খোকসার তিন ইউনিয়নে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২৭

কুষ্টিয়ার খোকসার তিনটি ইউনিয়নে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে শিশু থেকে মধ্যবয়সীর সংখ্যাই বেশী। তিন মাসে উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হলে শীত আসা পর্যন্ত প্রচুর মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ আশঙ্কা করছে।

জুলাই মাসের শুরুর দিকে উপজেলার জানিপুর, শিমুলিয়া ও গোপগ্রাম ইউনিয়নে ব্যপক হারে ডেঙ্গু জ্বর সাথে পেটের ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ শতাধিক ছাড়িয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন। ইতোমধ্যে স্বজল নামের এক যুবক ডেঙ্গুতে মারা গেছে বলে পরিবার দাবি করছে। ডেঙ্গু উপদূর্ত এসব ইউনিয়নের গ্রাম গুলোতে প্রতিকার বা জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে একাধিক জনপ্রতিনিধি দাবি করেন।

স্থানীয় ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলো সূত্রে জানা গেছে, জানিপুর ইউনিয়নের একতারপুর, ঈশ্বরদী ও খাগড়বাড়িয়া গ্রামে প্রায় ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। গত এক সপ্তাহে এসব গ্রাম থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে আসা স্মৃতি, শিমুল, জাকারিয়া, সুনতা, পল্লবী, কামনা ও ইন্দ্রজিতসহ ১৫ জন শিক্ষার্থী শরীরে ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসখ্যান বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, জুলাই মাসে ১২ তারিখ থেকে সেপ্টেস্বরের ৩০ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীর মধ্যে ১০২ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শিশু রয়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রসহ পূর্ন বয়সী ৬৪ জন পুরুষ এবং স্কুল ছাত্রী ও গৃহীনিসহ ৩৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারা সবাই নিজ নিজ গ্রামে বসবাস করেন।

সূত্রটি আরো জানায়, উপজেলা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন শতাধিক ছাড়িয়েছে বলে তারা মনে করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পজেটিভ অধিকাংশ রোগী নিজের বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পড়–য়াদের সংখ্যা বেশী। কৃষি শ্রমিক ও গৃহিনী আক্রান্ত হয়েছে ৪৫ শতাংশ। সোমবার সকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত ১১ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। এ রোগীদের মধ্যে শেষ ২৪ ঘন্টা ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। বাঁকীদের বেশীর ভাগ সুস্থ্য হয়েছে বাড়ি ফিরে গেছেন। অনেকেই রেফার্ড নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরের হাসপাতাল বা কিনিকে চিকিৎসা চলে গেছেন।

জানিপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একতারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। জ্বরের সাথে পেটের ব্যাথা নিয়ে ৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। জ্বরসহ অন্য উপসর্গ নেই তাই বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। পড়া মনে রাখতে পারছে না। মায়ের কাঁধে ভর করে চলা ফেরা করছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমরেুরী বিভাগে কর্তবত চিকিৎসক আবির হোসেন সোহাগ বলেন, গত তিন মাস আগে ডেঙ্গুর বিস্তার শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বিশেষ কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলায় ডেঙ্গুর প্রকপ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। নিয়ন্ত্রন করা না গেলে ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারন করতে পারে।

উপজেরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সোহেল ডেঙ্গু বিস্তারে সংকীত। ডেঙ্গু নির্নয় হলেই সে রোগী কে যথেষ্ট চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্য করা সম্ভব। এখন হাসপাতালে আসা জ্বরের রোগীরদের ৫০ শতাংশের শরীরে ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পরছে। তিনি মনে মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি পরামর্শ দেওয়ার জন্য মাসিক সমন্বয় সভায় প্রথম তুলেছিলেন। আলোচনা হয়েছে। কতটুকু কাজে আসছে বুঝতে পারছেন না। তার কাছে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়ার কোন তথ্য নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মাধ্যেমে জনসচেনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা বিষয়ে নিশ্চিত করেন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষার ৫০টি কিট আনার হয়েছে বলে দাবিও করেন। মাশাদের জন্ম স্থান নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া ডেঙ্গুতে কেউ মারা গেছেন বলে তিনি শোনেন নাই।

এবিএন/সুমন কুমার মন্ডল/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ