আজকের শিরোনাম :

বিশ্বকাপে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যে খেলোয়াড়রা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০১৮, ১৪:৫৭

ঢাকা, ১৩ জুন, এবিনিউজ : কিছু বিশ্বকাপ আছে যা একেকজন তারকার নামের সঙ্গে মিশে গেছে।

১৯৫৮ ও ’৭০ বিশ্বকাপ হয়ে গেছে পেলের বিশ্বকাপ, ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপ দিয়েগো মারাডোনার, ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ যেমন জিনেদিন জিদানের, ২০০২-এর বিশ্বকাপও বলা যায় ন্যাড়ামাথা ব্রাজিলিয়ান রোনাল্ডোর।

এ যুগের সবচেয়ে বড় দুই তারকা আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, আর পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। হয়তো এদের কাছাকাছি ব্রাজিলের নেইমার। কিন্তু এদের কেউই এখনো বিশ্বকাপ জেতেননি। তাই এদের কারো নামের সঙ্গেই এখনো একটি বিশেষ বিশ্বকাপের স্মৃতি মিশে নেই।

লিওনেল মেসি
সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন মেসি- গত বিশ্বকাপে। কিন্তু আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যায় জার্মানির কাছে। 

এবার বিশ্বকাপে কারা হবেন ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেয়া খেলোয়াড়? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গেলে প্রথমেই মনে আসবে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির নাম। বিশ্বকাপ না জিতলেও শুধু ক্লাব ফুটবলে বার্সেলোনার হয়ে তার খেলা দেখেই - অনেক ফুটবল প-িত যাকে শুধু এ যুগের নয়, ‘সর্বকালের সেরা’ ফুটবলারদের একজন বলতে চান।

লিওনেল মেসির বয়স এখন প্রায় ৩১ - হয়তো এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। অবিশ্বাস্য ড্রিবলিং, গতি, সৃষ্টিশীলতা, অসাধারণ পাসিং আর গোল করার ক্ষমতা মিলিয়ে তিনি এখনো যে কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই খেলোয়াড়, কোনো সন্দেহ নেই।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
পর্তুগালের রোনালদো প্রকৃতপক্ষে এ দুজনের মধ্যে মেসি বড় খেলোয়াড়, নাকি রোনালদোÑ এই বিতর্ক বোধ হয় কোনো দিনই শেষ হবে না।

রোনালদো পর্তুগালকে ইউরো জিতিয়েছেন। কিন্তু রোনালদো কি এই পর্তুগাল দলটিকে নিয়ে বিশ্বকাপ জিততে পারবেন? পারলে তা হবে এক অসামান্য অর্জন - মারাডোনার ১৯৮৬-এর বিশ্বকাপ জেতার মতোই।

কিন্তু রোনালদোর পর্তুগালের চাইতে দল হিসেবে হয়তো মেসির আর্জেন্টিনাই এগিয়ে, এমনটাই মনে করেন বেশিরভাগ ফুটবল প-িত।

কিন্তু একা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতায় রোনালদো মেসির চাইতে একটুও কম নন, এ কথাই বলবেন সবাই।

নেইমার
একা ম্যাচ বের করে আনার ক্ষমতা রাখেন ব্রাজিলের নেইমারও এবং তার সাথে আছে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ব্রাজিল দল এবং এবারের ব্রাজিল দলটি গত বিশ্বকাপের চাইতেও ভালো- বলছেন বিবিসির দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল বিশ্লেষক পিয়ের ভিকারি।

তিনি বলেন, ‘গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে ব্রাজিলের হারার কথা কেউই ভুলে যেতে পারবেন না। কিন্তু ওটা একবার ঘটেছে, খুব সম্ভবত আর ঘটবে না। গতবারের দলটি যেমন নেইমারের ওপর নির্ভরশীল ছিল, এবার তা নয়।’

কথাটা সত্যি। কারণ নেইমারের পেছনে মিডফিল্ডার হিসেবে ব্রাজিল দলে আছেন ফেলিপ কুতিনিও, উইলিয়ান, কাসেমিরো, ফার্নান্দিনিও, ফ্রেড বা ডগলাস কস্তার মতো অসাধারণ সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডাররা - যারা নেইমারকে বল জোগান দেবেন।

পিয়ের ভিকারি বলেন, ‘ম্যানেজার হিসেবে তিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্রাজিল ক্রমাগত উন্নতি করেছে, আর নেইমারের এখন যা বয়েস তাতে তিনি তার শ্রেষ্ঠ সময়ের কাছাকাছি আছেন বলা যায়। তাই এবারের ব্রাজিল দলটি হয়তো নেইমারের সেরা খেলাটা খেলার উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে।’

লুইস সুয়ারেজ
বার্সেলোনায় একসময় ত্রিমুখী আক্রমণভাগ গড়ে উঠেছিল মেসি-নেইমার-সুয়ারেজকে নিয়ে। উরুগুয়ে দলে সেই লুইস সুয়ারেজ প্রধান ভরসা এবং সবচাইতে বড় তারকা। তার সঙ্গে আছেন এডিনসন কাভানি।

লুইস সুয়ারেজ মাত্র ১৯ বছর বয়েসে ইউরোপে প্রথম খেলতে আসেন। ইউরোপে তার শুরু ডাচ ক্লাব গ্রোনিংগেন, এর পর আয়াক্স, লিভারপুল এবং সেখান থেকে বার্সেলোনায়। শুরু থেকেই তিনি তার সহজাত গোল করার ক্ষমতা দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন।

এ ছাড়া আলোচিত হয়েছেন অন্তত তিনবার প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কামড়ে দিয়ে।

উরুগুয়ে এবার বিশ্বকাপ জিততে পারে এমন কথা কোনো ফুটবল প-িতই বলছেন না। তবে লুইস সুয়ারেজ এমন একজন খেলোয়াড় - যাকে উরুগুয়ের সব প্রতিপক্ষই সমীহ করে চলবে, কারণ তিনি যে কোন পরিস্থিতিতে গোল করে খেলার ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন।

টমাস মুলার আর মেসুত ওজিল
বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে জার্মানি - তাদের দলে তারকারও অভাব নেই। কিন্তু কেন যেন জার্মান তারকারা অন্যদের মত অতটা বর্ণময় নন। জার্মানদের দলীয় সংহতি আর খেলার শৃংখলা এমনই যে হয়তো একক প্রতিভার দ্যুতি সেভাবে আলাদা করে চোখে পড়ে না।

কিন্তু টমাস মুলার বা মেসুত ওজিলের মত তারকারা যে কোনো ম্যাচের মোড় ঘুরিযে দিতে পারেন।

বায়ার্ন মিউনিখের টমাস মুলার বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ১০টি গোল করেছেন। কে জানে, এবার জ্বলে উঠলে তিনি হয়তো বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৬টি গোলের যে রেকর্ড এখন আরেক জার্মান মিরোস্লাভ ক্লোসার দখলে - তা ভেঙে দিতেও পারেন।

মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল খেলেন ইংলিশ লিগে আর্সেনালের হয়ে ।

দেখা গেছে, যেদিন ওজিল ভালো খেলেন সেদিন তিনিই মাঠের রাজা। আবার একেক দিন এমন হয় যে ওজিল যে মাঠে আছেন এটাই বোঝা যায় না। তাই ওজিল ফর্মে থাকলে প্রতিপক্ষের জন্য তিনি বিরাট বিপদ।

কেভিন ডি ব্রাইনা
বেলজিয়াম দলে এডিন আজার্ড, আর রোমেলু লুকাকু দুই নামি ইংলিশ ক্লাব চেলসি আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলার জন্য সবার পরিচিত তারকা। কিন্তু বেলজিয়াম দলের মিডফিল্ডের আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছেন ম্যানচেস্টার সিটি কেভিন ডি ব্রাইনা - যার আছে মাঠের যে কোন জায়গা থেকে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করার মতো পাস দেওয়ার ক্ষমতা, যা প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙে বলকে এনে দেয় স্ট্রাইকারের পায়ে।

সেদিক থেকে বেলজিয়াম এবার কি করতে পারে তার অনেকখানিই নির্ভর করে কেভিন ডি ব্রাইনা কেমন খেলেন তার ওপর।

পল পগবা
ফ্রান্সের পল পগবা জুভেন্টাসে থাকার সময়ই বিশ্বমানের তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন, কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এসে তিনি এখনো হয়তো ফ্যানদের সেই প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করতে পারেননি।

কিন্তু ফ্রান্সের হয়ে মাঠে হয়তো ভিন্ন এক পগবাকে দেখা যেতে পারে। ফ্রান্স এবার দারুণ এক দল। তাদের স্ট্রাইকারদের মধ্যে আছেন আঁতোয়াঁ গ্রিজম্যান, কাইলিয়ান এমবাপ্পি, ওসমান ডেমবেলে, অলিভার জিরু বা টমাস লিমারের মতো তারকারা।

মিডফিল্ডার হিসেবে এদের বল জোগান দেয়া, প্রতিপক্ষের সামনে যাওয়া ঠেকানো আর আক্রমণে সহায়তা দেয়া - সব ক্ষেত্রেই ফ্রান্স দলে পল পগবাই হচ্ছেন কেন্দ্রবিন্দু।

পগবা ফর্মে থাকলে ফ্রান্স হয়ে উঠতে পারে অপ্রতিরোধ্য এক দল।

ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের উত্থানের পেছনে ফ্রান্সের আঁতোয়া গ্রিজম্যানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি এবং দুই উঠতি স্ট্রাইকার উসমান ডেমবেলে আর কাইলিয়ান এমবাপ্পি - এদের যে কেউ এবার বিশ্বকাপের আসরে নিজেদের বড় তারকা হয়ে উঠতে পারেন।

সার্জিও অ্যাগুয়েরো
আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির জন্য কারো কারো হয়তো অ্যাগুয়েরোর কথা মনে না পড়তে পারে। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির এ তারকা বছরের পর বছর দেখিয়েছেন তার গোল করার ক্ষমতা। তিনি দারুণ ফিনিশার অর্থাৎ গোলমুখে এসে ভুল করেন খুব কম।

এমন হতে পারে যে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা মেসিকে আটকাতেই বেশি ব্যস্ত থাকলে এগুয়েরোর সামনেই হয়তো বেশি গোলের সুযোগ আসতে পারে।

তাই অ্যাগুয়েরো হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া খেলোয়াড়। তার সঙ্গে আরও আছেন গঞ্জালো হিগুয়েইন আর পাওলো দিবালা - যারা ক্লাব স্তরে জুভেন্টাসে খেলেন।

মোহাম্মদ সালাহ
এবার আফ্রিকা মহাদেশের দলগুলো গ্রুপ পর্ব ছাড়িয়ে খুব বেশি দূর যাবে এমনটা অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন না। সাবেক নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড পিটার ওদেমউই্ঙ্িগ বলছিলেন, তার মতো আফ্রিকান ফুটবল নিয়ে ১৯৯০এর দশকে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল তা পিছিয়ে গেছে। কিন্তু এবার বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে তিনটি উত্তর আফ্রিকান দেশ তিউনিসিয়া, মরক্কো আর মিশরকে - যাদের ফুটবলাররা ওদেমউইঙ্গির ভাষায় ‘বেশি বুদ্ধিমান’ এবং শারীরিকভাবেও বেশি হালকাপাতলা, দ্রুতগতি সম্পন্ন।

এর সেরা উদাহরণ বোধ হয় মিসরের মোহাম্মদ সালাহ। তার দেশ মিসর বিশ্বকাপে খেলছে ২৮ বছর পর। মোহাম্মদ সালাহ লিভারপুলের হয়ে ইউরোপ মাতিয়েছেন এ মৌসুমে করেছেন একটার পর একটা বুদ্ধিদীপ্ত সব গোল।

মোহাম্মদ সালাহ এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের চোট থেকে সেরে ওঠার পথে। তিনি কি মিসরকে কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? মিসরের গ্রুপে আছে উরুগুয়ে, সৌদি আরব আর স্বাগতিক রাশিয়া। অনেকেই হয়তো বলবেন, অসম্ভব নয়।

ইসকো
স্পেন ও রেয়াল মাদ্রিদের ইসকোকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। তিনি এবার এমন একটি স্পেন দলের অন্যতম সদস্য, যাতে তারকার ছড়াছড়ি।

স্পেন ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দাভি দ্য হে অনেকের মতেই পৃথিবীর সেরা গোলরক্ষক। তার সঙ্গে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির দাভিদ সিলভা, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দিয়েগো কস্তা, বার্সেলোনার আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, জেরার্ড পিকে, জর্ডি আলবা, আর সেরজিও বুসকেট, আর রেয়াল মাদ্রিদের মার্কো আসেনসিও, সেরজিও রামোস, আর ড্যানি কারভায়াল।

এত তারকার মধ্যেও ইসকোকে মানা হয় স্পেনের ভবিষ্যত উজ্জ্বল তারকা হিসেবে । তার ড্রিবলিং ও পাসিং দক্ষতা এবং খেলার গতিপথ বুঝতে পারার ক্ষমতার মধ্যে অনেকে জিনেদিন জিদানের ছায়া দেখতে পান।

স্পেন এবার রয়েছে পর্তুগাল, মরক্কো আর ইরানের সাথে। ২০১০-এর বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন আর ইউরোজয়ী পর্তুগাল এক গ্রুপে - তাই এটিকেই বলা হচ্ছে ‘গ্রুপ অব ডেথ’। হয়তো এক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ইসকো।

হ্যারি কেন
ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন প্রিমিয়ার লিগে টটেনহ্যামের হয়ে তিন মৌসুমে ১৫০টি ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১০৮টি, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ২৪টি আতর্জাতিক ম্যাচ গোল করেছেন ১৩টি।

তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এক অসাধারণ স্ট্রাইকার হিসেবে, যাকে নিয়ে টটেনহ্যাম গত মৌসুমে রেয়াল মাদ্রিদের মত দলকে হারিয়েছে। গোলস্কোরার হিসেবে হ্যরি কেনের শুটিং এবং হেডিং দুটোই সমান কার্যকর।

রিয়ালের সাবেক ম্যানেজার এবং ফুটবল কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের মতো লোকও বলেছেন, হ্যারি কেন একজন পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়।

ইংল্যান্ডকে নিয়ে কোনো ফুটবল প-িতই বেশি কিছু আশা করেন না; কিন্তু এবারের দলটি নিয়ে ইংলিশ ফুটবল ভক্তরা গোপনে গোপনে একটা ভালো কিছুরই আশা করছেন।

সে আশার পেছনে একটা বড় কারণ যে হ্যারি কেন, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
খবর বিবিসি বাংলা

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ