মিরসরাইয়ে ‘তাল বেগুন’ চাষে কৃষকের মুখে হাসি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:১৭

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেগুন চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। দিন দিন চাষের পরিধি বাড়াচ্ছেন তারা। এখানকার উৎপাদিত বেগুন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বছরে অন্য সবজি চাষ করলেও শীত মৌসুমে বেগুন চাষ করেন অনেকেই। অনেকে আধুনিক পদ্ধতিতে উচ্চ ফলনশীল ‘তাল বেগুন’ চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১২০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে ‘তাল বেগুন’। উপজেলার জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নে বেশি বেগুন আবাদ হয়েছে। গত একমাস ধরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত বেগুন। এখনো পর্যন্ত দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি।

দেখা গেছে, দুর্গাপুর ইউনিয়নের হাজীশ্বরাই ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নের পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় বেগুন ক্ষেতে কাজ করছেন কৃষকেরা। কেউ ক্ষেতে পরিচর্যা করছেন, কেউ বেগুন তুলছেন আর কেউ বাজারে নেওয়ার জন্য টুকরিতে ভরছেন। আবার কয়েকজন কৃষক নিজের গ্রামের দোকানের সামনে পাল্লায় বেগুনের ওজন পরিমাপ করছেন।

পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকার কৃষক শাহ এমরান সেলিম বলেন, ‘আমি ৫০ শতক জমিতে তাল বেগুন আবাদ করেছি। এতে ৪৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩২ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। পাইকারিভাবে প্রতি কেজি বেগুন ৪৫-৪৭ টাকা দরে বিক্রি করছি। আরও প্রায় ২ মাস বিক্রি করতে পারবো। এভাবে দাম থাকলে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার বেগুন বিক্রি সম্ভব হবে। আমি ৬-৭ বছর ধরে তাল বেগুন চাষ করছি। বছরের অন্য সময় বরবটি, মরিচ, আখ, ক্ষিরা, করলা, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করি।’

কৃষক নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘এবার ৭২ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছি। প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরই মধ্যে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। কয়েকদিন আগে একসঙ্গে ২৭ হাজার টাকা বেগুন বিক্রি করেছি। গাছ থেকে বেগুন তুলে বাজারে নেওয়া লাগে না। জমির পাশে এসে পাইকারেরা কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি বেগুন ৪৭ টাকা দরে বিক্রি করছি। আবহাওয়া ও দাম ঠিক থাকলে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষিকাজের আয় দিয়ে পড়াশোনা করে ২ ছেলে এখন চাকরি করছে। এখনো পড়াশোনা করছে আরও ২ ছেলে। ৫ মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে কিছু জায়গা বিক্রি করতে হয়েছিল। কৃষি খাতের আয় দিয়ে গত কয়েক বছরে কিছু জমি কিনেছি।’

তাল বেগুন চাষে কোনো রোগবালাই বা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আপনাদের? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষকেরা বলেন, ‘তাল বেগুনের গাছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয়। যার জন্য প্রতিদিন আমাদের গাছে পরিচর্যা ও সাপ্তাহে ৩-৪ দিন কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।’

পাইকার জানে আলম বলেন, ‘মিরসরাইয়ে এখন অনেক বেগুনের চাষ হয়। এখানকার বেগুন মানের দিক থেকেও উন্নত। যার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ব্যাপক চাহিদা আছে। আমরা বেগুন কিনতে আসার আগের দিন ফোনে কৃষককে বেগুনের দাম জানিয়ে দিই। পরদিন এসে ওজন করে ভালোভাবে বাজারজাত করে বিভিন্ন আড়তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, তাল বেগুন লাভজনক হওয়ায় মিরসরাইয়ে দিন দিন আবাদ বাড়ছে। প্রতিটি বেগুনের ওজন ৪শ থেকে ৮শ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্থানীয় ও বাইরের বাজারে এ বেগুনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা সারা বছরই ভালো দাম পান। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে রয়েছে। আমি নিজে মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া পরামর্শ ও সহযোগিতা করার জন্য ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

এবিএন/দিদারুল আলম/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ