আজকের শিরোনাম :

২৬/১১: ভয়াল মুম্বাই হামলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৩ | আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৯

২৬ নভেম্বর, ২০০৮। আজ থেকে ১৩ বছর আগে সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবলে রক্তাক্ত হয়েছিল ভারত। চার দিন ধরে মুম্বই শহর জুড়ে দশ জঙ্গির সেই হামলা বদলে দিয়েছিল নিরাপত্তার সামগ্রিক ধারণাই। সন্ত্রাসের বলি হয়েছিলেন মোট ১৬৪ জন নিরপরাধ মানুষ। আহত হয়েছিলেন ৩০৮ জন। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইকে প্রায় চারদিন ধরে স্তব্ধ করে রেখেছিল ২৬/১১-এর সেই ভয়াবহ জঙ্গি হামলা।

২৬ নভেম্বর শুরু হয়েছিল হামলা। ২৮ নভেম্বর সকালেই সন্ত্রাসের কবল থেকে মুম্বইকে মুক্ত ঘোষণা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। শুধু তাজ হোটেলে তখনও নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছিল জঙ্গিরা। তাজ হোটেলকে জঙ্গিমুক্ত করতে ২৯ নভেম্বর ‘অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো’ অভিযান চালান ভারতীয় এনএসজি কম্যান্ডোরা। মারা যায় বাকি জঙ্গিরা। শেষ হয় মুম্বই হামলা। তদন্তে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল জঙ্গি সংগঠনলস্কর-ই তইবা। বাকি জঙ্গিরা নিহত হলেও ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের অসীম সাহসিকতায় ধরে ফেলা সম্ভব হয় আজমল কাসভকে। তার কাছ থেকেই জানা যায় হামলার খুঁটিনাটি। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে পাকিস্তান জানায় কাসভের বাড়িও দেশেই।

২৬ নভেম্বর মাছ ধরার ডিঙি নৌকা নিয়ে ১০ জঙ্গি রাতের অন্ধকারে এসে নামে মুম্বাইয়ের উপকূলে। মুম্বাইয়ে সে সময় স্থানীয় কিছু লোকের প্রশ্নের মুখে পড়ে তারা। ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী জঙ্গিরা নিজেদের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। জঙ্গিদের আরেকটি দল কিছু মৎস্যজীবীর সামনে পড়ে যায়। মৎস্যজীবীদের সন্দেহ হতেই জঙ্গিরা রীতিমতো শাসানি দিয়ে বলে, ‘নিজের চরকায় তেল দাও।’ আতঙ্কিত মৎস্যজীবীরা পুলিশকে জানালেও তারা বিষয়টির গুরুত্ব আঁচ করতে পারেনি।

রাত সাড়ে ৯টা থেকে জঙ্গিরা মুম্বাইয়ের প্রকাশ্য রাস্তায় এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। কিছু পরেই জঙ্গিরা নরিম্যান হাউস, যা ইহুদিদের বাসস্থান বলে পরিচিত সেখানে হামলা চালায়। এর সঙ্গে সঙ্গে হামলা হয় বিলাসবহুল হোটেল হিসেবে পরিচিত ওবেরয়-ট্রাইডেন্ট এবং তাজ হোটেলে। সব মিলিয়ে জঙ্গিরা ১২টি হামলা চালায়। ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলে নিরাপত্তা বাহিনীর। ৯ জন জঙ্গিকে হত্যা করতে সমর্থ হয় নিরাপত্তা বাহিনী। নারকীয় এই হামলায় ভারতীয় ছাড়াও আমেরিকা, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ১৭০ জন প্রাণ হারান। মারাত্মকভাবে জখম হন প্রায় ৩০০ মানুষ। শুধু ওবেরয়-ট্রাইডেন্টেই ৩২ জন বন্দীকে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল। চার দিনের মাথায় ওবেরয়-ট্রাইডেন্ট, নরিম্যান হাউস এবং তাজ হোটেলকে জঙ্গিমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে জানানো হয় ১০ জঙ্গির মধ্যে একজনকে শুধু জীবিত অবস্থায় ধরা গেছে। এ জঙ্গির নাম আজমল কাসাব।

কাসাবকে জেরা করে সামনে আসে মুম্বাই হামলায় লস্কর-ই-তৈয়্যবার যোগের তথ্য ও প্রমাণ। অস্ত্র আইন, বেআইনি কার্যকলাপ, বিস্ফোরক আইন, শুল্ক আইন, দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো অভিযোগ দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও রেলওয়ে অ্যাক্টসহ আরও বেশ কিছু ধারা যোগ করা হয়। টিকিট ছাড়াই রেলওয়ের চৌহদ্দিতে পা-রাখার জন্যও মামলা হয়েছিল জঙ্গি কাসাবের বিরুদ্ধে। বিচারসম্পন্ন করে পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে ২০১২ সালের নভেম্বরে আজমল কাসাবকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

মুম্বাই হামলার পর পরই আমেরিকায় ধরা পড়ে আরেক মাস্টারমাইন্ড ডেভিড কোলম্যান হেডলি। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ছিল হেডলি। এফবিআই ও ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ এবং এনআইএর তদন্তকারী অফিসারদের সামনে হেডলি জানায়, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বরের আগে দুবার এমন সন্ত্রাসবাদী হামলার ছক করেছিল লস্কর-ই-তৈয়্যবা। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে হামলা  চালানোর সেই ছক ভেস্তে গিয়েছিল।

২৬/১১-এর এই হামলা শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামো বদলে দিয়েছিল। তার পর থেকেই সন্ত্রাস দমন যে কোনও শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম অঙ্গ হয়ে উঠেছে। মুম্বই হামলার পর পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই লস্কর ই তইবাকে বেআইনি ঘোষণা করে। যদিও এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ বহাল তবিয়তেই আছে পাকিস্তানের আশ্রয়ে। মাত্র দশ জঙ্গির ওই হামলায় যে দেড় শতাধিক নাগরিক মারা যান, এদের মধ্যে অন্তত ৩০জনই বিদেশি- যার মধ্যে আমেরিকা, ইসরায়েল, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স প্রত্যেক দেশেরই একাধিক নাগরিক ছিলেন। পাশ্চাত্যের পর্যটকরা যে ওই হামলার অন্যতম নিশানা ছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই - কিন্তু এই হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে এই বিদেশি রাষ্ট্রগুলো কার্যত তেমন কিছু করেনি।

তান্ডবের ৪দিন

ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির রিপোর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি মুম্বাই হামলার জন্য ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে জঙ্গিদের কাছে পাঠায়। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী বাস টার্মিনালে হামলা চালায় দুই জঙ্গি। একে-৪৭ হাতে তারা নির্বিচারে গুলি চালায় সাধারণ মানুষের ওপর। মারা যায় মোট ৫৮ জন নিরপরাধ মানুষ। রাস্তায় নেমেও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় জঙ্গিরা। মারা যান আটজন পুলিশকর্মী। বাস টার্মিনাল থেকে কামা হাসপাতাল। জঙ্গি কাসাবের নেতৃত্বে তা-ব চালায় জঙ্গিরা। মারা যান মুম্বাই পুলিশপ্রধান হেমন্ত কারকারেসহ আরও কয়েকজন পুলিশকর্মী। কনস্টেবল অরুণ যাদবের বুদ্ধিমত্তা আর পুলিশ অফিসার তুকারাম ওম্বলের অসীম সাহসিকতায় কাসাবকে ধরে ফেলা সম্ভব হয়। তুকারাম মারা গেলেও প্রাণে বেঁচে যান অরুণ যাদব। তুকারামকে তার সাহসিকতার জন্য অশোকচক্রে সম্মানিত করা হয়েছিল। জনপ্রিয় লিওপোল্ড ক্যাফেতেও হামলা চালায় জঙ্গিরা। মারা যান ১০ জন নিরপরাধ মানুষ। হামলা চালানো হয় তাজ হোটেল এবং ট্রাইডেন্ট হোটেলেও। শুধু তাজমহল হোটেলেই ছয়টি বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। প্রথম দিন, রাতের অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে কোনোরকমে ২০০ জন পণবন্দীকে উদ্ধার করেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু ভিতরে জারি ছিল হত্যালীলা। ৪২ ঘণ্টা পর ২৮ নভেম্বর জঙ্গিমুক্ত হয়েছিল ওবেরয়-ট্রাইডেন্ট। 

নরিম্যান হাউসে ইহুদিদের একটি ধর্মীয় পপ্রতষ্ঠানের দখলও নিয়েছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের হটাতে হেলিকপ্টার থেকে নরিম্যান হাউসের ছাদে নামেন এনএসজি কমান্ডোরা। দুই জঙ্গিকে হত্যা করা গেলেও এতে প্রাণ হারান একজন ভারতীয় কমান্ডো। জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান ছয়জন সাধারণ মানুষ। আজমল কাসাব ছাড়াও মুম্বাই পুলিশ ফাহিম আনসারী ও সাহাবুদ্দিন নামে আরও দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি মুম্বাই হামলায় আরও যারা জড়িত তাদের অপরাধের মাত্রা উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ডেভিড কোলম্যান হেডলি মুম্বাই হামলার জন্য ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে জঙ্গিদের কাছে পাঠায়। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির রিপোর্ট, পুরো হামলার পরিকল্পনা করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। হামলা চালায় লস্কর-ই-তৈয়্যবা। পাকিস্তানের আইএসআই জঙ্গি দলকে সব ধরনের লজিস্টিক ও টাকা দিয়ে সাহায্য করে। সাজিদ মজিদ ও ওয়াসি লস্কর-ই-তৈয়্যবা থেকে হামলা সমন্বয় করে। মুম্বাই থেকে ডেভিড কোলম্যান হেডলি পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্ট মেজর ইকবালের সঙ্গে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা করে। ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির দাবি, মেজর ইকবাল, সাজিদ মাজিদ, হাফিজ সাইদ, জাকির-উর রহমান  মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার পুরো পরিকল্পনাটি সাজায় ও নৃশংস হামলা চালায়।

২০১১ সালে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির বিশেষ কোর্ট মুম্বাই হামলায় জড়িতদের ওপর একটি ওয়ারেন্ট জারি করে। অজামিনযোগ্য এই ওয়ারেন্টে মোট নয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে দুজন যুক্তরাষ্ট্রের ও সাতজন পাকিস্তানের নাগরিক। সন্ত্রাসীরা হলো- ১) ডেভিড কোলম্যান হেডলি (যুক্তরাষ্ট্র) ২) তহাউর হুসেইন রানা (যুক্তরাষ্ট্র) ৩) হাফিজ মুহাম্মদ সাইদ ৪) জাকির-উর রহমান লকভি ৫) সাজিদ মজিদ ৬) আবদুর রহমান হাসিম সাইদ ৭) মেজর ইকবাল ৮) মেজর সামির আলী এবং ৯) ইলিয়াস কাশ্মীরি।

আজমল কাসাব। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জন্ম নেওয়া কাসাবের বয়স তখন মাত্র ২১ বছর। কাসাব ও তার জঙ্গি সহযোগী ইসমাইল মিলে মুম্বাইয়ে ৭২ জনকে  হত্যা করে। একমাত্র তাকেই জীবিত গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার দেওয়া তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় কারা এই হামলার পরিকল্পনাকারী ও জঙ্গিদের বিস্তারিত। তাকে গ্রেফতারের পর ২০১০ সালের ৬ মে ফাঁসির সাজা শোনায় ট্রায়াল কোর্ট। হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্কের পর ২০১২ সালের ২৯ আগস্ট কাসাবের ফাঁসির সাজা বহাল রাখা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে কাসাব। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। ২১ নভেম্বর তাকে পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। কবর দেওয়া হয় জেলের মধ্যেই।

মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাইদকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে পাকিস্তানের আদালত। জামাত-উদ-দাওয়া (জেইউডি) প্রধান হাফিজ সাইদ। লাহোরের সন্ত্রাস-দমন আদালতে একাধিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। এ ছাড়া আরও দুটি নাশকতামূলক ঘটনায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে পাকিস্তানের আদালত। হাফিজ সাইদকে পাকিস্তানের কারাদন্ড দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে মাসে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে আর্থিক মদদ দেওয়ার অভিযোগে হাফিজ এবং তার সহযোগীদের ১১ বছরের কারাদন্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হাফিজকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ ও আমেরিকা। ২০০৮ সালে মুম্বাইতে জঙ্গি হামলায় প্রধান চক্রী ছিলেন হাফিজ সাইদ। এদিকে গত বছর জুলাইতে জঙ্গিদের অর্থ জোগানের অভিযোগে গ্রেফতার হয় হাফিজ। সে এখন কোর্ট লাখপত জেলে বন্দী রয়েছে।

ভারতের মুম্বাইয়ে জঙ্গি হামলায় অভিযুক্তদের বাঁচাতে নানা ধরনের কৌশল নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ভারতের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ দাখিল করার পরও পাকিস্তান অভিযুক্ত জঙ্গিদের বিচার দীর্ঘায়িত করে। অভিযুক্ত জঙ্গি হাফিজ সাইদ যিনি লস্কর-ই-তৈয়্যবার প্রধান তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ হাফিজ সাইদের মাথার দাম ১ কোটি ডলার ঘোষণা করে।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কড়া বার্তার পর আদালতের নির্দেশে লাহোরে গৃহবন্দী হন সাইদ। তখন সাইদ ও তার চার সহযোগীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক করা হয় ৯০ দিনের জন্য। পরে দুবার আটকাদেশ বাড়ানো হয়। অভিযোগ ওঠে, হাফিজ সাইদকে গ্রেতারের নামে একটি গেস্ট হাউসে আয়েশে রাখা হয়। তার কারাজীবন কতটা বিলাসী ছিল তার নমুনা, জেলে থেকেও তিনি সন্তানের বাবা হন। গণমাধ্যমের খবরে উঠে আসে, মুম্বাই হামলার পাঁচ বছর পর পুরস্কার হিসেবে পাকিস্তানি সরকার তাকে ৬০০ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি অনুদান দেয়। এ ছাড়া হাফিজ সাইদ এবং তার জঙ্গি দলকে আড়াই কোটি রুপি দামের বুলেট প্রুফ গাড়ি দিয়েছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা। আরেক অভিযুক্ত জঙ্গি জাকির-উর রহমান লকভিকে পাকিস্তান সরকার গ্রেফতার করে। কিন্তু তার বিচার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সিন্ধ হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান এবং মামলা থেকে বের হয়ে আসেন। পাকিস্তানি সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের রিভিউ পিটিশনও করেনি। এ ছাড়া মুম্বাই হামলার সঙ্গে যারা অভিযুক্ত তাদের বিষয়ে পাকিস্তানকে নীরব থাকতে দেখা যায়। এমনকি পাকিস্তান উল্টো এই হামলায় অন্য দেশের জঙ্গিরা জড়িত বলে নানা প্রমাণ ও যুক্তি তুলে ধরে দৃষ্টি সরাতে চেয়েছে।
এদিকে জঙ্গিদের অর্থায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স বা এফএটিএফের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে পাকিস্তান। এফএটিএফের অধিবেশনে কালো তালিকাভুক্ত করা হতে পারে পাকিস্তানকে। তাই আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি কিছুটা স্বচ্ছ করার তাগিদে ইসলামাবাদ সম্প্রতি মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হাফিজ সাইদকে আরও ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে।

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ভারত ছাড়াও আরও অন্তত ১৬টি রাষ্ট্রের নাগরিকরা ছিলেন- যেগুলোর প্রায় সবই পশ্চিমা দুনিয়ার দেশ। গুরুতর জখম হয়েছিলেন আরও অন্তত সাতটি দেশের নাগরিকরা। এদের প্রায় সবাই ছিলেন তাজমহল প্যালেস হোটেল বা নরিম্যান পয়েন্টে ওবেরব হোটেলের অতিথি - কিংবা তারা খেতে এসেছিলেন কোলাবার লিওপোল্ড ক্যাফে রেস্তোরাঁয়।

২৬/১১ নামে পরিচিত এই হামলার দশম বর্ষপূর্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও এই হামলাকে বর্বরোচিত বলে বর্ণনা করে ঘোষণা করেছেন, ওই ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করা যাবে এমন কোনও তথ্য দিতে পারলে ৫০ লক্ষ ডলারের ইনাম মিলবে। কিন্তু এই ধরনের প্রতীকী কিছু ঘোষণা ছাড়া বিদেশি রাষ্ট্রগুলো এই হামলার ক্লোজারের জন্য আসলে তেমন কিছুই করেনি। 

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ