ্যে উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচঁল এলাকায় ৬ জুয়া খেলোয়াড়কে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে আটক করে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রত্যাহাকৃত পুলিশের বিরুদ্ধে। টাকা নিয়ে জুযারুদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার পরের দিনই তাদের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। 

হ্যান্ডকাফ পড়া জুয়ারুদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইনে সংযুক্তের বিষটি অস্বীকার করেন রাণীশংকৈল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা। তিনি বলেন, ডির্পাটমেন্টাল পদ্ধতিতেই এই থানায় তাদের চাকুরীর বয়স বেশি হওয়ার কারণেই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
রাণীশংকৈল থানা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ লাইনে হঠাৎ সংযুক্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন উপ-পরির্দশক(এসআই) এরশাদ আলী, সহকারী উপ-পরির্দশক(এএসআই) গৌতম চন্দ্র রায়, আনিছুর রহমান মোল্লা, সাদেকুল ইসলাম,জাকির হোসেন ও ডিএসবি রিন্টু আলম। হঠাৎ ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ লাইনে এক সাথে ছয়জন পুলিশ সদস্যসের সংযুক্ত হওয়ার কারণ নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে। এর নেপথ্যের ঘটনা উদঘাটনে নামে এ প্রতিনিধি। 

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, এস আই এরশাদসহ ছয় পুলিশ সদস্য রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অভিযানে যায়। সেখানে মানিক নামে এক ব্যক্তির বাড়ীতে এক ইউপি সদস্য শাহাজাহন আলীসহ মোট ছয়জন জুয়ার আসর বসিয়েছেন। সেখানে পুলিশ সদস্যরা হানা দেয়। সে সময় সকল জুযারুদের শরীর সার্চ করে। ইউপি সদস্য শাহাজাহান বাদে পাঁচজন জুয়া খেলোয়ারদের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। এ সময় একজন লেহেম্বা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানান। ইউপি চেয়ারম্যান কথা বলার জন্য ফোন দিলে পুলিশ সে ফোন রিসিভ করেননি। পরে বিভিন্ন দেন দরবার করে প্রায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জুয়ারুদের ঘটনাস্থলেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। 

এ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ে ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, জুয়া খেলায় তিনি ছিলেন না। তবে এমন ঘটনার খবর তিনি শুনেছেন। কোচল এলাকায় জুয়া খেলায় থাকা দুই ব্যক্তি ঘটনার সত্যাতা স্বীকার করেন। জবেদ আলী বলেন,পুলিশ ঘরে ঢুকেই তাদের গালমন্দসহ চড়, থাপ্পর ও লাথি মারেন। পরে সকলকে সার্চ করেন। তাতে ইউপি সদস্য শাহাজাহানের কাছে এক হাজার ছয় শত টাকা। আরেকজন ধান ব্যবাসীয়র কাছে ৫১ হাজার টাকা অন্য আরো দুই জনের কাছে ২৩ হাজার টাকাসহ মোট ৬জনের কাছে প্রায় এক লাখ টাকা নিয়ে নেন। পরে ইউপি সদস্য শাহাজাহানকে বাদে সকলকে হাতকড়া পড়ান। পরে বিভিন্ন দেনদরবার করে প্রায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের পুলিশের কাছ থেকে ঘটনাস্থলেই ছেড়ে দেয়। ওই ব্যক্তি আরো জানান, তাদের হাতের হাতকড়া খুলে পাচঁজনের কাছে ভিডিও বক্তব্য নেন। তাদের কাছে কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয়েছে কিনা? টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করিয়ে তাদের বক্তব্য ধারণ করা হয় বলেও তিনি জানান।
লেহেম্বা ইউনিয়ন পরিষদেও (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম মুঠোফোনে বলেন, ঘটনাটি একজন তাকে জানিয়েছিল। তিনি ফোনে কথা বলতে চাইলেও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তার সাথে কথা বলতে চাননি। তবে তিনি শুনেছেন টাকার বিনিময়ে ওই জুয়াড়িদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সোহেল রানা গত বুধবার বিকেলে বলেন, টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলোয়ারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এটি তিনি জানেন না। এইমাত্র প্রতিনিধির কাছে জানলেন। তিনি এখন তদন্ত করে দেখবেন ঘটনা কতটুকু সত্য। 

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম প্রসাদ পাঠক গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বলেন, ৬ জনকে ক্লোজ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে।

এবিএন/মোঃ মোবারক আলী/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ