আজকের শিরোনাম :

তিস্তা নদীতে বোমা মেশিন, রাতেই ১১ বাড়ি তিস্তায় বিলীন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:৫১

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র ঠিকাদারের বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করায় রাতের মধ্যেই তিস্তা নদীতে বিলীন হয়েছে ১১ টি বাড়ি। বুধবার দিনগত রাতের মধ্যে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড় সিংগিমারী গ্রামে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে ১১টি পরিবার।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে তিস্তা বাম তীরের আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় এলাকায় বালু মাটি দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। কোনোরকম রক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই শুধু বালুমাটি দিয়ে তৈরি ছিল এ বাঁধ। এ বাঁধটির স্থায়িত্ব নিয়ে শুরু থেকে স্থানীয়দের সন্দেহ ছিল। অবশেষে গত বছর বাঁধটির অর্ধেকের বেশি অংশ তিস্তা স্রোতে বিলীন হয়ে যায়। বাকী অংশটুকু রক্ষায় চলতি বছর অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষা ও আপদকালীন বরাদ্ধ থেকে জিও ব্যাগের একটি প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব জিও ব্যাগ ভরাট করতে ওই বাঁধের প্রায় একশত গজ ভাটিতে বোমা মেশিন বসিয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে বালু উত্তোলন করে ঠিকাদার। খরস্রোতা তিস্তা নদী থেকে বোমা মেশিন সরাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে স্থানীয়রা দাবি করেন।

গত বুধবার ঠিকাদারের বসানো বোমা মেশিনের একটু ভাটিতে থাকা সিংগিমারী গ্রামে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিলে দ্রুত বোমা মেশিন সরিয়ে নেন ঠিকাদার। কিন্তু রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ওই সিংগিমারী গ্রামের ১১টি বাড়ি তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়ি সরিয়ে নেন ওই সিংগিমারী গ্রামের জয়নাল, আজিজুল হক, ফরমান আলী, পল্বাব, লাবু, মন্টু মিয়া, হারুন, রবিউল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, ফজলু মিয়া। তারা সবাই রাতেই বাড়ি ঘর সরিয়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

তিস্তায় ভাঙনে বসতবাড়ি বিলীন হলে স্থানীয় কুটিরপাড় সমাজ কল্যাণ সমিতির অফিস ঘরে আশ্রয় নেন তিনটি পরিবার। বাড়ি করার মত শুকনা কোনো জায়গা না থাকায় অধিকাংশ মানুষ রাস্তার পাশে পলিথিনের তাবু সাঁটিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সমিতির অফিস ঘরে আশ্রয় নেওয়া রোকসানা বেগম ও ফরমান আলী জানান, রাতের আঁধারে হঠাৎ তিস্তা নদীর সিংগিমারী গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। ঘুমন্ত সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন সমিতির অফিস ঘরে। নৌকায় করে রাতেই ঘর বাড়ি ভেঙে নিয়ে এসে রাস্তার পাশে রাখেন তারা। শুকনা জায়গা না থাকায় ঘর তুলতে পারেনি। শুধু তারাই নন, রাতেই ওই গ্রামের ১১টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে বলেও জানান তারা।

দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের মনছুর আলী, আব্দুর মতিন জানান, শুরুতেই অনেকের ধারণা ছিল তিস্তার ¯্রােতে এ বাঁধ রক্ষা পাবে না। তবুও নির্মাণ হয়। এ ভাবে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের নামে সরকারি অর্থ প্রতি বছর লুটপাট হচ্ছে। সা¤প্রতি সময় বাঁধটি রক্ষায় জিও ব্যাগে বালু ভরাটের নামে বোমা মেশিনে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় সিংগিমারী অংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে আতংকিত হয়ে পড়েছেন তারা। ছোট ছোট এসব বাঁধ নির্মাণ বা মেরামতে অর্থ খরচ না করে তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি জানান তারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজমুল হক জানান, গত রাত থেকে দিনভর সিংগিমারী গ্রামের প্রায় ১১টি বসত বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। শুকনা জায়গা না থাকায় ঘর তুলতে পারছেন না এসব পরিবার। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তথ্য পাঠানো হয়েছে।

এ কাজে দায়িত্ব থাকা লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী জানান, কুটিরপাড় বালুর বাঁধ রক্ষায় দুইশ মিটার এলাকার জন্য ৬ হাজার জিও ব্যাগ বালু ভরাট করে প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুতই নদীতে ফেলা শুরু হবে। এ ছাড়াও আরো প্রায় ৪/৫ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে ঠিকাদার নদী থেকে বালু উত্তোলন করে। এ ঘটনা দেখার পর বুধবার দিনগত রাতে মেশিন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এটিএম বজলে করিম বলেন, বন্যার কারণে বালু না পাওয়ায় ঠিকাদারকে বাঁধ থেকে দূরে নির্জন এলাকায় নদীর বালু উত্তোলন করতে বলা হয়েছিল। নদীতে ¯্রােত থাকায় বোমা মেশিনে কোনো ক্ষতি হয় না। লোকালয়ে বোমা মেশিন বসানো ঠিক নয়। স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে অবগত করে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। তবে ১১টি বাড়ি বিলীনের বিষয়টি তার জানা নেই।
 

এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/তোহা

এই বিভাগের আরো সংবাদ