আজকের শিরোনাম :

যেভাবে টাঙ্গাইলের যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার পেলো মেয়েটি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৪

মেয়েটিকে 'এনার্জি ড্রিংক'-এর সাথে কিছু মিশিয়ে তা পান করিয়ে অচেতন করা হয়েছিল এবং যৌন-পল্লীতে আটকে রেখে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছিল।

টাঙ্গাইলের একটি যৌনপল্লীতে আটক একটি মেয়ে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হওয়ার পর কিশোরী ওই মেয়েটি নিজেই খুঁজে নিয়েছে মুক্তির পথ।

পুলিশ বলছে, জাতীয় জরুরি সেবাদানকারী নম্বরে ফোন করে জানানোর পর তাকে উদ্ধার করা হয়। যদিও পুলিশ বলছে একজন 'খদ্দের'-এর কাছ থেকে ফোন পেয়ে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে, তবে উদ্ধার হওয়া মেয়েটি বলছে যে সে নিজেই ফোনটি করেছিল।

মেয়েটির বয়স ১৫ বছর (সঙ্গত কারণে তার নাম পরিচয় উল্লেখ করা হচ্ছে না)। তিন মাস ধরে তাকে ওই যৌনপল্লীতে আটকে রাখা হয়েছিল। বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে উদ্ধারের ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার।

পুলিশ জানিয়েছে, 'একজন খদ্দের' তাকে মুক্ত করার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা-দানকারী নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে ।

তবে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে মেয়েটির সাথে যোগাযোগ করা হলে সে জানিয়েছে, সে নিজেই ফোন করেছিল ৯৯৯ নম্বরে। একজন বন্ধুর কাছ থেকে সে জানতে পেরেছিল এখানে ফোন করলে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।

কী বলছে পুলিশ?

জাতীয় জরুরি সেবার পুলিশ সুপার মোঃ তবারকউল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "মঙ্গলবার বেলা ১১টা দুই মিনিটে 'একজন কলার' আমাদের ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। স্থানীয় বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে কলটি করা হয়।

একজন ব্যক্তি নিজের পরিচয় প্রকাশ না করে জানান যে, স্থানীয় কান্দাহার যৌনপল্লীর ভেতরে একটি মেয়েকে আটকে রেখে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।"

মি. উল্লাহ জানান, যে 'কলার' ফোনটি করেছিলেন তিনি একজন 'খদ্দের' বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

"ওই ব্যক্তিটি নিজে না জানালেও আমরা জানতে পেরেছি যে, সে ওই যৌনপল্লীতে গিয়েছিল একজন খদ্দের হিসেবে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ওই ফোনটি করেন তিনি"।

পুলিশ সুপার মি: রহমান জানান, "মেয়েটি ঢাকার মিরপুর এলাকায় থাকতো এবং গাবতলি এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতো। তিন মাস আগে একটি ছেলে তাকে নিয়ে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকে তাকে সেখানে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করানো হচ্ছিল।"

তরুণীটির প্রতি মায়া অনুভব করায় তার ওই 'খদ্দের' জাতীয় জরুরি সেবা-দানকারী নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে তাকে উদ্ধার করার জন্য সাহায্য চান বলে তারা মনে করছেন, জানান মোঃ তবারকউল্লাহ।

এরপর জাতীয় জরুরি সেবাদানকারী সংস্থা থেকে নিকটস্থ টাঙ্গাইল সদর থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ সদস্যরা এসআই প্রতিমা বালার নেতৃত্বে দ্রুত ওই যৌনপল্লীতে যায়। এরপর দুপুর নাগাদ মেয়েটিকে উদ্ধার করে আনে স্থানীয় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

কী বলছে মেয়েটি?

বিবিসি বাংলাকে ওই মেয়েটি জানিয়েছে, সে একজন বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পেরেছিল যে জরুরি সেবাদানকারী নম্বরে ফোন করলে সহায়তা মিলতে পারে। এরপর একজন 'খদ্দের' এর মোবাইল ফোন থেকে সে নিজেই মঙ্গলবার সেখানে ফোন করে।

মেয়েটি এখন থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায়।"এখন আমি বাড়িতে চলে যেতে চাই। আমার মা-ভাই আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ গাড়িতে উঠবে"। তবে বাড়ির লোকজন তার জীবনে গত তিনমাসে ঘটে যাওয়া এই খবর জানলে তাকে গ্রহণ করবে না বলে আশঙ্কা কিশোরী মেয়েটির। "আমার বাড়ির লোককে এগুলো জানাবো না। তাদের এগুলো বলা যাবে না, তাহলে তারা আমাকে বাড়িতে নিবে না"

'মেয়েটি স্বেচ্ছায় যৌনপল্লীতে এসেছিল'

স্থানীয় পুলিশ জানায়, কান্দাহার যৌনপল্লীর একদল লোক এসে দাবি করে যে মেয়েটি স্বেচ্ছায় যৌনপল্লীতে এসেছিল। টাঙ্গাইল সদর থানার (ওসি) সায়েদুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, "ওই মেয়েটি স্বেচ্ছায় যৌনপল্লীতে এসেছিল - যৌনপল্লীর লোকজন এই দাবি করে এবং এ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্রও নিয়ে আসে।"

পুলিশ এখন এই দাবির সত্যতা তদন্ত করে দেখছে। তবে মেয়েটি বিবিসি বাংলার কাছে বলেছে, এই ধরনের দাবি কোনভাবেই সত্যি নয়। তাকে 'এনার্জি ড্রিংক'-এর সাথে কিছু মিশিয়ে তা পান করিয়ে অচেতন করা হয়েছিল বলে সে জানায়। পুলিশ বলছে, তারা মেয়েটির পরিবারের সাথে মঙ্গলবার যোগাযোগ করে তার মা ও ভাইকে বুধবার থানায় আসতে বলেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এবিএন/মমিন/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ