আজকের শিরোনাম :

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

করোনাভাইরাস : বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কতটা সচেতন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২০, ১৩:০৫

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করার জন্য সরকার যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে, তা ঢাকার বাইরে অন্যান্য অঞ্চলের অনেক মানুষের কাছে এখনো পৌঁছায়নি। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বিভিন্ন পেশার অনেক মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা বলেছেন, উপজেলা-জেলা পর্যায়েও অনেক মানুষ সঠিক তথ্য না জানায় তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বা লোকমুখে নানান ধরনের খবর জেনে অনেক মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে সরকার বলছে, আতঙ্কিত না হয়ে মানুষ যেনো সতর্ক থাকে- সেই লক্ষ্যেই সরকার সারাদেশে কার্যকরভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনা সৃষ্টি করা এবং আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা দেয়া-এই দুই ভাগে ভাগ করে যথাযথ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে বা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে সরকার বলছে।

কিন্তু সরকারের সচেতনতামূলক কর্মসূচি বড় শহরগুলোর বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছোনো কতটা সম্ভব হয়েছে, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

উত্তরের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা শহরে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি বলছিলেন, তাদের এলাকার বিভিন্ন গ্রামে মানুষের মাঝে করোনাভাইরাসের ব্যাপারে সচেতনতার বড় ঘাটতি তিনি দেখছেন।

‘এই অবস্থাটা এখনো গ্রামাঞ্চলে আছে যে, ঢাকা বা বিদেশে কি হয় হোক, আমাদের এখানে সেভাবে আসবে না। এই ধারণাটা আছে। মানে গ্রামে দেখা যাচ্ছে, তারা আগের মতই দিন যাপন করছে।’

আঞ্জুমান আরা বেগম আরও বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে শুধু মুখে মুখেই কথাগুলো হচ্ছে যে, করোনা ভাইরাস আসছে, যেমন আগে মহামারি আকারে কলেরা বা বসন্ত হতো। সেটা মনে করছে যে, এটাও হয়তো আমাদের ভাগ্যের একটা বিড়ম্বনা, যে করোনাভাইরাস আসবে, কিছু মরে যাবে। যে ঠেকাতে পারবে ঠেকাবে। আর না হলে এটাই আমাদের ভাগ্যের কথা। গ্রামগুলোতে কথা বলে দেখলাম যে এরকমই ভাবনা।’

দেশের উত্তর-পশ্চিমের একটি জেলা নওগাঁর চন্ডীপুড় ইউনিয়নের ইর্ষাবাড়ি গ্রাম থেকে একজন সমাজকর্মি তসলিমা ফেরদৌস বলছিলেন, সরকারের সচেতনতামূলক কর্মসূচি সম্পর্কে তাদের এলাকায় এখনও সেভাবে কিছু জানা যায় না।

তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশে তিনজন আক্রান্ত হওয়ার কথা গত রোববার যখন ঘোষণা করা হয়, মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে বা লোকমুখে সেই খবর জানার পর থেকে তাদের জেলা উপজেলা শহরের মানুষের একটা অংশের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অনেক মানুষ সচেতনতার অভাবে বিষয়টাকে পাত্তাই দিচ্ছে না তসলিমা ফেরদৌস মনে করেন।

তিনি আরও বলছিলেন, ‘আসলে এখনো অতটা সচেতনতা তৈরিই হয়নি। যতটা না আতঙ্কিত হচ্ছে। এত আতঙ্কিত হচ্ছে যে,১০টাকার মাস্ক ৫০ টাকায় ১০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এত আতঙ্ক যে কি করবে- সেটা মানুষ বুঝতে পারছে না। মানুষ আসলে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। আমি গ্রামে থাকি। আমি গ্রামের মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করি, ওই মাস্ক কিনতে হবে, এটাই যেনো তাদের কাছে বড় হয়ে গেছে। কিন্তু আরও যে কিছু বিষয় আছে, ওই পরিমাণ সচেতন এখনো হয়নি।’

দক্ষিণ-পশ্চিমের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা থেকে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারি ফাহিমুল হক বলছিলেন, তাদের এলাকাতেও মানুষের একটা অংশের মাঝে আতংক আছে। আর বড় অংশ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখনও সচেতন নয় বলে তার মনে হয়েছে।

‘সাতক্ষীরায় একটা ভীতি তৈরি হয়েছে। এই ভীতি থেকে মানুষ মাস্ক কিনছে। কিন্তু সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সচেতনতার চেয়ে মানুষের মাঝে ভীতি বেশি দেখা যাচ্ছে।’

দক্ষিণের বরিশাল অঞ্চল থেকেও একই রকম চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে সাংবাদিক শাহীনা আজমীন বলছিলেন, নিম্ন আয়ের একটা বড় জনগোষ্ঠী বিষয়টা যেনো ভাগ্যের ওপরই ছেড়ে দিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা মানতে রাজি নন সরকারি কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলছিলেন, সচেতনতা সৃষ্টির সরকারের কর্মসূচি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কার্যকর প্রভাব ফেলছে। আমাদের কার্যক্রমের প্রধান অংশই হলো সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গুজব বা আতংক দূর করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেও সেটাই উঠে এসেছে। সে জন্য স্বাস্থ্যখাতের মাঠ পর্যায়ে একই ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও সচেতনামূলক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে পাবলিক হেলথ সচেতনতার যে নেটওয়ার্ক আছে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে, তা সবসময়ই খুব ভাল কাজ করেছে।’

এদিকে বাংলাদেশে আক্রান্ত তিনজনের অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং নতুন করে কেউ আক্রান্ত হয়নি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ খবরে জানানো হয়েছে।

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ