আজকের শিরোনাম :

চিরিরবন্দরে বৃষ্টি মৌসুমে সেচ দিয়ে আমন রোপণ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৮, ১৫:১৮

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) , ০৯ আগস্ট, এবিনিউজ : চিরিরবন্দরে ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত নেই। আকাশে মেঘ দেখা গেলেও তেমন বৃষ্টি নেই। মাঝে মাঝে একটু বৃষ্টি হলেও সেই পানি কাজে আসছে না কৃষকদের। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমন আবাদে।

বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকেরা আমন চাষের জন্য জমি তৈরি করতে পারছেন না। ভরা শ্রাবণ মাসে বাধ্য হয়ে সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন এবং আমনধানের চারা রোপণ করছেন অনেক কৃষক। ফলে বাড়তি টাকা খরচ করে আমন চাষ করতে গিয়ে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।

আমন লাগানোর উপযুক্ত সময় আষাঢ়ের শেষ সপ্তাহ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে টানা খরা শুরু হওয়ায় অনেক কৃষক জমি তৈরি করতে পারলেও ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি। আষাঢ়ের শেষদিকে প্রচুর বৃষ্টি হলেও পরে খরার কারণে তা তেমন কাজে আসেনি। বৃষ্টির পানিতে কিছু কিছু জমিতে রোপা আমন লাগানো হলেও সেগুলোর অবস্থা এখন করুন। পানির অভাবে ধানগাছগুলো লালচে আকার ধারণ করেছে। যেসব এলাকায় সেচ দেয়া হয়নি সেসব এলাকার ধানগাছ মরে যাচ্ছে। কোন কোন এলাকায় জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলার সাঁইতাড়া ইউনিয়নের খোচনা, নশরতপুর, সাতনালা ইউনিয়নের উত্তর ইছামতি, ফতেজংপুর ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ, ডাঙ্গারহাট, সন্যাসীতলা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জমির পানি শুকিয়ে গেছে।  উপজেলার নশরতপুর, সাতনালা, ফতেজংপুর ইউনিয়েনের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ করতে দেখা গেছে।

নশরতপুর গ্রামের শমসের আলী বলেন, ‘আকাশের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমন চারা রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। বীজতলায় চারার বয়স বেশি হওয়ায় বৃষ্টির জন্য আর অপেক্ষা করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে শ্যালোমেশিনের মালিকের নিকট প্রতিঘন্টা ১০০টাকা করে দিয়ে জমিতে পানি নিয়ে চারা রোপন করছেন। প্রতিবছর এ সময় প্রচুর বৃষ্টি হলেও এবার তা না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।’ 

উপজেলার সাঁইতাড়া ইউনিয়নের খোচনা গ্রামের চাষি আমির আলী জানান, ‘ধানের যে দাম। আবাদ করি তেমন লাভই হয় না। কখনো কখনো খরচের টাকাই উঠে না। শুধু খাটুনিই হয়। তারপরেও শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিয়ে জমিতে রোপা লাগাচ্ছি।’

উপজেলার নশরতপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ইরি-বোরো আবাদের মতো জমিতে সেচ দিয়ে এখন আমন আবাদ করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ইরি-বোরোর তুলনায় বিঘাপ্রতি আমনের ফলন অর্ধেক হয়। অথচ একটা সময় ছিল, যখন বৃষ্টির পানি ও ময়লা-আর্বজনায় দিয়ে তৈরি জৈব সার দিয়েই আমনের আবাদ করা হতো। এখন রাসায়নিক সার ও সেচের পানি ছাড়া আমনের আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষক।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ঊফসী ২২ হাজার ৪৯৫ হেক্টর, হাইব্রিড ২০০ এবং স্থানীয়জাত ৫০০ হেক্টর জমি রয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই এ অনাবৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমেও তেমন বৃষ্টিপাত নেই। এ পরিস্থিতিতে কৃষকরেদর সেচ দিয়ে চারা রোপণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেসব কৃষক এখনো চারা রোপণ করতে পারেননি, সেসব কৃষককে বিচলিত না হওয়ার কথাও বলেন তিনি। 

এবিএন/মো. রফিকুল ইসলাম/জসিম/নির্ঝর

এই বিভাগের আরো সংবাদ