আজকের শিরোনাম :

কসমেটিকস-মেকআপ ব্যবহার করে পরিবেশের ক্ষতি করছেন না তো?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:০২

আপনি হয়তো নিজের অজান্তেই এটা করেন- আপনার খালি ময়েশ্চারাইজার, ঠোঁট এবং অন্যা স্থানে ব্যবহৃত প্রসাধনীর বাতিল সরঞ্জামগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিনে ফেলে দেন। আপনি হয়তো ধরেই নিয়েছেন, এসব প্লাস্টিক দ্রব্যগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে।

বিবিসির নতুন একটি তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে যে, প্রসাধনীর প্রতি আমাদের আগ্রহ পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। কারণ আমাদের অনেক প্রিয় প্রসাধনীর প্যাকেট সহজে পুনর্ব্যবহার করা যায় না।

প্রসাধনী শিল্প বর্তমানে কত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান করেছে বিবিসি থ্রি।

স্যানফ্রান্সিকোয় ব্রেক ফ্রি ফ্রম প্লাস্টিক নামের একটি প্রচারণা গ্রুপের সদস্য শিল্পী চোত্রি এবং বাস্তুসংস্থান বিশেষজ্ঞ মার্টিন বোরকিউর সঙ্গে দেখা করে এই অনুসন্ধানী দল। ১৯৫০ সালের পর থেকে বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের মাত্র ৯ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ শতাংশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বেশিরভাগ অংশটি হয় মাটিতে গিয়ে পড়েছে অথবা সমুদ্রে ঠাঁই হয়েছে।

শিল্পী চোত্রি বলেন,  দক্ষিণ এশিয়ার মতো অনেক দেশে সেগুলো খালাস করে ফেলা হচ্ছে। বহু দশক ধরে বিদেশে বর্জ্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

অনেক প্লাস্টিক বর্জ্যরে ঠাঁই হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।

শিল্পী একটি ভিডিও তুলে ধরে দেখান, ইন্দোনেশিয়ায় একসময় যে জায়গা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হতো, এখন সেটি বর্জ্যর্রে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক পোড়ানোর ফলে সেখানে ক্যান্সার এবং ফুসফুসের রোগের জটিলতাও বাড়ছে।

মার্টিন বলছেন, অনেক প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা হয় প্লাস্টিকের এমন সামগ্রী দিয়ে, যা পুনরায় ব্যবহার করা যায় না। এখানে রঙের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুনর্ব্যবহারের মেশিনটি নানা ধরনের প্লাস্টিক আলাদা করে আলোর রশ্মি ব্যবহার করে।

কিন্তু কালো রঙের প্লাস্টিকগুলো যেহেতু আলো শুষে নেয়, ফলে সেটি আর আলাদা হয়ে প্রক্রিয়াজাত হয় না। এরপরে সেগুলো হয় মাটিতে গিয়ে জমা হয় অথবা পুড়িয়ে ফেলা হয়।

যুক্তরাজ্যে পুনর্ব্যবহার বিষয়ক দাতব্য সংস্থা রিকুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টুয়ার্ট ফস্টার বিবিসি থ্রিকে বলেছেন যে, যেসব কারণে কিছু প্রসাধনী পুনর্ব্যবহার করা যায় না, তার একটি বড় কারণ এগুলোর আকৃতি। অনেকগুলোর আকার এতো ছোট যে, সেগুলোকে সনাক্ত করা যায় না। ফলে বর্তমান প্রযুক্তির রিসাইকেলিং মেশিন সেগুলোকে প্রক্রিয়া করতে পারে না।

ছোট ছোট আকৃতির লিপস্টিক, ঠোঁট উজ্জ্বল করার সরঞ্জাম এবং ছোট ছোট বোতলগুলো অন্যান্য প্লাস্টিকের বোতল, পট, টাব বা ট্রের সঙ্গে আলাদা হয় না, তিনি বলছেন।

সুতরাং যখন এসব দ্রব্য পুনরায় প্রক্রিয়া করা সম্ভব হয় না, সেগুলোর ঠাঁই হয় মাটিতে অথবা পানিতে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

স্টুয়ার্ট বলছেন, প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং জরিও সমস্যা তৈরি করে। কারণ ‘সেগুলোর পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়া থেকে ঠেকানোর কোনো উপায় নেই।’

বেলফাস্ট থেকে আসা একজন মেক-আপ শিল্পী কোলে বলছিলেন, ‘এটা দেখে আমার অপরাধবোধ হচ্ছে কারণ আমি সবসময়েই বাতিল প্রসাধনীর বাক্সগুলো বিনে ফেলে দিয়ে ভাবি, ঠিক আছে, এটা আবার ব্যবহার উপযোগী হয়ে ফেরত আসবে।’

কিন্তু স্যানফ্রাসিসকোর রিসাইকেলিং প্লান্ট দেখার পর তার এই ধারণা বদলে গেছে।

তিনি বলছেন, ‘আমি যেসব জিনিস ব্যবহার করি, তার বেশিরভাগই পুনর্ব্যবহার উপযোগী করা যায় না। আমি উপলব্ধি করতে পারছি যে, আমার কিছু পদক্ষেপ নেয়া উচিত কারণ এ ধরনের এতো বাতিল জিনিসপত্রের জন্য পৃথিবীতে বেশি জায়গা নেই।’

পৃথিবীতে পরিবেশ বান্ধব প্রসাধনীর অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে শিল্পী যুক্তি দিচ্ছেন, গ্রাহকদের প্রতি মনোযোগ দেয়ার চেয়ে বরং বড় কোম্পানি ও ব্রান্ড কোম্পানিগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

‘আমাদের আসলে বড় পরিসরে ভাবা উচিত। বড় প্রসাধনী কোম্পানিগুলোকে আরো ভালো কিছু করতে চাপ দেয়া উচিত,’ তিনি বলছেন।

তিনি মনে করেন, মানুষের উচিত মেক-আপ ব্রান্ডগুলোকে চিঠি লেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ট্যাগ করা এবং তাদের জানানো যে, পরিবেশের জন্য তাদের কিছু করা উচিত।

স্টুয়ার্টের মতে, সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর একটি হলো আকৃতি। ‘আমরা প্রসাধনী সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলতে পারবো না যে, তোমাদের এখন এক ফুট লম্বা লিপস্টিক তৈরি করতে হবে, যাতে সেগুলো পুনর্ব্যবহার করা যায়। বরং আমাদের পুরো পদ্ধতি নিয়ে ভাবা উচিত।’

এ ধরনের ছোট ছোট বস্তুগুলো যেন রিসাইকেল প্লান্টগুলো সনাক্ত করতে পারে, সেজন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করা দরকার বলে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমান প্রসাধনী বাক্সগুলোকে আরো ভালোভাবে ব্যবহারের জন্য ভাবা উচিত।

যেমন ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের একটি ব্রান্ড কোম্পানি রিফিলযোগ্য লিপস্টিক চালু করে, যাতে প্লাস্টিক বর্জ্য কমে যায়।

স্টুয়ার্ট বলছেন, ‘তাদের নিজেদের স্বার্থে পুনর্ব্যবহার উপযোগী পণ্যের দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত।’

প্রসাধন শিল্পের সংগঠন কসমেটিকস, টয়লেট্রি এন্ড পারফিউমারি অ্যাসোসিয়েশন এক চিঠিতে বিবিসি থ্রিকে জানিয়েছে, তারা দাতব্য সংস্থা এবং শিল্পগ্রুপগুলোর সঙ্গে মিলে কাজ করছে যাতে সব ধরনের প্রসাধনী সামগ্রীর প্যাকেট সংগ্রহ এবং পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়।
তথ্যসূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ