আজকের শিরোনাম :

বিএনপি এখন করবে কী

  সুভাষ সিংহ রায়

১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

সুভাষ সিংহ রায়
দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে বড় প্রশ্ন—বিএনপি এখন করবে কী? এ দলটি বিগত ১৫ বছরে কী কাণ্ডই না করেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর বিএনপি-জামায়াত অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়; সেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসনে জয়লাভ করে। বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসনামল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর রাজনৈতিক অধ্যায়। সে সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভীষণ রকমের বিক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা এরকম বিশাল বিজয়ের পরও কোনো বিজয় মিছিল করতে দেননি। কোনোরকম বিজয় মিছিল না করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল।

পাঠকদের মনে থাকার কথা, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির বিডিআর ট্র্যাজেডির রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কথা। একটি সরকার দু-মাসও কার্যক্রম চালাতে পারেনি, সে সময়ই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। কারা ছিল সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে; কারা ৭৩ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল? ৫৬ জন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার এবং ১৭ জন সাধারণ নাগরিক সেদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রশ্ন থেকে যায়, কারা ছিল সেই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিলেন কেন? ইতিহাসের এসব ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনার বিশ্লেষণ খুবই জরুরি। কেননা বঙ্গবন্ধুর হত্যা-পরবর্তী রাজনীতি হচ্ছে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও দেশ-বিরোধিতা।

আওয়ামী লীগকে নানা কারণে সমর্থন করেন না এমন লোকের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিএনপির ঘোর সমর্থক ছাড়া আপামর মানুষ স্বীকার করেন, শেখ হাসিনার সময়ে দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের উন্নতিতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বেশ স্বস্তিতে আছেন। দেশের অতিদারিদ্র্যের সংখ্যা ৫.৬ শতাংশ, যা একসময় কল্পনার বাইরে ছিল। চলতি অর্থবছরে (জুলাই-নভেম্বর) পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক খাতে ১ হাজার ৮৮৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ৮৩৩ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছিল ২ হাজার ১৯৪ কোটি ৬০ লাখ ৭০ হাজার ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার ডলার বা ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। যদিও এটি আমাদের প্রত্যাশা বা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। আমাদের আশা ছিল, আরও বেশি রপ্তানি হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মন্দাভাব থাকায় রপ্তানি আয় আশানুরূপ হয়নি। তবে আশার দিক হলো, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো। অক্টোবরে রপ্তানি আয় ছিল ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলার, নভেম্বরে রপ্তানি আয় ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে ২৭ শতাংশ বেড়েছে। বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে প্রত্যাশিত আয় লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হবে। সবমিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক উন্নত দেশের চেয়েও ভালো। বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাদেশ জলবায়ু ও উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম’ (বিসিডিপি) নামে এ তহবিলের আকার প্রায় ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৮ বিলিয়ন ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের যে অপরিসীম ক্ষতি হচ্ছে, এটি স্বীকার করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশকে এ খাতে ক্ষতি কমাতে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তার লক্ষ্যে বিসিডিপি তহবিল গঠন করে।

দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলনের এক অনুষ্ঠানে এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আইএমএফ জানিয়েছে, এডিবি, আইএফসি, এআইআইবি, ফ্রান্সের উন্নয়ন সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউরোপিয়ান বিনিয়োগ ব্যাংক, দক্ষিণ কোরিয়ার গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, জাপানি সংস্থা জাইকা ও যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেবে এডিবি। যদিও বিএনপি কোনোকালে জনগণের দল ছিল কী না—সে প্রশ্ন আমার থেকেই যায়। কালের যাত্রায় বিএনপির যেসব ভুল সংশোধনের অযোগ্য ও সবার কাছে বর্জিত, তার কয়েকটি উদাহরণ আলোকপাত করা যাক :

১. রাজনীতিতে বিএনপির সবচেয়ে বড় ভুল বলে অবিহিত করা হয় ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা। বিএনপি নিজেদের একটি রাজনৈতিক দল বলে দাবি করে। কিন্তু সরকার ব্যবস্থাপনায় বা গণতন্ত্র চর্চায় বিএনপি পুরোদস্তুর এক অরাজনৈতিক দল বলে নিজেদের বারবার প্রমাণ করে যাচ্ছে। ভোট বা জনগণের সম্মতি যাচাই গণতন্ত্র ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য ধারা। বাংলাদেশ সংবিধান ও নির্বাচন কার্যবিধি অনুযায়ী নির্বাচন এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে এবং পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনা করবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যে জ্বালাও, পোড়াও, আগুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিএনপি করেছে, সেটি কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ বা সংবিধানের ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ চর্চার অধিকার হতে পারে না। মনে রাখা দরকার, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান বিএনপি কারও সঙ্গে সংলাপ না করে শুধু জানমালের হুমকিস্বরূপ একদফা আন্দোলন করে সরকার গঠন করতে চায়, যা অবাস্তব বা অলৌকিক চিন্তাভাবনা। প্রচলিত প্রবাদ আছে, ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নাই’। কিন্তু বিএনপি যদি ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে না আসে, তাহলে নিজেদের শেষটা হয়তো নিজেদের হাতেই লেখা হবে।

২. কয়েকটি তথ্য ঘুরেফিরে এখন আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এক বিস্ময়ের নাম। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালে ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে, যার বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। ‘ভিশন ২০৪১’ ও ‘ডেলটা প্ল্যান-২১০০’ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া এশিয়ার ২২তম দেশ হিসেবে মেট্রোরেল ও নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু (৬.১৫ কিলোমিটার) উদ্বোধন, দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম সাবমেরিন কেবলের দেশ, ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট স্থাপন, দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম (৩.৩২ কিলোমিটার) কর্ণফুলী টানেল, ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেশ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে শুরু করে অসংখ্য ফ্লাইওভার প্রমাণ করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ শাসনামলে উন্নয়নের চিত্র কতটা অর্থপূর্ণ। দৃশ্যমান এসব উন্নয়ন অস্বীকার করে বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা যে ধরনের হাস্যরসাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো জনমানুষের মনে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। বরং বিএনপি এসব উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়ে রাজনৈতিক সহনশীলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারত। অবশ্য যে দল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২২ বার হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের কাছ থেকে মানুষ এখন সহনশীল রাজনৈতিক চর্চা আশাও করে না। মানুষ এখন বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর আস্থা রাখতে শিখেছে।

৩. জন্মলগ্ন থেকে বিএনপি যে একটি স্বৈরাচারী দল, তার প্রমাণ আবারও দিল এই একদফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার নামে যে আগুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিএনপি করে যাচ্ছে, সেটি এখন মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ অশান্তি নয় শান্তি চায়, সংঘাত নয় সংলাপ চায়, বৈদেশিক শক্তিতে নির্ভরশীলতা নয় আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, যেখানে বরাবরই বিএনপি জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তিনি কখনো নিজ স্বার্থ বা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য আন্দোলন করেননি। দেশ, দশ ও জনমানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। টানা ২৪ বছরের যে সংগ্রাম এক মহাকাব্যে রূপ নিয়েছিল, সেই কাব্যের মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তো বলা হয়ে থাকে, ‘মহাবিজয়ের মহানায়কের নাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৩৯ সালে স্কুলজীবনে সেই দুই দফা থেকে শুরু করে ’৬৬-র ছয় দফা ও ৭ মার্চের চার দফায় বঙ্গবন্ধু কখনোই বিএনপির মতো একদফার নামে ক্ষমতা গ্রহণ করতে চাননি। বঙ্গবন্ধু সবসময় সাধারণ মানুষের মুক্তি ও তাদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজকের বিএনপি মহানায়কের এই জীবনদর্শন ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, সাধারণ মানুষের কাছে একটি অগ্রহণযোগ্য দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একদফার নামে ক্ষমতা লাভের যে কুবুদ্ধির ছক বিএনপি এঁকেছিল সেখানেও এখন ব্যর্থ হয়েছে। তৃণমূলের জনগণ বিএনপির এই দফায় দফায় সমাবেশ আর হরতালকে জমিজমার মামলার সঙ্গে তুলনা করছে। তারা বলছে, বিএনপির ডাকা এসব সমাবেশ জমিজমার মামলার মতো পরবর্তী সমাবেশের তারিখ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। স্পষ্টত, এসব সমাবেশেও জনসম্পৃক্ততা হারিয়েছে বিএনপি।

৪. ’৪৭-র দেশভাগের পর থেকে বঙ্গবন্ধু সবসময় এই ভূখণ্ডকে অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। সদ্যস্বাধীন দেশে তিনি একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের সেই কালরাতের পর আমরা রাতারাতি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকে এগোতে দেখলাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে পিছপা হাঁটতে দেখলাম। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করলে, এ দেশের সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক মহল সাদরে গ্রহণ করে। যার একটি বড় অংশ হলো আজকের তরুণ প্রজন্ম। যারা মুক্তিযুদ্ধ সরাসরি না দেখলেও মনেপ্রাণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করে। সেই প্রজন্মই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের এখন বড় হাতিয়ার। আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ১২ কোটি ভোটারের প্রায় ২০ শতাংশ নতুন ভোটার। এই তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি। অথচ তার বিপরীতে বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়েছে। এ দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পক্ষের সঙ্গে জোট করেছে। পাকিস্তান সময়ে ফিরে যেতে চেয়েছে। এখনো ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ নামে স্লোগান দিয়ে স্বাধীনতাকে অপমানিত করছে। এসব কারণে বিএনপি তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

৫. বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব.) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি রাজনীতিতে ‘অনেক ভুল’ করেছে। তিনি আরও বলেন, দলের প্রধানের মতের বাইরে এখানে ‘কিছু বলা যায় না’। ‘ইয়েস স্যার, রাইট স্যার ছাড়া আর কোনো কিছুই জানেন না’। তথাকথিত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে নেতাকর্মীরা খোলামনে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারেন না। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় তারেক জিয়া বিএনপির সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন এবং শুধু দেশে নন, বিদেশেও তারেক জিয়াকে জঙ্গিবাদের মদদদাতা ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলে তারেক জিয়ার মতো একজন দুর্নীতিবাজ ও শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদের মদদদাতা যখন একটি দলের শীর্ষ পদ দখল করেন তখন সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, এটি হলো বিএনপির রাজনীতির আরও একটি বড় ভুল। এরকম স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করা একটি রাজনৈতিক দল জনগণের থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে থাকবে, সেটিই তো স্বাভাবিক। একটি দল রাজনৈতিকভাবে কত দেউলিয়া হলে ভাড়া করা লোক দিয়ে ককটেল ফাটানো ও গাড়িতে, হাসপাতালে অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে। মাঠের রাজনীতি, জনগণের রাজনীতি বাদ দিয়ে শুধু স্কাইপি আর জুম অ্যাপে হোম অফিস করে, রাজনীতিতে যে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ যায় না, সেটি তারেক রহমানকে দেখলে বোঝা যায়। প্রচলিত আছে—রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপির যখন ভরাডুবি হচ্ছে তখন তারেক রহমান লন্ডন বসে হরতালের নামে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার হুমকি ও মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছে। যার ফলশ্রুতিতে দলীয় কোন্দল এখন জনসম্মুখে। (চলবে)

সুভাষ সিংহ রায় : রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সাবেক সহ-সভাপতি- বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, প্রধান সম্পাদক- সাপ্তাহিক বাংলা বিচিত্রা ও এবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম।

এই বিভাগের আরো সংবাদ