আজকের শিরোনাম :

রাজনীতিতে নতুন দিকের সূচনা হতে পারে

  সুভাষ সিংহ রায়

০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৪২ | অনলাইন সংস্করণ

সুভাষ সিংহ রায়
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘হত্যা, ষড়যন্ত্র, মানুষ খুন বিএনপির একমাত্র গুণ।’ গত ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সমালোচনা করেন, দুঃখের বিষয় যে, তারা সঠিক তথ্যটা জাতির সামনে তুলে ধরেন না। দেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের চরিত্র। মনে হয়, বাংলাদেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি দেখলে তারা বিমর্ষ হয়ে পড়ে।’ বাংলাদেশে জ্ঞানী মানুষের কেউ ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কারা বাসে আগুন দিয়েছে তারা বলতে পারেন না। এ নিয়ে গত ১০ বছর কম বিভ্রান্তি ছড়ায়নি। নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে লাগা আগুনে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজনই শিশু। এ ছাড়া দগ্ধ হয়েছেন অনেকে। পাকিস্তানি মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠী জন্মের পর থেকে শুধু বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালিয়েছে। আগের লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, বিএনপি মানেই হলো বিভ্রান্তকর অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংরেজ সৈন্যরা যতটা না ক্ষতি করেছে, তার চেয়ে ভয়ংকর ছিল মীর জাফর, জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ প্রমুখ। তার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর ওই সময়ে সুশীল সমাজের একদল মানুষ। সেই সময়ে সুশীল সমাজের নেতা ছিলেন ইয়ার লতিফ। আমরা গত ১৫ বছরে একাধিক ইয়ার লতিফ দেখেছি। এই ইয়ার লতিফরা দেশে-বিদেশে তাদের চক্রান্তের কালো মাকড়সার জাল বিস্তার করেই যাচ্ছে। সারা দিন এরা গ্রামোফোন রেকর্ড বাজায়, আর বলতেই থাকে—এ তো একদলীয় নির্বাচন। তাদের জ্বালা জামায়াত-বিএনপি নির্বাচনে নেই। এ জন্যই ড. হুমাযুন আজাদ তার প্রবচন গুচ্ছে লিখেছিলেন : ‘৭৪-এর বিবেক ৭৭-এ সেনা শাসকের সেবাদাসে পরিণত হয়।’ তারা নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলেন। নির্বাচন কমিশনের অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হিসাব মিলিয়ে দেখেন না যে, কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সরকারি দলের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে, ‘ইডিয়েট, ইবলিশ’ বলার কারণে সাবেক উপমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্যকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে। সরকারি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে এবং সেই আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নির্বাচনী অপরাধের’ দায়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে প্রার্থিতা বাতিল করা হলো। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বদলির হুমকি দেওয়ায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ভবনে পবনের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানির পরদিন ২ জানুয়ারি এই সিদ্ধান্ত জানাল ইসি। গত চার দিন আগে ৩ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নেমেছে মাঠে।

দুই. 
বিএনপি বুঝতে পারেনি সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, অনন্তকাল কেউ কারও জন্য বসে থাকবে না। ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে; ভুল রাজনীতির ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এদেশে সবাই তো আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় বিরোধী দল খুবই জরুরি। কেননা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন একপক্ষীয় ব্যবস্থাপনা হতে পারে না। বহুবিধ কারণে বিএনপির বড় এক অংশ কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে না। তাই এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির জন্য একটি নতুন সুযোগ আসতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বের প্রাজ্ঞতার ওপর। আগামী পাঁচ বছর জাতীয় পার্টি যদি সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে একদিকে যেমন জাতীয় পার্টি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে এবং বিএনপি থেকে যারা নতুন ঠিকানা খুঁজবেন, তাদের জন্যও একটি সহজ আশ্রয়স্থল হতে পারে। কারণ বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য কম। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লোক, যারা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছেন, তাদের মধ্য থেকে যদি ৪০ থেকে ৫০ জন নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন, তাহলে রাজনীতিতে আরেকটি নতুন দিকের সূচনা হতে পারে। তারা সংসদের ভেতরে-বাইরে আবার আওয়ামী লীগে মিশে না গিয়ে সবাই একত্র হয়ে যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারেন, তাহলে সেটি হবে রাজনীতির জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট। তখন নতুন জনমেরূকরণে বর্তমান বিএনপির অবস্থা হবে পাকিস্তানে আইয়ুব খানের কনভেনশন মুসলিম লীগের মতো। এই যে সম্ভাবনার কথা বলছি, এগুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষণের অনুমান মাত্র। বাস্তবে কী ঘটবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধ এবং গত ৫২ বছরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত এতটুকু বলা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। গত ৩ জানুয়ারি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোতো নিনো নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা প্রক্রিয়াটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের আশা, স্বচ্ছ ও সংগঠিত উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী কয়েকটি দলের নির্বাচন বর্জন সম্পর্কে জাতিসংঘের কোনো বক্তব্য আছে কি না—জানতে চাইলে ফ্লোরেন্সিয়া বলেন, ‘না, নেই। এখন যা বলার, তা এতটুকুই, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি।’ গণমাধ্যমে সংবাদ হচ্ছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানছে বিএনপির তৃণমূল নেতারা, আরও ২০ নেতা বহিষ্কার করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে ৮৭ জন নেতা বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের পাঁচ উপদেষ্টা ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫ সদস্যসহ ৩০ জন সাবেক সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিএনপির সর্বমোট ৮৭ জন নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্লেষকদের হিসাবে, অন্তত ৩০টি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবেন বিএনপি নেতারা। কয়েকটিতে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী বহিষ্কার করেছে দলটি। কেউ না মানলেও হরতাল ডাকছেন বিএনপির নেতা রিজভী সাহেব। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা যেমন দলের নেতাকর্মীরা মানছেন না, একইভাবে জনগণও বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারাও বিএনপির চলমান অসহযোগ কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে। এর আগে বিএনপির অবরোধ এবং হরতাল কর্মসূচিও হাস্যরসিকতায় পরিণত হয়েছিল। এবারে সেই রসিকতার পুনরাবৃত্তি করলেন রিজভী নির্বাচনের সময় হরতাল ঘোষণা করে। আরেকটি বিশেষ সংবাদ হচ্ছে, আজকের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ করেছেন বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা। নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয় বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের প্রধানদের ব্রিফ করেছে নির্বাচন কমিশন। ব্রিফিং শেষে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হবে। আমরা আশা করি একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতরাও ব্রিফিংয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে এসেছেন ৬০ জন, আসছেন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৬০ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এসে পৌঁছেছেন। উল্লেখ্য, ১২৭ পর্যবেক্ষক এবং প্রায় ১৭০ সাংবাদিক নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে থাকবেন। এর আগে এ সংখ্যা ২ থেকে ২৫০ ধারণা করা হলেও বাস্তবে সংখ্যাটি ৩০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সংস্থা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা, আরব পার্লামেন্ট এবং আফ্রিকান ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্সের মতো ৫টি জোটের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্ত থাকবে।

তিন. 
বিএনপি নির্বাচনের আগের দিন নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের তিন দিন আগে ৩ জানুয়ারি ভোরে ময়মনসিংহ থেকে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে নেত্রকোনার জারিয়া রেলস্টেশনে যাচ্ছিল একটি লোকাল ট্রেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পূর্বধলা ও জারিয়া রেলস্টেশনের মাঝামাঝি একটি রেলসেতুর ১৪টি স্লিপারের ২৮টি ডগস্পাইক (হুক) খোলা দেখতে পান আনসার সদস্যরা। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পূর্বধলা উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় ঘটনাস্থলের ২০০ গজ আগেই ট্রেনটি থামানো সম্ভব হয়। এতে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান ট্রেনের তিন শতাধিক যাত্রী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান এবং ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতন হয়। দুটি ঘটনায় কমন ফ্যাক্টর ছিল—দুজনই ছিলেন সামরিক শাসক এবং উভয় ক্ষেত্রেই তখন দেশের সব বড় দল একত্র হয়ে আন্দোলন করেছে। সেই দুই আন্দোলনে মূলত নেতৃত্বের আসনে ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী-সমর্থক জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে বিএনপি সরকারের পতন ঘটে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যাতে দেশের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে সরকারি প্রশাসনযন্ত্রও যোগ দিয়েছিল। এখন বিএনপির রাজনীতির যোগফল শূন্য, হাতে শুধুই হতাশা। এখনকার বাস্তবতা একবারেই স্পষ্ট। একে তো বিএনপি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল, ২০০১-০৬ মেয়াদে সংসদে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দেশ শাসন করেছিল তালেবান কায়দায়। বিগত ১৫ বছর সব কিছুতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, বিদেশি শক্তির ওপর বারবার ভর করতে চেয়েছে। সেখানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আর বিদেশি শক্তি নির্ভরতায়ও কাজ হচ্ছে না, কেননা দলে নেতৃত্বের শূন্যতা দৃশ্যমান। তাই গণঅভ্যুত্থান ও সরকার পতনের কোনো সম্ভাবনা নেই; এমতাবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা কী করবেন? বিএনপি তৃণমূল থেকে উৎপত্তি হওয়া দল নয়। বটম-আপ নয়, টপ-ডাউন ফর্মুলায় তৈরি দল। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকেন, নিজেদের থেকে রাজনৈতিক সৃষ্টিশীলতা দেখাতে অক্ষম। সামরিক শাসকের ক্ষমতার টোপে এখানে জড়ো হয়েছে চৈনিকপন্থি অতি বাম এবং একাত্তরে পাকিস্তানের সহযোগী স্বাধীনতাবিরোধী সব দেশের নেতাকর্মী ও সমর্থক, যারা এখনো পাকিস্তানকে কেবলা মনে করেন। আবার আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ওই সময়ের নতুন প্রজন্মের একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যৎহীনতার ভাবনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, এখন যার যার মতো নতুন রাজনৈতিক ঠিকানার সন্ধানে নামবেন—সেটিই স্বাভাবিক। আজকের নির্বাচন কেন্দ্র করে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। বিএনপি নির্বাচন বয়কট এবং সহিংসতার পথ বেছে নেওয়ায় তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এতটুকু অন্তত বলা যায়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি যদি মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি আরেক ধাপ পিছিয়ে গেল। প্রায় প্রতিদিনই ভয়াবহ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখতে হচ্ছে।

রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে লাগা আগুনে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে জামায়াত-বিএনপি আবার আগুন দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনই শিশু। এ ছাড়া দগ্ধ হয়েছেন অনেকে। বিএনপির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে বিএনপির নেতাকর্মীই বিরক্ত। তারাও এর থেকে পরিত্রাণ চাইছে। বিএনপিতে ভাঙনের সুর এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও সারা দেশে সব স্থানে বিএনপির একটি অংশ নামে-বেনামে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। নির্বাচনের পর তারা রাজনীতিতে নতুন পথের সন্ধানে নামবেন। ২০০১-০৬ মেয়াদে জামায়াতকে নিয়ে দেশ পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা, ২০০৮ সালে সর্বোৎকৃষ্ট একটি নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে নগ্নভাবে জামায়াতের লেজুড়বৃত্তিসহ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে একের পর এক হিমালয়সম ভুল সিদ্ধান্তের ফলে শীর্ষ থেকে সব স্তর ও পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা বড় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়ে গেছে। এতদিন শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে হয়তো কর্মী-সমর্থকদের এই মর্মে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, বড় এক শক্তিবলয়ের আশীর্বাদে ২০২৪ সালের মধ্যে বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই আশাটিও শেষ হতে চলেছে। আওয়ামী লীগের যে সুনির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক আছে, তারা যাতে সবাই ভোট দিতে আসেন, এজন্য দল ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা কার্যকরী হলে বিএনপি পতন যাত্রার দিকে চলে যাবে। প্রতিটি আসনে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে ভোটের দিন সকাল থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রার্থী ও দলের নিয়ন্ত্রণকক্ষ বুঝতে পারবে কখন, কোথায় ভোটার উপস্থিতি কেমন হচ্ছে। নৌকা প্রতীকের বিপরীতে আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। নিজেদের মধ্যে সংঘাত নয়, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ও সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের বুঝতে হবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সামগ্রিক রাজনীতির জন্য একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট, যার মাধ্যমে বোঝা যাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতি আগের মতোই থাকবে, নাকি বড় পরিবর্তন ঘটবে।

 

সুভাষ সিংহ রায় : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এই বিভাগের আরো সংবাদ