আজকের শিরোনাম :

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলায় কী আছে বাজেটে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২২, ১৫:৪৭

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করলেন এমন সময় যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির এবং শস্য এবং খাদ্যসহ আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফিতি বাড়ন্ত, ডলারের বিনিময় হারে অস্থিরতা এবং রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়াসহ সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনার শুরুতেই আগামী অর্থবছরে অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে।

বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয় গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পণ্য আমদানি করতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য ৮.২ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হবে।

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ‘এ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ইমপোর্টেড ইনফ্লেশন হিসেবে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট হতে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করায় সার্বকভাবে রাশিয়ার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে আসছে, যা বৈশ্বিক সাপ্লাই-চেইনকে ব্যাহত করছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

বাংলাদেশ সরকারি হিসেবে, বর্তমানে সার্বিক মূল্যস্ফিতি রয়েছে ৬.২৯ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে সেটি ৫.৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, সরকার বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

বাজেট বক্তৃতা থেকে বোঝা যায় মূল্যস্ফিতি সহনীয় রাখতে খাদ্য ও কৃষি জ্বালানি খাতে প্রণোদনা ও ভর্তুকি অব্যাহত রাখার চেষ্টা থাকবে।

বাজেটে প্রস্তাবিত মোট ভর্তুকি ও প্রণোদনার রাখা হচ্ছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে কৃষিতেই ১৫ হাজার কোটি, খাদ্য ৬ হাজার ৭৪৫ এবং বিদ্যুৎ জ্বালানিতে ১৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতিপ্রকৃতি, তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরো ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে যা আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।’

ভর্তুকি দেয়ার পরও সার ও বিদ্যুৎ গ্যাস ও তেলের দাম দাম বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত রয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সার্বিকভাবে সরকারের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এ লক্ষ্যে আমদানি নির্ভর ও কমগুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ রাখা অথবা হ্রাস করা। জ্বালানি তেল বিদ্যুৎ গ্যাস ও সারের দাম পর্যায়ক্রমে ও স্বল্প আকারে সমন্বয় করা হবে। রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও আয়করের নেট বৃদ্ধি করা হবে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। আন্ডার ওভার ইনভয়েসিং এর বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার প্রতিযোগিতামূলক রাখা হবে। করোনা মহামারির মতো ইউক্রেন সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে।’

তবে সরকারি আয় ব্যয়ের ঘাটতি মেটাতে সরকার শতভাগ মূল্য জনগণের কাধে চাপিয়ে দেয়া হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ব্যয় বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় রিজার্ভ কমে ৪২.১ বিলিয়ন ডলারে এসেছে।

বাজের প্রস্তাবনায় রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য বিদেশ থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত আনার ক্ষেত্রে অর্থের উৎস জানতে না চাওয়া এবং বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে নগদ ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া অব্যহত রাখার কথা বলা হয়েছে।

বাজেট প্রস্তাবনায় এ ছাড়া বিদেশে থাকা অর্থ সম্পদ দেশে আনার লক্ষ্যে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেখানে আগামী অর্থবছরে ৭-১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে বিদেশে অবস্থিত যে কোনো সম্পদ দেশে আনলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ যে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করবে না।

যুদ্ধের প্র্রভাবে ডলারের মূল্য অস্থিরতার বিষয়টিও বাজেট বক্তৃতায় প্রাধান্য পেয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ৭.৯ শতাংশ।

স্থানীয় বাজারে মার্কিন ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ করছে প্রয়োজনে সেটি অব্যাহত থাকবে।

রপ্তানি উৎসাহিত করতে টেক্টটাইল শিল্পে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ কর ২০২৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করার ঘোষণা এসেছে।

ব্যাংক সুদে উৎসে কর ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানি পণ্যে উৎসে কর .৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোভিড-পরবর্তী চলমান রাশিয়া ইউক্রেন সংকটের মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন ৭.৫ শতাংশ।

তবে বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রাশিয়া ইউক্রেন সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে করনো মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।’

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ