আজকের শিরোনাম :

ডোমারে জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত সুমন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০১৯, ১৮:১৪

জেলার ডোমারে চলতি এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে অদম্য মেধাবী সুমন চন্দ্র রায়(১৬)। জিপিএ-৫ পেয়েও মুখে হাসি নেই তার। পরীক্ষার ফলাফলে যখন সকলেই মিষ্টি নিয়ে বিতরন করছে তখন ভালো ফলাফল করেও মুখে হাসি নেই সুমনের পরিবারের।

চলতি এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার মটুকপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে ৯১৭ মার্কস পেয়ে জিপিএ-৫ লাভ করেছে সুমন চন্দ্র রায়। উপজেলার তিনজন পরীক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সুমন তাদের মধ্যে অন্যতম। সুমন উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের পুর্ব বোড়াগাড়ী ঘাটপাড়া গ্রামের কার্তিক বর্মনের ছেলে। তার মা সন্ধারানী মানুষের ক্ষেতে কাজ করে আর তার বাবা বোড়াগাড়ী বাজারে একটি সার কিটনাশকের দোকানে কাজ করে সংসার চালায়। দুইভাই এক বোনের মধ্যে সুমন ২য়।

দরিদ্র এই পরিবারে তার বাবা দোকানে ও তার মা ক্ষেতে কাজ কওে সংসার পরিচালনা করলেও তা দিয়ে সুমনকে লোখাপড়া করানো সম্ভব নয়। সুমন লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে তার বাবাকে সহযোগীতা করেন কাজে। তার বড়ভাই ডোমার সরকারী কলেজে অর্থনীতি ২য় বর্ষে ছাত্র আর বোন তার স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সুমন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছিলো।

ভবিষ্যতে লেখাপাড়া করে ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে বাবা-মা আর শিক্ষকদেও মুখ উজ্জ্বল করতে চাইলেও বর্তমানে তার লেখাপড়া বন্ধ হবার উপক্রম। জিপিএ-৫ পেয়েও তার পরিবার আর তাকে লেখাপড়া করাতে পারছেনা। ফলে মাঝ পথেই থেমে যাচ্ছে তার ভবিষ্যত। হয়তো লেখাপড়া বাদ দিয়ে বাবার সাথে অন্যের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবে সে। হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে না পেরে শিক্ষাজীবন এখানেই তার শেষ হয়ে যাবে।

সুমনের বাবা কার্তিক বর্মন জানান, ছেলে জিপিএ-৫ পেয়ে তার মুখ উজ্জ্বল করলেও তার পক্ষে আর তাকে লেখাপড়া করানো সম্ভব না। তিনি বলেন,আমি মানুষের দোকানে কাজ করে কোনো মতে সংসার চালাই। স্কুলে তার শিক্ষকরা সহযোগীতা করেছিল বলে তাকে লোখাপড়া করানো সম্ভব হয়েছিলো। পরীক্ষার ফরম ফিলামও স্কুল বিনা পয়সায় করে দিয়েছিলো। তাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।বর্তমানে আমার পক্ষে আর তাকে কোনো ভাবেই লেখাপড়া করানো সম্ভব হচ্ছেনা বলেই তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি কান্ন জরিত কন্ঠে বলেন আমারো খুব ইচ্ছে ছিল আমার ছেলে বড় হয়ে বড় চাকুরী করে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। তবে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ছিল তার অপরাধ।

মটুকপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক বদরুজ্জামান মেডেল বলেন,লেখাপড়ায় সুমন খুবেই মেধাবী। ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে তাকে দেখছি। মেধার কোন কমতি না থাকলেও দারিদ্রের কারনে হয়তো আর তাকে পড়াতে পারছেনা তার পরিবার।

সুমন বলেন, স্কুলের শিক্ষক আখতারুজ্জামান লিটন স্যারের নিকট আমি পড়তাম। তিনি বিনে পয়সায় আমাকে পড়াতেন। আবার এতদুর আসার পিছনে তার অবদান অপরীসিম।
শিক্ষক রায়হানুল করিম বাবু জানান, স্কুলে শান্ত স্বভাবের সুমন লেখাপড়ায় অদম্য।তার ইচ্ছে ছিল সে বিজ্ঞান বিভাগে পরবে কিন্তু দারিদ্রতার কারনে তার সেই ইচ্ছে পুরন হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিলে সে আরো ভালো ফলাফল করতো বলেও তিনি জানান।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইসমত আরা জানান, স্কুলে তাকে কোনো বে দিতে হতো না। ফরম ফিলামও স্কুল থেকে করানো হয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিত্তবান ব্যাক্তি তার লেখাপড়ায় এগিয়ে আসেন তবে হয়তো তার লেখাপড়া চালানো সম্ভব। যদি কোনো ব্যাক্তি তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয় হয়তো তখনেই সম্ভব তার ভবিষ্যতে ম্যাজিষ্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন পুরনের। যদি কোনে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে লেখাপড়ায় সহযোগীতা করতে চান তবে তার বাবার নম্বরে ০১৭৫১৩৭৮৬১৬ বা তার শিক্ষক রায়হানুল করিমের নম্বরে ০১৭১০২১৩৯৩৮ যোগাযোগ করতে পারেন।

এবিএন/আব্দুল্লাহ আল মামুন/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ