সিরাজগঞ্জে এলজিইডির তত্বাবধায়নে খাল পুনঃখননের কাজ সমাপ্তির পথে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ১৯:০৭

সিরাজগঞ্জের শয্য ভান্ডার খ্যাত তাড়াশ উপজেলায় টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খাল পুনঃখননের কাজ শুরু হয়েছে। ওই উপজেলার বারুহাস ও তালম ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী খালে এ দুটি প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই সমাপ্তির পথে। ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজগঞ্জের তত্বাবধায়নে এ দুটি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

এলজিইডি সিরাজগঞ্জের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী ছাবের আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জনস্বার্থে এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উল্লেখিত টাকা বরাদ্দ দেয়। এলজিইডি অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জ তত্বাবধায়নে সরকারি বিধিমতে চলতি বছরের মার্চ মাসের প্রথম থেকে এ প্রকল্প দুটির কাজ ওই দুটি ইউনিয়নের উত্তর ভদ্রাবতী পানি নিষ্কাশন সমবায় সমিতি ও দক্ষিণ ভদ্রাবতী পানি নিষ্কাশন সমবায় সমিতি যৌথ উদ্যেগে শুরু করে। এ সমিতি দুটির নারী পুরুষ মিলে উপকারভোগী সদস্য সংখ্যা ৩০৮১ জন ও প্রকল্প দুটির উপকৃত এলাকা ১৭’শ হেক্টর জমি এবং ইতিমধ্যেই এ প্রকল্প দুটির ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ খাল দুইটি চলনবিল অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল এলাকায় হওয়ায় বগুড়ার সিংহভাগ পানি ও সংশ্লিষ্ট খালের পার্শ্ববর্তি এলাকার পানি এ খাল দুটি দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওই বিলের মধ্যেবর্তি বেসানি নদিতে পতিত হয়। অতি বৃষ্টিতে আগাম বন্যায় এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ১৫’শ হেক্টর আবাদি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। এতে কৃষকেরা একের অধিক ফসল/শস্য উৎপাদন করতে পারেনা। 

বর্তমানে খাল দুটির খনন কাজ বিভিন্ন জায়গায় ক্ষনস্থায়ী বাধ দিয়ে সম্পূর্ন পানি নিষ্কাশন করে পুনঃখনন কাজ চলছে। খাল দুটির পুনঃখনন কাজ স্থানীয় উপকারভোগীদের সমন্বয়ে সমবায় আইন দ্বারা গঠিত এবং বাংলাদেশ সমবায় অধিদপ্তর এর নিবন্ধিত পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যদের নিয়ে গঠিত মোট ৪২ টি এলসিএস গ্রুপ কর্তৃক খাল পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ের জনগনের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্তৃক এ সকল প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট উপ প্রকল্প দুটিতে প্রায় তিন হাজার স্থানীয় সদস্য রয়েছে যার মধ্যে প্রায় দেড় হাজার সদসদের নিয়ে এলসিএস গ্রুপ করা হয়েছে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে খাল পুনঃ খনন কাজের সাথে সরাসরি সংপ্রিক্ত রয়েছে। সর্বোপরি সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আগাম বন্যার হাত থেকে কৃষকের ফসলী জমি রক্ষা ও প্রান্তিক জনগষ্ঠির আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য উপ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ওই উপজেলার প্রায় ১৫’শ হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় তিন ফসলি জমি পরিণত হয় এক ফসলে। খালটি পুন:খননের দাবিতে এলাকার কৃষক বছরের পর বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে কৃষকের এ দূরবস্থা নিরসনে এলজিইডি উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় খাল দুটি পুন:খনন শুরু করায় সরাসরি উপকৃত হবে এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর আবাদি জমি এবং উৎপাদিত হবে দুই থেকে তিন ফসল শয্য। এজন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এলজিইডি, ভূগর্ভস্থ পানির উপড় চাপ হ্রাস করে ভূ-উপরিস্থ পানি সেচের আওতায় এনে উল্লেখিত টাকা ব্যয়ে ওই দুটি ইউনিয়নের চৌধুরী বাড়ী জামে মসজিদ থেকে রানীরহাট ব্রিজ প্রর্যন্ত প্রায় ২৭.৫০ কিঃ মিটার খাল পুন:খননের কাজ শুরু করা হয়। 

এরআগে খালটি উদ্ধারসহ পুন:খননের দাবিতে আন্দোলনে নামেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। কৃষকের এ দাবিতে এগিয়ে আসে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খালটি পুন:খনন সম্পন্ন হলে প্রায় ১৫৫০ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। এক ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হবে এবং জলাবদ্ধতা দূর হবে। এতে করে প্রায় ২৪৫০ মে. টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন হবে। কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে প্রায় তিন হাজার কৃষক লাভবান হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় আদর্শ কৃষকেরা বলেন, খাল দুটি খনন সম্পন্ন হলে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হবে এবং জলাবদ্ধতা দূর হলে জমিতে তিন ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে এবং এ খাল দুটি খননে এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান তারা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার জনস্বার্থে ওই খাল দুটি পুন:খননের জন্য উল্লেখিত টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। সরকারি বিধিমতে এ খাল দুটি পুন:খননের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে। 

এ কাজ শুরু থেকেই কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলী বিভাগের কর্মকর্তারাও গুরুত্ব সহকারে এ প্রকল্পের কাজ দেখাশনা করছে এবং জুন মাসের মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবু সালেহ মো: হানিফ সোমবার দিনভর প্রকল্প দুটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ প্রকল্প দুটির কাজ বাস্তবায়ন হলে কৃষকেরা উপকৃত হবে এবং ফসল উৎপাদনে আরো বৃদ্ধি পাবে। এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট এলজিইডি বিভাগকে দিক নির্দেশনা  দিয়েছেন। এ সময় এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন  মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন। 


এবিএন/এস,এম তফিজ উদ্দিন/জসিম/তানভীর হাসান

এই বিভাগের আরো সংবাদ