আজকের শিরোনাম :

নর্ড স্ট্রিম কী? কেন ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহের জন্য জরুরি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২২, ১৩:১০

ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কমিয়ে আনতে যাচ্ছে রাশিয়া এবং এ জন্য তারা নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের একটি টারবাইন বন্ধ করে দিচ্ছে। এ খবর ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ও গ্যাস সংকটের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

নর্ড স্ট্রিম ১ কী এবং কত গ্যাস এর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়? 
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে উপকূল থেকে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার লম্বা যে পাইপলাইন করা হয়েছে গ্যাস সরবরাহের জন্য সেটিই নর্ড স্ট্রিম ১।

প্রায় ১০ বছর ধরে চালু আছে এ গ্যাস পাইপলাইন। প্রতিদিনই এর মাধ্যমে জার্মানিতে ১৭০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস পাঠায় রাশিয়া।

এ পাইপলাইনের মালিকানা ও পরিচালনা নর্ড স্ট্রিম এজির হাতে যার বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম।

অন্যদিকে জার্মানি যত গ্যাস আমদানি করে তার ৫৫ ভাগই করে রাশিয়ার কাছ থেকে। আর এর বেশিরভাগই আসে নড স্ট্রিম ১ পাইপলাইন দিয়ে। বাকিটা তারা আমদানি করে স্থলপথের পাইপলাইন দিয়ে।

জার্মানি নর্ড স্ট্রিম ২ নামে আরেকটি পাইপলাইন তৈরির বিষয়েও একমত হয়েছিল। তবে রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।

কীভাবে সরবরাহ কমাবে রাশিয়া এবং কীভাবে ইউরোপকে এটি ভোগাবে
গত মে মাসে বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছিলো রাশিয়া। এর মাধ্যমে জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাস পাঠাত রাশিয়া।

এরপর জুনের মাঝামাঝিতে নর্ড স্ট্রিম ১-এর মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ তিন-চতুর্থাংশ কমিয়ে দিলে দিনে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটারে।

জুলাইয়ের শুরুতে নর্ড স্ট্রিম ১ দশ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য।

এখন আবার চালু করার পরপরই বলা হয়েছে যে গ্যাজপ্রম সরবরাহ আরও ২০ ভাগ কমিয়ে দেবে।

আর এ খবরে ইউরোপে এক দিনের মধ্যেই গ্যাসের পাইকারি দাম ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।

এমনিতেই গ্যাসের দাম গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এখন ৪৫০ শতাংশ বেশি।

‘বাজার এখন এমন অবস্থায় যে সরবরাহে যে কোন ধরণের বাধা গ্যাসের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে,’ বলছিলেন ক্রিস্টল এনার্জির সিইও ক্যারোল নাখলে।

তার মতে, এটি ইউরোপের অর্থনীতিকে মন্থর করবে যা মন্দার দিকে ঠেলে দেয়ার অবস্থা তৈরি করতে পারে।

ইউরোপ কী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে
গ্যাজপ্রম বলছে টারবাইন রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ইউরোপে এটি খুব কম মানুষই বিশ্বাস করছে।

জার্মান সরকার বলছে কারিগরি কোনো কারণ নেই যাতে গ্যাজপ্রম গ্যাস সরবরাহ কমাতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জ্বালানি নীতি বিষয়ক প্রধান কাদরি সিমসন একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে প্রকাশ্য যুদ্ধ আখ্যায়িত করেছেন যা রাশিয়া ইউরোপের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য এনার্জি ইন্সটিটিউটের ফেলো কেইট ডৌরিয়ান বলেন রাশিয়া গ্যাসকে ক্রমশ অস্ত্রে রূপান্তর করছে।

তার মতে, রাশিয়া এখনো নিজেকে জ্বালানি সুপারপাওয়ার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে এবং দেখাতে চাইছে যে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে তারা।

ইউরোপ এখন কী করতে পারে
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই জার্মানি নরওয়ে ও নেদারল্যান্ডস থেকে গ্যাস আনার বিকল্প চেষ্টা করছিলো।

তারা পাঁচটি ভাসমান টার্মিনাল কিনে নিয়েছে যাতে কারো কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি করতে পারে।

তবে এর সঙ্গে উপকূল থেকে জার্মানির অন্য সব জায়গায় গ্যাস নেয়ার জন্য পাইপলাইন তৈরির বিষয় জড়িত, যা করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

অন্যদিকে ইতালি ও স্টেন আলজেরিয়া থেকে বেশি করে গ্যাস আমদানির চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে পরিবেশগত প্রভাব থাকা সত্ত্বেও জার্মানি কয়লা ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জীবনকাল বাড়িয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।

কেইট ডৌরিয়ান বলছেন জ্বালানি ঘাটতি মেটাতে প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের মতো করে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

গ্যাসের চাহিদা কতটা কমিয়েছে ইউরোপ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছে যেখানে তার সদস্য রাষ্ট্রগুলো গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমিয়ে আনবে।

নাখলে জানিয়েছেন যে জার্মানিতে অনেকেই কাঠের স্টোভ কিনেছে এবং বাসায় সোলার প্যানেল সংযোজন করছে। সে কারণে গ্যাস ঘাটতিকে মানুষ কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সে বিষয়টিকে হাল্কাভাবে দেখা উচিত হবেনা বলে বলছেন তিনি।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ