আজকের শিরোনাম :

নড়াইলে ১০ বছর পর মধুমতি নদীর ভাঙনরোধে কাজ হওয়ায় খুশিতে এলাকাবাসী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৪:৫৬

দীর্ঘ ১০ বছর পর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের ঘাঘা এলাকায় মধুমতি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কাজ হওযায় খুশি এলাকাবাসী। 

৪১০ মিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ কাজ করায় মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্লুইচগেটসহ অন্তত ১০০ বাড়িঘর ও ৫০০ শতাধিক গাছপালা। এ দিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার দাবি ভূক্তভোগীদের।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে লোহাগড়ার ভাঙন কবলিত ঘাঘা গ্রামে ৪১০ মিটার এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ চলছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতিরক্ষা কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে জিও ব্যাগ ও ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। আরো জিও ব্যাগ ও ব্লক দেয়া হবে। আগামি বছর (২০২০) মে মাসে এ কাজ শেষ হবে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে কুমিল্লার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মশিউর রহমান চৌধুরী’। 

এ ব্যাপারে ঘাঘা গ্রামের নূরুল হক শেখ (৫৮) বলেন, ১০ বছর ধরে নদী ভাঙনের কারণে পাঁকা রাস্তা, শত শত বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। গত বছরও বর্ষা মৌসুমে এ এলাকা ভেঙ্গেছে। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে ভাড়া বাসায় আছেন। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করায় আমরা আনন্দিত। কাজটি যথাসময়ে শেষ হলে গ্রামবাসী উপকৃত হবে। 

আলেয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনে এ এলাকার অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। বর্তমানে যারা গ্রামে বসবাস করছেন, তারা অপেক্ষায় আছেন কবে প্রতিরক্ষা কাজ শেষ হবে। কামরুল বিশ্বাস (৫০) বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে। ভাঙনের কবলিত স্থানে বর্তমানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হবে, এলাকার মানুষের উপকার হবে। ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বাড়িঘর ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। 

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ১০ বছর ধরে ভাঙনের কারণে এ এলাকার লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন বস্তা (জিও ব্যাগ) ও ব্লকের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। কাজটি দ্রুত শেষ করলে নদী ভাঙনের কবল থেকে আমরা রক্ষা পাবো। মোহাম্মদ সোহেল বলেন, এর আগে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে কাজ চলমান থাকায় আমরা খুশি। সঠিক ভাবে কাজটি শেষ হলে এলাকার হাজারো মানুষের বাড়িঘর, ফসলি জমি ও গাছপালা রক্ষা পাবে। 

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ঘাঘা গ্রামের সাবানা খানম বলেন, দীর্র্ঘদিন ধরে মধুমতি নদী ভাঙনের কারণে আমরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। পড়ালেখা ব্যাহত হয়েছে। এখন কাজ শুরু হওয়ায় আমাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। শেখ শাহিদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তার বসতভিটার ৭০ ভাগ মধুমতি নদীগর্ভে চলে গেছে। 

এ ছাড়া দীর্ঘদিন নদী ভাঙনের কারণে ঘাঘা গ্রামের শত শত মানুষ বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। অনেক প্রচেষ্টার ফলে পাউবো প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করেছে। বর্ষা মওসুমের আগে কাজ শেষ করা সম্ভব হলে ভালো হতো।   

ঠিকাদার তারিক হাসান বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২০০ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। আশা করছি মে মাসের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা শেষ হবে। এ ছাড়া দ্রুত ব্লকও ডাম্পিং করা হবে। পাউবো নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্রিয় সহযোগিতা মধ্য দিয়ে কাজটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। যথাসময়ে কাজটি শেষ করতে পারব বলে আশাবাদী। এতে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।  

ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলেন, ভাঙনের মুখে জিও ব্যাগ ফেলায় প্রাইমারি স্কুলটি আপাতত রক্ষা পেয়েছে। স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হলে স্কুলটি পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হবে বলে আশা করছেন তারা।          

কোটাকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মারিয়া হোসেন বলেন, ঘাঘা এলাকায় মধুমতি নদীতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধের ফলে ঘাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্লুইচগেটসহ অন্তত ১০০ বাড়িঘর, ৫০০ শতাধিক গাছপালা ও জমি রক্ষা পাবে।  
পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘খুলনার ভূতিয়ার বিল ও বর্ণাল-সলিমপুর-কোলাবাসুখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও পুনর্বাসন’ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাঘা এলাকার মধুমতি নদীর ডান পাড়ের ৪১০ মিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ কাজ চলমান রয়েছে। 

প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এ এলাকার নদী ভাঙন রোধ হবে এবং স্থানীয় জনগণসহ কোটাকোল ইউনিয়নবাসী এ কাজের সুফল পাবেন। 

এবিএন/সৈয়দ খায়রুল আলম/গালিব/জসিম
 

এই বিভাগের আরো সংবাদ