আজকের শিরোনাম :

ম্যানগ্রোভ বনায়নে প্রকৃতিতে গড়ে তুলেছে নিরাপত্তাবেষ্টনী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:১২

ভোলায় ৬৫ হাজার ৩১৮ হেক্টর ভূমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন প্রকৃতিতে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী নিরাপত্তাবেষ্টনী। বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা ছোট বড় চর এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় সবুজের এমন সমারহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বুক পেতে রক্ষা করে উপকূলবাসীকে। বাইন, কেওড়া, ছইলাসহ বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় রাখছে বিশেষ অবদান। 

জেলায় সব মিলিয়ে বনায়ন রয়েছে ভূমির ৩৩ শতাংশ এলাকায়। যা দেশের গড় বনাঞ্চলের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর ভোলায় দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন সৃজন করা হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন প্রাণিকুলের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি হয়েছে। গড়ে উঠছে জীব বৈচিত্র্যের আধার হিসেবে।

স্থানীয় বন বিভাগ জানায়, জেলায় মোট সৃজনকৃত বনায়নের মধ্যে ম্যানগ্রোভ কেওড়া, বাইনসহ মোট ৬০ হাজার ৩৮৬ হেক্টর। ম্যানগ্রোভ গোলপাতা রয়েছে এক হাজার ৬৬৪ হেক্টর। এনরিচমেন্ট, বাফার, মাউন্ড, ডাইক, ঝাউ ইত্যাদির বনায়ন রয়েছে ৩ হাজার ২৬৮ হেক্টর। এছাড়া স্ট্রীপ বাগান রয়েছে দুই হাজার ১১৩ কিলোমিটার। বর্তমান সরকারের আমলের গত ১৫ বছরে ম্যানগ্রোভ বনায়ন হয়েছে ১৭ হাজার ৬’শ ৫০ হেক্টর। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় সক্ষমতা তৈরি হচ্ছে প্রকৃতিতে। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায়, এখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে।

এ ব্যাপারে ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মূলত প্রাকৃতিক ঝড়ের উৎস সাগর থেকে হয়। যখন এটি তৈরি হয়, তখন সবুজ বনায়ন ঝড়ের বাতাসের গতি কমাতে সহায়তা করে। যার কারণে মূল ভ’খন্ডে বাতাসের গতি কমে যায়। ফলে বাড়ি, ঘর, বিভিন্ন স্থাপনাসহ জান-মালের ক্ষয় ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়। গত কয়েক বছর ধরে ম্যানগ্রোভের সুফল উপকূলবাসী পাচ্ছে। তাই গ্রিন বেল্ট তৈরি করাই আমাদের প্রধান কাজ।

তিনি বলেন, ম্যানগ্রোভের ফলে চরগুলোর মাটি শক্ত হয়ে স্থায়িত্ব পাচ্ছে। যেখানে বন থাকে সেখানে বন্য প্রাণী থাকবে। তাই আমাদের সৃজনকৃত বনায়নেও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। শীতের অতিথি পাখি, হরিণ, বানর, বন বিড়াল, শিয়াল, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এখানে। বিশেষ করে শীতের সময় মনপুরা, ঢালচর, চর জহিরুদ্দিন, চর কুকরি-মুকরিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর অতিথি পাখি দেখা যায়। এর সঙ্গে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতেও আমরা কাজ করছি।

মনপুরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার বলেন, ভোলার মধ্যে সবচে দুর্যোগ প্রবণ উপজেলা মনপুরা। পূর্বে এ উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হতো। কিন্তু ম্যানগ্রোভ বনায়নের ফলে গত কয়েক বছর ক্ষতি কমে গিয়ে মানুষের জান-মাল রক্ষা পাচ্ছে। একই সঙ্গে মাটি শক্ত হয়ে চরের জমি টেকসই হচ্ছে। তাই তার উপজেলায় জেগে উঠা চরগুলোতে আরও বনায়নের দাবি জানান তিনি।

মনপুরার হাজির হাটের জেলে ইউসুব আলী, লোকমান মিয়া ও রহিম মাঝি বলেন, আগে শক্তিাশালী ঝড় হলে ঘরের চাল বা ঘর উড়ে যেত। মানুষসহ অনেক গবাদি পশুর মৃত্যু হতো। কিন্তু এখন ক্ষতি হলেও এতটা হয়না। তাই কিছুটা হলেও নিরাপত্তা ফিরে এসেছে তাদের জীবনে।

ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, আমাদের এ দক্ষিাণাঞ্চল ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। প্রতি বছরই এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। ৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। যত ঝড়ঝঞ্জা হয়, সব ম্যানগ্রোভের উপর দিয়ে যাচ্ছে। মানুষ কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমাদের এ সবুজায়নের জন্য সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ প্রশংসিত। এটি সরকারের অনেক বড় একটি অর্জন।

জেলার বন বিভাগের প্রধান আরও জানান, নতুন জেগে ওঠা চরে আমরা প্রতিবছরই বনায়ন করছি। বনায়নের প্রথম তিন বছর আমরা সরাসরি বিভিন্নভাবে এসব গাছের মনিটরিং করে থাকি পরিচর্যার জন্য। তিন বছরের মধ্যে গাছ মজবুত হলে তেমন আর পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। আগামীতে এ জেলার জন্য আরো ব্যাপক আকারে বনায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে যেসব চরে এখোনো বনায়ন হয়নি, সেখানে বনায়ন করা হবে। এ ছাড়া সুন্দরী, গরান, গেওয়াসহ অনান্য জাত আরো বেশি রোপণের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

এবিএন/এসএ/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ