আজকের শিরোনাম :

‘বাছবিচারহীন ঋণ পুনর্গঠন বড় ভুল ছিল’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ১২:২৫

ঢাকা, ২৬ মে, এবিনিউজ : মুরশিদ কুলী খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর। ২০১২ সালে যোগ দেন সাউথইস্ট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন জনতা ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের। এ ছাড়া ছিলেন অধুনালুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের (বর্তমানে আইসিবি ব্যাংক) কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিযুক্ত প্রশাসক। নিজের দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মুরশিদ কুলী খান জনতা এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ইস্টার্ন ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও আইআইএফডিসির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাংকসহ অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদারক ও নিয়ন্ত্রণে অফসাইট সুপারভিশনসহ যথাযথ নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলশ থেকে ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্সে গ্রহণ করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ব্যাংক ব্যবস্থা, খেলাপি ঋণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দুরবস্থা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে একটি জনপ্রিয় দৈনিকের সঙ্গে বলেন তিনি। তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক ধাপ অর্জন করল। এ যাত্রাটা কেমন ছিল এবং সামনের চ্যালেঞ্জ কী?

সুখের খবর, বাংলাদেশের অন্তত একটি উত্তরণ ঘটেছে। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত) ক্লাবের নেতা। এখন এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করল। তবে আমরা এখনো আনুষ্ঠানিক সনদ অর্জন করিনি। এখন চলছে প্রবেশন পিরিয়ড। আগামী ছয় বছর তিনটি সূচকে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হবে। তিনটি সূচক হলো— মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। এ তিনটি শর্ত বজায় রাখাসাপেক্ষে আমাদের দেশ উল্লিখিত সময়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে। মাথাপিছু আয় ও মানবসম্পদ উন্নয়ন নিয়ে মাথাব্যথা নেই, কিন্তু অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা নিয়ে আমাদের বেশ সতর্ক থাকতে হবে।

নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকতে হবে, অর্থনীতি যেন আরো গতিশীল থাকে এবং উত্তরণটা যাতে বাধাহীন হয়। সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চলতি বছরটা নির্বাচনের বছর। এ বছরে নির্বাচনী সহিংসতা হতে পারে। কাজেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও একটি চ্যালেঞ্জ। দুই. উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে এলডিসিতে থাকা অনেক সুবিধা আমরা পাব না; যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে আমাদের জিএসপি থাকবে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যাবে, দ্বিপক্ষীয় ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুদের হার আগের চেয়ে বাড়বে। এলডিসি হিসেবে এক্ষেত্রে একটা ছাড় ছিল, এখন সেই সুদের হার বেড়ে যেতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণে আমাদের রফতানি পণ্য আরো প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। কারণ খরচ বেড়ে যেতে পারে। এটা একটা ফ্যাক্টর। তিন. আমরা জলবায়ুর দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সিডর, আইলার মতো বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানলে অর্থনীতি একটি ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশা করি, তা হবে না। তবে এসব ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে।

আরেকটি বিষয়, আমরা যেন কোনো রকম আত্মতৃপ্তিতে না ভুগি। আমাদের লক্ষ্য অনেক বড়। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র হব। কাজেই উন্নত দেশে যাওয়ার যে সূচকগুলো, সেগুলোয় ভালো করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে আছে। এটিকে আরো বাড়াতে হবে। দুই অংক সম্ভব না হলে এটি অন্তত ৮-৯ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। তবে আশার কথা, নির্মাণাধীন বড় অবকাঠামোগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে, বিশেষত পদ্মা সেতু ও কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হয়ে গেলে হয়তো প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে আরেকটি চ্যালেঞ্জ আর্থিক খাত। বণিক বার্তার প্রতিবেদনেই এসেছে, আমাদের আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। অনেকগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমরা দেখছি, তারল্য সংকট চলছে। কাজেই ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। ব্যাংকগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে।

কীভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায়?

খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বড় বিষয় হলো, রিকভারি অ্যাকশন প্ল্যান। চেইজ দ্য ডিফল্টার আপ টু দ্য গ্রেভ। এটি আমার একটি কথা— তাকে কবর পর্যন্ত ধাওয়া করো। ঋণখেলাপির ব্যাপারে আমরা অনেক নমনীয়। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিই না। ব্যাংকাররা ঋণছাড় বা অনুমোদনে খুশি। কিন্তু ছাড়ের পর ঋণের চূড়ান্ত যে ব্যবহার, সেটি ব্যাংক দেখে না। ঋণ নিয়ে সে তিনটি পাজেরো জিপ কিনল, বাড়ি বানাল কিংবা সেকেন্ড হোম করল নাকি সত্যিকার অর্থে কারখানা করল— এ খবরও রাখে না। টাকাটা খেলাপি করলে দু-একবার তার বাসায় যায়। এরপর তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। খেলাপি ঋণ আদায় করতে হলে খেলাপির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে, তার রাতের ঘুম হারাম করতে হবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনা কাজ করা উচিত নয়। কারণ আর্থিক অপরাধ রাষ্ট্র, জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ। খেয়াল করলে দেখা যাবে, আমাদের এখানে ইচ্ছাকৃত খেলাপি বেশি। সত্যিকারে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকেই মার খায়, সেসব ক্ষেত্রে পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা যায়। কিন্তু ঢালাওভাবে করা যায় না। এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশ ব্যাংক মারাত্মক ভুল করেছিল। তাতে ওইসব ঋণ আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

আরেকটি বিষয়, খেলাপি ঋণ ১০-১১ শতাংশ দেখানো হচ্ছে, সেটিও বিভ্রান্তিকর। পর্দার আড়ালে অনেক কিছু রেখে তারপর এটি দেখানো হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য যদি প্রকাশ করে, তাহলে গড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে তা ২৫-৩০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে প্রায় ২০ শতাংশ হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেমন রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেয়া হয়, তেমনি বেসরকারি ব্যাংকে দেখা যায়, একটি ব্যাংকের পরিচালককে আরেকটি ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে...

এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে অসুবিধা নেই। সাধারণ ব্যবসায়ী হলে অবশ্যই ঋণ নেবে। কিন্তু সেই অর্থটা প্রকৃত কাজে নিচ্ছে কিনা, আবার ফেরত দিচ্ছে কিনা। আমি এতে দোষ দেখি না। তবে প্রকৃত খাত থেকে অন্য কোনো খাতে না গেলেই হয়।

মুদ্রানীতি ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু বাজারে আমানত নেই। এর প্রভাব পড়ছে শেয়ারবাজারে। এটা কীভাবে দেখেন?

আমি বলব, এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটি নির্বাচনের বছর। মুদ্রানীতি একটু নমনীয় করতে হবে, না করলে বিপদ হবে। সব সমাজেই কিন্তু নমনীয়তা থাকে। ব্যাংকগুলোয় যে অস্থিরতা, সেটি কেটে যাবে, তবে সময় লাগবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বকে কঠোরভাবে তা সামাল দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তো স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত। তাহলে কেন পারে না?

এখন কিছু নেই। প্রতিষ্ঠানটি মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেছে। কাগজ-কলমে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীন। কিন্তু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। আমরা দেখছি, এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফাংশনাল করতে হলে এ সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে।

আইন সংশোধন করে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ও সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হলো। সেটিকে কীভাবে দেখেন?

মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি ঠিক হয়নি। কিন্তু একই পরিবার থেকে পরিচালকের সংখ্যা দুই থেকে চারজন বাড়ানোর বিষয়টিকে আমি খারাপভাবে দেখি না। কারণ অন্যায় করলে দুজনও করবে, চারজনও করবে। আমরা ব্যাংকে তো পরিবারতন্ত্রই দেখছি। না থাকলেও তার প্রতিনিধি দিয়েই প্রভাব খাটায়। এটি নির্ভর করে অন্য পরিচালকদের ওপর, তাদের ব্যক্তিত্বের ওপর। সরকার হয়তো তাদের খুশি করার জন্যই করেছে।  

আমি মনে করি, ব্যাংকের সমস্যা, অরাজকতা বা অস্থিরতা দূর করতে অর্থনীতিবিদ, আমলা, ব্যাংকার ও প্রাজ্ঞজনদের নিয়ে একটি ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠন করা দরকার। তারা কোথায় কোথায় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, তার সুপারিশ করবে। আর এটি বাংলাদেশ ব্যাংক বা অর্থ মন্ত্রণালয় আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

এত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রাখার যৌক্তিকতা আছে কি?

সোনালী ব্যাংক বা কৃষি ব্যাংক রেখে বাকিগুলো থেকে সরকারি মালিকানা প্রত্যাহার করা উচিত। আজকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে এত ব্যাংক রাখার মানে নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেলে রাজনৈতিক প্রভাব নির্দেশিত ঋণ কমে যাবে। এখন বাংলাদেশে শিল্পায়ন ও নগরায়ণ বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন পুঁজিবাদের গ্রোথ মোমেন্টামে। এ সময় পেইনস অব গ্রোথ (প্রবৃদ্ধির বেদনা) থাকে। বড় বড় প্রকল্পে বড় বড় দুর্নীতি হয়ে থাকে। তার রাশ টানার ব্যবস্থা থাকতে হবে। উন্নয়নের সময় কিছু দুর্নীতি হয়। সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া যদিও এখন দুর্নীতি শূন্য পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এমনকি দেশটিতে দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত অভিশংসন করা হয়েছে। যত উন্নত হয়, যেকোনো দেশে তত দুর্নীতি কমে যায়। তখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চলে আসে। বাংলাদেশেও এমনটি হবে। আমাদের দেশ ডিজিটাল হচ্ছে। ই-গভর্ন্যান্স প্রবর্তন হচ্ছে। এতে আখেরে সুফল পাওয়া যাবে।

ডিজিটাল হলেও ব্যাংকিং খাতে ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড জালিয়াতি বাড়ছে...

এগুলো পেইনস অব গ্রোথ। মানুষের সচেতনতা বাড়ানো হলে আইটি নিরাপত্তা জোরদার, ব্যাংকগুলোয় নিয়মিত আইটি অডিট করা হলে ধীরে ধীরে এ ধরনের জালিয়াতি কমে আসবে।

মোবাইল ব্যাংকিংকে কীভাবে দেখেন?

মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের সমাজের একটি বড় বিপ্লব। এতে কিছু টাকা মার যায় সত্য; কিন্তু এটি কত শতাংশ? হিসাব করলে দেখা যাবে, সেটি বেশি নয়। আগে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পাঠানো হতো ডাকে। এক্ষেত্রে বেশ সময় লেগে যেত। এখন বিকাশ বা রকেট হওয়ার ফলে ইনওয়ার্ড সোস্যাল বা ফিন্যান্সিয়াল মোবিলিটি বেড়ে গেছে। এতে সব পেশা ও আয়স্তরের মানুষ লাভবান হচ্ছে। সামাজিক বা অর্থনৈতিক রূপান্তরে মোবাইল ব্যাংকিং বিরাট ভূমিকা রেখেছে। পুরো বিশ্ব এখন একটি নগদবিহীন (ক্যাশলেস) সমাজের দিকে ঝুঁকছে। আমাদের দেশেও এ প্রবণতা বাড়ছে। এর ধারাবাহিকতায় ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়েছে। এ থেকে আমরা উপকার পাচ্ছি। পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, ফুলপ্রুফ সিস্টেম পৃথিবীতে সম্ভব নয়। আর একটি সিস্টেম তৈরি হলে কিছু দুষ্ট লোক তার ত্রুটি বের করে মানুষকে প্রতারিত করবেই। এটিকে বলে সারকামভেনশন অব রেগুলেশন।

ব্যাংকিং খাতকে বর্তমানে যেভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে, সেটি সমর্থন করেন?

ফারমার্স ব্যাংক এখন আমানতকারীর আমানত দিতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে অনেক ব্যাংকেরই এ ধরনের অবস্থা তৈরি হবে। এটা একটা দিক। আরেকটি দিক, অনেক ব্যাংকে বলা হচ্ছে— এত শতাংশ আমানত না আনতে পারলে কর্মীদের চাকরি থাকবে না। বলা যায়, ব্যাংকিং খাতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা মোটেই কাম্য নয়

যদি কোনো ব্যাংকের বিপর্যয় ঘটে, তখন কী হবে...

ব্যাংকের অবশ্য পুরোপুরি বিপর্যয় হবে না। অর্থমন্ত্রী তো বলেছেন, আমরা ব্যাংক ফল (বিপর্যয়) করতে দিই না। ব্যাংককে হয়তোবা আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখবে। বাজেটের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যে পুঁজি পুনর্ভরণ করা হয়েছে, এ অর্থটা কার? এটা কি জনগণের নয়? এটা তো রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গেছে। তেমনি হয়তো উদ্যোগ নেয়া হবে।

এটা কি সমাধান? কমার্স ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক লাইফ সাপোর্টে আছে। সব ব্যাংকের যদি একই পরিণতি হয়, তাহলে কী হবে...

এটিই হলো চিন্তার বিষয়। এক্ষেত্রে পরিণতি হবে জিম্বাবুয়ের মতো। এখানে যেন জিম্বাবুয়ের অর্থনীতির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ধরা যাক, কোনো ব্যাংকের পুঁজি পর্যাপ্ততা ১০ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশও থাকে, তাহলে ব্যাংক ফল করবে না। এনপিএল ২০ শতাংশের স্থলে ৫০ শতাংশ হলেও ব্যাংক ফল করবে না। কিন্তু লিকুইডিটি ক্রান্স তৈরি হলে বিপর্যয় হবে। ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হলে ব্যাংক মার খেয়ে যাবে। কাজেই লিকুইডিটি ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেকগুলো ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসানো হলেও কাজ হচ্ছে না। কেন?

আমি দায়িত্ব পালনকালে সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক বসানোর চল শুরু হয়েছিল। কিন্তু আসলে পর্যবেক্ষকরাও প্রভাবিত হয়ে যায়। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। ফলে তারাও সঠিক রিপোর্ট করে না। তাদের ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। যদি দেখা যায়, পর্যবেক্ষক থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যাংক খারাপ হচ্ছে, তাহলে তাদের পারফরম্যান্স কড়া নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। কাজেই পর্যবেক্ষকদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নেরও সময় এসেছে। যাদের পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানো হচ্ছে, তাদের আগের ব্যাকগ্রাউন্ডও পর্যালোচনায় নিতে হবে। (দৈনিক বণিক বার্তা থেকে সংগৃহীত)

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ