আজকের শিরোনাম :

লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুন

লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুন : সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায় অস্ত্রহাতে ৮ যুবক

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১১

লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে ৮ জন যুবককে হেঁটে চলে যেতে দেখা যায় ওই ফুটেজে। তাদের হাতে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র দেখা গেছে।  মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের সময় সিসি ক্যামেরায় ভিডিওটি ধারণ হয়।

স্থানীয়রা জানায়, এদিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পোদ্দার বাজার ব্রিজের পশ্চিম পাশে নাগেরহাট সড়কের মাদরাসাতুল আবরার নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে নোমানের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে নোমানের সঙ্গে থাকা রাকিব ইমামকে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি করাত কলের পাশে গুলি করা হয়।

তারা আরও জানায়, ঘটনার আগেই নোমান পোদ্দার বাজারে ছিলেন। একটি ফোন কল পেয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাবিককে নিয়ে পোদ্দার বাজার থেকে উত্তরে নাগেরহাট সড়কে প্রবেশ করেন। মোটরসাইকেলটি রাকিব চালাচ্ছিলেন। তারা ওই সড়কের করাত কলের পাশে পৌঁছামাত্র অস্ত্রধারীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। এতে রাকিবের মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলির আঘাত লাগে। নোমান আত্মরক্ষার্থে মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌঁড়ে উল্টো দিকে বাজারের উদ্দেশ্যে আসতে থাকেন। বিপরীত দিক থেকে কয়েকজন অস্ত্রধারী তাকে ধরে ফেলে। এ সময় তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ সড়কের পাশে থাকা খাল পাড়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় খুনিরা।

বাজারের লোকজন জানায়, ঘটনার সময় তারা তিন থেকে চারটি গুলির শব্দ পেয়েছে। রাকিব ঘটনাস্থলে জীবিত ছিলেন। স্থানীয়রা তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে পোদ্দার বাজারের ভাই ভাই হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে রাকিবকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানোর পথে রাত পৌনে ১২ টার দিকে নোয়াখালীর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে যুবলীগ নেতা নোমানকে পৃথক আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
এদিন রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদিকে প্রধান আসামি করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নোমানের ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান। মামলায় ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৪-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।  

হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ইসমাইল পাটোয়ারী, মো. সবুজ ও আজিজুল ইসলাম বাবলুকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া রুবেল নামে আরও একজনকে আটক করেছে র‍্যাব।

বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব-১১ নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মাহমুদুল হাসান ও জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ পৃথক পৃথক ভাবে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
 
স্থানীয় সূত্র জানায়, বশিকপুর ইউনিয়নের উষিয়াকান্দি গ্রামের বড় বাড়ির মৃত আবুল কাশেমের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান। তার বড়ভাই বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান, মেঝোভাই মিজানুর রহমান মাকছুদ। তিনি ইতালি প্রবাসী। নোমান ২০১৩ সালে বশিকপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের ২ অক্টোবর তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্প্রতি নোমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

নোমানের বোনের মেয়ে উর্মি বেগম বলেন, গত ৫ এপ্রিল নোমান ওমরাহ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে যান। তিনি দেশে ফেরেন ২০ এপ্রিল। ঢাকার বাসায় থেকে ২১ এপ্রিল (শুক্রবার) ঈদে গ্রামের বাড়িতে আসেন নোমান। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ঘটনার দিন দুপুরে নোমান বাসা থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরে যাননি। রাতে তিনি নিহত হন।

এবিএন/শংকর রায়/জসিম/পিংকি

এই বিভাগের আরো সংবাদ