‘বহু বছরের অগ্রগতি মুছে দিয়েছে করোনা মহামারী’
দ্য আটলান্টিক
০২ অক্টোবর ২০২০, ১৩:৩৪ | অনলাইন সংস্করণ
বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই সংক্রামক রোগের মহামারী নিয়ে কথা বলে আসছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন বিল গেটস। নভেল করোনাভাইরাসের এ মহামারীতেও এর প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে এখন পর্যন্ত একাধিকবার কথা বলেছেন তিনি। নিজের ফাউন্ডেশন থেকে চেষ্টা করছেন এ লড়াইয়ে অবদান রাখার। সম্প্রতি আরো একবার চলমান মহামারী নিয়ে নিজের ভাবনা ভাগাভাগি করেছেন গেটস। দ্য আটলান্টিককে দেয়া সে সাক্ষাত্কারের চুম্বকাংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: বিল, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালে কথা বলেছি, একদম ভিন্ন একটি সময়ে। মহামারী এ বছর যেভাবে চলছে আপনার অনুভূতি কী?
বিল গেটস: দুঃখের বিষয়, আমি মনে করি এখানে সবচেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে আমরা কতটা অপ্রস্তুত ছিলাম তা সামনে এসেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্রামক রোগের মতো ব্যাপারগুলোতে একটু প্রস্তুতিই অনেক পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। খুব অল্প কিছু দেশই নিজেদের আলাদা করতে পেরেছে, বেশির ভাগই পারেনি।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে মহামারী মোকাবেলা করেছে, সেখানে কোন বিষয়টি আপনাকে অবাক করেছে?
বিল গেটস: এটা মোকাবেলা করার মতো যথেষ্ট সম্পদ আমাদের ছিল। আমরা গ্রাউন্ড জিরোতে অবস্থান করছিলাম না, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত হওয়ার মতো যথেষ্ট সময় ছিল। মাথাপিছু হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের পিসিআর মেশিন অন্যদের চেয়ে বেশি ছিল। আমরা দামি মেডিকেল অবকাঠামো দ্বারা আশীর্বাদপুষ্ট ছিলাম। এবং আমাদের সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) এবং বিএআরডিএ (দ্য বায়োমেডিকেল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) আছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দেশের চেয়ে আগে প্রস্তুত হওয়ার জন্য অনেক কিছু ছিল।
প্রশ্ন: আমি মনে করি, আপনি সেই অল্প কয়েকজন মানুষের একজন যার প্রেসিডেন্ট এবং প্রশাসনের সঙ্গে মহামারীর প্রস্তুতি নিয়ে সরাসরি কথা বলার মতো সম্পর্ক রয়েছে। আমেরিকার নেতৃত্ব এবং মহামারী নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
বিল গেটস: যদিও যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালো কিছু করে দেখাতে পারেনি, অন্যরাও পারেনি। কিছু কিছু দেশ সার্স ও মার্স দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের একধরনের বোঝাপড়া ছিল। সেসব দেশ নিজেদের সেরাটা দেখাতে পেরেছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন মহামারীর কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চিন্তা বদলে যাবে? এ সংকট সময়ে অনেক ধনী দেশ বাজেভাবে কাজ করেছে। কিন্তু দরিদ্র অনেক দেশ সেনেগাল থেকে ভিয়েতনাম সত্যিকার অর্থেই দারুণ কিছু করে দেখিয়েছে। আপনি কি মনে করেন, এটা আমাদের বিনয়ের কারণ হওয়া উচিত এবং এর ফলে আমাদের আচরণে পরিবর্তন আসবে?
বিল গেটস: অবশ্যই বিনয়ের কথা বলা হচ্ছে, কারণ যে ক্ষতি হয়েছে তা বিশাল। সেটি হতে পারে অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত ও মানসিক স্বাস্থ্যজনিত। বিশ্বযুদ্ধ বাদ দিলে এটা গত এক শতকের সবচেয়ে বাজে ব্যাপার ছিল। অনেক কিছুই আমরা বুঝতে পারিনি। এমনকি চিকিৎসা পেশার ক্ষেত্রেও তা সত্যি। আমরা শ্বাসতন্ত্রের এ ভিন্ন রোগটিকে গুরুত্ব সহকারে বুঝতে পারিনি, যেভাবে বোঝা উচিত ছিল। ফলে এখানে সবার জন্য শিক্ষা রয়েছে।
প্রশ্ন: আমি মনে করি, যে বিষয়টি মহামারী সামনে এনেছে তা হলো সামাজিক হস্তক্ষেপের প্রাসঙ্গিকতা। এ মহামারী অনেক বৈষম্যকে বিস্তৃত করেছে। বৈশ্বিক ও স্থানীয়ভাবে উভয় ক্ষেত্রে এটি ঘটেছে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে। এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে আঘাত করেছে কালো, লাতিন ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে। এ বৈষম্যগুলো নিয়ে আপনি কী ভাবছেন এবং কীভাবে তা সমাধান করা যায়?
বিল গেটস: হ্যাঁ, এটা বেশ অবিশ্বাস্য যে এখানে সব ধরনের বৈষম্য মাত্রা ছাড়িয়েছে। প্রতি বছরই বিভিন্ন অগ্রগতির ইতিবাচক গল্প সামনে আসে—শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস পাওয়া, অপুষ্টি কমে যাওয়া, দীর্ঘ আয়ুষ্কাল। আমরা বিশ্বকে বলতে পারি, এ নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতিতে মনোযোগ দিন।
এখন এ পরিস্থিতিতে, যদি কেবল কভিডের মৃত্যুর দিকেই নজর দেয়া হয়, তবে আঘাতের প্রকৃত আকার বোঝা যাবে না। বহু বছরের অগ্রগতিকে মুছে দিয়েছে মহামারী। এখানে নিয়মিত টিকা লাভ করা এবং এইচআইভির ওষুধ পাওয়ার বিষয়টিও আছে। এ সেবাগুলো ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং এখানে থেকে সংখ্যা একত্র করাও বেশ কঠিন। কিন্তু আমাদের নিয়মিত ইমিউনিজেশন স্তর নেমেছে ১৪ শতাংশের বেশি। এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার পর বৈশ্বিকভাবে ন্যায়ের শক্তিশালী এজেন্ডা থাকতে হবে। ৩৭ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের দিকে চালিত হয়েছে। এটা সত্যিকার অর্থেই বেশ অস্বস্তিকর।
বেশির ভাগ সময় আমরা যখন সংক্রামক রোগ নিয়ে কথা বলি, আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যালেরিয়া কিংবা যক্ষ্মার ওপর মনোযোগ দিই না। এখানে মানুষ যখন কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, তারা বলছে, আমাদের সম্ভবত আরো কম উদার হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: আপনি কি যুক্তরাষ্ট্রেও এ ধরনের বৈষম্য দেখছেন? আমার একটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যারা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এ মহামারীর বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করছে তারাই দেখা যাবে পদ্ধতিগত বৈষম্যের কারণে ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এ বৈষম্য দূর করার জন্য কী করা যেতে পারে?
বিল গেটস: একটি উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে (ভ্যাকসিন) সংগ্রহে রাখা। ফাউন্ডেশনে আমাদের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি এদিকে সাহায্য করতে। যদি একাধিক (ভ্যাকসিন) অনুমোদন লাভ করে, তাহলে সত্যিকার অর্থে পরিমাণ অনেক বেশি হবে।
আমাদের ঝুঁকির স্তরে নজর দেয়া উচিত। এর ভিত্তিতে আপনি বলতে পারেন কালো এবং হিস্পানি সম্প্রদায়ের লোকদের উচ্চতর অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এরপর আপনি বুঝতে পারবেন সমতাভিত্তিক অগ্রাধিকারের র্যাংকিং কেমন হওয়া উচিত তা।
প্রশ্ন: আপনি ও আপনার ফাউন্ডেশন অনেক গবেষণা করেছে। সেখানে কি আপনি কোনো ভুল দেখছেন? ভবিষ্যতে আপনি কি কোনো কিছু ভিন্নভাবে করতে চান?
বিল গেটস: আমি মনে করি দৃষ্টিভঙ্গি এখনো তেমন আছে, মহামারীর আগে যেমনটা ছিল। এটি করার ব্যয় কয়েক বিলিয়ন, শত শত বিলিয়ন নয়। প্রতিরক্ষা বাজেটের তুলনায় দেখুন এটা কোনো অতিরিক্ত বোঝা নয়। এমনকি এটাকেই যদি ঠিকঠাকমতো ব্যবহার করা যায়, তবে এটা উন্নতির দিকে চালিত করবে। পাশাপাশি যে ধরনের রোগে আজ আমরা আছি তাতে এটি সহায়তা করবে। আমি মনে করি, আমরা পরেরবার প্রস্তুত থাকতে পারব।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি
এই বিভাগের আরো সংবাদ