আজকের শিরোনাম :

সম্ভাব্য খাদ্য সংকট

সাড়ে ৬ লাখ বাড়ির উঠোনে সবজি বাগান করার পরিকল্পনা

  ইউ.এন.বি

১৫ মে ২০২০, ১৯:৩৭ | আপডেট : ১৫ মে ২০২০, ১৯:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি মন্ত্রণালয় সারা দেশে ৬ লাখ ৫০ হাজার বাড়ির উঠোনে সবজি চাষ করার পরিকল্পনা করেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজ্জামান বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনায় আমরা প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক কৃষির আওতায় সবজি চাষ করব। এই মুহূর্তে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ বাড়ির আঙিনায় এ বাগান করা।’

নাসিরুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০-৩০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হবে। ‘প্রয়োজনে পরিমাণ বাড়ানো হবে। সবজি বাগানের জন্য প্রতিটি বাড়ির এক শতাংশের কম জমির প্রয়োজন হবে।’

‘বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার গ্রাম রয়েছে। সবজি বাগান করতে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এক শতাংশ জায়গা প্রয়োজন। যদি জমি তার চেয়ে কম থাকে তাহলে ফলমূল উৎপাদন করা হবে,’ নাসিরুজ্জামান যোগ করেন।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সবজি চাষের ব্যাপারে কালিকাপুর মডেল হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, ‘কালিকাপুর মডেলের মতো বাড়ির উঠোনে সবজি চাষের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। মডেলটি ইতোমধ্যে উঠোনে ১৪ ধরনের শাকসবজি চাষের জন্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যারা উঠোনে এবং বাড়ির ছাদে চাষের জন্য শাকসবজির বীজ, সার এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে আগ্রহী মন্ত্রণালয় তাদের সহায়তা করবে।

মন্ত্রী বলেন,  ‘প্রয়োজনে নলকূপ সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে কৃষি ক্ষেত্রে জোর দেয়ার জন্য এক ইঞ্চি জমিও খালি থাকবে না।’

মন্ত্রী উল্লেখ করেন, জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রাস্তার পাশে যাতে জমি পড়ে না থাকে সে জন্য সেখানে সুজনে (সাজনা) ডাটা গাছ লাগানো হবে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, সরকার চলতি আউশ মৌসুমে ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।  ইতোমধ্যে ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৪৩৪ কৃষকের মাঝে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মহামারিজনিত কারণে কৃষি উৎপাদন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে জন্য আমরা মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যে বিএডিসি ও অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানির উৎপাদিত আউশ, সবজি ও পাটবীজ সরবরাহ করা হয়েছে এবং এসব বর্তমানে মাঠে কৃষক আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

কৃষির জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ এপ্রিল কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় কৃষি ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে গ্রামীণ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে চলমান মূলধন বৃদ্ধির জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্প তৈরি করবে। এ তহবিল থেকে কৃষকদের কাছে মাত্র চার শতাংশ সুদ হারে অর্থ বিতরণ করা হবে।’

কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে জরুরি সহায়তা বাবদ প্রথম পর্যায়ে সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ ক্ষেত্রে আরও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরবর্তী সম্ভাব্য খাদ্য সংকট মোকাবিলায় খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মাটি উর্বর এবং এ দেশের জনগণ পরিশ্রমী এবং বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

২০ এপ্রিল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার জনপ্রতিনিধিদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সে দিকে আমাদের নজর রাখতে হবে এবং এটিই আমি চাই।’

আগামী বাজেটে কৃষি

কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের ফলে জাতীয় অর্থনীতি সচল করার জন্য কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি মনোনিবেশ করে সরকারের আগামী বাজেটে (২০২০-২১) কৌশলগত ‘পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা’ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, স্বাস্থ্য, কৃষি ও মেগা প্রকল্পগুলো এ পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পাবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে সৃষ্ট স্থবিরতা থেকে আবার অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। অর্থনীতিকে ‘আরও শক্তিশালী’ করার জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি ও মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো বিপর্যয় কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়।

এবিএন/জনি/জসিম/জেডি

এই বিভাগের আরো সংবাদ