আজকের শিরোনাম :

জাদুকরী ফ্রি-কিক : ফুটবল বাতাসে এমনভাবে বাঁক খায় কী করে?

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০১৮, ১২:৩৯

ঢাকা, ২৫ জুন, এবিনিউজ : এবারের বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে রোনালদোর সেই ফ্রি-কিক, অথবা সুইডেনের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে টনি ক্রুসের ফ্রি-কিকটির কথা।

কীভাবে বলটা বাতাসে এতখানি বাঁক খেয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ‘দেয়াল’কে বোকা বানিয়ে গোলে ঢুকে যেতে পারে?

ফুটবলের পাশাপাশি যারা ক্রিকেট খেলাও দেখেন তারা জানেন, ক্রিকেট বলও বোলারের হাত থেকে বেরিয়ে বাতাসে বাঁক খায়, যাকে বলে সুইং। কিন্তু ক্রিকেট বলের আকৃতি, গড়ন, তার সেলাই – সব কিছুই ফুটবলের চাইতে একেবারেই আলাদা।

ক্রিকেট বলের চেয়ে আকৃতিতে অনেক বড়, বাতাস ভরা, আড়াআড়ি কোন সেলাই নেই - তার ওপর হাতের পরিবর্তে পায়ে খেলা হলেও ফুটবল এমনভাবে বাতাসে বাঁক খায় কীভাবে?

এই ‘সোয়ার্ভিং ফ্রি কিকের’ ব্যাপারটা প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ১৯৫০-এর দশকের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ডিডি। তিনিই প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করেন যে যদি এমনভাবে শট নেয়া যায় যে বলটা ঘুরতে ঘুরতে যাবে, তা হলে বাতাসে তার গতিপথ অনেকখানি বেঁকে যায়।

তখনকার দিনের যে চামড়া দিয়ে ফুটবল বানানো হতো তা খুব পানি শুষে নিতো, ভিজলেই বলটা ভারি হয়ে যেতো। তাই ইউরোে যেখানে শীতকালে অনেক বৃষ্টি হয় সেখানে বল বাতাসে তেমন ঘুরত না।

কিন্তু ব্রাজিলের মতো ল্যাটিন আমেরিকান দেশে গরম এবং শুকনো আবহ্ওায়ায় সে রকম সমস্যা ছিল না। তাই এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে এই টেকনিক দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলেই আবিষ্কৃত হয়েছিল।

১৯৬০-এর দশকে এক বিরাট পরিবর্তন আসে ফুটবল বানানোর ক্ষেত্রে। এমন সিনথেটিক সামগ্রী দিয়ে বল তৈরি হতে থাকে, যা ভিজলেও পানি শুষবে না। তাই কিছু দিনের মধ্যেই ইউরোপের খেলোয়াড়রাও শিখে গেলেন কীভাবে ডিডির মতো বাঁকানো ফ্রি-কিক নিতে হয়।

ব্যাপারটার পেছনে আছে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র। একটা ফুটবল যখন বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে যায়, তখন তা পেছনের অংশে বাতাসের আলোড়ন তৈরি হয়, আর সামনে ও দু'পাশে বাতাসের চাপের একটা পার্থক্য তৈরি হয়, যা বলের গতিপথকে বাঁকা করে দেয়।

কিন্তু অন্য একটা ব্যাপার বুঝতে বিজ্ঞানীদেরও অনেক বছর লেগেছে। তা হলো- যে চামড়ার টুকরোগুলো সেলাই করে বলটা তৈরি সেই সেলাইয়ের খাঁজগুলোরও একটা ভূমিকা আছে বলের বাঁক খাওয়ার ক্ষেত্রে।

ফুটবলের সবচেয়ে পরিচিত ডিজাইন হলো ষড়ভূজ আকৃতির ৩২টি বা ২৬টি চামড়ার টুকরো বা ‘প্যানেল’ সেলাই করে তৈরি। কিন্তু ২০০৬ সালে জার্মানির বিশ্বকাপের সময় এডিডাস কোম্পানি 'টিমগাইস্ট' নামে যে বল তৈরি করে - তাতে প্যানেল ছিল মাত্র ১৪টি।

ফুটবলের পেছনের বিজ্ঞান নিয়ে একটি বই লিখেছেন ড. কেন ব্রে। তিনি বলছেন, বিজ্ঞানীরা দেখলেন ফুটবলের প্যানেল সংখ্যা যত বেশি হবে - বাতাসে বলের গতিপথ ততই স্থিতিশীল হবে অর্থাৎ কম বাঁক খাবে।

কিন্তু প্যানেল যদি কম হয়, আর তার সাথে বলটা যদি বাতাসে ঘোরে - তাহলে তা বেশি বাঁক খাবে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কতটা বাঁক খাবে তা আরো অনেকখানি নির্ভর করছে, যে খেলোয়াড়টি ফ্রি-কিক নিচ্ছেন তিনি শট নেবার সময় বলটিকে কতখানি ঘোরাতে চাইছেন।

যদি ঘূর্ণণ বেশি হয় তা হলে বলটা একটা ‘স্বাভাবিক’ বাঁক নেবে, আর যদি ঘূর্ণণ কম হয় তা হলে বলটা অপ্রত্যাশিত রকমের বাঁক নিতে পারে, যা গোলকিপারদের আন্দাজ করা খুবই কঠিন।

ফ্রি-কিক নিতে ওস্তাদ খেলোয়াড়রা নানাভাবে বলকে স্পিন দিতে পারেন, অনেকটা বেসবল বা ক্রিকেটের বোলারদের মতই।

ফ্রান্সের থিয়েরি হেনরি বা ব্রাজিলের রোনালদিনহো সাইডস্পিন দিতে দক্ষ ছিলেন। আর ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যামের অস্ত্র ছিল টপস্পিনের মতো একটা কৌশল, যাতে বলটাকে খুব বেশি ঘুরতে দেখা যেতো না, কিন্তু এটা যে কিভাবে কতখানি বাঁক নিতে যাচ্ছে - তা বুঝতে গোলরক্ষকরা হয়রান হয়ে যেতেন।

ফ্রি-কিকের ওস্তাদরা এখনো গোলরক্ষকদের নাকাল করে চলেছেন।
সূত্র : বিবিসি

এবিএন/সাদিক/জসিম

এই বিভাগের আরো সংবাদ