আজকের শিরোনাম :

খোলা জানালায় কমবে করোনাভাইরাসের বিস্তার!

  স্ক্রলডটইন

২৫ আগস্ট ২০২০, ১০:০৪ | অনলাইন সংস্করণ

জানালা খোলা রেখে করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ৬ জুলাই এ বিষয়ে ‘ক্লিনিকাল ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এ দুইশ বিজ্ঞানীর স্বাক্ষর করা একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

তারা জানান, করোনাভাইরাস কেবল স্পর্শ বা ড্রপলেটের মাধ্যমেই ছড়ায় না। তৃতীয় আরেকটি উপায়েও করোনাভাইরাস ছড়ায়। সংক্রমণের তৃতীয় পথটি হলো খুবই ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত কণা, যা অ্যারোসল নামে পরিচিত। এটি দীর্ঘ সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। করোনাভাইরাস যদি এসব অ্যারোসলে লেগে যায় তাহলে ভাইরাসটিও অ্যারোসলের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকে এবং ব্যাপক মাত্রায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

এ ধরনের অ্যারোসলবাহিত করোনাভাইরাসের মাত্রা কমানোর জন্য ঘরের জানালা খোলা রাখা জরুরি বলে মনে করছেন এ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, জানালা খোলা রাখলে ঘরের বাতাস অ্যারোসলমুক্ত হয়। আর এতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো সম্ভব।

এ লেখা প্রকাশিত হওয়ার তিনদিন পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, রেস্তোরাঁ, নাইট ক্লাব ও উপাসনালয়ের মতো কম বায়ু চলাচলকারী স্থানে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান প্রমাণের কারণে অ্যারোসলের মাধ্যমে সংক্রমণকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

অ্যারোসলের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার চিত্র দেখা গিয়েছিল চীনের গুয়াংজুতে। জানুয়ারিতে দশ জন লোক পাঁচতলার একটি জানালাবিহীন রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছিল। তার পরই তাদের করোনাভাইরাস ধরে পড়ে। এসির দ্বারা ভাইরাসটি সম্ভবত অ্যারোসল আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও সে সমীক্ষাটি এখনো পিয়ার-রিভিউ করা হয়নি।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে হাত ধোয়া, প্রতিরক্ষামূলক পোশাক, মেঝে পরিষ্কার রাখা, সামাজিক দূরত্ব মানা, লিফটে কম মানুষ চড়া এবং মাস্ক পরা জরুরি।

হিটিং, ভেন্টিলেটিং ও কুলিং (এইচভিএসি) ইঞ্জিনিয়াররা বলেন, এমন বাড়ি বানাতে হবে বা বাড়িতে বায়ু চলাচলের এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সহজেই পরিষ্কার বায়ু চলাচল করতে পারে। কিন্তু খুব কম মানুষই জানালা খোলার গুরুত্বকে পাত্তা দেয়। ভবনের জানালা খোলা রাখলে শরীরে হালকা রোদ, ঠাণ্ডা পরিষ্কার বাতাস লাগানো এবং কক্ষের গুমোট ভাব দূর হয়ে যাবে।

প্রকাশিত লেখাটিতে দুইশ বিজ্ঞানীর একজন হ্যারিয়ট ওয়াট ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক সুসান রোফ বলেন, বিল্ডিং ডিজাইনাররা আজ প্রায়ই বুঝতে পারেন না যে কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে ভবনগুলোতে বাতাস চলাচাল করার ব্যবস্থা করা যায়। আধুনিক, দ্রুত ও সস্তা ডিজাইনের তিনটি মূল চলক রয়েছে। এক. স্থাপত্যিক কল্পনা,  সমাজে তাদের প্রধান অবদান ভাস্কর্য শিল্পে। দুই. বিল্ডিং বিধিমালায় কী কী প্রয়োজন। তিন. ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনের বিল্ডিংয়ের সার্বজনীন ব্যবহার ডিজাইনারদের প্রাকৃতিকভাবে ভেন্টিলেটিং ভবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে বিল্ডিং বিধিমালা লিখে থাকেন এইচভিএসি ইঞ্জিনিয়াররা। সে ডিজাইনে বায়ু চলাচল সহজ করার ব্যবস্থা না রাখলেই বায়ুবাহিত রোগের সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।

তিনি আরো বলেন, উত্তপ্ত, গুমোট এবং যে কক্ষের জানালা খোলা হয় না, সেসব কক্ষে বসে থাকা মানে দূষিত বায়ুর সঙ্গে থাকা। এছাড়া বিদ্যুতের ব্যয়, কার্বন নিঃসরণ এগুলো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ভবিষ্যতে এমন ভবন ব্যবস্থা সম্পর্কে ভাবতে হবে যা প্রাকৃতিকভাবেই স্বাস্থ্যকর হবে। এক্ষেত্রে জানালা হতে পারে জীবন রক্ষাকারী একটি উপাদান।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ