আজকের শিরোনাম :

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অভিযান

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ১২:৫৮

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দখল করে রাখা অ্যাকাডেমিক ভবন দখলমুক্ত করতে অভিযান চালাচ্ছে নিউইয়র্ক পুলিশ। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টায় অভিযান শুরু করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হ্যামিলটন হল নামের ওই ভবনে তারা প্রবেশ করছে। সেখানে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এর আগে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।

অভিযানের বিষয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে ‘দখল, ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করার পর আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না’।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন বিক্ষোভ হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং ‘জোর করে ভবন দখল করা শান্তিপূর্ণ ব্যাপার না, এটা ভুল’।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স টেলিভিশনকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে দিনটিকে কলাম্বিয়ার জন্য দুঃখের দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্র্যাট দলীয় কংগ্রেসম্যান জামাল বাউম্যান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে তিনি ক্ষুব্ধ।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বয়কটের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড ছাত্র বিক্ষোভ চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়।

এর আগে কলাম্বিয়ার শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেকে কমলা ও হলুদ রংয়ের ভেস্ট পড়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীরা তাঁবু খাটিয়ে ওই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছিলো। ওই তাঁবু সরানোর জন্য সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কয়েক ডজন শিক্ষার্থী ওই স্থানে সমাবেশ করে।

কলাম্বিয়ার স্টুডেন্ট রেডিও স্টেশনের খবর অনুযায়ী আটক শিক্ষার্থীদের নেয়ার জন্য ক্যাম্পাসের কাছেই নিউইয়র্ক পুলিশের বাস রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেলগুলোয় যেসব ছবি দেখানো হচ্ছে, তাতে কলাম্বিয়া লেখা টি-শার্ট পরিহিত অনেককে একই ধরনের বাসে ওঠাতে দেখা যাচ্ছে।

তবে কত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন তারা রাতের এ অভিযানে শুধুমাত্র ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড (যা জোরে শব্দ তৈরি করে আলোর ঝলকানি তৈরি করে) ব্যবহার করেছে এবং কোনো টিয়ারশেল ব্যবহার করেনি।

একদিকে গ্রেপ্তার চলছে অন্যদিকে বাইরে চরম বিশৃঙ্খলার তথ্য দিয়েছেন বিবিসির নমিয়া ইকবাল। তিনি পুলিশের অনেকগুলো বাস ‘সম্ভবত বিক্ষোভকারীদের’ নিয়ে চলে যেতে দেখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির পার্টনার সিবিএস নিউজ বলেছে পঞ্চাশ জনের মতো আটক করা হয়েছে।

তবে হাত বাঁধা অবস্থায় আটক শিক্ষার্থীরা যখন যাচ্ছিলো তখন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা ব্যাপক স্লোগান দিয়েছে।

ইকবালকে একজন বলেছেন এই গ্রেপ্তার শহরের জন্য লজ্জার।

পুলিশের কাছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নেমাত শফিক যে চিঠি দিয়েছে, সেটি গণমাধ্যমের কাছে এসেছে।

ওই চিঠিতে শফিক বলেছেন ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এক দল ‘শিক্ষার্থী’ ভবনে প্রবেশ করে।

ভবনটি বন্ধ করার আগে একজন ভবনের ভেতরে লুকিয়ে ছিলো। পরে সে অন্য বিক্ষোভকারীদের জন্য ভবনের দরজা খুলে দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের দ্বারা’ এটি হয়েছে।

‘যেসব ব্যক্তিরা হ্যামিলটন হল দখল করেছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট করেছে তারা অনুপ্রবেশকারী,’ পুলিশকে লিখেছেন শফিক।

তিনি জানান বিক্ষোভকারীরা বিপজ্জনক অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে তিনি পুলিশকে তল্লাশির অনুমোদন দিয়েছেন।

গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসগুলোতে যে প্রতিবাদ শিবির তৈরি হয়েছে তার শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ক্যাম্পাসে ইহুদিবাদবিরোধী তৎপরতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্টের কংগ্রেসে শুনানির একদিন পর ১৮ এপ্রিল প্রতিবাদ শিবিরটির আকার বড় হয়।

তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ পাঠিয়ে অন্য অনেক শিক্ষার্থীকে হয়রানি ও ভয়ের পরিবেশ তৈরির অভিযোগে একশর মতো বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।

টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, উতাহ, ভার্জিনিয়া, নিউ মেক্সিকো, নিউ জার্সি, কানেক্টিকাট ও লুজিয়ানার ক্যাম্পাসগুলো থেকে পুলিশ অন্তত এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।

তবে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিন্ন কৌশল নেয় এবং তারা বিক্ষোভকে বাধাহীনভাবে চলতে দেয়।
খবর বিবিসি

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ