আজকের শিরোনাম :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত খোকসার মেধাবী শিক্ষার্থী রাজিয়ার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০৫

টাকার অভাবে বাবার লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। শৈশবে এই গল্প শোনার পর অভাবের সাথে বেড়ে ওঠা কাঠ মিস্ত্রীর মেয়ে রাজিয়া সুলতানা উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের স্বপ্ন বুনতে থাকে। সেভাবেই প্রস্তুতি চালায়। চলতি শিক্ষা বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু ভর্তি ও পড়া লেখা চালিয়ে যাওয়ার টাকা নিয়ে তার পরিবারের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার পাইকপাড়া মির্জাপুর গ্রামে হতদরিদ্র কাঠ মিস্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও সেলিনা খাতুন দম্পতির মেয়ে রাজিয়া সুলতানা। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষে আলহাজ্ব সাইদুর রহমান মন্টু মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। দারিদ্রতার সাথেই বেড়ে ওঠা রাজিয়া পড়েছে বানিজ্য বিভাগে। প্রথম শ্রেণি থেকে সব ক্লাসেই তার রোল ছিল এক। পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসিতে কৃতিত্বে সাথে জিপিএ ৫ সহ পাশ করেছে। কলেজে বানিজ্য শাখায় ভর্তি হয়। অন্য দিকে তার একমাত্র ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম রাজুকে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহ পলিটেকনিক্যাল ইনিষ্টিটিউটে। দুই সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় চালাতে চরম টানাপরনের মধ্যে পরেন কাঠ মিস্ত্রী বাবা রাজ্জাক। একমাত্র মেয়ে রাজিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটে মেধা তালিকায় ৯১৫ তম স্থান অধিকার করে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি যেমন আনন্দিত হয়েছেন। অন্যদিকে মেয়ের ভর্তি ও লেখা পড়া চালানোর খরচের টাকার যোগান নিয়ে তার চিন্তার অন্ত নাই।

কাঁথা তৈরীর কারিগর মা সেলিনা খাতুন মেয়ের ভর্তির টাকা নিয়ে খুবই দুচিন্তায় আছেন। প্রতিবেশীর এক ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মোবাইল ফোনে তার কাছ থেকে ভর্তি ও খরচ সম্পর্কে জেনেছেন। চলতি মাসের ১৮ তারিখে ভর্তি চুড়ান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। পরবর্তিতে আরো প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকা জোগার করবেন কি ভাবে এ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।

সেলিনা খাতুন জানান, মেয়েকে ঢাকায় রেখে পড়াতে প্রতিমাসে ৮/৯ হাজার টাকা লাগবে। অন্য দিকে ছেলের জন্য ৬ হাজার টাকা পাঠাতে হচ্ছে। এ টাকা উৎস্য নিয়ে তিনি খুব ভাবছেন।

রাজিয়া সুলতানা জানান, টাকার অভাবে তার বাবা তৃতীয় শ্রেণি পর আর পড়তে পারেনি। সরকারী চাকুরি করা বন্ধুদের সাথে বসতে লজ্জা পান। এই গল্প শোনার পর থেকে সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সংকল্প করেন। বাবা মায়ের উপর চাপ কমাতে নিজে পড়া লেখার পাশা পাশি ছোট ভাই ও প্রতিবেশী ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ায়।

উচ্চ মাধ্যমিকে ৪.৯২ পেয়ে পাশ করায় তার স্কোর সমস্যা হয়। এ কারণে পছন্দের সাবজেক্টে (বিষয়ে) ভর্তি হতে পারছে না। তবে বানিজ্য শাখায় ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে ভর্তি হবে বলে মনোস্থির করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াসহ শিক্ষা জীবনের সাফল্যের পেছনে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশী রয়েছে বলে সে জানায়।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ভর্তির সময় একবারে প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাগবে। এতো টাকা তিনি জোগার করবেন কিভাবে? দুই বচ্চার লেখা পড়ার খরচ যোগাতে তাকে এখন দিন রাত কাজ করতে হবে।

তিনি আরো জানান, ক্লাসের এক বন্ধুর পরীক্ষার খাতায় অঙ্ক করে দেওয়ায় শিক্ষক তাকে মেরেছিলেন। সেই বন্ধু সরকারি চাকুরী করে। কিন্তু টাকার অভাবে পড়ালেখা ছেড়ে তিনি হয়েছেন কাঠমিস্ত্রী। চাকুরী করা বন্ধুদের সাথে মিশতে লজ্জা পান। তাই নিজের সন্তান দুটিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন।

এবিএন/সুমন কুমার মন্ডল/জসিম/গালিব

এই বিভাগের আরো সংবাদ