আজকের শিরোনাম :

চিতলমারীতে হঠাৎ সবজির দরপতন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০১৮, ১৬:৪২

বাগেরহাট, ১০ আগস্ট, এবিনিউজ : ‘সকালে ৮৫০ টাকা দাম হলেও দুপুরে মূল্য ৪০০ টাকা। মাত্র দু’তিন ঘন্টার ব্যবধানে প্রতি মণ সবজি বিক্রি করতে হয় অর্ধেক দামে। এ যেন ভেলকিবাজির খেলা। হঠাৎ এ দরপতনে চাষীর হৃদযন্ত্রে যে কত বড় আঘাত লাগে তা কেউ বুঝতে চায় না। সবাই ব্যস্ত কৃষক ঠকানোর নেশায়। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে আর এ অঞ্চলের মানুষেরা সবজির চাষ করবে না।’

আজ শুক্রবার দুপুরে বড় আক্ষেপের সাথে এমনটাই জানালেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের সবজি চাষী মৌজ আলী শেখ (৪৮)। তিনি আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্র চিতলমারীতে এবার বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বহুকষ্টে উৎপাদিত ফসলের হঠাৎ দরপতনে তারা এখন দিশেহারা। বাইরের বড়বড় পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাজারে না আসায় এ কান্ড সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া এখান থেকে অনেক  ট্রাক ড্রাইভার পণ্য নিয়ে বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ গাড়ি ও ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা ফায়দা লুটছে।

শুক্রবার চিতলমারীর উমাজুড়ি, কালিগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন সবজির গালা (আড়ৎ) ঘুরে জানা গেছে, এখানে প্রতি মণ করল্লা সকালে  ৮৫০-দুপুরে ৪০০ টাকা, শসা সকালে ৫০০টাকা-দুপুরে ২৮০ টাকা, বরবটি সকালে ৫৫০টাকা-দুপুরে ৩০০ টাকা, পুঁই শাক ৪০০-২০০ টাকা, বেগুন ৯০০-৬০০ টাকা, কুশি ৬০০-৪০০ টাকা এবং ঝিঙ্গা ৫০০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এভাবে হঠাৎ বাজারে দরপতনের কারণে অনেক কৃষকই চাপা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮৫২ একর জমিতে করল্লা, ১ হাজার ৪৯৪ একর জমিতে শসা, ঢেঁড়স ৭৪ একরে, চালকুমড়া ৮৬ একরে, মিষ্টি কুমড়া ৮৬ একরে, বেগুন ৮৬ একরে, বরবটি ১৭৩ একরে, চিচিংগা ১২৩ একরে এবং ৬২ একর জমিতে পুঁই শাকসহ মোট ৩ হাজার ২১১ একর জমিতে এ বছর সবজি চাষ হয়েছে। আর এ উপজেলায় ১৫ হাজার সবজি চাষী রয়েছে। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যানে এর পরিমাণ দ্বিগুণ।

উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে জানা গেছে, চাষীরা মৎস চাষের সাথে ঘেরের চারপাশের বেড়ীতে (পাড়ে) সবজির চাষ করেছেন। এ বছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় শসা, করলা, বরবটি, চালকুমড়া, লাউ এবং ঝিঙাসহ বিভিন্ন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্ত শেষের দিকেও আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় চাষীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। কারণ ব্যাংক ঋণ ও এনজিওসহ সুদখোর মহাজনদের চাপে অনেকেরই এখন ‘ত্রাহি মধুসুদন’ অবস্থা। এতকিছুর পরও আড়ৎদারদের সিন্ডিকেট ও ইজারাদারদের অধিক মাত্রায় খাজনা আদায়ের অভিযোগও তুলেছেন সবজি চাষীরা।

এ ব্যাপারে সবজি চাষী অনুপ বিশ্বাস, মুন্না শেখ, রেজাউল দাড়িয়া, আলমগীর হোসেন  তরফদার (এমএ), পরিতোষ মজুমদার, গৌরাঙ্গ মল্লিক, রফিকুল ইসলাম, বুদ্ধ বসু, ইউনুছ বিশ্বাস ও শুধাংশু মন্ডল, নিহার রায়, দেবাশিষ মন্ডল ও সমীর মন্ডল প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, আমাদের এলাকার সবজির দেশের বিভিন্ন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে বাজার দর হঠাৎ বাড়ছে আবার কমছে।

এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/রাজ্জাক

এই বিভাগের আরো সংবাদ