আজকের শিরোনাম :

নওগাঁয় নতুন জাতের ‘বল সুন্দরি’ বরই চাষে সাফল্য কৃষকরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২১, ১৬:১৭

অন্যান্য বরইয়ের চেয়ে নতুন জাতের ‘বল সুন্দরি’ বরই চাষে সাফল্য পেয়েছেন নওগাঁর কৃষকরা। নতুন জাতের এই বরই গাছ লাগানো বছরের মধ্যে বরই ধরে। খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় অন্যান্য বরইয়ের চেয়ে বল সুন্দরি বরইয়ের বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় বেশি দামে কেনা বেচা হয়ে থাকে। আগামিতে এই নতুন জাতের বরই নওগাঁ জেলায় ব্যাপক পরিসরে চাষ হবে এমনটিই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নওগাঁর সাপাহার গোডাউন পাড়ার সোহেল রানা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে সফলতার সাথে ¯œাতকোত্তর শেষ করেন। আর দশ জনের মতো চাকুরির পিছে না ছুটে গোডাউন পাড়ার পাশেই ৭০ বিঘা জমি লীজ নেন। এরপর আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তোলেন। দুই বছর আগে সোহেল রানা খুলনার পাইকগাছা থেকে ৪৫ টাকা দরে ৩ হাজার নতুন জাতের বল সুন্দরি বরই গাছ এনে সাপাহারে তার বাগানের ১০ বিঘা জমিতে প্রথম লাগান। বরই গাছ লাগানো ৮ মাসের মধ্যে আসে সাফল্য। সফল বাগান মালিক সোহেল রানা জানান, দুই বছর ৩ হাজার বল সুন্দরি বরই গাছ লাগান তার বাগানে। দেড় হাজার ব বরই গাছ ৫ বিঘা আম বাগানে এবং বাঁকি দেড় হাজার গাছ শুধু মাত্র ফাঁকা ৫ বিঘা জমিতে লাগাই। লাগানো ৮ মাসের বরইয়ের উৎপাদন ও বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। প্রথম বছর সব মিলে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। সেখানে বড়ই বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ টাকা। চলতি বছরে বরই গাছ অতিরিক্ত বড় হওয়ায় দেড় হাজার গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। বাঁকি দেড় হাজার গাছ ১ বছর পরিচর্যা করতে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রতি গাছে দেড় মণ থেকে ২ মণ বরই উৎপাদন হবে। এ থেকে ১৫ লাখ টাকার বরই বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন।

বল সুন্দরি বরইয়ের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আরেক সফল ফল চাষি সাপাহার উপজেলা সদরের চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা সাখওয়াত হোসেন আগ্রহী হন। দুই বছর আগে গড়ে তোলা ১১৪ বিঘা আম বাগানে গত বছর বল সুন্দরি বরইয়ের গাছ লাগান। সাফল্য আসে মাত্র ১০ মাসের। তিনি জানালেন, প্রতি বিঘায় গড়ে ১শ’ ৩৩টি গাছে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছে ৩০ কেজি থেকে ৩৫ কেজি বরই ধরেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকায়। অন্য বরইয়ের চেয়ে বল সুন্দরি বরইয়ের বাজারে চাহিদা থাকায় দামও ভালো।

স্থানীয় আম চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আম বাগান গড়ে তোলার দুই বছর আম সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। তবে আম গাছ লাগানো সাথে সাথে বল সুন্দরি বরই লাগালে প্রথম বছর থেকেই বাড়তি লাভ করা সম্ভব হবে। দুই/তিন বছর বরই বিক্রি করা সম্ভব। এরপর বড়ইয়ের গাছ কেটে ফেলে পুরোপুরি ভালোভাবে আম উৎপাদন সম্ভব।

তিনি আরো জানান, আমের বাগানে বল সুন্দরি বরই চাষে সাফল্যে এক দিকে শতশত কৃষকের কর্মসংস্থান হয়েছে অন্যদিকে এলাকার অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জানান, উপজেলায় আমের পাশাপাশি বরইয়ের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাপাহারে ৫০ হেক্টর জমিতে কাশ্মরি, থাইকুল, বাউকুল চাষ হলেও বেশি ভাগই বল সুন্দরি জাতের এই বরই চাষ হচ্ছে। বিঘা প্রতি এর উৎপাদনও বেশি। সাপাহারে প্রায় ৬শ’ মেট্রিকটন বরই উৎপাদন হবে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, নওগাঁয় আড়াইশ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বরইয়ের চাষ করা হয়েছে এ মৌসুমে। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমিতে বল সুন্দরি নতুন জাতের বরই চাষ হয়েছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় আগামিতে দ্রুত বল সুন্দরি আরো চাষ বৃদ্ধি পাবে। জেলায় ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন বরই উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবিএন/মাহমুদুন নবী/গালিব/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ