আজকের শিরোনাম :

চলছে নিরব চাঁদাবাজী

১২ মাসে ১৩ সমস্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ২২:২৮

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত জেলার গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটঃ আর এঘাটে চলাচলকারী যানবাহ চালক ও যাত্রীদের বছরের ৩৬৫দিনই পরতে হয় চরম দুর্ভোগে। সমস্যার যেন শেষ নেই এ ঘাটে। ১২ মাসে ১৩ সমস্যা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে: আর এ সুযোগে দালাল চক্র হাতিয়ে নেয় প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টাকা আর এই টাকা ভাগ হয়ে যায় বিভিন্ন জনে..?

বছর জুড়েই লেগে থাকে কোন না কোন সমস্যা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে যানজটে আটকা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।  বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন, পানি বৃদ্ধি তীব্র ¯্রােত, শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা সংকট, শীতের মধ্যে থাকে ঘনকুয়াশা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, কখনো অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। এ সকল সমস্য না থাকলেও তখন থাকে ফেরি সল্পতা। কিছু না কিছু সমস্য থাকতেই হবে তা না হলে হবে কিভাবে বানিজ্য ক্ষমতাশীন দলের নেতার। তাইতো এই ঘাটে বছড়র জুড়েই লেগে থাকে কোন না কোন সমস্যা। তা ছাড়া ফেরির দুর্বল ইঞ্জিন, ভাঙা পন্টুন, ঘাট নড়াচড়া, ড্রেজিং সংকট। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ এঘাটে কৃত্রিম সংকটও তৈরী করা হয়।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করা যানবাহনের যাত্রীদের বছরজুড়েই নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রতিদিন এ রুট থেকে সরকার প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব পেলেও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে স্থায়ীভাবে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বললেই চলে। তা ছাড়া দুর্ভোগে পড়া ট্রাক,বাস চালক ও যাত্রীদের নিয়ে স্থানীয় ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে আতত করে দালাল চক্র নানা রকম ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে ইচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা।

যদিও দালালা অনকেই বেতন ভুক্ত বা কমিশনে কাজ করেন .. কিন্তু প্রশ্ন হলো কারা এমন কমিশন বা বেতন দিয়ে লালন পালন করে যাচ্ছে দালালদের..? চুশে নিচ্ছে সাধারণ যাত্রী ও ট্রাক চালকদের.. যদিও পুলিশ মাঝে মধ্যেই আটক করছে দালাল চক্রের সদস্যদের কিন্তু ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে দালাল তৈরীকারী গটফাদার....কিন্তু কেন..এমন প্রশ্ন তো আসতেই পারে।’

যার কারনে বছরের বেসির ভাগ দিন গুলোতেই দেখা যায় দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সাড়ি লেগেই থাকে যাকে যানজট না বলে নাম দেওয়া হয় সিরিয়াল। আর এই সিরিয়াল যত বারবে ততই বারবে আগের যাওয়ার জন্য টাকার পরিমান। সাড়ি বা যানজট যাই বলি না কেন এই জটকে পুজি করে শুরু হয় দালাল চক্রের রমরমা বানিজ্য। এত দিন আমরা জেনে এসেছি শুধু ট্রাক চালকদের কাছ থেকেই ফেরির টিকিট এর মাধ্যমে নেওয়া হয় অতিরিক্ত ভাড়ার নামে চাঁদা। শুধু তাই নয় অভিযোগ রয়েছে যাত্রীবাহী বাস গুলোকেও আগে সিরিয়াল নিতেও ১৫০০/২০০০হাজার টাকা দিতে হয় দালালদের এ চক্রের সাথে ঘাটে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা জড়িত বলে অভিযোগ করেছে একাধীক সুত্র। আর এই টাকা গুনতে হয় বাসে থাকা যাত্রীদের জন প্রতি ৪০/৫০টাকা।

অনুসন্ধান কালে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ইউনিয়ন পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারজুড়ে প্রায় ৫ শতাধিক বাস-ট্রাক ও ছোট যানবাহন আটকা পড়েছে। এ যানবাহনের লাইন প্রতিদিনই সময় বাড়ার সাথে সাথে বড় হতে থাকে যানবাহনের লাইন।

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের সড়ক পথে যোগাযোগের অন্যতম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া এ দুই ঘাটে প্রতিদিন ছোট-বড় ৪-৫ হাজার ছোট বড় যানবাহন নদী পারাপার হয়ে থাকে। এতে প্রতিদিন সরকারের প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ নৌরুটে বছরের পর বছর যাত্রী সাধারণগণ দুর্ভোগের শিকার হলেও সমাধানে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। উল্টো ঘাট সংশ্লিষ্টরা ট্রাক চালক ও যাত্রীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অবৈধ ভাবে পকেট ভারী করার কাজে ব্যবস্ত থাকে।
এ রুটে সরকারি আয়ের চেয়ে শত গুণ বেশি টাকা অবৈধ পথে এখানকার দালাল থেকে শুরু করে সরকারের উপর মহলের বড় বড় আমলাদের পকেটে চলে যায়। যার কারণে এ ঘাটের স্থায়ী সমাধান কেউ করতে চায় না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে আক্ষেপ করে কুষ্টিয়ার একজন ট্রাকচালক বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটের সংশ্লিষ্ট সবাই চায় সারাবছর এখানে আমরা যানজটে আটকা পড়ে থাকি। আর এ সুযোগে তারা দালালদের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি ৫শ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে থাকে। সেই টাকার ভাগ এলাকার নেতা থেকে শুরু করে উপর মহল পর্যন্ত সবাই নেয়।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ রুটের বহরে থাকা সবগুলো ফেরি ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। ঠিকমতো চলাচল করতে পারলে যানজট কখনও থাকত না। আর তখন শুধু দৌলতদিয়া ঘাটেই ৩০ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব পাওয়া যায়। ফেরির ইঞ্জিন দুর্বল ও নষ্ট হওয়ার কারণে বহরে থাকা দুই/একটি ফেরি সব সময় বসা থাকে। তা ছাড়া নদীর পবল প্রোত, ডুবোচরে আটকা পড়ার ভয়ে ফেরিগুলো সব সময় ধীরে চলাচল করে। এতে করে ফেরির ট্রিপ অর্ধেকে নেমে আসে।

বরিশাল থেকে ছেরে আসা বিআরটিসি বাসের চালক আলম জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা নেই এখানে অনেক ট্রাক চালক কর্তৃপক্ষকে টাকা দিয়ে আগে চলে যাচ্ছে আর আমরা যাত্রী নিয়ে ঘন্টার পর পর বসে আছি।

বিআরটিসি গাড়ির যাত্রী সুলতান সালাউদ্দিন মিয়া জানান, দৌলতদিয়ায় ভোগান্তি আজ নতুন না। এখানে বছরের বেশির ভাগ সময়ই সমস্যা লেগে থাকে। ঘাট এলাকায় কাজ করে এমন কোন সংস্থার সাথে কারো সমন্বয় নেই। কেউ সঠিক কারন বলে না। কখন ফেরি পাবো কখন ঢাকা যাবো তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। সরকারের কাছে দাবী জানাই যেন এর থেকে জনগনকে রক্ষা করতে একটি ভালো উদ্যোগ গ্রহন করে। পাশাপাশি আরো কিছু নতুন ফেরি যুক্ত করা হয়।

যশোর থেকে কলা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসা ট্রাক চালক হাসান শেখ জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে পাকা কলা নিয়ে ৬/৭ ঘন্টা বসে থাকলেও ফেরির নাগাল পাওয়া মুসকিল। গরমের দিনে কলায় পচন ধরে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থর আশংঙ্কা থাকে।
সিরিয়ালে আটকা পড়া একাধীক ট্রাক চালকরা জানান, দালাল ছাড়া তো দৌলতদিয়ায় ফেরির টিকিট পাওয়া যায় না। বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনেও ফেরিতে উঠতে পড়তে হয় না না ধরনের সমস্যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়। মহাসড়কে আটকা থেকে নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতে হয় আমাদের।

প্রায় প্রতিদিনই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-ররুটের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এ দৃশ্য লক্ষ করা যায়।  তাছাড়াও ঈদ বা বিশেষ দিনে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দুর্ভোগে পড়তে হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রীদের। ফেরি স্বল্পতা আর ঘাট অব্যবস্থাপনায় ঈদের আনন্দযাত্রা রূপ নেয় আতঙ্কে।

দক্ষিণ-পশ্চিাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দৌলতদিয়া ঘাটে। ঘাট এলাকায় ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নদী পার হতে হয় যাত্রীদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে নারী শিশুসহ যানবাহনের চালক ও হেলপারা। শুধু তাই নয় প্রচুন্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পরেন অনেকই।  আর এই যানজটকে ঘিরে করে সক্রীয় থাকে দালাল চক্র থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী ও মলমপাটির সদস্যরা।

ঘাট অবস্থাপনা: বিআইডাব্লাউটিসি, বিআইডাব্লাউটিএ এবং সড়ক ও জনপথ এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় হিনতার পাাশা পাশি, রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতার ছত্রছায়ায় একটি শক্তিশালী দালাল চক্র। তাদের কাছে অসহয় ট্রাক চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।

এ নৌ রুটে সাধারণত ৪/৫ হাজার যানবাহন নিয়মিত পারাপার হয়। ঈদকে ঘিরে এই সংখ্যা বেড়ে হয় কয়েক গুণ। ফলে ঘাটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার সড়ক জুড়ে থাকে তীব্র যানজট। তবে কৃত্রিম যানজট তৈরী করারও অভিযোগ রয়েছে।

আর এই যানজটের কারনেই গরু বোঝায় ও কাচা মালবহকারী ট্রাক গুলোকে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিতে হয় ফেরির টিকিট। (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ৩টন ট্রকারে ভাড়া ৭৪০টাকা, বড় ট্রাক (৮টনের অধিক ১৪৬০টাকা, (৩-৮টনের) ভাড়া ১১৫০টাকা।

সেখানে দালাল এর মাধ্যমে নিতে হয় ৭৪০টাকার টিকিট ১২০০/২০০০হাজার টাকায়,-বড় ট্রাক (৮টনের অধিক ১৪৬০টাকার টিকিট নিতে হয় ২০০০/৩০০০টাকায়, (৩-৮টন) ১১৫০টাকার টিকিট নিতে হয় ২০০/২৫০০টাকায়। শুধু এখানেই শেষ নয় আবার যানজট বেশি হলে নদীর ¯্রােত বেশি থাকলে দ্বিগুনও হয় ভাড়া। যারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে টিকিট নেন তারাই সবার আগে ফেরিতে উঠতে পারেন।

দালালরা নিজে দায়ীত্ব নিয়ে ট্রাকটিকে ফেরিতে উঠিয়ে দেন যত্ন সহকারে। আর যারা দালাল ছাড়া টিকিট কাটার চেষ্টা করেন হতে হয় লাঞ্চিত দালাদের হাতে। দালালের চোখ ফাকিঁ দিয়ে যদি কেউ টিকিট নেন তাদের কে দু এক দিন টার্মিনালে বসে থাকতে হয় সিরিয়ালের আশায়। যদিও পুলিশের কঠিন নজর দাড়ি রয়েছে দালাল চক্রের উপড়ে। মাঝে মধ্যে দালাল চক্রকে আটকও করতে দেখা যায় পুলিশকে। কিন্তু দালাল ছাড়া ট্রাকের টিকিট পাওয়া যায় না এযেন নিয়ম হয়ে গেছে এই দৌলতদিয়া ঘাটে। এঘাটে পুলিশের তালিকা ভুক্ত কিছু দালাল রয়েছে।

রাজবাড়ী জেলা ট্রাফিক পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসার জানান, এই দৌলতদিয়া ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে চলে আশা দালালের মাধ্যমে ট্রাকের টিকিট অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে নিতে হবে নইলে ফেরি পারের টিকিট পাওয়া যায় না। এঘাটে সরকার দলীয় নেতার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে একটি শক্তি শালি দালাল চক্র-(১ টোক), (২ হাই) (৩ জুলহাস মোল্লা), (৪মোহাম্মদ আলী), (৫ মোস্তফা মন্ডল), (৬ ছোট মোস্তফা), (৭ আয়নাল), (৮ জয়নাল), (৯ মান্নান) (১০ করিম)।

একাধীক যাত্রী জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে খুব কষ্ট হয়। এভাবে হাজার হাজার যাত্রী বসে থাকলেও কর্তৃপক্ষ জরুরি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। কখন ফেরির নাগাল পাওয়া যাবে তাও কেউ বলতে পাড়ে না। আবার ফেরি গুলো বেশ পুরনো। এই-ফেরিগুলোকেই জোড়া তালি দিয়ে চালানো হচ্ছে।

তবুও এঘাটে যেন ভোগান্তি হয়রানি আর যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকবেই বলে মনে করেন, সচেতন মহল। কারন এঘাটে রয়েছে ক্ষমতাশীন দলের নেতার ছত্র ছায়ায় একটি দালাল চক্র, যাদের কাজ হলো কৃত্তিম যানজট তৈরী করা। আর সেই সুযোগে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ফেরির টিকিট বিক্রি করা। এই দালাদের সাথে খোদ বিআইডব্লিউটিসির কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যানবাহন ঘাট এলাকায় এসে ফেরী পাড়াপারের জন্য গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়। যাত্রীবাহি ও কাচামালের যানবাহনগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদী পারাপার করলেও বাজেমালবাহি বা খালি ট্রাক গুলোকে ফেরির দেখা পেতে ৫/৬দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

মাঝে মধ্যেই ঘাট এলাকায় দেখা যায়, ৩/৪ দিন ধরে সিরিয়ালে আটকে থাকে শত শত কয়েকশ পণ্যবাহি ও বাজে মালের ট্রাক এবং শতাধিক যাত্রীবাহী কোচ পারাপরের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে দৌলতদিয়া ঘাটের বিশাল টার্মিনাল ট্রাক পার্কিং ইয়ার্ড উপচে ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে মহাসড়কের ইউনিয়ন পরিষদ-বাংলাতেশ হেচারী ও গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্তও যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

আর এই সুযোগে ঘাট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্র বেপরোয়া তাদারে নিয়মিত চাঁদাবাজীতে মেতে থাকে। এসকল দালালরা বিআইডব্লিউটিসি’র ট্রাক বুকিং কাউন্টিারের অসাধু কর্মচারীদের আতআত করে ট্রাক চালকদের কাছ থেকে ফেরির টিকিট বাবদ নির্ধারিত ভাড়ার কয়েক গুন বেশি টাকা আদায় করে।

একাধিক ট্রাকচালকরা অভিযোগ করে বলেন, দালাল না ধরলে এখানে ফেরির টিকিট পাওয়া যায় না। পাশাপাশি দালাল না ধরে কাউন্টারে টিকিটের জন্য গেলে তাদেরকে টিকিট না দিয়ে ফিরিয়ে দেয় বিআইডব্লিউটিসি’র ট্রাক বুকিং কাউন্টিারে দায়ীত্বে থাকা লোক জন।

ঘাটে সিরিয়ালে আটকে থাকা  ঝিনাইদাহ কালিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা গ্রামী চাউল বোঝায় ট্রাক (নং ঢাকা মেট্রো ১৬ ০৯৬৫) চালক মোঃ রুবেল হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে কেউ শোনে না আমাদের মত ট্রাক চালকদের কথা খেয়ে আছি কি না খেয়ে আছি, কেউ দেখে না আমাদের কষ্ট দালালের যন্ত্রনা এক রকম আবার পুলিশের যন্ত্রনা আরেক রকম। কারন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফেরির টিকিট নিলেও সেটি নিয়ে নেন পুলিশ।  টিকিট নিয়েই ট্রাক টার্মিনালে বসি রাখে ২/৩দিন। ৪দিন যাবত এ ঘাটে চাউল বোঝাই ট্রাক নিয়ে বসে আছি, ২দিনের মাথায় ফেরির টিকিট নিজে নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে দালালের মাধ্যমে ১০৬০ টাকার টিকিট ২০৫০ টাকার বিনিময়ে কিনেছি। তার পরেও বসে আছি কারন ফেরির টিকিট পুলিশ নিয়ে ট্রাক টার্মিনালে বসিয়ে রেখেছে সিরিয়াল অনুযায়ী টিকিট দিবে। জানি না কখন বা কবে দিবে আর কত দিন থাকতে হবে ঘাটে। আমার মত এখানে অসংখ্য ট্রাক চালক আছে যাদের কাছে এখন খাওয়ার টাকাও নেই। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি আমরা। গোসল করার কোন স্থান নেই। নেই কোন ঘুমানোর ব্যবস্থ আমরা যারা ট্রাক চালক আমাদের কে মানুষ বলেই মনে করে না কেউ।

পল্লী বিদ্যুৎ এর মালামাল বোঝাই কাভার্ড ভ্যান (নং ঢাকা মেট্রো ঠ ১৪-১৮০৮) চালক বাদল মোঃ জয়নাল আবেদিন জানান, ৪দিন যাবত আটকে থাকার পর দালালদের মাধ্যমে (৭৪০টাকার টিকিট ১২০০) টাকার বিনিময়ে ফেরির টিকিট হাতে পেয়েছেন। টিকিটের গায়ে মূল্য লেখা আছে ৭৪০টাকা। এরপর ফেরি ঘাট পর্যন্ত যেতে কত পয়েন্টে টাকা দিতে হবে তার ঠিক নেই। এর আগে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় এক দিন সিরিয়ালে আটকে থেকে হাইওয়ে পুলিশকে ৩০০টাকা দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসতে পেরেছি। এখানে এসেও লাভ হয়নি ফেরির টিকি এখন পুলিশের হাতে দিয়ে টার্মিনালে বসে আছি জানি না কবে কখন পার হতে পারবো।

ফরিদপুর থেকে আসা মেঘনা গ্রুফের ফ্রেস দুধ বোঝাই ট্রাক (নং ঢাকা মেট্রো উ ১২-১৪৫৬) চালক মোঃ বাকি উল্লাহ বলেন, দালালদের ছাড়া দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কনোদিনও ফেরির টিকিট পাওয়া যায় না। ঘাট ফাঁকা থাকলেও টিকিটের জন্য দালাল ধরতে হয়। আর এখন তো লম্বা সিরিয়াল। তিনি ১৪৬০ টাকার টিকিট দালালদের মাধ্যমে ১৮০০টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে।

এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকদের কাছে বলে কোন লাভ হয় না, আরো বিপদ ডেকে আনা। কারণ সাংবাদিকরা গাড়ির নম্বর সহ পত্রিকায় প্রকাশ কওে, এতে পববর্তীতে ঘাটে এসে ঝামেলায় পরতে হয় আমাদের।
এ সময় ভুক্তভোগী ট্রাকচালকরা অভিযোগ করেন, বিআইডব্লিউটিসি’র কাউন্টার থেকে প্রতিটি ট্রাক পারাপারে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার মূল্যের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে দীর্ঘ দিন যাবত। এ ঘাটে দালাল না ধরলে কখনো ফেরির টিকিট পাওয়া যায় না। দালাল না ধরলেই পড়তে হয় বিভিন্ন ঝামেলায়। তাই স্থানীয় দালাল ধরে অতিরিক্ত টাকায় ফেরির টিকিট কিনতে বাধ্য হই।

কেউ কেউ আবার পুলিশকেও দোসারফ করে বলেন, পুলিশও দালালদের সাথে জড়িত তা না হলে দীর্ঘ দিন যাবত ঘাটে দালাল চক্র এভাবে ফেরির টিকিট নিয়ে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছে..? বিআইডব্লিউটিসি’র কাউন্টার থেকে কি ভাবে দালালরা টিকিট পায়..? আমারা ট্রাক চালকরা কাউন্টারে গেলে আমাদের কাছে কোন টিকিট দেয় না। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। তাছাড়ও পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য আছে তারাও আমাদের কে বলে আগে যদি যেতে চাও তাহলে টাকা দাও নইলে বসে থাকো। তাহলে আমারা কোথায় যাবো এমন চাঁদাবাজী চললে কি ভাবে এই দেশ ডিজিটাল হবে..? বলেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন ট্রাক চালকরা।

রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের টিআই মোঃ আবুল হোসেন চালকদের অভিযোগ অস্কিার করে বলেন, ঘাট এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন চাঁদা নেওয়া হয় না। তবে হে ঘাট এলাকায় কিছু দালাল চক্র আছে ট্রাক চালকরা ঐ সকল দালালদের মাধ্যমে টিকিট কিনে আর দোষ চাপায় পুলিশের উপড়ে এটা নতুন কিছু নয়, কারন পুলিশই এক মাত্র সরকারি কর্মচারী যাদের কাজের সমালোচনা মানুষ একটু বেশিই করে। আর ঘাট এলাকাকে দালাল মুক্ত রাখতে পুলিশ সব সময় কাজ করছে। তার পরেও ট্রাক চালকরা কি ভাবে দালালের কাছে যায় এটা এক মাত্র তারাই বলতে পারবে।

ফেরির টিকিট নিয়ে টার্মিনালে ট্রাক চালকদের কে বসিয়ে রাখার বিষয়ে টিআই বলেন, কাচামাল, গুরু বোঝাই ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাস গুলোকে অগ্রঅধিকার ভিত্তিতে পার করতে হয়। তাই যখন এসকল যানবাহন যখন বেশি থাকে তখন অ-পচনশিল ও বাজে মালের ট্রাক গুলোকে টার্মিনালে বসিয়ে রাখা হয়। এদিকে গাড়ি কমলে তাদের কে সিরিয়াল অনুযায়ী ছাড়া হয়।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত ফেরি ভাড়া অনুযায়ী প্রতিটি সাধারণ ট্রাক ১০৬০ টাকা এবং বড় আকারের ট্রাক ১৪৬০ টাকা। তবে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি পণ্য বহন করলে অতিরিক্ত ওজনের জন্য প্রতি টন ১২০ টাকা হারে মূল টিকিট মূল্যের সাথে যোগ হয়। এ জন্য ডিজিটাল ওয়েস্কেলের মাধ্যমে ফেরি পার হতে আসা প্রতিটি ট্রাকের সঠিক ওজন পরিমাপ করা হয়। স্কেল থেকে দেওয়া ওজন স্লিপ অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাকের ফেরি ভাড়া আদায় করা হয়।

বিআইডব্লিউটিসি’র দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম অভিযোগের বিষয় অস্কিার করে বলেন, ট্রাক চালকদের কাছে সরাসরি টিকিট বিক্রি করা হয়। সরকার নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। দালালচক্রকে নিয়ন্ত্রন করতে ট্রাক বুকিং কাউন্টারে সার্বক্ষনিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পাহাড়ায় থাকে।


এবিএন/খন্দকার রবিউল ইসলাম/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ