মালয়েশিয়ার কথা বলে ১২ যুবককে মিয়ানমারে বন্দি রেখে নির্যাতন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৫

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ যুবককে মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে মিয়ানমারে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। পরে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ বাবদ পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে একটি দালাল চক্র। মুক্তিপণ না পেয়ে দালাল চক্রটি ওই যুবকদের ওপর নির্যাতন করে মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

মিয়ানমারের কারাগারে বন্দি যুবকরা হলেন-  উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মো. নাদিম, চৈতনকান্দার রতন মিয়া, একই গ্রামের আছান, উলুকান্দির মো. মনির হোসেন, বিশনন্দীর মো. সজীব, মো. কবির হোসেন, শরিফপুরের মো. জুয়েল, কড়ইতলার মো. বিল্লাল হোসেন, বিশনন্দী পশ্চিমপাড়ার মো. সজীব, চৈতনকান্দার সাফায়েত হোসেন, মো. সফিকুল এবং মো. রফিকুল ইসলাম।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১২ যুবকের পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্তির দাবিতে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। তবে আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে মালয়েশিয়ায় জিম্মি থাকা অবস্থায় দালাল চক্রের নির্যাতনে নিহত হন আমিনুল (৩৯) নামে যুবক। এসব ঘটনায় আড়াইহাজার থানা পুলিশ আবুল হোসেন নামের দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারও করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারি একটি চক্র ও তাদের স্থানীয় এজেন্টরা দীর্ঘদিন ধরে আড়াইহাজার উপজেলায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। মানব পাচারকারী এই চক্রের ভয়ংকর ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন গ্রামের সহজ সরল তরুণ ও যুবকরা। দালাল চক্রটি স্বল্প টাকার বিনিময়ে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক তরুণ ও যুবককে মিয়ানমারে নিয়ে বন্দি করে রাখে। পরে তাদের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে না পেলে ওই তরুণদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। সম্প্রতি আড়াইহাজার উপজেলার কড়ইতলা, রামচন্দ্রদী, মানিকপুর, চৈতনকান্দা, দয়াকান্দা, টেটিয়া ও শম্ভুপুরা থেকে অনেক যুবককে এভাবে ফাঁদে ফেলে পাচার করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।

মিয়ানমারে আটক থাকা যুবক বিল্লাল হোসেনের মা সেলিনা বেগম ছেলেকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে মিয়ানমারের জেলখানায় আটকে রেখে অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে। আমাকে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করছে ওই দালাল চক্র। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে আমার ছেলেকে মুক্ত করে আনতে পারছি না। আমি আমার ছেলের মুক্তি চাই।

অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও প্রতিষ্ঠান অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এর আড়াইহাজার উপজেলা ফিল্ড অফিসার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, গত রমজান মাসের তিন থেকে সাতদিন আগে আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ যুবককে মিয়ানমারে পাচার করেছে বলে জানতে পারি। পরে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিখোঁজ ও জিম্মি ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ওকাপের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তাদের বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত করেছি। তারা সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

ওকাপের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পাচার করা ওই টীমে মোট সতেরজন যুবক রয়েছেন। তাদের মধ্যে আড়াইহাজারের বারোজন। অপর পাঁচজন যুবক নরসিংদীর। তাদের পরিবারের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি।

এ ব্যাপারে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশতিয়াক আহাম্মেদ বলেন, ওকাপ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। পাচারকৃতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আমাকে দিতে তাদেরকে বলেছি। এটা পেলে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে তার পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ