মানিকগঞ্জে চলছে ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের মেলা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪:৫৪

শ্যামল নির্মল ঐতিহ্যে মানিকগঞ্জ প্রতিপাদ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (বিজয় মেলা প্রাঙ্গণ) প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী হাজারি গুড়ের মেলা। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এ মেলা চলবে শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মেলার উদ্বোধন করেন (মানিকগঞ্জ ৩) আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক।

জেলা ব্র‌্যাডিং পণ্য দেশের ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং দেশব্যাপী এটি ছড়িয়ে দিতে প্রথমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক। অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী ও হাজারি গুড় উৎপাদনকারী মোজাফ্ফর হোসেনসহ প্রমুখ।

আয়োজকরা জানান, শীত এলে এ দেশের গ্রামের বাড়িগুলোয় পিঠা পায়েস তৈরির আয়োজন শুরু হয়। এমন দিনে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়। আর হাজারি গুড় হলে তো কথাই নেই। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে মানিকগঞ্জের এই হাজারি গুড়।

মনভোলানো স্বাদের পাশাপাশি হাজারি গুড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, হাতে নিয়ে চাপ দিতেই গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যায়। হাজারি গুড় তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধু দেশেই নয়, এই গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশের বাইরেও। এই গুড়ের নামেই মানিকগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে লোকসংগীত আর হাজারি গুড়, মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক মন্ত্রী সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক বলেন, বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ হচ্ছে পিঠা পায়েস। হাজারি গুড় শুধু খাওয়ার জন্যই নয়, এ গুড়ের পিঠা পায়েসের স্বাদও লোভনীয়। এই হাজারি গুড়ের মেলার কারণে আজ মানিকগঞ্জের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। এর জন্য কাজ করতে হবে। যারা হাজারি গুড় তৈরি করে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। হাজারি গুড় তৈরির প্রধান উপাদান কাচারসের অভাব রয়েছে। এর জন্য প্রশাসন উদ্যোগ নিয়েছেন খেজুর গাছের চারা লাগানোর। যদি মানিকগঞ্জে নতুন করে ১২ লাখ গাছের চারা লাগানো হয় ও তা থেকে রস সংগ্রহ করা যায় তবে কয়েক হাজার টন গুড় উৎপাদান করা সম্ভব। সেই গুড় নিজ দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে।

ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, খেজুর গাছের কমে যাওয়ায় হাজারি গুড়ের উৎপাদন কমে এসেছে। খেজুর গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে এ গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এই শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় একটি করে পণ্যকে ব্র্যাডিং করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে হাজারি গুড়কে ব্র্যাডিং করা হয়েছে। এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকার নানান ধরণের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গুড় নিয়ে মেলা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বলেন, শত বছরের লোক সংস্কৃতির ঐতিহ্য এই জেলায়। জেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারি গুড়ও। এই দুই মিলিয়ে জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে লোকসংগীত আর হাজারি গুড়, মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর। হাজারি গুড়ের ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে এই গুড়ের উৎপাদন বাড়ানো এবং নতুন নতুন গাছি তৈরি করতেই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত। মেলার মঞ্চে চলবে লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ও সমাপনী দিন শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে হাজারি গুড়ের মেলা। এই মেলায় ৪০টি স্টলে রয়েছে হাজারি গুড়, খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পিঠা পায়েস মুড়ি মুড়কি পাশাপাশি স্টলে বিক্রি হচ্ছে খেজুর গাছের চারা।

এবিএন/মো: সোহেল রানা খান/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ