আজকের শিরোনাম :

সোনাগাজীতে বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে নির্মাণাধীন সেতু

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১৫:৪৭

জেলা প্রশাসকের আদেশ অমান্য করে সেতু সংলগ্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় সোনাাগাজী উপজেলার ছোট ফেনী নদীর উপর নির্মাণাধীন সাহেবের ঘাট সেতু ঝুঁকিতে রয়েছে।

অভিযোগের পরও বালু উত্তোলন ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভুমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সেতুর  ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সরজমিনে দেখা গেছে, মাত্র ৫০০ গজের মধ্যে বালু উত্তোলন করছে মেসার্স রুহুল আমিন এন্টারপ্রাইজ। 

গত ৩ অক্টোবর সেতু এলাকায় ভূমি অধিগ্রহনের চেক হস্তান্তর করতে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজজামান পরিদর্শনের গেলে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙ্গনে সেতুর পাশে অন্তত ২০০ মিটার ব্লক নদীর গর্ভে চলে গেছে। 

৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলিত মাসেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, এরই মধ্যে সেতুর নির্মান কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে।আবহাওয়া ভালো থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।বালু উত্তোলনের কারনে সেতুটি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। 

সেতু নির্মাণের শুরু থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগ উঠে। নিম্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে গত বছর নভেম্বর মাসে সেতুর গার্ডার ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। সেতুর উভয় পাশে ১৪শ’ মিটার এ্যপ্রোস সড়কের নির্মাণ কাজ তড়িগড়ি শেষ করতে গিয়ে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। সাফ বেস, প্রাইম কোট, কার্পেটিং যথাযথ নিয়ম মেনে করার বিধান থাকলেও তারা মাত্র কয়েকদিনে সম্পন্ন করেছে। 

এ্যপ্রোস সড়কটি নির্মাণে ১২ ইঞ্চি বালু ফিলিং, সাফ বেস বালু ও কংককের ৮ ইঞ্চি স্তর, ম্যাগাডমে বালু ও পাথরের ৮ ইঞ্চি স্তর থাকার নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করেনি। ফলে নির্মান শেষের কিছু দিনের মধ্যেই সড়কটি ভেঙে ও ধ্বসে যেতে শুরু করেছে। সরজমিনে দেখা গেছে, নির্মিত সড়কটির কার্পেটিং ছোট ছোট শিশুরা হাত দিয়ে উপড়ে ফেলছে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সড়ক ও জনপদের তত্তাবধায়ক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। 

সেতুটি চালু হলে লক্ষীপুর, নোয়াখালী থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম যেতে ৩৫ কিলোমিটারের দুরত্ব  কমবে। বর্তমানে নোয়াখালী ও লক্ষীপুরের গাড়ি ফেনীর উপর দিয়ে চট্রগ্রামে যাতায়াতের কারনে মহিপালে যানজটের সৃষ্টি হয়। সাহেবের ঘাট সেতুটি চালু হলে লক্ষীপুর ও নোয়াখালীর গাড়ি সেতুটি হয়ে চট্রগ্রামে যাতায়াত করবে যার কারনে মহিপালে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। 

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে,সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের সাহেবের ঘাট ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার আঞ্চলিক সড়কের সংযোগস্থলে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির দৈর্ঘ্য ৪৭৮ মিটার ,প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার। ২০১৬ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।প্রকল্পের মেয়াদ শেষের তারিক ছিলো গত ৩০ জুন। কিন্তু কাজ শেষ  না হওয়ায় মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। 

সেতুটি নির্মাণে তত্বাবধায়নে থাকা নোয়াখালী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রৌকশলী বিনয় কুমার পাল বলেন,আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সেতুটির নির্মান কাজসহ অন্যান্য কাজ শেষ হবে। নদী শাসনের কাজ শেষ করে চলিত মাসেই গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করার করার কথা রয়েছে। উদ্বোধনের পর চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে। 

এ বিষয়ে বিনয় কুমার পাল বলেন, সেতুর ডিজাইনে স্ট্রিটলাইট ছিলোনা। এ কারণে দুই জেলার (ফেনী ও নোয়াখালী) প্রশাসনের সমন্বয়ে সড়ক বাতির ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি গুরত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। 

সেতুর পাশে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা হলে সেতুটি ঝুঁকিতে পড়বে জানিয়ে ফেনীর জেলা প্রশাসককে একাধীকবার চিঠি দেয়া হয়েছে এবং মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। জানতে পেরেছি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কুলদিপ চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১ কিলোমিটারের মধ্যে কিছুতেই বালু উত্তোলন করা যাবেনা। সেতুর পাশে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিবেদক তাকে অবহিত করলে তিনি মেপে জানানোর অনুরোধ করে। আবারও নিশ্চিত হয়ে পরে প্রতিবেদক তার কাছে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেনি। 

এবিএন/আবুল হোসেন রিপন/জসিম/এমসি

এই বিভাগের আরো সংবাদ