আজকের শিরোনাম :

চিতলমারীতে জমির সেচ সংকটে কৃষকরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:২৩

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খর¯্রােতা চিত্রা নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। 

নদীর দুপাড়ে বসবাসকারী প্রভাবশালীদের দখলদারিত্ব ও বাজারে বসবাসকারী কিছু দুষ্ট লোকের ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে উপজেলার প্রায় অর্ধশত নদী ও খাল বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে মরতে বসেছে। 

এ পরিস্থিতিতে নৌ যোগাযোগ ও মানুষের ব্যবহার্য পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ২১টি ব্লকের প্রায় ৩০ হাজার একর জমির সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বেন কৃষক। 

সোমবার বিকালে এমনটাই জানিয়েছেন কুরমনি গ্রামের ধান চাষিরা। সেই সাথে তারা এসব নদী ও খাল পুনঃখননসহ দখলমুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২ যুগ ধরে এ অঞ্চলের নদী ও খাল খনন না করার ফলে অধিকাংশ নদী-খাল ভরাট হয়ে গেছে। ফলে চিতলমারী সদর বাজারের হকক্যানেল ও চিত্রা নদীসহ বেশকিছু খালের দুপাশে বসবাসকারী প্রভাবশালীরা যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে পাড় দখল করে নিয়েছেন। 

এ ছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে নদীটি। ফলে চিত্রা নদীটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। চিতলমারী সদর বাজারের পাশের একমাত্র এ নদীটিতে এখন কব্জি পানিও নেই। পঁচা পানির দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে দুপাড়ে পাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবন। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সদর বাজারসহ আশপাশ এলাকায় বসবাসকারীদের। 

এ ছাড়া উপজেলার বড়বাড়িয়া, কলাতলা, হিজলা, শিবপুর, চিতলমারী সদর, চরবানিয়ারী ও সন্তোষপুরসহ ৭টি ইউনিয়নে প্রধান ৩টি নদী ও ৫০টি খাল এবং শতাধিক শাখা খাল রয়েছে। যার অধিকাংশ এখন নাব্যতা সংকটে। অনেক নদী ও খাল এখন কালের সাক্ষী। 
এরমধ্যে হক ক্যানেল, পাটনিবাড়ি, পেতœীমারী, নারাণখালী, বাঁশতলী, খাগড়াবুনিয়া, শরৎখালীসহ প্রায় ৫০টি খালের একই অবস্থা। এসব নদী ও খালে নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এর অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ঠিকমত জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামা না করায় সেচ মৌসুমে চাষীরা ফসলে ঠিকমত পানি দিতে পারে না। সদর বাজারের অন্যপাশ থেকে বয়ে যাওয়া হক ক্যানেলের বেশ কিছু স্থানে প্রভাবশালী লোকজন দখল করে নিয়েছে। 

এসব স্থানে যে যার মত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ ভরাট করে ফেলছে। ফলে নৌ যোগাযোগ একেবারে অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উপজেলার কুরালতলা, শিবপুর, কালশিরা, বারাশিয়া, আড়য়াবর্ণীসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার চাষীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি চিতলমারী সদর বাজারে আসা-যাওয়ার জন্য কৃষিপণ্যসহ মালামাল আনা-নেয়ার জন্য নৌকায় করে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় খালটি দখলদার মুক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মহল। 

সদর ইউনিয়নের রেজাউল দাড়িয়া, আব্দুল মমিন শেখ, বুদ্ধ বসু, গৌর বাইনসহ অনেকে জানান, দখলবাজদের কারণে খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন জোয়ার-ভাটার পানি ঠিকমত উঠতে না পারায় চলতিবেরো ধানের চাষাবাদ নিয়ে তারা চরম চিন্তিত। 

শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোহাসীন রেজা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শেখ রুস্তম আলী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক চন্দ্র শেখর মিস্ত্রিসহ অনেকে জানান, এভাবে খাল দখল হতে থাকলে আগামি কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নদী ও খালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না এবং চাষাবাদের পানি মিলবে না। একই সাথে এ সকল খাল পুনঃ খননের জন্যও তারা জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, যেহেতু এটা শুকনো মৌসুম এ সময়টায় কেবলমাত্র সেচ পানির ওপর চাষীদের নির্ভর করতে হয় তাই নদী ও খালে  পানির সমস্যা হলে সেচ কাজ ব্যাহত চরম হবে। 

এবিএন/এস এস সাগর/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ