আজকের শিরোনাম :

মুন্সীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বরযাত্রী নিহত, তদন্ত কমিটি গঠন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৫৭

মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় একই পরিবারের সাত জনসহ ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।  

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে মহাসড়কের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর কালি মন্দির সংলগ্ন বাস স্ট্যান্ডের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
 
এতে মাইক্রোবাসের যাত্রী বর রুবেলের বাবা আব্দুর রশিদ বেপারী (৭০), বোন লিজা (২৪) ভাগনী তাবাসসুম (৬) ও অপর ভাগনী রেনু (১২), খালাত ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩০),  ভাতিজা তাহসান (৫) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাবি রুনাসহ (২৫) একই পরিবারের সাত জনের মৃত্যু হয়।

অন্য তিনজন হলেন- মাইক্রোবাস চালক বিল্লাল (২৮) ও প্রতিবেশি কেরামত বেপারী (৭১), মফিজুল মোল্লা (৬০)।

সূত্র জানায়, মাইক্রোবাসে মোট ১১ জন যাত্রী ছিলেন। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন ও শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে দুজন ও ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজনের মুত্যৃ হয়। এছাড়া বর রুবেলের খালু আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাইক্রোবাসটি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মাইক্রোটির ভেতরে রক্তের ছোপ লেগে আছে। স্বাধীন পরিবহনের গাড়িটিও ভেঙে পড়ে আছে।
 
এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীন পরিবহনের বাসটি খুব দ্রুত গতিতে শিমুলিয়ার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি সজোরে মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বিকট শব্দে মাইক্রোটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, স্বাধীন ও ইলিশ পরিবহনের বাস দুটি বেপরোয়াভাবে মহাসড়কে চলাচল করে। তাছাড়া সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গতিরোধক নেই। এতে করে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রশাসন শক্ত অবস্থানে না গেলে এমন বড় দুর্ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে।

সন্ধ্যায় শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বারান্দায় আটটি লাশ পড়ে আছে। পাশে স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য চোখে পড়ে।

বরের বোন জামাই মো. আব্দুর রব বলেন, আজকে তার শ্যালক মো. রুবেল হোসেনের কাবিন ছিল। রুবেলের বাড়ি লৌহজংয়ের কনকসার এলাকায়। ঢাকার কামরাঙ্গিরচর রুবেলের বিয়ে ঠিক হয়। দুপুরে রুবেলের বাবা, বোন, ভাগনি, ভাবি, ভাতিজা ও প্রতিবেশিসহ ১১ জন বিয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আমাকেও লালবাগ থেকে নিয়ে যাওযার কথা ছিল। আমি অপেক্ষায় ছিলাম। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, আড়াইটার দিকে শুনতে পাই সব শেষ হয়ে গেছে।

আমাদের পরিবারের সাতজন মারা গেছে। রুবেলের খালুর অবস্থাও ভালো না।

এদিকে এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা শাহিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (হাইওয়ে), স্থানীয় চেয়ারম্যান, শ্রীনগর সার্কেল এসপি।

মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পর পুলিশ সেখানে যায়। আহত ব্যক্তিদের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় বাসের চালক ও তার সহকারী  পলাতক রয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ  জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, নিহতদের আটজনকে দাফন করার জন্য জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ